শিশুদের হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র দিচ্ছে ইরাকি শিয়া সরকার এবং কিছু বিশ্লেষণ

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৮ জুন, ২০১৪, ০৪:৫৯:৩৮ রাত



ইরাকি সৈন্যদের এ অবস্থা দেখে ইরাকের কিরকুকের শিয়া গভর্নর নাজিমুদ্দিন করিম মন্তব্য করেছেন - ইরাকি সৈন্য ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিমিষে একবারে হাওয়া হয়ে গেছে। আইসিস যোদ্ধারা গতকাল রোববার উত্তরাঞ্চলীয় আল তাফার দখলের জন্য লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়। তাদের আক্রমণে সরকারী বাহিনীর গ্যারিসনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আইসিস যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে এখন সিরিয়ার ভূমধ্য সাগরের তীর থেকে দক্ষিণে বাগদাদ পর্যন্ত শত শত মাইল বর্গমাইল এলাকা। রাস্তার ২ পাশে সাধারণ জনতা হাত নেড়ে স্বাগত জানাচ্ছে।

ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) সুন্নী যোদ্ধাদের প্রধান লক্ষ্য রাজধানী বাগদাদ দখল করা

সুন্নী যোদ্ধারা মঙ্গলবার সিরিয়ার হাইওয়ে বরাবর উত্তর ইরাকের বাকুবা শহরের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। শহরের প্রধান থানা ও অস্ত্রসস্ত্র এখন তাদের দখলে।

ইরাকের শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরী আল মালিকি ঘোষণা করেছেন,ইরাকের সুন্নী যোদ্ধাদের সৌদি আরব অর্থ সহায়তা দিচ্ছে । বেসামরিক লোকদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে চায়, তাদের সরকার অস্ত্র দিবে।

ইরাকের সরকারের আর এ ঘোষণার পর অনেকেই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। বেসামরিক এসব যোদ্ধাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) সুন্নী যোদ্ধাদের সাথে ইরাক সরকার শিশু যোদ্ধাদের লেলিয়ে দিচ্ছে।

ইরাকের শিয়া প্রধান মন্ত্রী মালিকি শিশু সহ সাধারণ জনগনের হাতেও যে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিচ্ছে সেটা কি ফেরত নিতে পারবে ? সহজ জবাব পারবে না , তাহলে কি হবে ? কেনিয়া , নাইজেরিয়া হবে ? সেই প্রশ্ন এখন মুখ্য।

কিছু দিন পূর্বে কয়েকটি ছবি টুইটারে প্রকাশিত হলেও সেটা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) সুন্নী যোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছে বলে এখনো আইএসআইএল নিজস্ব সূত্রে সত্য তা স্বীকার করেনি।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে - বেশ কয়েক জন সামরিক , বেসামরিক কে হত্যার ছবি প্রকাশিত হয়েছে , কিন্তু এই ছবি গুলো ইরাকের নাকি সিরিয়ার সেটা নিরপেক্ষ মিডিয়া গুলো নিশ্চিত হতে পারেনি। বিপ্লবী আইএসআইএল যোদ্ধাদের প্রচুর সমর্থন দিচ্ছেন সাধারণ জনগণ। রাস্তার ২ পাশে দাড়িয়ে করতালির মাধ্যমে আইএসআইএল যোদ্ধাদের স্বাগত জানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আইএসআইএল যোদ্ধাদের বিরোদ্ধে লুটপাট , গণহত্যার কালিমা লেপন করেনি সাধারণ মানুষ , অথচ কিছু পশ্চিমা মিডিয়া ফুলিয়া ফাফিয়ে কাহিনী প্রচার করছে। যার সূত্রে সত্যতা প্রশ্ন বিদ্ধ।

এদিকে আইসিসকে তালেবানের একটি অংশ বলে পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করলেও তালেবানের কোনো শাখা এখনো আইসিসকে তাদের অংশ হিসাবে দাবী করেনি।

বিপ্লবী আইসিসের কমান্ডারদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাথ আমলের সামরিক অফিসাররাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। সাদ্দাম হোসেনের সময়কার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ্জত ইব্রাহিম ও রয়েছেন । প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাথ আমলের বহু সাধারণ সৈনিক আইসিস সংগঠনের সাথে এরই মধ্যে যোগ দিয়েছেন। তাদের মোকাবেলা করার জন্যে ইরাকি সরকার গনগনের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। ইরানের সহযোগিতা পাচ্ছে না আইসিসের যোদ্ধারা। পাশ্চাত্যের নব্য সাম্রাজ্যবাদী মহল তাদের নিজ স্বার্থে ইরাক তথা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি , যোদ্ধ, হানা হানি জিইয়ে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট। তাদের হীন লক্ষ্য অর্জনের নেশায় অন্ধ। ইরাক ও ইরাকের জনগণকে তাদের কবল থেকে বের করে আনা পথ তৈরী হওয়া প্রয়োজন।



সাবেক সিআইএ বিশ্লেষক ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কর্মকর্তা কেনেথ পুলাক এক সাক্ষাত্কারের বলেছেন -
ইরাকের শিয়া প্রধানমন্ত্রী মালিকিকে সুন্নীদের ক্ষমতা বলয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে, তাদের ক্ষমতার অংশ করতে হবে। শুধু শিয়া পন্থী দের নিয়ে সরকার গঠন করলে হবে না। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরাকে বিমান হামলা চালায়ও, তাতে সুফল আসবে না।

বিপ্লব আইএসআইএল যোদ্ধারা , বিপ্লবী আইসিসের ইরাকে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক কার্যক্রম, নারীদের জন্যে আলাদা নিরাপত্থা , নারী পাচার রোধ , বৃদ্ধদের বিশেষ সেবা , দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ,পানি ও জ্বালানি বিতরণ এবং ক্লিনিক পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানেরও ব্যবস্থা করেছে।

আইসিস সংগঠনের অন্যতম পরামর্শ সভার নেতা আবু মোহাম্মদ আল-আদনানি বিদেশী মিডিয়াতে এক সাকাত্কারে বলেছেন - আমরা ভুল করে তা অস্বীকার করি না। মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল হবেই। তবে যদি অনিইচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয় থাকলে আমরা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

কিছু দিন পূর্বে কয়েকটি ছবি টুইটারে প্রকাশিত হলেও সেটা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) সুন্নী যোদ্ধাদের বিরদ্ধে চক্রান্ত বলে অনেকে মনে করছেন।

(১৭ জুন,২০১৪ - বাগদাদ , ইরাক থেকে )

বিষয়: বিবিধ

১৬৯১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

236096
১৮ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কোটি কোটি মানুষের চোখ এখন ইরাকের দিকে
236340
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০৯:২২
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : কিছুদিন আগ পর্যন্তও আমাদের কিছু অতি উৎসাহি ভাই ইরানের উত্থান নিয়ে খুব সরব ছিলেন। তাদের মতে, মুসলমানদের পক্ষে আমেরিকা তথা ইহুদি-খ্রিস্টানদের জবাব দেয়ার মতো উপযুক্ত বন্ধুর সৃষ্টি হচ্ছে। তখন তাদের হাজার বলেও বোঝাতে পারিনি, শীআদের অতীত ইতিহাস বলে মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য তারা ইহুদি-খ্রিস্টানদের সাথে হাত মেলাতেও প্রস্তুত। আজ জলন্ত বাস্তব উদাহরণ সকলের সামনে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File