বিজয়ের চার দশকঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪৩:৫৯ রাত



বিশ্ব ইতিহাসে আমাদের মতো অধিক মূল্য দিয়ে কোনো জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলে খুব একটা জানা যায় না। ১৭৫৭ সালের পলাশী ট্র্যাজেডির মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্যটা অস্তমিত হয়েছিল। মীর জাফরসহ অতিঘনিষ্ঠজনদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পলাশীর আম্রকারণে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা যখন আবার স্বাধীনতা ফিরে পেলাম তখন বেশ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদেরকে। আমরা যদি সমসাময়িক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিভিন্ন গৃহযুদ্ধের দিকে তাকাই তাহলে একথা অবশ্যই মানতে হবে যে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমাদের যে ত্যাগ ও কোরবানীর প্রয়োজন হয়েছে, অন্যদের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। আমাদের স্বাধীনতা যেমন ছিল রক্তপিচ্ছিল, ঠিক তেমনিভাবে গৌরবেরও।

মূলত ভিয়েতনামে মুক্তি সংগ্রাম ১৯৫৬ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৫ সালে ৩০ এপ্রিল সায়গনের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়। যুদ্ধে সকল পক্ষের সৈন্যসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৩ লক্ষ। আলজেরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ১৮৩০ থেকে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ১৯৬২ সালের ২ জুলাই আলজিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। আলজেরিয় যুদ্ধের শেষের ৭/৮ বছরে ১০ লাখ আলজিরিয় প্রাণ হারান। কম্বোডিয়ায় গৃহযুদ্ধে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে ২১ লাখ। আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীর পরাজয় পর্যন্ত ১৪ বছরের যুদ্ধে ২০ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।

অবশ্য এখনো আফগানিস্তানে পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর হতে ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত। কিন্তু প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ অতিক্রম করেনি। এঙ্গোলায় ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৩ লাখ অঙ্গোলাবাসী। ১৯৮১ সাল থেকে শ্রীলংকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে তা চলে দু’যুগেরও অধিককাল ধরে। প্রাণহানির সংখ্যা ১ লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বসনিয়া-হারজেগোভেনিয়া ভয়াবহ যুদ্ধেও প্রাণহানির সংখ্যা দেড়লাখ অতিক্রম করেনি। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ৯ মাসেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ত্রিশ লাখ। সম্ভম হারিয়েছেন দু’লাখ মা-বোন। যদিও উল্লিখিত সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের সমসাময়িক কালের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এতো চড়ামূল্য আর কোনো জাতিকে দিতে হয়নি।

১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ভারত বিভাজিত হয়েছিল দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। আসলে ভারত কখনোই বিভাজিত হতো না যদি ভারতীয় রাজনীতিকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূর্দর্শিতার পরিচয় দিতেন। বিশেষ করে মহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধি) সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির কারণেই মুসলমানদের পক্ষে অখন্ড ভারত মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। বৃটিশরা চলে যাওয়ার পর স্বাধীন ভারতে কোনো বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ভারত স্বাধীনের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গো হত্যা নিবারণ করা হবে’। তার এই সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির পর মুসলমানদের পক্ষে কোনোভাবেই অখন্ড ভারতে যোগ দেয়া মোটেই সম্ভব পর ছিল না।

অনিবার্য কারণেই ভারত বিভাজিত হয়েছে। ঠিক সঙ্গত কারণেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এক ও অখন্ড থাকতে পারে নি। সাম্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সামাজিক মূল্যাবোধ, অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি ও সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্তি লাভের জন্যই এদেশের আপামর জনসাধারণ ৯ মাসের মরণপণ মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিল। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে আমরা পিন্ডির গোলামীর শৃঙ্খল থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম সে প্রত্যাশা আমাদের কাছে অধরাই থেকে গেছে। মূলত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ভারত বিভাজিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামের পৃথক দু’টি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তান আন্দোলনের একজন তুখোর ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনিও স্লোগান দিতেন ‘লরকে লেঙ্গে পাকিস্তান, কায়েম করেঙ্গে আল কুরআন’। আসলে পাকিস্তান প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো স্থান ছিল না।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও মহান বিজয়ের পর ধর্মনিরপেক্ষতা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্ম বিশেষ করে ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। আসলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলেনি। মূলত পাকিস্তানি শাসন চক্রের ক্ষমতালিপ্সা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাবেই পাকিস্তান ভেঙেছে। এমন কী তারা তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে ‘কুরআন-সুন্নাহ’ বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না বলেও জাতির কাছে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু পিন্ডির গোলামী থেকে মুক্তির পর সবকিছুই পাল্টে গেছে। যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলো স্বাধীন বাংলাদেশে তার কোনো প্রতিফলন দেখা গেল না।

যেখানে স্বাধীন দেশের সংবিধানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন থাকা উচিত ছিল সেখানে বিশেষ মহলকে খুশি করতেই ভারতের সংবিধান অনুসরণ করেই ১৯৭২ সালে আমাদের জাতীয় সংবিধান প্রণীত হলো। ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হলো। উপেক্ষিত হলো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি ও বোধ-বিশ্বাসের বিষয়টি। তাই পরবর্তীতে গণমানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু এক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে দলীয় ইস্তেহারে পরিণত করার জন্যই সংবিধানের পঞ্চম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে।

অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে গণমানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবরূপ লাভ করেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই জনপদের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা দীর্ঘ দিনের লালিত বিষয়। স্বাধীনতার অর্জনের জন্য তারা যুদ্ধ করেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব শহীদ সিরাজউদ্দৌলা, শহীদ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেক মহান নেতাকে। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান। আমরা জানি যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও কঠিন হলো স্বাধীনতা রক্ষা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা। এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত না হলে রাষ্ট্রও পরিণত হতে পারে ব্যর্থ রাষ্ট্রে।

একটি গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয় নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, অপরাজনীতি ও অহমিকার কারণে আমাদের স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হলেও সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বরং অর্জন যৎসমান্যই বলতে হবে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যখন পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করা উচিত ছিল তখন ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত বা চিরস্থায়ী করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করেছে। বিশেষ মহলকে খুশি করার জন্য সংবিধানকে ভিনদেশী সংবিধানের ডুপ্লিকেট কপি বানালেও তাও তাদের ক্ষমতাকে নিরাপদ করতে পারেনি। তাই তারা নিজরাই সংবিধানের ৪ বার সংশোধনী এনেছে। যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে দেশের মানুষকে মরণপণ যুদ্ধে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।

দেশ স্বাধীনের পর সে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অক্ষুন্ন রাখেনি স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দাবিদার রাজনৈতিক দল। তারা সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। The Newspaper( Announcment Of declaration) Act-1975 মাত্র ৪ টি রাষ্ট্রায়ত্ব পত্রিকা রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তদানীন্তন সরকার এই এক্ট পাশের আগেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে আসছিলো। ১৯৭৩ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদ অভিযোগ করেছিলেন, ‘গণকন্ঠ অত্যন্ত বেআইনিভাবে বন্ধ করিয়া দেয়ার ফলে তথাকার পৌনে তিনশ’ সাংবাদিক ও কর্মচারী বেকার হইয়া পড়িয়াছেন। সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মুহূর্ত মাত্র সময় না দিয়া অফিস হইতে কাজ অসমাপ্ত রাখা অবস্থায় বাহির করিয়া দেয়া হইয়াছে’। ( ইত্তেফাক-৩০ মার্চ, ১৯৭৩)

জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যর্থতার কারণেই আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই শিশু রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর ১৯৯৬ সালে দেশের নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসলেও ক্ষমতাসীনদের অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণই সে অর্জন নস্যাৎ হয়ে গেছে। ফলে আমরা রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সহনশীলতার অভাবে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্রে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ব্যর্থতার কারণে আমরা কাঙ্খিত উন্নয়ন, জীবনমান, সুশাসন ও নিরাপত্তা লাভে সমর্থ হইনি।

ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আজ দেশ-বিদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০০৮ সালে একটি বিতর্কিত মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর কেয়ারটেকার সরকারের দাবির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসাবে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকো। কিন্তু এতে তিনি সফল হননি। ফলে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা জাতির ঘাড়ে আবারও জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে।

দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখন খাদের কিনারে। যা এজন্য দেশের মানুষ ক্ষমতাসীনদেরই দায়ি করছেন। পরমত সহনশীলতা গণতন্ত্রের মূল উপাদান। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের কতিপয় অধিকার সংরক্ষণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক ৩ ধরনের অধিকার ভোগ করবে-১. সামাজিক অধিকার, ২. রাজনৈতিক অধিকার এবং ৩. অর্থনৈতিক অধিকার। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে নিম্নে নাগরিক অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো :

সামাজিক অধিকার :

জীবন ধারনের অধিকার. ২. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, ৩. মতপ্রকাশের অধিকার, ৪ সভা-সমিতি করার অধিকার, ৫. সম্পত্তি ভোগের অধিকার, ৬. ধর্মীয় অধিকার, ৭. আইনের অধিকার, ৮. চুক্তির অধিকার, ৯. ভাষার অধিকার, ১০. পরিবার গঠনের অধিকার ও ১১. শিক্ষা লাভের অধিকার।

রাজনৈতিক অধিকার :

ভোটাধিকার, ২. প্রার্থী হওয়ার অধিকার, ৩. অভিযোগ পেশ করার অধিকার, ৪. সমালোচনার করার অধিকার, ৫. চাকুরী লাভের অধিকার ও ৬. বসবাসের অধিকার।

অর্থনৈতিক অধিকার :

কাজের অধিকার, ২ উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার, ৩. অবকাশ যাপনের অধিকার, ৪. সংঘ গঠনের অধিকার ও ৫. রাষ্ট্র প্রদত্ত প্রতিপালনের অধিকার ইত্যাদি।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকের যেসব অধিকারের স্বীকৃত রাষ্ট্র তার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারেনি বরং নাগরিকরা তাদের অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এসব অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই সাংবিধানিক দায়িত্ব। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণের শাসন, শাসক গোষ্ঠীর জবাবদিহিতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে সরকার মোটেই গুরুত্ব না দিয়ে তাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই গণতান্ত্রিক সকল রীতিনীতি উপেক্ষা করছে। যা আমাদের জন্য রীতিমতো অশনি সংকেত মূলত শাসনকার্যে জনগণের সম্পৃক্ততা উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব নয়।

মূলত পুঁজিবাদ, সম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া মহাজনী মূলধনের চরম জাতীয়তাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও সন্ত্রাসমূলক প্রকাশই হচ্ছে ফ্যাসীবাদ। ফ্যাসীবাদ চরম জাতীয়তাবাদী, অযৌক্তিক ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষ এবং উদ্দেশ্য সাধনে চরম বর্বরতার আদর্শ প্রচার করে। ফ্যাসীবাদ পুঁজিবাদের চরম সঙ্কটের পরিচয় বাহক। সম্রাজ্যবাদী যুগ হচ্ছে পুঁজিবাদের চরম যুগ। জাতীয় ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের বিকাশ যখন নিঃশেষিত, তখন পুঁজিবাদ নিজের শোষণমূলক ব্যবস্থা কায়েম রাখার জন্য সম্রাজ্যবাদী চরিত্র গ্রহণ করে। ফ্যাসীবাদের মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ :

ক. প্রথমত, ফ্যাসীবাদ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল নয়। মূলত ফ্যাসীবাদ ছোট, মধ্যম, বড় এবং সর্বোচ্চ নেতা যা আদেশ করবেন, তাই রাষ্ট্রের আদেশ বলে নির্বিবাদে মেনে নিতে হবে।

খ. ফ্যাসীবাদ সমাজতন্ত্রেও অবিশ্বাস করে।

গ. ফ্যাসীবাদে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বতন্ত্র স্বীকৃত হয় না। ফ্যাসীবাদের মূলমন্ত্র হলো সবকিছুই রাষ্ট্রের আওতাভূক্ত, কোনো কিছুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয় বরং কোনো কিছুই রাষ্ট্রের বাইরে নয়।

ঘ. ফ্যাসীবাদ শান্তি কামনা করে না। ফ্যাসীবাদ নিয়ত সংগ্রামে লিপ্ত থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়। মুসোলিনির মতে, মহিলাদের নিকট যেমন মাতৃত্ব, পুরুষদের নিকট তেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ।

ঙ. ফ্যাসীবাদে একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং দলীয় নেতা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হন। একদল ও একনেতা সরকারের এবং সমাজের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন।

চ. ফ্যাসীবাদে এলিট শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবীতে কিছু ব্যক্তি শাসন করতে এবং শাসিত হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করে।

বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা অনেক পিছিয়েছি। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র যখন উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরহণ করতে সক্ষম হচ্ছে, তখন আমরা নিজেরাই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছি। আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে পিন্ডির গোলামী থেকে মুক্তি লাভের জন্য মরণপণ যুদ্ধ ও বিজয় অর্জন করেছিলাম প্রতিহিংসা ও অপরাজনীতির কারণে এর সুফল আমরা ঘরে তুলতে পারিনি। দেশে আজও গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুস্থ্যধারার রাজনীতি চর্চার সংস্কৃতি এখনও গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ চলতে পারে না। যে প্রত্যাশা নিয়ে আমরা মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য্যটা ছিনিয়ে এনেছিলাম, কিন্তু প্রাপ্তিটা এখনো অনেকটাই অধরা। যা আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৮২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File