আমি মনের দাস নই বরং মন আমার দাস

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৪৪:৫০ সকাল

একধ্যনে মুখে হাত দিয়ে বা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অথবা বালিশে মাথা রেখে যত সব কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়ানো ।কত সময় কত দিন এমন চলে যায় তার কোন ইয়াত্তা নেই। এই সময় এর মাঝে কেউ এসে কথা বললে বা কোন কাজে শুধু বিরক্ত মনে হয়।শুধু একা থেকে ভাবতেই ভাল লাগে ।মনের এই চিন্তার জগত কখন হাসায় আর কখন কাদায়।যা করেছি বা হয়েছে তাও বলে আবার যা করেনি বা ফলাফল হয়নি তাও বলে।তখন মনে হয় হায়রে অবুঝ মন মনরে মন কেন এত কথা বলে

চিন্তা জগতের উতপত্তিঃ

এর মাঝে কিছু থাকে সত্য চিন্তা আর কিছু থাকে দুশ্চিন্তা।সত্য চিন্তা মানুষের প্রকৃতিজাত।সত্য চিন্তা মানুষকে দেয় সত্য বিশ্বাস আর ধর্মীয় বিশ্বাস।মানুষ যখন নিজের ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে তার কর্মপরিচালনা করে তখন তার মনের মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়।এই সময় ধান্ধিক মন মানুষ্কে নানা রকম কুটকৌশল দিয়ে নানা জটিলতার জালে জড়ায়ে রাখে। মনের এই ধরনের অবস্থ্যা কে অসুস্থ্যচিন্তা বা দুচিন্তার জগতের উতপত্তি বলে ।

বিশ্বাস হইতেছে আত্মার খাদ্য। বিশ্বাস হইতে চিন্তা এবং চিন্তার হইতে কাজের উৎপত্তি। প্রত্যেক মানবের কাজই তাহার বিশ্বাসের অনুরুপ হইবে।---- ইসমাইল হোসেন সিরাজী

দুশ্চিন্তা কুফলঃ

এর ফলে মানুষ মনের আনুগত্য করতে থাকে আর তখন মানুষের অন্তর থেকে সত্য চিন্তা বিলুপ্ত হতে থাকে। কামনা বাসনা গুলো কে তখন মানুষ উপাস্য হিসাবে বানিয়ে নেয়।আর তারা আমাদের কে নিয়ে দিক বেদিক ছুটাছুটি করে অজানা বিপদসংকুল পথে যাত্রা শুরু করে।মানুষকে আত্নপুজা আর আত্নপ্রীতিতে এতই বিভোর করে ফেলে যে মানুষের মন থেকে সত্যচিন্তা ইতিবাচক চিন্তা দূরীভূত হয়ে সেখানে এসে বাসা বাধে দুচিন্তা।আর বহু মরনব্যাদি রোগের উতপত্তি এই দুচিন্তা ।সব রোগের ঔষধ বৈজ্ঞানিরা বের করতে পারলেও দুচিন্তার কোন ঔষধ এখন আবিষ্কার হয়নি।তাই যত কবর ক্যান্সারে না ভরেছে তার চেয়ে দ্বিগুন কবর ভরেছে টেনশানে।

সহজাত বস্তুকে ভয় পাবে আর দুনিয়াবী শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে থাকবে। বনের বাঘে থাবার আগেই মনের বাঘের থাবার শিকার হয়ে যাবে।

দুশ্চিন্তা লাঘবের সহজ উপায়ঃ

১] সত্য চিন্তা, ইতিবাচক চিন্তার লালনঃ দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে মনে সত্য চিন্তা, ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটলে মন সুন্দর ও পবিত্রতা লাভ করবে।এর ফলে মন পার্থিবজগতের চাকচিক্য থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর আনুগত্য লাভ করবে।তখন অন্তরপরিবর্তনকারী আল্লাহর আনুগত্যের ফলে দুচিন্তা গ্রস্থ্য দূর্বল মন শক্তিশালী হয়ে উঠে।

২] মনটাকে কাজে ব্যস্ত রাখাঃ অলস মন শয়তানের কারখানা।তাই সর্বক্ষন মনটাকে আল্লাহর বিধান অনুসারে ভাবনা ওচিন্তার আলোকে কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে।তারপর সর্বকাজে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।আল্লাহর উপর ভরসাকারীর জন্য তিনিই যথেষ্ট।

৩]আত্নসমালোচনা ও আত্নবিশ্লেষন করাঃ নিজেই নিজের মনের আত্নসমালোচনা ও আত্নবিশ্লেষন করা উচিত ।নিজেই ভেবে দেখা উচিত আমি কি কারো ভয়ে বা কোন কিছুর লোভ লালসার আকৃষ্ট হয়ে আমার মন বিপথগামী হচ্ছে কিনা। এই পৃথিবীর কাছে পাবার মত আহা মরি কিছুই নেই।আবার হারাবার মত এমন মুল্যবান কিছুই নেই।

৪] আমি মনের দাস নই বরং মন আমার দাসঃ মন অনেক সময় ইচ্ছার,অর্থের ,সামাজিক শক্তির, নাম খ্যতির আনুগত্য করে ।তখন বুঝতে হবে মন আমাকে তার দাস বানায়ে ফেলছে,কিন্তু আল্লাহ আমার এই দেহ ও মনের চালিকাশক্তির ক্ষমতা আমাকে দিয়েছেন। আমি মনের দাস নই বরং মন আমার দাস।

৫] আমার মনকে মুসলিম বানাতে হবেঃ মনকে মনের আনুগত্য ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।আর এর ফলে দুচিন্তা কেটে যাবে।আল্লাহর বিধানের অনুসারী হয়ে আল্লাহ কে একমাত্র অভিভাবক হিসাবে মেনে নেওয়ার মাঝে মনের প্রশান্তি ফিরে আসবে আর দুচিন্তা লাঘব হবে।

৬] মনকে উম্মতী মোহাম্মাদী বানাতে হবেঃ নিজের মন কে নিজেই রাসুল সাঃ অনুসারী বানাতে হবে।মন সব সময় রাসুল সাঃ এর তরিকা মতে চললে মনের ভয়,অস্থিরতা, আতংক,উদ্দেগ, উতকন্ঠা চলে যাবে।

৭] ধর্মীয় অনুশাসনই মনের প্রকৃত শান্তিঃ মনের শান্তির জন্য আজ কাল কেঊ কেঊ মনোবিজ্ঞানী,মেডিটেশান,মনো থেরাপি, মিউজিক ইত্যাদির স্মরনাপর্ন হছেন।কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। সত্যিকার মনের প্রশান্তির জন্য ধর্মীয় অনুশাসনই মনের প্রকৃত শান্তি।আপনি নিজেই আপনার দুচিন্তা লাঘবের জন্য ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুশীলন করে দেখুন।

৮] ইসলাম মানেই শান্তিঃ ইসলামের মহান বিধানে দুচিন্তার কোন স্থান নেই।হতাশা, নিরাশা,লোভ ও লালসা ইসলাম গ্রহন করে না।কারন আমার একমাত্র ভরসা ও শ্রেষ্ঠ অভিভাবক আমার আল্লাহ।আত্নতৃপ্তি আত্নপুজা পরিহার করে মনের মাঝে ইসলামের আকীদা আনতে পারলে সেই মনে দুচিন্তা বাসা বানতে পারবে না ইনশাল্লাহ।

তাই আল্লাহর আনুগত্যকারী আর রাসুল সাঃ এর অনুসারী মন কখন দুচিন্তা গ্রস্থ্য হবে না।দুনিয়া থেকে না পাওয়ার ব্যথা আসলে নিচের দিকে তাকানো ।আমি যা পেয়েছি অনেকে তাও পায় নাই আর আখিরাতের দিকে তাকালে আমি শুধু পিছিয়ে আছি অনেক আমার চেয়ে বেশি আমল করে আখিরাতের সফলতা অর্জন করছেন।

‘নিরাশ হয়ো না। (হয়ো না মনমরা হীনবল) দুঃখ করো না (মুষড়ে পড়ো না) তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।’ [আল ইমরান : ১৩৯]

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুনিয়া মুমিনদের জন্য কারাগার এবং কাফেরদের জন্য জান্নাত (স্বরূপ)।’ [মুসলিম]

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মজলুম ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।’ [বুখারী]

‘আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।’ [সূরা তাগাবুন-১১]

“হে আমাদের রব! আমাদের এই খিদমত কবুল করে নাও ৷ তুমি সবকিছু শ্রবণকারী ও সবকিছু জ্ঞাত ৷ “ হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো, আমাদের অবিচলিত রাখ এবং এই কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় দান করো৷”- বাকারা

বিষয়: বিবিধ

১৮২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File