নাগরীক সড়ক

লিখেছেন লিখেছেন নোমান সাইফুল্লাহ ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:৩০:২৩ সন্ধ্যা



এক.

আজ মনমরা আকাশের ফ্যাকাশে রঙ দেখে মনে হলো কোন অর্ন্তবর্তী কোন কষ্ট যাপনের স্ফটিক স্বচ্ছজল নেমে পড়ছে, চিপাগলির শক্ত চোয়ালটাও তখন স্যাঁতস্যাতে। জলছাদের ওপর নির্লিপ্ত ফুলের টবগুলো কোন সমূহ নষ্টালজিয়ায় বিষণ্ন রঙ শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিজে যাচ্ছে চুপচাপ। বৃষ্টি ভেজা বাতাসে গুমোট নিঃশ্বাসের শব্দ আছে। পাহাড়ের পাদদেশে জমে থাকা জলপ্রপাত একা একা কানে কানে কি সব কথা বলে গেল, শহুরে মন বড় বিভোল বিবর্ণ। স্যুটকেসে ফেলে রাখা কিছু পুরনো চিঠি পড়ে দেখব নাকি! রূপার কাংখার মতো কোমল কিছু ভালোবাসা। একদম ষ্টিল লাইফের বালিশের নিচ থেকে ঘড়ি বের করে দেখব এখন ক’টা বাজে! আমার ছোট্ট রুমটায় আলো আঁধারের ফারাক খুব অল্প। সাইলেন্ট মুঠোফোন। দুমড়ে মুচড়ে উঠে যাওয়া, ছুটে চলা জীবন। ট্রাফিক সিগনাল লালবাতি। লালবাতি নিভে গেলেও হার্টের বাল্বগুলো আর জ্বলবে কিনা জানি না। সময় এগিয়ে যাবে। আমি শুধু ট্রাফিক সিগনাল জেবরা ক্রসিং এ একা দাঁড়িয়ে থাকব কিনা! মনমরা সন্ধ্যায় প্রায়ই এমন মনে হয়। ব্যাথার পেনিসিলিন গিলে কতদূর হেঁটে যাব! লোকাল বাসে প্রচন্ড ভিড়। অস্থির বাসষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষার প্রহর। মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে, কিন্তু একদমই ঝুমঝুম আকাশের হৃদয় নিংড়ানো অশ্রু একদমই আসে না। আমার মনের আকাশটাও একই রকম।



দুই.

মেঘলা দিনে এ শহরের মানুষগুলোর চেহারাও কেমন সাদাকালো হয়। কাঁদামাখা সিটি কর্পোরেশন পথ। ইতিহাসের টাইম মেশিন ঘুরে সুনসান নীরব নগরী। চিন্তার বাঁক ঘুরে সামনে দাঁড়ায়। সময়ের উন্নতি বহুতল ভবনের সামনে আমি। নগরায়নের এ সড়ক কোথায় গিয়ে দাড়াবে? কোনটা নগর কোনটা প্রাচীন। দুহাতে ইতিহাসের পথটাকে দূরে ঠেলে দেই। এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। এক্সকিউজ মি, লিসেন টু মি, আপনাকে বলছি, গিটার আর সিগারেট শিখে কার চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন? কোন সময়ের গান কেন গাওয়া হয়! সিটি কলেজ মোড়ে সুইটি হারিয়ে যায়, এ সুরের মত অর্থহীন তার হেঁটে যাওয়া পথ।

তিন.

এ নগরে আমি আবার আসব এ কথা বলতে পারছি না। তবে মোমবাতির নিচে গলে গলে যে সময় জমা হয়, তার মত কিছু পোড়ানো অনুভূতি জমাট বেঁধে থাকবে নতুন করে পোড়ার আকাংখায়। খবর কাগজের মত এ সংবাদ মিথ্যে নয়। সম্পাদক সাহেব এবার একটা ফিচার লিখুন। কিভাবে সাজগোজ করলে জীবন সুখি হয়, কিভাবে রান্না করলে তৃপ্তি পাওয়া যায় এসব।

চার.

কেন এত নীতি কথা আইডলজির কথা বলেন? আমার মত রোমান্সে অবগাহ করুন। এ নষ্ট শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান না কেন? নীলা তোমার প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। পাশের জানালায় শুনছিলাম গৃহবধুর অতৃপ্তির কথা। তার গোপন অভিসারের কথাও অজানা নয়। সুবিমল একটি পৃথিবী আগামীর জন্য এ একটি অসম লড়াই। রোমান্টিক স্বপ্নের চেয়ে বড় বাস্তবতা অনিঃশেষ সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি। জীবন আর মৃত্যুর ফারাক একটি মাত্র বুলেটের শব্দের দুরত্বে। বাবার মৃত্যুর পর কবরের সামনে দাঁড়ালে মনে হল, আমারও দুচোখে মহাকালের ঘুম আসছে। নামের পাশে স্থায়ী ঠিকানা লিখতে দ্বিধায় পড়ে যাই। আমার কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। এ শহর একটি কারাগার। আমার জেল জীবনে তোমাকে খুব মনে পড়েছিল ঠিকই। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, তোমার পৃথিবী আমার দুনিয়া একই সঙ্গে একই গ্রহে বসবাস করে না। অন্য কোথাও ব্লাকহোলের ভেতর। কালো কৃষ্ণ গহবরের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বারবার বলতে চাই, সত্যের কোন পরাজয় নেই। বিজয়ের পান্ডুলিপি লিখে, সত্যের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে, একবার নয় বারবার মরতে চাই।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File