প্রসঙ্গ : আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু।

লিখেছেন লিখেছেন সেইন তীরের বাসিন্ধা ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৬:০২:১২ সন্ধ্যা



আমাদের রাষ্ট্রের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে--"গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।" প্রজাতন্ত্রে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ।

জনগণকে এই শিরক মিশ্রিত মুলা ঝুলানো পাম্প দিয়েই যুগের পর যুগ কার্যতঃ রাজতন্ত্রই চলছে এখানে। যাই হোক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে জনগণের খেদমত করার জন্য জনগণই ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ৫ বৎসরের জন্য নির্বাচিত করে ক্ষমতায় পাঠায়। লক্ষ্য করুন তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত উক্ত নির্বাচন যখন আসে তখন সচরাচর শ্লোগানে শুনা যায়-- নেতা আছেনি রে ! কোন্ সে নেতা !! নেত্রী আছেনি রে !!! কোন্ সে নেত্রী !!!! মার্কা আছেনি রে ! কোন্ সে মার্কা !! কিংবা ব্যানার ফেস্টুনে লিখা দেখা যায়-- জনদরদী, সৎ-যোগ্য ও সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন, গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের বন্ধু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর-- ব্লা ব্লা ব্লা ইত্যাদি। নির্বাচনের পরের ইতিহাস সবারই জানা। কেবিনেট থেকে ইউনিয়ন সর্বত্রই প্রায় একই দশা।

আমাদের এই অবাস্তব সমাজের বাস্তবতা হলো সত্যকে সত্য বলার মানুষের চাইতে মিথ্যাকে সত্য বলার মানুষের পার্সেন্টেজ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যা আমাদের মনুষত্বকে কেড়ে নিচ্ছে দিনের পর দিন। বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই ব্যক্তিত্বহীনের মতো দুর্বলের বিপক্ষে সবলের পক্ষে তথা নেতা-নেত্রীর তোষামোদি ও নির্লজ্জ তৈলমর্দন চলছেই হর্দম। লজ্জাতে যেনো ফরমালিন মেশানো। দেশপ্রেমিক, দেশমাতা, জননেত্রী, দেশনেত্রী, দেশরত্ন, পল্লীবন্ধু, পল্লীজননী, ধরনী কন্যা আরো কতো কি বিশেষণের ছড়াছড়ি? উক্ত বিশেষণ সমষ্টি আইন প্রনেতারা সংসদে গিয়ে আইন পাশ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের কিংবা স্পেশাল ট্রাইবুনাল করে একচেটিয়া ফাসির ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু এই সকল হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত ফুটপাতে পড়ে থাকা পথশিশুদের জন্য আইন করে মাথাগোজার এক তীল ঠাঁই ও দু-বেলা দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে না। যদিও অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান জনগনের এই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করাই হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান কাজ। মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করা তো দূরের কথা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো কী কী তাও হয়তো এই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুগুলো জানে না। তারা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। আলোকিত এই ধরণীতে দারিদ্রতা নামের ভারি বোঝা মাথায় নিয়ে নিত্যদিন বয়ে চলেছে এই পথশিশু নামের আলো বঞ্চিত সোনামুখগুলো। পৃথিবীর বুকে রোজই সূর্যের সোনালি আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ে। অথচ এই হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া পথশিশুদের পৃথিবী ধূসর অন্ধকারময়। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা দারিদ্র্যের কষাঘাতে হীনমন্যতায় ভোগে। জীবনকে নিশ্চিত করতে বেছে নেয় অনিশ্চিত কোনো পেশা। অন্ধকারময় গলি থেকে বিপথগামী হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, টোকাই ও পকেটমারসহ নানা ধরনের পেশায় জড়িয়ে পড়ে। মানুষ তাদের ছোটখাটো অপরাধ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ তৈরী করে না বরং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অমানবিক অত্যাচার চালায়, কখনো কখনো অত্যাচারের মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে যায় যেনো ওরা মানুষ নয়, পশুর চেয়েও অধম ! হাত পা বেধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ অথচ ঐ পুকুর-চোরদের কেউ কিছু বলে না যারা কলমের এক খুঁচায় জনগণের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কিংবা ডিজিটাল কায়দায় বিদেশী ব্যাংকগুলোতে টাকার পাহাড়সম স্তুপ গড়ছে। এদেরকে দেখার মতো কেউ নেই। সবাই সবার আখের গোছাতে ব্যস্ত। যে যেভাবে পারছে সেভাবে লুটে পুটে খাচ্ছে। শেয়ারবাজার ধ্বংসের হোতাদের অন্যতম অংশীদার অর্থমন্ত্রী মহোদয় নিজেই জাতীয় সংসদে স্বীকার করে কিছু কিছু বিষয়কে পুকুরচোরীর বদলে সাগরচোরী হিসেবেই অভিহিত করেছেন। তথাপি ঐ পুকুরচোরদের ধরা হয়নি, আইনের আওতায়ও আনা হয়নি ফলে দুর্নীতি আরো মাথা-ঝাড়া দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর উন্নয়নের কথা যদি বলি- কপাল উপরে উঠে যাবে। কিন্তু কেউ দেখেও দেখছে না, বুঝেও বুঝছে না। তাইতো কথায় আছে- হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ। রাস্তা-ঘাট উন্নয়নের চিত্র এরকম যে রাস্তার গর্তে মানুষ এখন বর্শী বায় আর সরকারী বিল্ডিং কিংবা পুল-কালভার্ট তেরীতে রডের পরিবর্তে বাশ ব্যবহৃত হয়। উন্নয়ন এখন টেলিভিশন বান্ধব। সমাজের মানুষ গুলোর চোখের দৃষ্টি অন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিবেকের দৃষ্টিও অন্ধ হয়ে গেছে। জিতের নৌকায় সবাই হিপ্পোই হিপ্পোই মারতেছে। পাশাপাশি কিছু কিছু নির্লজ্জ সাংবাদিক ও মেজর সংবাদ মাধ্যমগুলো পোষা বিড়ালের মতো কাজ করছে।

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। দেশের মানুষের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট পাশের পরও বেঁচে থাকার তাগিদে কেউ কুকুরের সঙ্গে ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে কিংবা মাইলের পর মাইল হাটে খাবার যোগাড় করতে। আবার কেউ দুই-তিন মাইল হাটে খাবার হজম করতে। কী নিষ্ঠুরতা কী বৈষম্য ! একই স্রষ্টার সৃষ্টি আমরা, তিনি চাইলে ওদের সাথে আমাদের স্থানটা উল্টোও হতে পারতো", যেহেতু জন্ম ও মৃত্যু আমাদের হাতে নয়।

সিলেটী গ্রামীণ একটি প্রবাদ আছে- "তেলি মাথায় ঢালো তেল, রূক্ষ মাথায় ভাঙ্গো বেল।" আমাদের বর্তমান সমাজটা যেনো তারই উৎকৃষ্ট উদাহরন। আল্লাহ, গড, ঈশ্বর, ভগবান, স্রষ্টা যে যেই নামেই ডাকি না কেনো তিনি তো সর্বজ্ঞ ও অন্তর্যামী। "জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।" কয়জন সেই অমীয় বাণী উপলব্ধি করছেন? সেই সেবা বা প্রেম কয়জন করছেন? মহান আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে হলে তাঁর নির্দেশিত পথে যেমন চলতে হবে তেমনি তাঁর সৃষ্টিকেও আগে ভালবাসতে হবে। তেলা মাথায় তেল নয় শুকনো মাথায় তেল দিলেই তিনি তোমার প্রতি সদয় হবেন।

তাই আসুন বিবেকের দরজা না খুললেও অন্ততঃ মনুষ্যত্বের জানালাটুকু খোলে মাঝে মধ্যে নিজেকে কোন পঙ্গু, অন্ধ, ভিক্ষুক, অদ্ভুত চেহারার মানুষের সাথে কল্পনাতে পাল্টিয়ে দেখি অনুভবের অলিন্দে কেমন দাগ কাটে আর সমাজের নির্যাতিত, অবহেলিত, শোষীত, হতদরিদ্র মানুষের জন্য মন কাঁদে কি না? যদি একটুও দাগকাটে তবে মিথ্যা অহংকারকে মোছে ফেলে ঐসকল হতদরিদ্র মানুষের দিকে তাকাই, হীন আচরন বন্ধ করি, একটু মানবিক হই, সহানুভুতি ও ভালবাসার হাত বাড়াই আর এদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বার্থে দীর্ঘ-মেয়াদী কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই।

বিষয়: বিবিধ

৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File