ভৌতিক নির্বাচনের দায়ভার

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৬ জুন, ২০১৬, ০৮:৫৬:৩৭ রাত

সম্প্রতি সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। মূলত এবারের নির্বাচন ছিল এক ব্যতিক্রমী নির্বাচনী। কারণ, এই প্রথম দলীয় মনোনয়ন ও জাতীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় মনোনয়নে ইউপি নির্বাচনে একমাত্র সরকারি দল ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছে। শুধুতেই অভিযোগ করা হয়েছিল যে, ‘নৌকা জিতে হবে’ প্রশাসনের উপর এমন চাপ সৃষ্টির জন্যই সরকারি দলের এমন সিদ্ধান্ত। আর নিন্দুকের সে আশঙ্কায় অনেকটাই সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে। যা আমাদের দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কলঙ্কতিলক।

সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একমাত্র সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন ছাড়া কোন মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। নির্বাচনে নজীবিহীন সহিংসতা হয়েছে। এই রক্তাক্ত নির্বাচনে শতাধিক মানুষ প্রাণও হারিয়েছে। চরদখলের মত নির্বাচনী কেন্দ্র দখলের মহোৎব হয়েছে। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের উপর হামলা এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ব্যাপকহারে জাল ভোট প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার আশঙ্কায় সিংহভাগ ভোটার ভোট কেন্দ্রে না গেলে ভোটের অভাব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ ভোট কাউন্ট দেখানে হয়েছে। যা এখনো দেশের মানুষের কাছে রীতিমত রহস্যাবৃত।

সবে শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচন সকল মহলের কাছে অগ্রণযোগ্য মনে হলেও সরকার ও নির্বাচন এই নির্বাচনকে সর্বকালের সেরা নির্বাচন বলে আখ্যা দিচ্ছেন। যা গণমানুষের ভোটাধিকার নিয়ে রীতিমত উপহাসের শামিল। সম্প্রতি সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ১৫০ (দেড়শ’) বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, আইয়ুব খান স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে মৌলিক নির্বাচন বলে অভিহিত করলেও আমি এই নির্বাচনকে বলেবো ভৌতিক নির্বাচন। কারণ এবারের ইপি নির্বাচন ভয়ের কারণে জীবিত ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু মৃত ভোটাররা ভোট দিয়েছে। দেড়শ’ বছরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে খারাপ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। দেশী-বিদেশী কোন স্থানীয় নির্বাচনের সঙ্গে এই নির্বাচনের কোন মিল নেই। তিনি বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল লাভবান হয়েছে। তবে ভেঙে পড়েছে নির্বাচনী ব্যবস্থা।

আসলে সৈয়দ আবুল মকসুদ সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বাস্তবচিত্রটাই জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। মূলত দেশের সকল নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনগুলো নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভাঁড়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইপি নির্বাচনে যে ভূমিকা রেখেছে তাতে এই কমিশনকে সরকারি দলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বললে অতুক্তি হওয়ার কথা নয়। এই কমিশনের অধীনে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার অনিয়ম বা ত্রুটিগুলো নিয়ে সরকারকে যতটা না দায়ি করা যায় তারচেয়ে নির্বাচনকেই বেশী। তাই সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব ঘোষিত ‘ভৌতিক’ নির্বাচনের দায়ভার বর্তমান নির্বাচন কমিশন কোন ভাবেই এড়াতে পারে না। সময়ের ব্যবধানে তাদেরকে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File