বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাদের নাম আজো আমরা জানি না , বা কেন যে বলা হয় না, তা আজো আড়ালে !!!

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:০২:১৪ সকাল

মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক ইতিহাস রচনার জন্য যে বইটি থেকে রাজাকার বা দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের তথ্যাদি উদ্ধৃত করা হলো, তার শিরোনাম : রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা। এটির সংকলন ও সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এ এস এম সামসুল আরেফিন (আরেফিন)। মুক্তিযোদ্ধা আরেফিনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, ঢাকা এ বইটি ২০০১ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আরো কয়েকটি গ্রন্থ ( ইতিহাস )সম্পাদনা করেছেন। তার ‘রাজাকারদের তালিকা’ শিরোনামে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর রংপুর জেলার ওপর তার দু’টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। Collaborators of Pakistan Army শিরোনামে তার আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে।

আসি মুল বিষয়ে --

১৯৭১ এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র তালাশ করলে পাওয়া যাবে কিভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়েছে। পুলিশের যেমন সহযোগী বাহিনী আছে আনসার, তেমনি পাকিস্তান পুলিশের সহযোগী বাহিনী হিসেবে গঠন করা হয়েছিল রাজাকার বাহিনী। তাদের তখন অনেক সহযোগী ফোর্স দরকার ছিল। বর্তমান থানা কর্মকর্তাকে ইউএনও বলা হয়। তখন বলা হতো সার্কেল অফিসার। কেন ? আমার ভাই , বোন কে জানানো হয় না ?

যাক একটু বলার ছিলো --- ১৯৭১ সালে এসব সার্কেল অফিসারদের মাধ্যমে ইউনিয়ন বোর্ডে ঢোল পিটিয়ে রাজাকার বাহিনীতে জনবল রিক্রুট করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে সরকারিভাবে।

এবং তখন প্রতি ইউনিয়নে বর্তমান আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছিল ক্ষমতাশালী তাই তখন পাকিস্তান সরকার আওয়ামীলীগ এর বেশীর ভাগ মানুষকে ৯০% রাজাকার বাহিনীতে নিয়োগ দেয় যাতে গ্রামের মানুষ এদের ক্ষমতায় ও কথায় কাজ করে এবং সে সময় তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

যাদের নাম আজো আমরা জানি না , বা কেন যে বলা হয় না তা আজো আড়ালে ---

হাতের কাছে আজও আড়ালে নয় কি ?

ভোলা শহরের অঞ্জলী পোদ্দার, বিএকে (স্বামী রাধেশ্যাম) পুলিশ দালাল আইনে আটক করে (পৃ. ১৬৪)। দিগোলদী, ভোলা, বরিশালের নরেশ পালকে (পিতা মনমোহন পাল) দালালির অভিযোগে ১৭.১২.১৯৭১ তারিখেই পুলিশ গ্রেফতার করে (পৃ. ১৬৫)।

ফরিদপুরের -লারেপাড়া, ঘাগর হতে ,যথাক্রমে ১৮.১.১৯৭২ ও ০৫.২.১৯৭২ তারিখে পুলিশ দালাল আইনে দীপ্তি কুমার বিশ্বাস (পিতা যতীন কুমার বিশ্বাস), মানিকপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরের শান্তি রঞ্জন শীলকে (পিতা শ্যামরঞ্জন শীল) কে আটক (পৃ-১০২) করেছিল

পাবনার- রূপসী, শাহজাদপুর হতে , কৃষিজীবী মনোরঞ্জন দত্ত ও কৃষিজীবী সুশীল কুমার দত্তকে (পিতা নিতাইলাল দত্ত) দালালির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে ১৭.১.১৯৭২ তারিখে (পৃ. ৩১০)।

পুলিশ দালালির দায়ে গ্রেফতার করে খাণ্ডাল, জয়পুরহাট, বগুড়ার কৃষিজীবী মঙ্গলা রামকে (পিতা ইতান রাম) ৩০.১.১৯৭২ তারিখে (পৃ. ৩১০)।

ময়মনসিংহের - বড়াইচিরা, মদন, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বশরমাকে (পিতা ঈশ্বর চন্দ্র বিশ্বশরমা) পুলিশ দালালির দায়ে আটক করে (পৃ. ৫০৬)।

রাঙ্গামাটি গার্লস হাইস্কুলের শিক্কক মিস ছবি ও মিস ছায়া কে পুলিশ ২৩.১২.১৯৭১ তারিখে দালালির অভিযোগে গ্রেফতার করে (পৃ. ৫৫৪)।

আবার দেখা যায় -

রাঙ্গামাটি ব্যাপ্টিস্ট মিশনের রেভারেন্ড শৌল্যা প্র“ (পিতা লুসাই), সুইছি প্র“ (পিতা রিউ প্র“), মিসেস ম্রাসং চিং (স্বামী রিউ সিউ হা প্র“), মিসেস হ্রই (পিতা থামলিজা লুসাই), মিস টেলার (পিতা থামলিজা লুসাই), মাস্টার চং সুই প্র“ (পিতা রেভারেন্ড সিউ হালা প্র“) ও রাঙ্গামাটি ক্যাথলিক মিশনের উইলিয়াম লুসাইকে (পিতা ভানুনা লুসাই) পুলিশ দালালির দায়ে গ্রেফতার করে (পৃ. ৫৫১)।

চাকমা রাজা ত্রিবিদ রায়ের ভাই জনি রায়কে দালালির দায়ে ২২.১২.১৯৭১ তারিখে গ্রেফতার করা হয় (পৃ. ৫৫২)। কিল্লামুরা, রাঙ্গামাটির প্রদীপ ত্রিপুরাকে (পিতা ধীরেন্দ্র ত্রিপুরা) পুলিশ রাজাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে (পৃ. ৫৫১)।

রাঙ্গামাটির , পাগরা হতে অজিত কুমার চাকমা (পিতা চিক্কমতা চাকমা), নোয়াচন্দ্র চাকমা (পিতা চিদ্দা চাকমা) ও নীরোলেন্দু চাকমাকে (পিতা আনন্দমোহন চাকমা) একই দিন একই অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে।

মুক্তিযোদ্ধা আরেফিনের গ্রন্থগুলোকে সাধারণভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

তিনি লিখেছেন : ‘সকল যুদ্ধেই ২ ভাগ থাকে এক ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের , শেষ ভাগ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং শহীদদেরও তালিকা প্রকাশ করে ইতিহাসের দাবি পূরণের চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করিনি।

মুক্তিযোদ্ধারা কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, কাদের হাতে বা কাদের উৎসাহে বাংলাদেশের বীর সন্তানেরা শহীদ হলেন ,তাদের নাম জানার বা জাতিকে জানাবার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি।

তাই বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার স্বার্থে স্বাধীনতার প্রতিপদের সঠিক ইতিহাস চিহ্নিত করা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক ইতিহাস রচনার জন্য এই তালিকা আগামী দিনের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠ গবেষকদের পথনির্দেশনা প্রদান করবে।

বিষয়: বিবিধ

৬০৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File