যে অবস্থায় মারা যাবে সে-ই অবস্থায় হাশর হবে (দরসে হাদীস)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:৩০:২০ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ

বাংলা: জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: (কিয়ামতের দিন) "প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঐ অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।"



The Prophet (ﷺ) said, "Every one will be raised in the condition in which he dies".

সূত্র: সহীহ মুসলিম:২৮৭৮, আহমাদ: ১৪১৩৪, মুসতাদরাক:১২৯৯,৩৭৪০, ৩৮৬৬ আল মুসতাদরাক(হাকেম) ও মুসনাদের অপর বর্ণনায় এসেছে- من مات على شيء بعثه الله عليه "যে অবস্থায় মারা যাবে সে অবস্থায় উত্তোলন করা হবে।" (মুসতাদরাক:৭৯৪২,আহমাদ: ১৩৯৬৪)



ব্যখ্যা: ব্যক্তি যে বিশ্বাস ও কর্মের উপর মারা যায় সে-ই বিশ্বাস ও কর্মের উপরই তার ফায়সালা হবে। সারা জীবন ঈমানের উপর ও ভালো কাজ করে মৃত্যু যদি হয় কুফরী অবস্থায় তাহলে হাশর হবে কাফের অবস্থায়। মৃত্যু যদি হয় বিদ'আতের উপর আমল করে হাশরও হবে বিদ'আতীর পরিণামের উপর।

প্রত্যেক ব্যক্তি যেভাবে জীবন যাপন করে সে অবস্থার উপরই মারা যায় আর যেই অবস্থার উপর মারা যাবে সেই অবস্থার উপরই তার হাশর হবে। কল্যাণের পথে থাকলে কল্যাণ আর বিপথগামী হলে অকল্যাণ।

আল্লাহ বলেন-

"যে সৎকাজ করে, সে নিজ কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে ওর প্রতিফল সেই ভোগ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।" (সূরা ৪৫ জাসিয়া:১৫)

তিনি বলেন:

"(স্মরণ কর,) যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিবসে, সেদিন হবে হার-জিতের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং সৎকর্ম করবে, তিনি তার পাপরাশি মোচন করবেন এবং তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহা সাফল্য।"(সূরা ৬৪ তাগাবুন:০৯)

তিনি আরো বলেন-

"দুষ্ককৃতকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে ওদেরকে তাদের সমান গণ্য করব, যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে? ওদের ফায়সালা কত নিকৃষ্ট।" (সূরা ৪৫ জাসিয়া:২১)



আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তিনি নতুন কাপড় নিয়ে ডাকলেন এবং তা পরিধান করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোনো ব্যক্তি যে কাপড় পরিধান করে মারা যাবে, কিয়ামাতের দিন তাকে ঐ কাপড়েই উঠানো হবে। (আবু দাউদ:৩১১৪,আল মুসতাদরাক (হাকেম):১৩০০,বাইহাকী:৬৪৬৬,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক:৬২০৩)

আল্লঅহ বলেন-

"আর যে কেউ কিছু আত্মসাৎ করবে, সে তার আত্মসাৎ করা বস্তু নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। অতঃপর (সেদিন) প্রত্যেকে যে যা অর্জন করেছে, তা পূর্ণ মাত্রায় প্রদত্ত হবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।"(সূরা ৩ আলে ইমরান:১৬১)



ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো যার উষ্ট্রী তাকে ফেলে দিয়ে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিয়েছে এবং এতে সে ইহরাম অবস্থায় মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তাকে তার ইহরামের দু’ কাপড়েই কাফন পরাও, বরই পাতা মিশানো পানি দিয়ে তাকে গোসল করাও এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। (বুখারী:১২০৬, মুসলিম:১২০৬, আবু দাউদ:৩২৩৮)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাযির করা হবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “আমি যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই আবার সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই" (সূরাঃ আম্বিয়া- ১০৪)।

ইবরাহীম (আঃ)-কে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হবে। আমার সাহাবীগণের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্ৰভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা যে কি সব বিদ'আতী কাজ করেছে। আপনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে। তখন আমি আল্লাহ তা'আলার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ (ঈসা (আঃ)-এর মতো বলব, (সূরাঃ মাইদা— ১১৮) “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দাহ, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়"। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী:২৪২৩)

এর ব্যখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, যে অবস্থায় কাফন/দাফন হয়েছে সে-ই অবস্থায় উত্তোলন করা হবে এবং হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে উলঙ্গ অবস্থায়। অথবা এই হাদীসের ভাষ্যমতে প্রথমত উলঙ্গ অবস্থায় হাশর হবে পরবর্তিতে যার যার কর্মফল অনুযায়ী বস্ত্র পরানো হবে।

আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একবার দুইবার নয়, বহুবার বলতে শুনেছিঃ কোনো বান্দা নেক কাজ করলে এবং পরে রোগ বা সফর তাকে সে কাজ থেকে বিরত রাখলে তার আমলনামায় সুস্থ ও আবাসে অবস্থানকালে তার কৃত সৎ আমলের ন্যায় সওয়াব লেখা হবে। (বুখারী: ২৮৩৪, আবু দাউদ:৩০৯১, আল মুসতাদরাক:১৩০১.সুনানুল কুবরা:৬৪১২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ:১২৭৩, আহমাদ:১৯১৮০,মু'জামুল আওসাত(তাবরানী):২৩৮)

আল্লাহ বলেন-

"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামী কালের (কিয়ামতের) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।" (সূরা ৫৯ হাশর:১৮)



আসুন আমরা নিজেরা সৎকাজ করতে থাকি আর মানুষদের সৎকাজের প্রতি আহ্বান করি, নিজেরা গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকি আর অপরকে বিরত রাখি।

হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণের পথে রাখুন। আমীন



সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: সাহিত্য

৮০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File