ট্যুর এন্ড ট্রাভেলঃ এই শীতে বেড়াতে আসুন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি ۩۞۩এক নজরে রাঙ্গামাটি জেলা۩۞۩

লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ০৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২৪:৫১ দুপুর



ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির দুরত্ব ৩২৮ কিঃমিঃ।

চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙ্গামাটির দূরত্ব ৮৬ কিঃমি।



ষড় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশে। সময়ের আবর্তনে চলছে শীত। আর শীত মৌসুমই হলো পাহাড় আর অরণ্যের শহর রাঙামাটিতে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পাহাড়ের পাদদেশ। শীতের হিমেল পরশে সজীব হয়ে উঠে পার্বত্য প্রকৃতি। এই শীতেই শতশত গাড়ির যান্ত্রিক কোলাহলে ধ্যান ভাঙে গুরুগম্ভীর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শহর রাঙামাটির। সারাটা শীত মৌসুম জুড়ে যেন উৎসব লেগে থাকে এই ছোট্ট পাহাড়ী মফস্বল শহরটিতে।

১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টির সংস্পর্শে আসতে হলে আপনাকে শীত মৌসুমেই আসতে হবে রাঙামাটি।

রাঙামাটি বেড়াতে এলে হাতে অন্ততঃ দুই দিন সময় নিয়ে আসবেন। তা না হলে ভ্রমন অপূর্ণ রাখার যন্ত্রণা নিয়েই কিন্তু ফিরতে হবে।

۩۞۩ রাঙ্গামাটিতে কি কি দেখবেনঃ ۩۞۩

۩۞۩ ঝুলন্ত ব্রিজঃ

রাঙ্গামাটিতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত ব্রীজ। পর্যটন মোটেলের পাশেই নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে হৃদ্দিক সম্পর্ক। সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি আপনাকে এনে দেবে ভিন্ন দ্যোতনা। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। ওপারেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ইচ্ছে হলেই দেখতে পাবেন আদিবাসী জীবনযাপনের ক্ষয়িষ্ণু চালচিত্র।

۩۞۩ রাজবাড়ী ও রাজবনবিহারঃ

রাঙামাটি এসে চাকমা রাজবাড়ী আর তদসংলগ্ন রাজবনবিহার দেখতে কিন্তু মোটেই ভুলবেন না। চাকমা রাজার পুরনো বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং রাজবনবিহারের মনমুগ্ধকর নির্মাণশৈলী দেখে আপনি অবাক হবেন বৈকি! এখানে এসে ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের দেখা পাবেন। গেরুয়া রঙের কাপড় পরিহিত নির্জনতা প্রিয় এইসব ভিক্ষুকদের জীবনাচরণ সত্যিই অনুসরণযোগ্য।

۩۞۩ বিভিন্ন পিকনিক স্পটঃ

রাঙামাটি শহর থেকে আধঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত আরণ্যিক পিকনিক স্পট বালুখালী কৃষি ফার্ম, পেদতিংতিং ও টুকটুক ইকো ভিলেজ। এখানে নির্জনতাপ্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে প্রায় সকল ব্যবস্থা। এমনকি আদিবাসীদের ঘরের স্টাইলে মাচাং এর উপরে কটেজ।

۩۞۩ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধিঃ

এই রাঙামাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাত বীরশ্রেষ্ঠদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ। রাঙামাটি শহর হতে জলপথে একঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত বুড়িঘাটে এই সমাধি অবস্থিত। চারিদিকে কাপ্তাই লেকের নীলজল খেলা করে আর তার মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপে ঘুমিয়ে আছেন আমাদের চির স্মরণীয় অসামান্য বীর। দেশপ্রেমিক আর ইতিহাস সচেতন পর্যটকরা এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পাবেন অপূর্ব এক সুযোগ।

۩۞۩ শুভলংঃ

পর্বতপ্রেমী পর্যটকরা যেতে পারেন শুভলং অভিমুখে। পাহাড় হ্রদের নিবিড় নৈকট্যে আপনার মনেও সৃষ্টি করতে পারে ভিন্ন এক অনুভূতি। কিন্তু একটাই র্দূভাগ্য শীত মৌসুমে ঘুমিয়ে থাকে এখানকার পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো। রিজার্ভ বাজার থেকে জাহাজে করে শুভলং যেতে হবে। শুভলং এর পাহাড়ের উপরে উঠে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন।

এছাড়াও আপনি রাঙামাটির যেসব স্থান ঘুরে দেখতে পারেন তা হলোঃ

উপজাতীয় জাদুঘর,

ডিসি বাংলো,

পলওয়েল পর্যটন,

বনবিথী,

রাঙামাটি বেতার কেন্দ্র,

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ,

রাঙামাটিস্থ টেলিভিশন উপকেন্দ্র,

বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র (অনুমতি সাপেক্ষে)।

রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকরা যেতে পারেন বাঘাইছড়ির সাজেক উপত্যকায়। এখানে দুর্গম পাহাড় শীর্ষে আরোহণ করার মজাই আলাদা। হাতি দেখতে হলে যেতে পারেন কাউখালী ও লংগদু।

۩۞۩ কাপ্তাইঃ ۩۞۩

কাপ্তাইয়ে রয়েছেঃ

কাপ্তাই নেভী ক্যাম্প পিকনিক স্পর্ট,

প্যনোরামো জুম রেঁম্েনারা,

গিরিনন্দিনী পিকনিক স্পর্ট।

কাপ্তাইয়ে আছে বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও

কর্নফুলী পেপার মিলস।

তবে এ দুটি স্থানে ভ্রমন করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন আছে।

তবে যেখানে যা কিছু সুন্দর আপনি উপভোগ করেন না কেন, কাপ্তাই হ্রদে ভাসমান বার্জ গিরিশোভায় বসে বৈকালিক চা পান করতে করতে পাহাড়ের আড়ালে অস্তগামী সূর্যের নৈসর্গিক দৃশ্য এখানে আপনার বাড়তি পাওনা।

۩۞۩ হস্তশিল্প সামগ্রীঃ

আপনারা জন্যেই এখানে রয়েছে উপজাতীয় রমণীদের হস্তশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজ সমৃদ্ধ জামা কাপড়, শোপিচ ইত্যাদি। রাঙামাটি শহরের তবলছড়িস্থ কল্পতরশুতে গিয়ে আপনি পাবেন হাতির দাঁতের বিভিন্ন জিনিসপত্র। তাড়া বনরূপা, রিজাভ বাজার থেকে হস্ত শিল্প সামগ্রী ক্রয় করতে পারেন।

۩۞۩ কিভাবে যাবেন রাঙ্গামাটি?

আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন রাঙামাটিতে আসতে হলে চট্রগ্রামস্থ অক্সিজেন রাঙামাটির বাস টারমিনাল আসতে হবে। এখান থেকে আধা ঘন্টার ব্যবধানে আপনি পাচ্ছেন--

পাহাড়ীকা ও লোকাল বাস সার্ভিস।

পাহাড়ীকা বাসের ভাড়া ১১০ টাকা এবং লোকাল বাসের ভাড়া ৮৫টাকা।

পাহাড়ীকা বাসে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা এবং লোকাল বাসে ৩-সাড়ে ৩ ঘন্টা।

সকাল ৭টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া যায় বাস।

এছাড়া যারা আরামদায়ক ভ্রমন করতে চান তাদের জন্য আছে বিলাস বহুল সার্ভিস-----

এস. আলম,

ইউনিক,

হানিফ ও

বিআরটিসি।

এই সকল বাস সার্ভিসের ভাড়া ১০০-১২০টাকা। সময় লাগবে ২.৩০-৩ ঘন্টা।

এছাড়া নিজস্ব গাড়ী অথবা ভাড়া করা মাইক্রো, কার, ক্যাব নিয়েও আপনি আসতে পারেন রাঙামাটি। নিজস্ব গাড়ী নিয়ে আসলে সময় এবং অর্থ দুই’ই সাশ্রয় হবে ।

۩۞۩ কোথায় থাকবেনঃ

রাঙামাটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালমানের হোটেল আছে। যেমনঃ

হোটেল সুফিয়া,

নীডস হিল ভিউ,

মোটেল জর্জ,

হোটেল গ্রীন ক্যাসেল,

শাইনিং হিল গেষ্ট হাউজ,

টুকটুক ইকো ভিলেজ,

হোটেল আনিকা অন্যতম।

এগুলো মোটামুটি ভালো মানের হোটেল। ভাড়া ৫০০টাকা হতে ২০০০টাকা পর্যন্ত।

আবার কমদামী কিছু হোটেলও আছে। যেমনঃ

মধুমিতা,

সৈকত,

শাপলা,

ডিগনিটি,

সমতা, উল্লেখযোগ্য।

এগুলো ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা।

সরকারি বিভিন্ন দফতরের রেষ্ট হাউস, গেষ্ট হাউস এবং বাংলোগুলো নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ এবং অনুমতি সাপেক্ষে ভাড়া দেওয়া হয়।

সৌন্দর্যের রাণী পার্বত্য সুন্দরী রাঙামাটি আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সুতরাং আর দেরি নয়, এখনি চলে আসুন।বদলে যচ্ছে রাঙামাটি। দিনে দিনে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ না হওয়ায় হতাশ পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাঙামাটি থেকে। তবুও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকারী উদ্যোগ না থাকায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প।

সুত্রঃ

বিজয় ধর ।। রাঙামাটি

http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=686&table=january2013&date=2013-01-07&page_id=29&view=0&instant_status=0

۩۞۩ এক নজরে রাঙ্গামাটি জেলাঃ۩۞۩

রাঙ্গামাটি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র এখানে অবস্থিত।

۩۞۩ ভৌগোলিক সীমানাঃ

রাঙ্গামাটির মোট আয়তন ৬১১৬.৩ বর্গ কি.মি। এ জেলা উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে বান্দরবান জেলা পূর্বে ভারতের মিজোরাম প্রদেশ এবং মায়ানমারের চীন প্রদেশ ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম জেলা দ্বারা পরিবেষ্ঠিত।

প্রধান নদীকর্ণফুলি, থেগা, হরিনা, কাসালং, শুভলং, চিঙ্গড়ি, কাপ্তাই।

۩۞۩ প্রশাসনিক এলাকাসমূহ:

রাঙ্গামাটি পৌরসভা ৯ টি ওয়ার্ড ও ৩৫ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। শহরের মোট আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গ কি.মি। ১৯৮৩ সালে রাঙ্গামাটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। এ জেলায় ১০ টি উপজেলা, ৫০ টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৬২ টি মৌযা ও ১৩৪৭ টি গ্রাম আছে।

۩۞۩ রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলা হলোঃ

কাউখালী,

কাপ্তাই,

জুরাছড়ি,

নানিয়াচর,

বরকল,

বাঘাইছড়ি,

বিলাইছড়ি,

রাঙ্গামাটি,

রাজস্থলী এবং

লংগদু

۩۞۩ রাঙ্গামাটির ইতিহাসঃ

মুসলিম বিজয়ের পূর্বে রাঙামাটি ত্রিপুরা ও আরাকানের রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। ১৬৬৬ সালে এই অঞ্চল মুঘলদের দখলে আসে। ১৭৬০-৬১ সালে এটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হয়। ১৭৩৭ সালে শের মোস্তা খান নামক একজন গোত্র প্রধান মুঘলদের নিকট এখানে আশ্রয় পান। সেই থেকে চাকমারা ও পরবর্তিতে অন্য আদিবাসীরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। অন্য আদিবাসীদের ভিতর বোম, চাক, খুমি, খেয়াং, লুসাই, মো, মুরাং, পাঙ্কু, সান্তাল, মনিপুরিরা প্রধান।

۩۞۩ চিত্তাকর্ষক স্থানঃ

কাপ্তাই হ্রদ,

রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ,

রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধবংসাবশেষ, #

ঝুলন্ত সেতু,

বুদ্ধদের প্যাগোডা,

রাজ বনবিহার,

শুভলং ঝর্ণা।

সুত্রঃ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

۩۞۩ রাঙ্গামাটি লেকের উৎপত্তি কিভাবেঃ

ষাটের দশকে কর্ণফুলি নদীতে বাধ দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ফলে এটি রাঙ্গামাটি জেলার ২৬৫ বঃকিঃ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে লেকের সৃষ্টি করে। গড়ে উঠে বাংলাদেশর একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসাবে।

পার্বত্যর জেলার খবর জানতে হলেঃ

http://www.chtnews24.com/

http://chtpost.com/

বিষয়: বিবিধ

৩৬৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File