জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি বনাম ভোট ডাকাতদের বচন!

লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১০:৩৯:২৭ রাত



সম্প্রতি বৃটেনের রাজধানী লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ হামলার পর হামলাস্থল লন্ডন ব্রিজে দাঁড়িয়ে সোচ্চার কণ্ঠে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, আমরা কোনো বর্বরতা সহ্য করব না। মঙ্গলবার সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের স্মরণে আয়োজিত শোক সভায় তিনি আরো বলেন, আমি একজন গর্বিত বৃটিশ মুসলিম। শোক সভায় সমবেত বিপুল সংখ্যক মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা কোনো বর্বরতা সহ্য করব না। কাপুরুষের মত এ হামলা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমি একজন দেশপ্রেমিক গর্বিত বৃটিশ মুসলিম। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই জিতব। সন্ত্রাস জিতবে না। লন্ডন কখনো ভেঙ্গে পড়বে না। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের এ ভাষণে অনুপ্রাণিত করে তোলে লন্ডনবাসীকে। হাততালিতে মুখরিত হয়ে উঠে সমাবেশ প্রাঙ্গণ। শোক সভায় উপস্থিত রুবি নামে ১৪ বছর বয়সী মুসলিম শিক্ষার্থী বলেন, এখানে আমরা সবাই লন্ডনবাসী। এটাই আমাদের পরিচয়। রুবির মা জিলিয়ান বলেন, আমরা সবাই একসাথে থাকব। কারণ আমরা লন্ডনবাসী। শোক সভা শেষে সবাই চলে যাবার পর সেখানে শুধু ফলের তোড়াগুলো পড়ে থাকে। শোক ভুলে যার কর্মস্থলে পা বাড়ায় সেখানকার মানুষ। সূত্র: The Independent, London.

আমাদের দেশের পরিস্থিতি দেখুন লন্ডনের সম্পূর্ণ বিপরিত। কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ২য় বড় সিটি চট্টগ্রাম পানিবদ্ধতায় ডুবে যায়। চট্টগ্রাম সিটির কিছু কিছু সড়কের এমন অবস্থা হয় যে, দুই পাশে বিল্ডিং না থাকলে এগুলো সড়ক না নদী ঠিকমতো বুঝা যেতো না। চট্টগ্রাম সিটির পানিবদ্ধতা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন কিছু এলাকা নিজ চোঁখে দেখে এসেছেন। এরপর কোনো উপায়ন্তর না দেখে তিনি বলেছেন, পানিবদ্ধতা দুর করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয়। মেয়রের কথা হয়তো কিছুটা সত্য। পানিবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয়। এটাও সত্য যে, আ.জ.ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম সিটির ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র নন। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর ভোটার দূরের কথা তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। পুলিশ-র্যা ব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নির্বাচনের আগের রাতে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে এসেছিলো-তারা যেন ভোট কেন্দ্রে না যান। হুমকি পেয়ে বেশির ভাগ এজেন্টই ভোট কেন্দ্রে যাননি। হিম্মত করে দু’একজন যারা ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন তাদের টিকতে দেয়া হয়নি। পুলিশ-র্যা ব ও পেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জবরদস্তি মূলক এসব এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। সুতরাং কোনো দ্বিধা ছাড়াই স্পষ্ট করে বলা যায় যে, আ.জ.ম নাছির উদ্দিন মেয়র হয়েছেন ভোট ডাকাতি করে। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি মেয়রদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু নির্বাচনের আগে বর্তমান মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম সিটির পানিবদ্ধতা নিয়ে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলেছেন এবং তা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মেয়র মনজুর আলম পানিবদ্ধতা নিরসন করতে পারেননি। আমি তা করব। এখন তিনি উল্টো সুরে কথা বলছেন এবং অন্য সুরে গীত গাইছেন। ঢাকার সিটি মেয়রদেরও একই অবস্থা! ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক নির্বাচনের আগে একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার অগ্রাধিকার কাজ হবে ক্লিনিং, প্রধান কাজ হবে মশা নিধন, কাজ হবে ঢাকাকে আলোকিত করা, ঢাকাকে লাইট দেয়া। ২২ এপ্রিল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের একটি নির্বাচনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হই তবে পাঁচ বছরে ঢাকাকে সবুজ সিঙ্গাপুর হিসেবে তৈরি করবো। নগরীর খামার বাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সাধারণ ভোটারের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। আনিসুল হক বলেন, সমন্বিত ভাবে ঢাকার সমস্যা নিরসন করবো। মেয়েদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করবো। যাতে করে কর্মজীবী মায়েরা স্বাচ্ছন্দে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন। এ বাস সার্ভিসের চালক ও সাহায্যকারীও হবে নারী। তিনি আরও বলেন, নগরী যাতে করে সরকারের টাকা ছাড়া চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে। ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও তিতাস গ্যাসের সাথে সমঝোতা করে নগরীর সমস্যা দূর করবো। বস্তিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, বস্তির নানা সমস্যা আছে, আমরা এগুলো সমন্বিত ভাবে নিরসন করতে চাই। সারা জীবন আমি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি, তাদের জন্যও ব্যবস্থা করবো। শক্ত অবস্থান ও রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকলে বস্তির সমস্যা নিরসন করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র: বাংলানিউজ২৪, এপ্রিল ২৩, ২০১৫

ঢাকা এখন মশা-মাছি ও আবর্জনার সিটিতে পরিণত হয়েছে। পানিবদ্ধতা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। নজীরবিহীন পানিবদ্ধতায় অতীষ্ঠ হয়ে ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডিকে ধানমন্ডি সাগর অভিহিত করে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। অতিরিক্ত মশার উপদ্রবে ঢাকা সিটিতে এখন চিকুনগুনিয়া’র প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চিকুনগুনিয়া মশার জীবাণূবাহিত সংক্রামক রোগ। একজন ডাক্তার বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশে চিকুনগুনিয়া’র প্রাদুর্ভাব বেশি। এটা মশার জীবাণুবাহিত রোগ। ঢাকা এখন সে রোগের প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। আনিসুল হক এখন সুর বদল করে ফেলেছেন। তিনি এখন বলছেন, বাড়ী বাড়ী গিয়ে মশা মারা সম্ভব না। সূত্র: প্রথম আলো, ১৪ জুন, ২০১৭। অনেকে বলছেন যেভাবেই হোক তারা এখন মেয়র। সুতরাং তাদের উচিত হলো সব সমস্যা সঠিক ভাবে চিহ্নিত করে তা সমাধান বা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া। তারা সেটা না করে নিজেদের মতো করে অমৃত বচন প্রসব করে চলেছেন। যে যাই বলুক, আসলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি না হলে জনগণের মূল সমস্যা উপলব্ধি করা কখনো সম্ভব হয় না। সমস্যা সমাধান বা নিরসন সেতো অনেক দূর। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, রাজধানী ঢাকা ও পোর্ট সিটি চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা সমস্যা ও গুরুতর পরিস্থিতি কিন্তু একদিনে তৈরী হয়নি। রাজধানী ঢাকায় ড্রেনেজ সিস্টেম থাকলেও চট্টগ্রামে কিন্তু তা নেই। ঢাকায় চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি পানিবদ্ধতা হবার কথা। কারণ ঢাকা সমতল সিটি। চট্টগ্রাম পাহাড় বেষ্টিত সিটি। চট্টগ্রাম সিটির বৃষ্টির পানি খুব দ্রুত সরে যাওয়ার কথা। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা অনেক ভয়াবহ। আগেকার মেয়ররাও পানিবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে শুধু লম্বা লম্বা কথাই বলেছেন-কাজের কাজ কিছুই করেননি। পুরো চট্টগ্রাম সিটি ছোট-বড় পাহাড় ও টিলা বেষ্টিত। চট্টগ্রাম সিটিতে এভাবে পানিবদ্ধতা তৈরী হওয়া কোনো কারণেই যুক্তিসঙ্গত নয়। চট্টগ্রাম সিটির ড্রেন ও কালভার্টের জায়গায় যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণের কারণেই এ অস্বাভাবিক পানিবদ্ধতা তৈরী হয়েছে এবং দিন দিন তা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক চট্টগ্রাম সিটির ড্রেনেজ মাস্টার প্লান প্রণয়নের কথা শুনা গেলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। চট্টগ্রাম সিটির বিদ্যমান ড্রেন ও কালভার্ট গুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম সিটির সবচেয়ে বড় চাক্তাই ও রাজাখালী খালসহ ছোট-বড় সব খালগুলো সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এ কাজ কিন্তু শুধু একটি মাত্র সংস্থার পক্ষে বাস্তবায়ন করা কখনো সম্ভব হবে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং চট্টগ্রাম সিটির অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর সঠিক যৌথ উদ্যোগই চট্টগ্রাম সিটিকে পানিবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে পারে। ঢাকা সিটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সেটা কি অনির্বাচিত সিটি মেয়রদের পক্ষে কখনো সম্ভব হবে? অতি বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পানিবদ্ধতা কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। সেটা মানব সৃষ্ট দুর্যোগ। দীর্ঘমেয়াদী অব্যবস্থাপনার কারণেই এটা তৈরী হয়েছে। এখানে আরেকটি নতুন দুর্যোগ যুক্ত হয়েছে। সেটা হলো কথিত বন্ধু রাষ্ট্র ইন্ডিয়া কর্তৃক বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়া। ঠিক তেমনি ভাবে সন্ত্রাস ও হানাহানিও মানব সৃষ্ট দুর্যোগ। লন্ডনের মানব সৃষ্ট অন্যতম দুর্যোগ সন্ত্রাসের বিষয়ে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের অবস্থান দেখুন। একই ভাবে আমাদের ঢাকা ও চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মেয়রদের অবস্থান দেখুন। এতে সহজেই বুঝা যায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও ভোট ডাকাতদের ডিফারেন্সটা কোথায়।

বিষয়: রাজনীতি

৮২৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383558
১৬ জুলাই ২০১৭ সকাল ০৯:০৭
হতভাগা লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File