হেফাজতে ইসলাম ও সত্যকে অস্বীকার করার অশুভ প্রবণতা

লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০১:৫৬:০৪ দুপুর



হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের আতাত বা সমঝোতা নিয়ে দেশের সব জায়গায় ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হবারই কথা। রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হওয়া নট-নটি এবং আওয়ামী-বাম সমর্থক ভাঁড়ের দল কথিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে অনেক নাচন-কুর্দন করেছে। দাঁড়ি-টুপি পরা লোকদের সীমাহীন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছে। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের আকার এতো বেড়ে গিয়েছিলো যে, সেটা শেষে রাসূল (সা.) গায়ে গিয়ে পড়েছিলো। এ কারণেই রাসূল (সা.) এর অবমাননার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ডাক দেয়। সে মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হয়। তবে সরকার হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফিকে সে মহাসমাবেশে আসতে দেয়নি। তাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সংগঠনের আমিরের উক্ত মহাসমাবেশে আসতে না পারা এবং ২য় সারির নেতারা মহাসমাবেশ সমাপ্ত করা বা পরবর্তী কর্মসূচীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মহাসমাবেশে আসা আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্ররা রাতে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরেই অবস্থান নেন। সরকার মধ্যরাতেই শুরু করে ক্র্যাকডাউন। রাতের অন্ধকারে মহাসমাবেশ যোগ দেয়া বহু আলেম ও গরীব মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন কতোজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো তার সঠিক হিসাব কারো কাছে নেই। তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার জানিয়েছিল যে, ৬১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের শিকার হওয়াদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। অধিকার ৬১ জনকে হত্যা করার রিপোর্ট প্রকাশ করার পর সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী এডভোকেট আদিলুর রহমান খানকে আটক করা হয়। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে কোনো মানবাধিকার সংগঠককে আটক করার ঘটনা এটাই প্রথম। সেদিন রাজধানীর মতিঝিলের রাজপথ ছিলো বহু নিরপরাধ মানুষের লাল রক্তে রঞ্জিত। সে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ঠান্ডা মাথার গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নির্মম, বর্বর ও জঘন্য গণহত্যা। সে গণহত্যার রক্তের দাগ মুছে ফেলার জন্য হোস পাইপ দিয়ে পুরো মতিঝিলের রাজপথ সাফ করা হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের গাড়ী দিয়ে লাশগুলো সরানো হয়। এ ঘটনার লাইভ টেলিকাস্ট করার কারণে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন চ্যানেল ২টি বন্ধ করে দেয়া হয়। আজো এ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২টি বন্ধ অবস্থায় আছে। এ ঘটনার পর বেশ কয়েকটি মামলা করে সরকার। আটক করা হয় সংগঠনটির ২য় প্রধান নেতা মৌলভী জুনায়েত বাবুনগরীকে। পুলিশী রিমান্ডে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। সরকার একদিকে মামলা দিয়ে হয়রানী এবং অন্যদিকে তলে তলে হেফাজতের সাথে আতাত, সমঝোতা বা আপোস রফার চেষ্টা চালিয়ে যায়। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট চামচা শামীম মোঃ আফজাল কে দিয়ে দুতিয়ালী করে হেফাজতের সাথে আপোস রফার চেষ্টা চালানো হয়। তবে আল্লামা আহমদ শফি শামীম মোঃ আফজালের দুতিয়ালীকে পাত্তা দেননি। এরপর আল্লামা আহমদ শফির এক আত্মীয় ও সাবেক মন্ত্রীকে আপোস রফার এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতকে বাগে আনতে এ সাবেক মন্ত্রী হয়তো কিছুটা সফল হয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া সফর থেকে ফিরে আসার পর ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফি সহ ৩ শতাধিক আলেমকে গণভবনে দাওয়াত দেয়া হয়। অনেকেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতকে বশে আনার মন্ত্রটা ইন্ডিয়া থেকেই নিয়ে এসেছেন। হেফাজত নেতাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর এ দেখা-সাক্ষাতের অনুষ্ঠানে কওমী মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ডয়চে ভেলে’র রিপোর্টে বলা হয়: ‘মূর্তি' অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে হেফাজত সন্তুষ্ট। হেফাজতে ইসলাম মনে করে, প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ‘মূর্তি' সরিয়ে ফেলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তিনি রাখবেন৷ ১লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে হেফাজত, নয়ত কর্মসূচি দেবে তারা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার অনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করেন মঙ্গলবার৷ গণভবনে হেফাজাতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর সামনেই এ ঘোষণা দেন তিনি৷ আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসাগুলোরও নিয়ন্ত্রক৷ প্রধানমন্ত্রী সেখানে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে সম্প্রতি স্থাপন করা থেমিসের মূর্তি আমিও পছন্দ করিনি৷ থেমিসের মূর্তিতে আবার শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই মূর্তি স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে আমি কথা এগিয়েছি৷ দেখি কী করা যায়৷'' সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে গত ডিসেম্বরে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়৷ গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক৷ ভাস্কর্যটির ডান হাতে একটি তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়ানো নারী৷ এই ভাস্কর্য স্থাপনের পর থেকেই হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গলবারের বক্তব্য তাঁদের দাবির প্রতি সমর্থনই প্রকাশ করেছে৷ হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এ মূর্তি সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখেন, ভরসা রাখেন৷' আমরাও মনে করি, তিনি মূর্তি সরিয়ে ফেলবেন৷ তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, একটি মূর্তিকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না৷'' ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে৷ পরে সংঘর্ষ এবং পুলিশি অভিযানের মুখে হেফাজতের কর্মসূচি পণ্ড হয়৷ হেফাজতের অনেক নেতার কিরুদ্ধে মামলাও হয়৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে৷ সরকার ও হেফাজত এখন অনেক কাছকাছি৷ মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আন্দোলন ছিল না৷ আমাদের আন্দালন ছিল নাস্তিকদের বিরুদ্ধে৷ সরকারকে কেউ ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লাগিয়েছিল৷ কিন্তু সরকার তার ভুল বুঝতে পেরেছে৷ ভুল স্বীকার করেছে৷ বর্তমান সরকার উপলব্ধি করেছে, মুসলামনদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছি৷ তবে এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা হারাম৷ এটা বন্ধ না করলে আমরা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেব৷'' এদিকে কওমী শিক্ষা ব্যস্থার সরকারি স্বীকৃতিতেও হেফাজত খুশি৷ কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে৷ এসব এখন হেফাজত এবং সরকারকে বৈরিতার সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে কাছাকাছি নিয়ে গেছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির সরকার ও রজনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. তারেক শামসুর রেহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শাপলা চত্ত্বরের ঘটনার পর বর্তমান সময়কে বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, সরকার হেফাজতে ইসলামের সাথে একটি সমঝোতায় গেছে৷ সরকার একটি সহাবস্থান তৈরি করেছে হেফাজতের সাথে৷ সরকার চাইছে হেফাজতকে কাছে রেখে আগামী নির্বাচনে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাতে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আর এ কারণে এরই মধ্যে সরকার হেফাজতকে অনেক ছাড় দিয়েছে৷ সর্বশেষ কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক ভাস্কর্য সরানোর প্রতিশ্রুতি তারই অংশ৷'' ডয়েচে ভেলে, ১২ এপ্রিল, ২০১৭।

কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রসঙ্গ:

বহুল আলোচিত কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা কিন্তু সেরকম নয়। রাজনৈতিক নেতারা মুখে অনেক কথাই বলেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড গুলোর নিশ্চয় সঠিক কাগজ-পত্র ও রেকর্ড থাকে। সরকারি কাগজপত্র-রেকর্ড ও গ্যাজেট প্রমাণ দিচ্ছে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল আজ থেকে ১১ বছর আগে। অর্থাৎ ২০০৬ সালে। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীর জোট সরকারের অন্যতম শরীক দল ইসলামী ঐক্যজোট কওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে মহাসমাবেশ আয়োজন করে। এ সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন ঐক্যজোট নেতা আল্লামা আজিজুল হক। এ বক্তব্যে তিনি তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন “আমি আপনাদের জোট সরকারে ছিলাম, কিন্তু কোনো পদ পদবী নেইনি। কেবল একটা দাবি ছিল। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি। এই সরকারের মেয়াদকালে এ দাবি পূরণ না হলে ছেলেদের কাছে আমি কি জবাব দেব? আমি দেশে থাকতে পারব না। আমার ইজ্জত রক্ষা করলে আপনারাও সম্মানিত হবেন”। তার এ বক্তব্যের পর তখনকার প্রধানমন্ত্রীর পলিটিক্যাল সেক্রেটারী হারিস চৌধুরী স্বশরীরে সে সমাবেশে গিয়ে কওমী মাদ্রাসা সরকারি স্বীকৃতির আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৯ আগস্ট ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপণ জারী করা হয়। যার নম্বর-শাখা-১৬/বিবিধ-১১(৯)/২০০৩(অংশ)-৮৮৭। এতে বলা হয় কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি “দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ/ সাহিত্য) সমমান” হিসাবে ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে এ প্রজ্ঞাপণের ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ইং ক্ওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণ জারী করা হয়। উল্লেখ্য যে, ডিগ্রির মানের অভাবে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষিত হয়েও হাজার হাজার ছাত্র জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কারিকুলাম সহ বিভিন্ন মানদন্ড ও শর্তাবলীও নির্ধারণ করে দেয়া হয়।আগস্টের শেষ সপ্তাহে কওমী মাদ্রাসা সনদের মান ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১১ বছর পর গত ১১এপ্রিল গণভবনে এক হাস্যকর ঘটনার জন্ম দেয়া হলো। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফি ও ৩ শতাধিক আলেমকে গোশত-বিরিয়ানী খাইয়ে দাওরায়ে হাদিসকে “মাস্টার্স সমমান” ঘোষণার এক নাটক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! বিষয়টি এমন ভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে যেন এর আগে আর কিছুই হয়নি! প্রশ্ন হলো: এক মুরগি আর কয়বার জবেহ্ করা হবে?

ইনু-বাদলদের মুখে গালাগাল ও কুকুরের লেজ:

প্রধানমন্ত্রীর সাথে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাতের পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার চিরাচরিত স্বভাব ও খাসলত অনুযায়ী হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। জাসদ-এর আরেক নেতা মইনুদ্দিন খান বাদল আলেমদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালাগাল করেছেন। এ নিয়ে স্যোসাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। অনেকে ইনু-বাদলসহ বামপন্থিদের এ আচরণকে অভদ্র, শিষ্টাচার বিবর্জিত বলে অভিহিত করেছেন। যারা ইনু-বাদল এবং বর্তমান অবৈধ সরকারের সব অপকর্মের সহযোগী বাম চক্রের কাছ থেকে ভদ্রতা শিষ্টাচার প্রত্যাশা করছেন-তাদের ভাবা উচিত যে, আম গাছে কখনো কাঠাল জন্মে না। ইনু-বাদল ও বামদের পলিটিক্যাল আইডিওলজিস্ট কার্ল মার্কস ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন: “Religion is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world, and the soul of soulless conditions. It is the opium of the people”. কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিমের সাথে তুলনা করলেও সরাসরি ইসলামকে আক্রমণ করেননি। অথচ তারই পলিটিক্যাল আইডিয়া বা দর্শন গ্রহণকারী বাংলাদেশের ইন্ডিয়া ব্যাকড্ বামদের প্রধান শত্রু বা প্রতিপক্ষ হলো ইসলাম। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্ম নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নেই। ইসলাম এবং মুসলিমেই তাদের যতো সমস্যা, অাপত্তি ও এলার্জি। অনেকে বলছেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনু-বাদল-মেননরা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারও নির্বাচিত হতে পারেন না বা পারবেন না। ভোটারবিহীন নির্বাচনে এম.পি-মন্ত্রী হয়ে তাদের এতো আস্ফালন কিসের? তাদের পলিটিক্যাল ফিলোসফিতে জনগণের মতামত, রায় বা ম্যান্ডেট-এর বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। সুতরাং তারা যে বিনা ভোটে এম.পি-মন্ত্রী হয়ে আস্ফালন করবেন-এটাই স্বভাবিক। এতে বিস্মিত বা তাজ্জব হবার মতো কিছু নেই। খোলাফায়ে রাশেদীন-এর ৪র্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) মানুষের সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনের জন্য বেশকিছু উপদেশ মূলক কথা বলে গেছেন। এসব উপদেশ একবিংশ শতাব্দীতেও সমান গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর। হযরত আলী (রা.)-এর এমন একটি বাণী হলো: “অসভ্য ও খারাপ লোকদের প্রধান অস্ত্র হলো গালি”। সুতরাং ইনু-বাদলদের কাছ থেকে ভদ্রতা-শিষ্টাচার প্রত্যাশা করা আর আম গাছে কাঠাল ফলন প্রত্যাশা করা একই কথা। এটা মনে রাখা দরকার যে, কুকুরের লেজ ১২ বছর বাঁশের চুঙ্গায় ভরে রাখলেও সোজা হয় না। এখানে আমার বক্তব্য হলো ইনু-বাদলরা তাদের পলিটিক্যাল ফিলোসফি নিয়েই থাকবেন। এটা ঠিকই আছে। শান্তির স্বার্থে হেফাজতের সাথে সরকারের সমঝোতা-সন্ধি এসব হতেই পারে। এটাও তেমন কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু যারা ইসলাম এবং ইসলামী আদর্শের কথা বলেন-তারা কেন সামান্য গোশত-বিরিয়ানীর লোভ সামলাতে পারেন না? কিছু জমি, নগদ টাকার বিনিময়ে ইসলামী আদর্শের প্রবক্তারা এতো নিচে নামবেন-সেটা কল্পনারও বাইরে। হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ লাইভ টেলিকাস্ট করার অপরাধে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন এখনো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যা আগেও উল্লেখ করেছি। এ সমাবেশে আগত বহু আলেম, গরীব মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রদের রক্তের দাগ এখনো শুকাইনি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে স্বজন হারানোর কষ্ট-হাহাকার এখনো বিরাজমান। বহু লাশ ও রক্ত মাড়িয়ে হেফাজত নেতারা ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে ১১ বছর আগে সম্পন্ন হওয়া কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতি ও দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দানের নাটকে অংশ নিলেন। সরকারি টাকায় গোশত-বিরিয়ানী খেলেন। সত্যকে অস্বীকার করার মহড়ায় অংশ নেয়ার অল্প ক’দিন আগের ইতিহাস কি তাদের বিবেককে একটু নাড়া দেয়নি? পুলিশী হয়রানী, গুম ও হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে যাওয়ার ভয়ে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর থেকে শুরু করে সমাজের প্রত্যেক স্তরে সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সুবিধাবাদী নীতি দেখা যাচ্ছে সব জায়গায়। টিভি চ্যানেল ও মিডিয়াগুলোতে মিথ্যা প্রচারণা-মিথ্যা বাকওয়াজী করার মতো লোকের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো। ব্যক্তি বা কায়েমী ফায়দা হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে যেভাবে সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করার অশুভ প্রবণতা শুরু হয়েছে-এটা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ফ্রেঞ্চ সেনাপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর উক্তি দিয়েই শেষ করছি। নেপোলিয়ন বলেছেন: “The world suffers a lot not because of the violence of bad people, but because of the silence of the good people” অর্থাৎ “খারাপ মানুষগুলোর ধ্বংসাত্বক তৎপরতার কারণে দুনিয়াতে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা তৈরী হচ্ছে না, এটা হতে পারছে সৎ মানুষগুলোর নিরবতার কারণে”

বিষয়: রাজনীতি

১২২২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382786
২৪ এপ্রিল ২০১৭ বিকাল ০৪:৩০
হতভাগা লিখেছেন : বিশাল গদ্য রচনা করেছেন ।

হাসুবু ঠিক সময়ে ঠিক দলকেই কাছে টেনেছেন । কাজ হয়ে গেলে আবার ফাঁপড়ও দিয়েছেন।
382787
২৪ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:১৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : বহু নিরিহ ইসলাম প্রিয় মানুষের লাশ এবং তাদের রক্তের উপর দিয়ে হেফাজত নেতারা ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে ১১ বছর আগেই সম্পন্ন হওয়া কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতি ও দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দানের নাটকে অংশ নিলেন। সরকারি টাকায় গোশত-বিরিয়ানী খেলেন। সত্যকে অস্বীকার করার মহড়ায় অংশ নেয়ার অল্প ক’দিন আগের ইতিহাস কি তাদের বিবেককে একটুও নাড়া দেয়নি? ভালো লাগলো আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
382788
২৪ এপ্রিল ২০১৭ রাত ০৯:০৫
সাইয়েদ ইকরাম শাফী লিখেছেন : ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার জন্য শুধু দোয়া করবেন-যাতে দেশের জন্য লিখে যেতে পারি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File