জাল মুদ্রা তৈরী জঘন্যতম অপরাধ

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:০৫:৩৫ সন্ধ্যা



মানব ইতিহাসে যখন থেকে ধাতব মুদ্রা (Metal Coin) ও কাগজি নোট (Paper Currency) আবিস্কার হয়েছে তখন থেকে জাল করার প্রক্রিয়া শুরু। পৃথিবীর কম বেশী সব দেশে একটি শক্তিশালী চক্র জাল মুদ্রা ও জাল নোট তৈরীর কাজে জড়িত। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি সহজে অননুমোদিত পন্থায় মুদ্রা তৈরীর কাজ চলছে অব্যাহতগতিতে। জাল মুদ্রা তৈরীর কাজটি ‘বিশ্বের দ্বিতীয় পুরনো পেশা’ হিসেবে পরিচিত। কাগজি নোট বের হওয়ার বহু আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালে গ্রীক নগরী লিডিয়া’তে সর্বপ্রথম ধাতব মুদ্রার উদ্ভব ঘটে। খাঁটি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার আদলে সুকৌশলে দস্তা, তামা ইত্যাদি নানা ধাতব মিশ্রণ করে ভেজাল মুদ্রা তৈরী করা হতো।

১২০০খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম চীন দেশে কাগজি নোটের প্রচলন ঘটে। কাঠ ও মালবেরি বৃক্ষকে প্রক্রিয়াজাত করে মুদ্রা ছাপানো হতো। কোন দুষ্কৃতকারী যাতে জাল মুদ্রা তৈরী করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় মালবেরি বৃক্ষের বাগান পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এক সময় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় জালনোট প্রস্তুতকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হতো। এখনো চীন ও ভিয়েতনামে মৃত্যুদন্ড বহাল আছে। ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডে থমাস রজার্স নামক এক ব্যক্তিকে ৪০টি রৌপ্যমুদ্রা জাল করার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। ব্রিটেনে প্রতি ৫ হাজার নোটের মধ্যে একটি জালনোট পাওয়া যায়। ২০১০ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্রিটেনে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ১ পাউন্ডের জাল নোট বাজারে চালু রয়েছে। বিগত ৩ বছরে মার্কিন সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার হতে সংগৃহীত ২৬১ মিলিয়ন জালনোট অপসারণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মানের প্রতি ১০ লাখ নোটের মধ্যে ২ থেকে ৩টি জালনোট চিহ্ণিত করে এবং ধ্বংস করে দেয়।

বাজারে জাল মুদ্রার অনুপ্রবেশ জাতীয় অর্থনীতিতে নানামুখী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে: (ক) খাঁটি ও আসল মুদ্রার মূল্যমান হৃাস পায় (খ) বাজারে অধিক পরিমাণে টাকা সার্কুলেশনের ফলে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি (Inflation) পায় (গ) মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা হৃাসপ্রাপ্ত হয় এবং (ঘ) ব্যাংক যখন জাল টাকা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় তখন স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলশ্রুতিতে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তাঁরা দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে দেন। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।

অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বৃদ্ধ, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকেরাই হচ্ছে নোট জালকারীদের মূল টার্গেট। বাংলাদেশ সরকার জালনোট প্রস্তুতকারীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে নানামুখী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিভিন্ন তফসিলী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক জালনোট প্রস্তুতকারী ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে এতদসংক্রান্ত ৫হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

জার্মাানীর সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক ‘জালনোট বিশ্লেষণ কেন্দ্র’ ( Fake Note Analysis Centre) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য উন্নতকরণ ও জাল টাকার সরবরাহ বন্ধকরণ। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে জালনোট প্রস্তুতের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে নতুন আইন তৈরী করে।

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার কোরবানীর পশুর হাটে জাল নোট সনাক্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪০টি মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোরবানীর পশুর হাটে নোট জালকারী চক্রের অপতৎপর রুখতে দেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও থানা পর্যায়ের অনুমোদিত হাটে এই সেবা দেবে, যা হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে।

জালনোট তৈরী করা স্পষ্টত প্রতারণা, ধোকাবাজি ও জুলুমের শামিল। যারা এ অপকর্মের সাথে জড়িত তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের দুশমন। ইসলামে এসব গর্হিত কাজ সম্পূর্ণ হারাম ও দন্ডনীয় অপরাধ। যে প্রতারণার সাথে জড়িত সে মহানবী (সা.)-এর উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। জালিমদের জন্য পরকালে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।

http://www.alokitobangladesh.com/islam-&-economics/2013/10/06/27074

বিষয়: বিবিধ

১৪৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File