নিলু ভাবীর সাথে প্রথম পরিচয়েই ভাবী থেকে বোন আর আপনি থেকে তুমি হলাম ঃ

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪৫:১১ সন্ধ্যা

নিলু ভাবীর সাথে প্রথম পরিচয়েই ভাবী থেকে আপা আর আপনি থেকে তুমি হলাম ঃ



আজ সব কাজ সেরে নামাজের জন্য গোসলে যাচ্ছি এমন সময় এক ভাবী এসে ডুকলেন ।আল্লাহর সাহায্য চাইলাম , ও্য়াক্ত মত নামাজের বারোটা যেন না বাজবে ।আমি না চিনতে পারলেও সাহেবও ঐ সময় জুম্মায় যাবার সময় পরিচয় করায়ে দিলেন যে , "আমাদের এপার্ট্মেন্টের ৫০৪ এর ভাবী কিন্তু তিনি এই খানে থাকেন না তাই তুমি আর দেখো নাই ভাবীকে " । উনার বাসা ভাড়া দেওয়া সহ সব দেখা শুনা আমার সাহেব কেই করতে হয় । আজ এসেছেন বাড়াটিয়া নেই।অন্য ভাড়াটিয়া সংগ্রহ করার আগে বাসাটা রঙ করানো সহ সব ঠিক করে দেওয়ার জন্য কিছু টাকা শ্রমিক দের দিবে সেই দায়িত্ব কাকে দিবে ?

ভাই ভাবী আর আমাদের বিল্ডিং এর ৯৯% বাসিন্দা হলো বর্তমান অবৈধ সরকার দলের লোক । তাই ভাবী খুব ব্যাথিত মনে বললেন , "ভাই কাউকে এই দায়িত্ব দেবার মত বিশ্বাস করতে পারলাম না ।শেষ সবার পরামর্শ দিলেন আপনাদের কাছে দিয়ে যেতে । আপনাদের ব্যাপারে সবার একটাই অভিযোগ না হলে আর কোন দিক থেকে খারাপ কেউ বলে নাই । আর সেটা হলো আপনারা জামাতের লোক । আমি আমার সাহেব কে বলেছি উনারা কোন দলের তা দিয়ে আমাদের কাজ কি ? আমাদের দরকার ভালো লোকের । যেন আমরা নিশ্চিত ভাবে থাকতে পারি যে ,আমাদের বাসাটা ভাল ভাবে আছে । তাই ভাবী আপনাদের কাছে আসা ।"

আমি তো মেহমানের খাবার রেডি করছি আর ভয়ে আল্লাহ আল্লাহো করছি যে প্রতিবেশীরা কোন ক্ষতির না জানি অভিযোগ করেছে । পরে শুনে হাসলাম আর কিছুক্ষন কথা বলার এক পর্যায়ে ভাবীকে বললাম , ভাবী আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ এমন এক দলের সাথে রেখেছেন , যেই ভাল দিক গুলো প্রতিবেশির থেকে শুনে বিশ্বাস করে আপনার দলের লোকদের থেকে সরে এসে আমাদের কাছে দায়িত্ব দিতে এসেছেন । সেই গুন গুলো আলহামদুলিল্লাহ এই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শিখানো কোরান আর সুন্নাহ থেকে নেওয়া । তা হলে বলেন এই দলটা কি খারাপ ?

ভাবীর প্রশ্ন ঃ তা হলে ভাবী জামাত কি ? দলে যোগ দেবেন কেন ?

শুনেন ভাবী , চোরের চুরি করতেও দল লাগে আর যারা কোরানের আলো কে ভালো কাজ করতে চায় তাদেরও দল লাগে । যুগে যুগে নবী রাসুলরা এই ভাল কাজ টা একা করে যেতে পারেন নাই । শেষ নবী সাঃ যেই যুগে এসেছেন তা ছিলো আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগ । আর সেই যুগের পরিবর্তে একটা সোনালী যুগ উনি একা আনেন নাই । অনেকের দলবদ্ধ ভাবে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে এই সমাজ কায়েম হয়েছিল ।

ভাবী শুনেন , জামাত আরবী শব্দ। এর অর্থ দলবদ্ধ বা একসাথে কিছু লোক । রাসুল সাঃ কে আল্লাহ ইসলাম কে কায়েম করার কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠায়েছেন আর তা কোরানের ৩ জায়গায় বলা হয়েছে ।

(সুরা তাওবাঃ ৩৩, সুরা ফাতহঃ২৮ , সুরা আস সফঃ ৯ )

“তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত এবং ‘দীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দীনকে অন্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন৷” সুরা আস সফঃ ৯

রাসুল সাঃ ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র,আঈণ,শাসন,ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রেই তিনি আল্লাহর বিধানকে চালু করে প্রমান করেছেন যে, ইসলামই দুনিয়ার জীবনে শান্তির একমাত্র উপায়।তাই রাসুল সাঃএর উম্মত ও একজন মুসলিম হিসাবে দ্বীন ইসলাম কায়েমের এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সাহাবে কেরামদের মত আমাদেরকেও যথাযথ ভাবে পালন করা কর্তব্য। দুনিয়াতে শান্তি আর আখিরাতে মুক্তির জন্য শত বাধা বিপত্তির মাঝেও আমাদের এই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।

েই পথে বাধার কথা বলছেন?

জালেম, শয়তান মুনাফেক কাছে ইসলাম কায়েম হওয়া খুব অসহনীয় । কারন তারা আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্যদের দাসত্বও করে থাকে এবং আল্লাহর দেওয়া ইসলাম ধর্মের সাথে অন্য সব ধর্মের নিয়ম কে সংমিশ্রিত করে, শুধু এক আল্লাহর আনুগত্য ও হিদায়াতের ওপর গোটা জীবনব্যবস্থা কায়েম হোক তারা তা চায় না । কারন তা হলে তাদের খারাপ কাজ গুলো তারা করতে পারবে না । আর যারা ইচ্ছামত যে কোন প্রভু ও উপাস্যের দাসত্ব করতে সংকল্পাবদ্ধ এবং যে কোন দর্শন ও মতবাদের ওপর নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা এবং তাহযীব তামুদ্দুনের ভিত্তিস্থাপন করতে প্রস্তুত এমনসব লোকের বিরোধিতার সন্মুখিন ইমানদারদের হতেই হবে । তাদের সাথে আপোষ করার জন্য আল্লাহর রসূলকে পাঠানো হয়নি । বরং তাকে পাঠানো হয়েছে এ জন্য যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে হিদায়াত ও জীবনব্যবস্থা এনেছেন তাকে গোটা জীবনের ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র,আঈণ,শাসন,ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদি সব দিক ও বিভাগের ওপর বিজয়ী করে দেবেন । এর জন্য অবস্থা যাই হোক না কেন, তাঁকে এ কাজ করতেই হবে । কাফের ও মুশরিকরা তা মেনে নিক আর না নিক এবং এ বিরোধিতায় সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও সর্বাবস্থায় রসূলের এ এই দাওিত্ব আমাদের এখন পালন করে যেতে হবে । তা হলে আমরা সফলকাম হব এবং ঈমানের পূর্ণতা লাভ করতে পারব । ইসলামের কাজ যত বেশি হবে শয়তানের শয়তানি তত বেশি হবে । তাই বলে ভয় পেলে শয়তান আর ভয় দেখাবে । একবার সাপের বিষ দাত ভেঙ্গে দিলে সেই সাপ আর কামড়াতে আসে না।

আর ইসলাম কায়েমের এই মহান দায়িত্ব একা একা পালন করা কোন নবীর পক্ষেও সম্ভব হয়নি। তাই আমরা যারা আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর প্রতি ভালবাসা থাকবে তাদের সবার উচিত রাসুল সাঃ এর রেখে যাওয়া এই মহান দায়িত্ব পালনে শরীক হওয়া।না হলে আমি আপনি কেউই ইসলাম কায়েম না থাকলে পরিপুর্ন ভাবে মুসলিম থাকা সম্ভব নয় ।তাই সবাই সংঘবদ্ধ বা জামায়াত এর সাথে এই ভালো কাজ করা উচিত। আসুন আপনিও আমাদের এই ভাল কাজের সাথে শরীক হন ।

আজ আপনি আপনার এপার্টামেন্ট এর একটা দায়িত্ব দেওয়ার মত লোক খুজে পাচ্ছেন না।আপনার বিশ্বাস নাই আওয়ামীলিগের লোকের উপর।কারন আপনিই বলেন তাদের ভিতর বাহির কোন কিছুতেই ইসলাম নেই ।তারা চুরি ডাকাতি আমানোতের খেয়ানত সবই করতে দেরি করে না। সেখানে কিভাবে জনগন এদের কাছে দেশ টা দিয়ে তাদের জান মাল ও মৌলিক চাহিদা গুলো নিরাপত্তা খুজে পাবে বলে আপনি মনে করেন?

সাহেব রাগ করে মাঝে মাঝে বলেন, আমি যেই খানে বা যার সাথেই কথা বলি সেখানেই ইসলাম আর সংগঠনের আলাপ ছাড়া অন্য কথা কি বলতে পারি না?আমার মনে হয় আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে আল্লাহ আর আল্লাহর রাসুল থাকলে অন্য আর কি কথা বলার আছে?আর এই ছাড়া অন্য দুনিয়াবী কথা হবে কার স্বামী কাকে শাড়ি গয়না বাড়ি গাড়ি কত দামী কিনে দিয়েছে এই সব ।যা আমার কাছে সব চেয়ে ঘৃনিত আলাপ।কারন এর মাঝে কোন সুখ নেই।এই গুলো সাময়িক ভাবে আখিরাত কে ভুলিয়ে রাখার সামুগ্রী।

আলাপের এক সময় জানতে পারলাম আমি আর ভাবীর বয়স ও এস এস সি একই বছরের । তাতে আরো সম্প্ররক ঘনিষ্ট হল। শেষ যাবার সময় ভাবী এপার্ট্মেন্টের চাবি টা আমার হাতে দিয়ে বলেন, আজ থেকে ভাবী এবং আপনি না ।তুমি ও তুমি আমার বোন ও ইয়ারমিট হিসাবে আমার বাসাটা দেখে শুনে রাখবে।আমি অনেক শান্তি আর আনন্দিত হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।আর আমি ফোন দিলেই আমার ধানমন্ডির বাসায় এসে বেড়াতে যাবে। আর আমাকে তোমার দলের সাথে শামিল করে নিবে। আলহামদুলিল্লাহ । আমার কাছে মনে হলো অন্তরটাও খুব শীতল লাগছে এই ভেবে এখনো ইসলামের জন্য অনেক উর্বর জমিনের মত হৃদয় আছে কিন্তু তা আগাছায় পরিপুর্ন ।আমরা ঠিক ভাবে ইসলামের আলোকে কোরান সুন্নাহর ট্রাক্টার দিয়ে হাল চাষ করলে আবার ইসলামের সবুজ ঘন জান্নাতি উদ্যান কায়েম করা সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ।

“আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন ৷ তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে৷ আর যারা এরপর কুফরী করবে তারাই ফাসেক ৷ নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রসূলের আনুগত্য করো,আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি করুণা করা হবে ৷ যারা কুফরী করছে তাদের সম্পর্কে এ ভুল ধারণা পোষণ করো না যে, তারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অক্ষম করে দেবে ৷ তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা বড়ই নিকৃষ্ট আশ্রয় ” আন নূরঃ৫৫-৫৭

"আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম,

তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম"

- হে আল্লাহ্ ! তুমিই শান্তি, তোমার থেকেই

আসে শান্তি । বরকতময় তুমি হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।

[মুসলিম, ১২২২

বিষয়: বিবিধ

৩৯৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File