সেনা-অভ্যুত্থানের নামে গভীর নীলনকশা করেছিল দেশি-বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক চক্র।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ৩০ মে, ২০১৭, ০১:৫১:১৯ দুপুর

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে জেনারেল মঞ্জুরকে বিচারের সম্মুখীন না করে কেন তাঁকে দ্রুত হত্যা করা হল?

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান ও মেহবুবুর রহমানকেই-বা হত্যা করা হয়েছিল কেন?



মঞ্জুর-মতিউর-মেহবুব বেঁচে থাকলে জিয়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে কারা কারা যুক্ত ছিলেন সে তথ্য প্রকাশিত হয়ে যেত বলেই কি দ্রুত এই তিনজনকে হত্যা করা হয়?


মঞ্জুর যদি জিয়াকে জোরপূর্বক বন্দি বা হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন , তাহলে কারা সেই নীলনকশার মাস্টারমাইন্ড ?


প্রটোকল অফিসারের মতে, প্রায় একঘণ্টা এই তাণ্ডব চলার পর সেনাবাহিনীর গাড়িগুলো সার্কিট হাউস ছেড়ে যায়।


৩০ মে ভোর রাতে সার্কিট হাউসে হামলার পরিকল্পনা করায় এবং হত্যাকাণ্ড ঘটার পর সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার । চট্টগ্রাম ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান ও ২১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহবুবুর রহমান। মেহবুব ছিলেন জেনারেল মঞ্জুরের আপন ভাগ্নে।

শুরুতেই একটি নাম তিনি চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। যেহেতু রাষ্ট্রপতির সফরের সময় তিনি চট্টগ্রামের ডিভিশন কমান্ডার ছিলেন, তাই অভিযোগের তীর তার দিকেই যায়।

তার সাথে সেনাবাহিনীর আরো কয়েকজন সদস্য - লে.কর্নেল মতিউর রহমান, লে. কর্নেল মাহাবুব, মেজর খালেদ এবং মেজর মুজাফফরের নাম চলে আসে। এছাড়া মেজর জেনারেল মঞ্জুরের কিছু কর্মকাণ্ড মানুষের মনে কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দেয়।

সার্কিট হাউসে হামলায় কেবল অফিসাররাই অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিভিন্ন অফিসারের বর্ণনায় জানা যায় যে, তাদের বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্টকে সার্কিট হাউস থেকে তুলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে নিয়ে আসা হবে, বিভিন্ন দাবি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য।

কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত অফিসার ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে হামলাকারীদের গোলাগুলি শুরু হওয়ার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি জিয়া তার কক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান খুব কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে এক ঝাঁক গুলি করে জিয়াকে হত্যা করেন।

জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা

চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি বা ডিভিশনাল কমান্ডার জেনারেল আবুল মঞ্জুর তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দ্রুতই ধরা পড়ে যান এবং তাঁকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনেই হত্যা করা হয়। বলা হয়, উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে।

কোর্ট মার্শালে এই অভিযুক্ত অফিসারদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অফিসার তৎকালীন কর্নেল মোহাম্মদ আইনউদ্দিন। তিনি পরবর্তীতে কোর্ট মার্শালের ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

ব্রিগেডিয়ার মহসীন, কর্নেল নওয়াজেশ, কর্নেল রশিদ, কর্নেল মাহফুজ, মেজর মোমিনুল হক প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অফিসার যে সেনা-বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন সে অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি। তারপরও তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় -- কিন্তু কেন ?

সেই কোর্ট মার্শালে এই অভিযুক্ত অফিসারদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অফিসার ছিলেন তৎকালীন কর্নেল মোহাম্মদ আইনউদ্দিন। তিনি পরবর্তীতে কোর্ট মার্শালের ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর এবং এই কোর্ট মার্শালে দশ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া মেজর রেজাউল করিমের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ব্রিগেডিয়ার মোহসীন, কর্নেল নওয়াজেশ, কর্নেল মাহফুজ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেলাওয়ার, মেজর রওশন ইয়াজদানী, মেজর মুজিব প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হেভি টর্চার করে তাদের থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়।

অত্যাচারের ফলে ব্রিগেডিয়ার মহসীনের পুরো পিঠে অক্ষত জায়গা ছিল না, কর্নেল মাহফুজের হাতের সবগুলো নখ সুঁই ফুটিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছিল। এভাবে টর্চার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার বিধান মিলিটারি বা সিভিল কোনো আইনেই নেই ।

এই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের টর্চার করায় নেতৃত্ব দিয়েছিল আরেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসার কর্নেল আশরাফ। যিনি জেনারেল এরশাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং পরবর্তীতে এরশাদের শাসনামলে এনএসআইএর ডিজি হন।


সেদিন রাতে সার্কিট হাউসে আসলে কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর লেখা আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থ ‘অ্যাসাসিনেশন অব জিয়াউর রহমান অ্যান্ড আফটারম্যাথ’ গ্রন্থে।

Ziauddin M. Choudhury, “Assassination of Ziaur Rahman and the Aftermath” (Dhaka: The University Press Limited, 2009)

৩০ মে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান জিয়াউর রহমান। বিমান বন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বিভাগীয় কমিশনার সাইফউদ্দিন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বদিউজ্জামান, ডিআইজি শাহজাহান এবং ডিসি জিয়াউদ্দিন। বিএনপির কিছু নেতা এবং তিন বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডাররাও সেখানে ছিলেন।

তবে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল মনজুর সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ। রাষ্ট্রপতি জিয়া জিওসি মনজুরের না আসার কারণ জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, টেনিস খেলে কিছুটা আহত হওয়ায় জেনারেল মনজুর উপস্থিত থাকতে পারেননি।

জিয়াউদ্দিন তার বাইতে লিখেছেন: ৩১ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের দৃশ্য ছিল ‘ভীতিপূর্ণ’। গাড়ি বারান্দায় লাশ, দোতলার কিছু অংশ ঝুলে পড়েছে। পুলিশ বাহিনী ছন্নছাড়া। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

সার্কিট হাউস থেকে ইউনিফর্ম পরে বের হওয়া লে. কর্নেল মাহফুজের ব্যবহার অবাক করার মতো ছিল বলে লিখেছেন জিয়াউদ্দিন। তিনি লিখেন: আমি যখন কমিশনার ও অন্য পুলিশ অফিসারদের জটলার দিকে এগোচ্ছিলাম তখন দেখলাম ওয়্যারলেস সেট হাতে পুরো ইউনিফর্ম পরে লে. কর্নেল মাহফুজ বের হচ্ছেন সার্কিট হাউস থেকে। জটলা থেকে ৫০ গজ দুরে দাঁড়িয়ে তিনি ওয়্যারলেসে কথা বলছিলেন। কথা শেষ করে তিনি জটলার কাছে এসে জানালেন, তিনি (লে. কর্নেল মাহফুজ) সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন।

চট্টগ্রাম কারাগারে গোপনে এবং খুব তাড়াহুড়ো করে বিচারের পর ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসি দেওয়া হয়, অনেককে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয় আরও বেশ কিছু অফিসারকে।

কোর্টের সাত সদস্যের মধ্যে একজনও যদি অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিরুদ্ধে থাকতেন তাহলে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া যেত না। কিন্তু কোর্টের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সদস্য কর্নেল মতিউর রহমানও এতোজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিরুদ্ধে বলেননি।

এ প্রসঙ্গে আইনউদ্দিন লিখেছেন, “তিনি (মতিউর রহমান) যদি বলতেন, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, আমি ফাঁসি দিতে রাজি নই, তাহলে কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত না। কিন্তু তারা (কর্তৃপক্ষ) মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর থেকে এমন একজনকে বেছে নিয়েছিল যার কাছ থেকে তাদের মনমতো ব্যবহার পাবে।”

সূত্র - জুলফিকার আলি মাণিক, “জিয়া হত্যাকাণ্ড: নীল নকশার বিচার”

(ঢাকা: সময় প্রকাশন, ২০০৬)

মঞ্জুরকে একদল উত্তেজিত সেনাসদস্য হত্যা করেছে এ কথা বলা হলেও দেখা যায়, মঞ্জুরের মাথায় পিস্তল দিয়ে মাত্র একটি গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক কাউকে হত্যা করলে মৃত ব্যক্তির শরীরে একাধিক আঘাত থাকার কথা। কিন্তু মঞ্জুরের শরীরে তা ছিল না।

ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে শেখ হাসিনা ভারতের হেফাজতে কথিত রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রায় ৬ বছর থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে আসেন। এর কিছুদের মধ্যেই ঘটে ভয়ঙ্কর তান্ডব।


৩০ মে ভোর রাতে সার্কিট হাউসে হামলার পরিকল্পনা করায় এবং হত্যাকাণ্ড ঘটার পর সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার: চট্টগ্রাম ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান ও ২১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহবুবুর রহমান। মেহবুব ছিলেন জেনারেল মঞ্জুরের আপন ভাগ্নে।


জানা যায়, মঞ্জুর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এই তথ্য জানার পর তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরুদ্দিন সেনাপ্রধান এরশাদকে বলেছিলেন মঞ্জুরকে কোনোভাবেই হত্যা না করতে। মঞ্জুরের হত্যার পর এরশাদ সদরুদ্দিনকে জানান, একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈন্য মঞ্জুরকে হত্যা করেছে। সদরুদ্দিন তখন ক্ষুব্ধকন্ঠে এরশাদকে বলেছিলেন, “এই গল্প অন্য কাউকে বলুন। অ্যাট লিস্ট ডোন্ট আস্ক মি টু বিলিভ ইট।”

এর কদিন পরই মুক্তিযোদ্ধা অফিসার সদরুদ্দিনকে বিমান বাহিনী প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ( মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি, “একাশির রক্তাক্ত অধ্যায়” (ঢাকা: আফসার ব্রাদার্স, ২০০২)। পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪)।



জেনারেল মঞ্জুর কি তাহলে বাহিরের সেই নির্দেশ পালন করেছিলেন ?


চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর লেখা আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থ ‘অ্যাসাসিনেশন অব জিয়াউর রহমান অ্যান্ড আফটারম্যাথ’ গ্রন্থে লিখেছেন - ( পৃষ্ঠা ১৬, ৬০, ৬৮)

সার্কিট হাউসে হামলায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার পর সেনানিবাসে জেনারেল মঞ্জুর সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই বৈঠকে জিয়াউর রহমানের সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে বর্ণনা করে মঞ্জুর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এই অবস্থায় দেশপ্রেমিক শক্তির মাধ্যমে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। এই বিপ্লবের অংশ হিসেবেই রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে কি না বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে সে ব্যাপারে কিন্তু মঞ্জুর আলোকপাত করেননি।একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়েছে, কিন্তু তিনি একবারও বলেননি কে এই পরিষদের প্রধান এবং পরিষদের সদস্য কারা। মঞ্জুর নিজেই শুধু বলতে থাকেন যে, তিনি বিপ্লবী পরিষদের মুখপাত্র।

পরের দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকেও মঞ্জুর একই কথা বলেন। তাঁর এমন বক্তব্য অস্পষ্টতা সৃষ্টি করে, কীভাবে বিপ্লবী পরিষদ তাদের কাজ পরিচালনা করবে সে ব্যাপারে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি। কখনও তাঁর কোনো উত্তর নিজের বক্তৃতার সঙ্গেই সামঞ্জস্যহীন হয়ে ওঠে।

পুলিশের হেফাজত থেকে জেনারেল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনী তাদের জিম্মায় নিয়ে আসার পর যখন মঞ্জুরকে হত্যা করা হল, সেটিতে জড়িতদের শনাক্ত করে অবশ্যই বিচার করা দরকার ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। কিন্তু কেন ?

বিষয়: বিবিধ

১৬৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383185
৩১ মে ২০১৭ রাত ০৯:১৪
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File