রহস্যময় ফোন ১ - ৫

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মাদ আবু মুছা ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:৩৫:০০ দুপুর



মধ্যরাত গড়াতে ঘন্টাখানেক বাকি। সচরাচর পরীক্ষার সময় ছাড়া এত রাত জাগা হয় না। ব্যতিক্রমের কারণ স্কুলের হোম ওয়ার্ক। বেত ব্যবহারের দিক দিয়ে অমিত স্যারের খ্যাতি বেশ। ছাত্ররা যমের মতো ভয় পায়। সুতরাং, রাত গভীর হলেও ম্যাথগুলো সোল্ভ করতে হবে। আর দু'টো বাকি আছে। মাইনাস বি প্লাস মাইনাস রুটওভার বি স্কয়ার মাইনাস ফোর এ সি বাই টু এ। দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান সূত্রটি লিখে শেষ করতে পারিনি, পড়ার রুমের বাতিটি নিভে যায়। লোড শেডিং। নাহ, পড়াশুনার সাথে এই অনাকাঙ্খিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বৈরী আচরণ আর ভাল্লাগে না। বই খাতা বন্ধ করে বিছানায় যাই। বাবাকে কালই বলতে হবে একটা চার্জার লাইট নিয়ে আসতে।

গ্রিষ্মকালে রাতে লোডসেডিং যেমন স্বাভাবিক ব্যাপার তেমনি যন্ত্রনাদায়কও। ভ্যাপসা গরম। সারা দিনের তীব্র খরতাপের প্রভাব রাতে বেশ আচ করা যায়। কিছুটা একটু স্বস্থির জন্য হাতপাখা ঘোরানো ছাড়া কি কর্তব্য থাকতে পারে! চোঁখ বুজে ভাবছিলাম কিছু একটা। এসময় একটি কল আসে আমার ফোনে। স্ক্রীনে দৃষ্টিপাত করি। নাম্বার পরিচিত না, আননোন। রিসিভ করলাম দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে। হ্যালো। ও প্রান্ত থেকে,

- কেমন আছো ?

- জ্বি, কে বলছেন ?

- চিনবে, তুমিই চিনবে।

- আমি চিনতে পারছি না।

- অস্থির হয়ে যাচ্ছ কেন ?

- আপনার পরিচয় না দিলে চিনবো কিভাবে ?

- হ্যা, সেটাই প্রশ্ন। তবে তার উত্তর তুমি শিগগিরই পেয়ে যাবে। তুমার নাম মুসা না ?

শেষের প্রশ্নটি তড়িত শকের মতো লাগলো। আমার নাম জানে কিভাবে লোকটা! আড়ষ্ট গলায় জবাব দিলাম "হ্যা, কিন্তু..." সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি কি তাহলে কল ব্যাক করবো ? কেমন জানি ভয় ঢুকে মনে। বার বার নাম্বারটি মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। নাহ, আমার পরিচিত কারো টেলিটক নাম্বার না। হিসাব মিলে না কোনমতে। কে হতে পারে লোকটা ? ঐ রাত ঘুমাতে পারিনি দুশ্চিন্তায়। আমার সাথে ইতোপূর্বে এমনি কখনও ঘটেনি।ফজরের সম্মোহনী আযান। নিদ্রাচ্ছেদ ঘটে আমার। উটে ওযু সেরে সালাতুল ফজর আদায় করি। তারপর প্রভূর ঐশী কালামের শ্রুতিমধুর ব্যঞ্জনা মনে এক অনাবিল শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। বই খাতা নিয়ে টেবিলে বসি অবশিষ্ট হোম ওয়ার্কগুলো শেষ করবো বলে।

সকাল ১০ টা। স্কুলের মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। এসেম্বলি চলছে। যোগ দেই আমিও। সকালের প্রখর তীর্যক রোদে দাঁড়ানো কষ্টকর। তবে একটি বিষয় আমার বড্ড ভালো লাগে। সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীতের সুর লহরী। কষ্টকর পিটি তখন বেশ উপভোগ্য মনেহয়। কিন্তু মা একদিন বলেছিলেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের কথা। বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। এটা নাকি আমাদের নিজেদের সঙ্গীত না। এটা নাকি বাংলা ভাগের সময় এর বিরোধীতা করে লিখা হয়েছিলো। তাহলে কিভাবে এটা আমাদের সঙ্গীত হয়ে গেলো ? যা হোক, এসেম্বলি শেষ হয় খানিক পরে। এরই মধ্যে চৌকিদার সমীরণ দাদার বিবেচনাহীন আঘাতে ক্লাস ঘন্টি আর্তনাদ করে ক্লাসের সূচনা জানান দেয়।

অমিত স্যার প্রথম পিরিওডেই। রোল কল শেষে হোমওয়ার্কগুলো দেখা শেষ করেন। যারা হুমওয়ার্ক দেখাতে ব্যর্থ হয় তাদের পিঠে কিছু হাদিয়া পড়েনি তা বলা বড়সড় ভুল হবে। তারপর ব্লাক বোর্ডে সৃষ্টি হয় গণিতের ধুম্রজাল। সবাই লিখায় ব্যস্ত। খচ খচ শব্দে খড়িমাটির চক বোর্ডের উপর অস্থায়ী প্রলেপ সৃষ্টি করতে থাকে। কল্পলোকে দৃশ্যমান হয় গতরাতের রহস্যে ঘেরা ফোন। আচ্ছা, আমি কি অযথাই দুশ্চিন্তা করছি ? ও যদি সত্যিই আমাকে কিছু করে! এসব সংশয়, আশংখার ঘূর্ণাবর্তে আমি বিভোর। সম্বিত ফিরে পাই সহপাঠী তুহিনের ধাক্কায়। তাকিয়ে দেখি অমিত স্যার আমারদিকে বিষ্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

-কি হচ্ছে এসব শুনি - স্যারের রাগত প্রশ্ন।

- স্যরি স্যার।

- কিসের স্যরি! আমি এদিকে গলা ফাটাচ্ছি আর তুমি আছো ধ্যানে, হতচ্ছড়া।

ব্যাস, একগাধা অপমান। আমি জানি না কেন এমনটি ভাবছি আমি। কোন ক্লাসেই মনোযোগী হতে পারিনি । হয়তো অস্বাভাবিক সময়ে, অস্বাভাবিক মুহুর্তে অস্বাভাবিক একটি ফোন আমাকে এতটা অস্বাভাবিক করে তুলেছে। কে জানে।হাফটাইমে একসাথে আমরা কয়েকজন যোহরের নামাজ আদায় করি স্কুল মসজিদে। তারপর কোথাও একসাথে গল্প করে সময় কাটাই। খেলাদুলা খুব একটা হয়না। বন্ধুদের মাঝে তুহিন আমার সবচেয়ে কাছের। আরো দুজন আছে। আদনান, রাকিব। চারজনে বসে রসগল্প। কিচুক্ষণের মধ্যেই তুহিন আবিষ্কার করলো আমি সেরকম রেসপন্স করছি না। চেহারায় মালিন্য। তারপরই গল্পের টপিক মোড় ঘোরালো অন্ধকারে। বিষয়টি তাদের কাছে রহস্যই ঠেকে। প্রথমে রাকিব, আদনান কথা উড়িয়ে দিলেও তুহিন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে। হাফটাইম শেষ প্রায়। বিকেলের আসরে বাকিটা আলোচনা করা যাবে। উঠলাম আমরা।

বাংলা স্যারেরর ক্লাস। শুরু হলো সাহিত্য পাঠ। আজ কাব্য। গভীরকন্ঠে স্যার শুরু করলেন, "শতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, শতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।" স্যার, আবৃত্তি করছেন, এদিকে তুহিন জানালার ফাঁক গলিয়ে শ্যামল প্রকৃতির সাথে বুঝাপড়ায় ব্যস্ত। মুহুর্তেই স্যারের চেহারায় বিভীষিকা দৃশ্যমান হয়। একরাশ তিক্ত সাহিত্যরস হজম করে তুহিন। এভাবেই চলে। বিদায় ঘন্টি বাজলে বেরিয়ে পড়ি বাড়ির পথে।

বিশ্রামের সময় হয়নি। আছরের আযান। ক্লান্তি জেকে বসার পূর্বেই সাঁড়া দিতে হবে। রওয়ানা হই মসজিদে। নামাজে মুসল্লি সংখ্যা আলহামদূলিল্লাহ ভালো। ওয়াক্তপ্রতি ৩০ - ৩৫ জন। নামাজ শেষে দ্রুতপায়ে চলি। তুহিনরা অপেক্ষা করছে হয়তো। বাস্তবতা সেটাই। তবে বন্ধুমহলে কুশলাদির একটি ভিন্ন কায়দা আছে। হয়তো গায়ে হাত, নয়তো তীর্যক মন্তব্য। শুরু করলাম নিজেই।

- এত সকাল এসে পড়লে, নামাজ না পড়লেও চলবে তোদের ?

- কি বলবি। কিছু হেতু তৈরী না করে বদহজম হয় তো।

আদনানের প্রতিবাদ। তুহিন পুরাই সিরিয়াস। যেনো ঘটনা আমার সাথে নয়, ঘটেছে তার সাথে।

- তুই কি কল ব্যাক করেছিলে, মুসা ? তুহিনের প্রশ্ন।

- হ্যা, ট্রাই করেছিলাম। সুইচড অফ।

- অহহ দারুণ প্যাচালো ব্যাপারটি। আদনান বিরক্তি প্রকাশ করে।

- এক কাজ করলে কেমন হয়। আমরা সময় নিই। হয়তো এটা কিছুই না। তামশা করছে কেউ। আর ভারি কিছু হলে আজ রাতে হয়তো আবারো নক করবে সে। তুহিনের বিশ্লেষণ।

- হুম, তা হতে পারে, কিন্তু স্কুল যে খোলা।- রাকিব।

- ওটা ম্যানেজ করা যাবে। - তুহিন।

- ড্রপ দিবি ? - আদনান।

- নাহ, ছুটি নিবো মধ্যবিরতিতে। - তুহিন।

- কেমনে ? - রাকিব।

- লেইম এক্সকিউজ কে যদি স্ট্রং এক্সকিউজে পরিণত করা যায় তাহলে ছুটি কেন, রহস্য ভেদও সম্ভব। - তুহিন।

হাসির রেশ পড়লো সবার অষ্ঠব্যবধানে। হুম, তা হতেই পারে। তবে রহস্য ভেদ কি করে সম্ভব কারো মাথায় ঢুকলো না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তুহিনের দিকে সবার।

- সহজ কথা। লেইম এক্সকিউজ স্ট্রং হওয়ার মানে হলো কৃত্রিম বাস্তবতাকে অকৃত্রিম করে উপস্থাপন করা। সেটা করতে পারলে ঐ মশাইকেও কাবু করা সম্ভব। -তুহিন।

- সে কি এসব বিষয়ে কম পারদর্শী ? - রাকিব।

- কিছুই তো জানি না। - তুহিন।

মাগরিব হয়ে যাচ্ছে। ফিরতে হবে আমাদের। আলো ঝলসানো তেজী সূর্য্য ক্রমেই অনুজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। সারাদিন লক্ষ্যহীন ছুটা ছুটির পর পাখিগুলো তাদের নিশী গন্তব্য খোঁজতে ব্যস্ত। গোধূলীর দিকে তাকালে মহাপ্রভূর অপার সৌন্দর্য্যে কে মুগ্ধ না হয়ে পারে ?

.

বাসায় ফিরে পড়তে বসি যথারীতি। চোঁখ বুলাচ্ছি বইয়ে। পকেটে ফোন ভাইব্রেট করতে শুরু করে। বের করে দেখি। দড়াস করে উঠে বুক। সেই লোকটাই। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ভয়, এবং সিদ্ধান্তহীনতায় প্রথম কল মিসড হয়। আবারও। কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করি।

- হ্যালো।

- কল রিসিভ করতে ভয় লাগে ?

আমার কন্ঠ আটকে গেছে যেনো। কিছুই বলতে পারছি না। হার্টবিট প্রচুর বেড়ে গেছে।

- কিছু বলতে হবে না। শুনো, শান্তিনগর শেষ এবার পালা তোমাদের। রাখছি।

- হ্যা... হ্যালো।

কল কেটে ফোন সুইচড অফ হয়ে যায় আবারো। আমি ঘেমে এককাকার। এগুলো কি শুনলাম ? এখন কি করারা উচিত আমার ? কিংকর্তব্য বিমূড় অবস্থা। এসময় বাবা অফিস থেকে বাসায় ফেরেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি অস্থিরতা চেপে রাখার।মানষিকভাবে ডাইভার্টেড হওয়ার জন্য পত্রিকা হাতে নেই। বাবা নয়াদিগন্ত পড়েন। বাড়ি ফিরার সময় পত্রিকাটি তাই বাবার নিত্যদিনের সঙ্গী। পত্রিকার প্রথম পাতার লেফ্ট বটম কর্ণারে দৃষ্টি স্থির হয় আমার। "শান্তিনগরে দূর্ধর্ষ ডাকাতি, গৃহকর্তা নিহত।" আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। লোকটার কথা। "শান্তিনগর শেষ, এবার পালা তোমাদের।" পুরো সংবাদ পড়ে আমার শিরা উপশিরা লহুচাপে ফেটে যাবার উপক্রম। দিশেহারা হয়ে ভাবতেও পরছি না কিছু। কিক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু নাহ, পারছি না। এই অবস্থা মা দেখে ফেললে বিপদ বাড়বে। বাবা হাইপারটেনশনের রুগী, তায়াবেটিক তো আছেই সাথে। জানাজানি হয়ে গেলে ঢের বিপদের আশঙ্কা।

একটি বিষয় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, দু'দিন ফোন করা লোকটির সাথে ঐ ঘটনার যোগসাজশ আছে, এবং সেটা বেশি পরিমাণে। কিন্তু আমার সাথে তাদের সম্পর্ক কি ? আমি কি কেবলই লক্ষ্যবস্তু ? এত টাকা পয়সা তো বাবার নেই যে ডাকাতরা এরকম হুমকি দিয়ে আসবে। আর হুমকি দিয়ে নিজেদের সেফটি অনিশচিত করতে কেন চাইবে তারা ? প্রশ্ন আছে অনেক। জবাব নেই একটিরও। মসজিদের দিকে পা বাড়াই। এশার আযান হয়েছে মিনিট দশেক আগেই।

দু'জন মুখোশপরা লোক তাড়া করছে আমাকে। ক্রমেই কাছে চলে আসছে তারা। আমার পা আর চলছে না। এই বুঝি ধরে ফেললো। হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। দু'টি ভয়ঙ্কর মূর্তি চেপে ধরলো আমায়। একটি ঝকঝকে ছোরা বসতে যাচ্ছে গলায়। চিৎকার দিই আমি। অমনি মায়ের আতংকিত ডাক কানে আসে।

-মূসা, কি হয়েছে তর ? হায়হায় এতো ঘেমেছিস কেনো ?

-দুঃস্বপ্ন দেখেছি মা।

-কি বলছিস, তোর সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে যে ?

-ও তেমন কিছু না। মা তুমি খামাখা দুশ্চিন্তা করোনা তো। যাও ঘুমাও গিয়ে। আমি ঠিক আছি।

-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমা।

-আচ্ছা।

মা চলে যাবার পর নিজেকে অসহায় মনে হতে থাকে। একটি পেঁচা ভৌতিকভাবে ডেকে চলেছে অবিরত। আড়াইটা বাজে ঘড়িতে। নিস্তব্দ নিরবতায় এমন দুঃস্বপ্ন কি খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে বুঝানো দুষ্কর। মনে হয় অন্ধকার খান খান করে কারা যেন ঝাপিয়ে পড়ছে আমার উপর। বারবার আয়াতুল কুরসি পড়ি। এরকম ছটফট করতে করতে কাটে পুহাতে না চাওয়া দুঃস্বপ্নের রাতটি।

সকালে সোনালী আভা ছড়িয়ে গ্রিষ্মের খরতাপের প্রভাব প্রকট হয়ে উঠছে। ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে চলি স্কুলের পানে। আদনানের সাথে দেখা হয় ত্রিমোহনীতে। ডানদিকে স্কুলের রাস্তা আর সামনের দিকে সোজা পথ থানার প্রধান সড়কের সাথে একীভূত। এসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরু হয়। তার পরে মধ্যবিরতি। এবার খোঁড়া যুক্তির লিটমাস টেস্ট। আমার মাথা ব্যাথা। সাধারণ নয়, মাইগ্রেনাল পেইন। তুহিনের মা অসুস্থ, আদনানের বাড়িতে জরুরী কাজ, আর রাকিবের নানী মৃত্যু শয্যায়। ব্যাস, চাপাবাজিতে ডক্টরেট করা চার ফাজিল নির্দ্বিধায় ছুটি পেয়ে যায়। তবে কথায় আছে ধর্মের কল আপনি নড়ে। ছুটি পেয়ে এক একজন করে সবাই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসলেও, রাস্তায় এসেই প্রত্যেকে চাপাবাজির সাফল্যগাথা শেয়ার করতে ব্যাস্ত। এমন সময় পেছন থেকে স্যারের গর্জন। টনক নড়ে তখন। চোঁখে ইশারা হয়, সটকে পড়তে হবে। চারজন চারদিকে ভোঁ দৌড়। জান বাঁচলে বাপের নাম বাপু। পরেরটা পরে ম্যানেজ করা যাবে।

অনাকাঙ্খিত রেস সমাপ্ত করে এক হই পুনরায়। এখান থেকে স্কুল আর দেখা যায় না। তাই নিশ্চিন্তে রহস্য গিটে হাত দেয়াই যায়। তুহিনের অমতে কথা বন্ধ হয়। এখনও যোহরের নামাজ বাকি। খানিক পূর্বের মিথ্যাচার, আর অশুভ পরিণাম তখন অনুশোচনার কারণে পরিণত। নামাজ পড়বো তো ঠিক, কিন্তু মিথ্যা বললাম কোন সাহসে ? গুরুতর অন্যায় হয়েছে বটে। তারপর নামাজ পড়ি সবাই একসাথে। রাতের ব্যাপারটা ভাবায় বেশ। কি হতে পারে কারণ ? কারা হতে পারে খলনায়ক ? কোথায়, কখন, কিভাবে আক্রমণ আসে বুঝার উপায় কি ? প্রতিকারই বা কিসে ? কোন মোড় নেই। দলা পাকানো রহস্যজাল। সবার একটাই পরামর্শ, সিম ডিএকটিভ রাখতে হবে কয়েকদিন, কিন্তু তা কি করে সম্ভব ? ফোন তো ঘরের। এ ছাড়া বিকল্প নাই যে। আমি উঠে দাঁড়াই। এতক্ষণ মুড়ি দিয়ে বসায় পা ঝিন ঝিন করছে। ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হাটি। তপ্ত ভাষ্কর হেলে পড়ে পশ্চিম দিগন্তে।বাসায় ফিরে আমি স্তম্ভিত। দশটি মিসড কল। রিসিভ করেনি কেউ। উৎস সেই একই। মাঝেমধ্যে মা একেবারেই বেখবর হয়ে যান। তবে এ সৌভাগ্য আমার। ফোন রিসিভ হলেই লঙ্কা কান্ড ঘটতো। পরক্ষণেই বুক দুরু দুুরু করে। কেন ফোন দেয় ? কি চায় তারা ? ফোনের রেড বাটন চেপে ধরি। এক্ষুনি সিম চেঞ্জ করতে হবে। কিন্তু বিপত্তি হলেন বাবা। এক মিনিট ভেবে নিই। তারপর ঝটপট খোলে ফেলি সিম। আমার কাছে থাকা অন্য একটি সিম লাগিয়ে নিই। বাবা বাড়ি ফেরার সাথে সাথে সেভ নাম্বারে আগেটির জায়গায় নতুন নাম্বারটি বসিয়ে দিতে হবে। তাহলে বুঝবে না।

মাগরিবের নামাজ শেষে পড়তে বসেছি। আননোন আরেকটি নাম্বারে কল আসে। স্বাভাবিক থাকি কেমনে, ঐ আননোন নাম্বারই যত অনিষ্টের মূল। রিসিভ করি।

- হ্যালো।

- হ্যালো, মূসা, আমি শান্ত বলছি।

শান্ত আমার ক্লাস মেইট। খুব একটা মেশে না। স্বভাব চাপা। নিজের সম্পর্কে কাউকে জানাতে চায় না। তো হঠাৎ তার ফোন পেয়ে আশ্চর্য্য হলাম।

- ও শান্ত, কিরে আছিস কেমন ?

- হুম ভালো।

- আমার এ নাম্বার পেলে কই ?

- তুহিনের কাছ থেকে।

- ওহ। কিছু দরকার শান্ত ?

- না, বলি কি ঐ ব্যাপারটাতে আমি ইন্টারফেয়ার করতে পারি ?

- কোন ব্যাপার ?

- আননোন নাম্বারে কল।

কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাটে। কিছু বলতে গিয়েও আটকে যাই। তারপর

- তুই এগুলো জানিস কেমনে শান্ত ?

- কাল স্কুলে আস, সাক্ষাতে বলি।

একের পর এক মানষিক অত্যাচার আমার স্নায়ুগুলো আর নিতে পারছে না। ভোতা হয়ে আসছে অনুভূতি।

বিষয়: বিবিধ

১২০৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381463
২৫ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০২:১৩
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : গল্পটা লম্বা হলেও ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে
২৬ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০২:৫৬
315467
মোহাম্মাদ আবু মুছা লিখেছেন : ধন্যবাদ জনাব।বাকি পর্বগুলো পড়বেন আশাকরি।
381493
২৫ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:০৩
হতভাগা লিখেছেন : জঙ্গি কানেকশনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়
২৬ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ১১:৪৬
315458
মোহাম্মাদ আবু মুছা লিখেছেন : বাকি পর্বগুলো পড়লে মোড় খোজে পাবেন জনাব। াসংখ্য ধন্যবাদ দীর্ঘ পাঠের জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File