প্রতিরক্ষা চুক্তি না অবৈধ সরকারের গদিরক্ষা চুক্তি?

লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ০৬ এপ্রিল, ২০১৭, ০৭:২২:১৪ সন্ধ্যা



সরকারের বডি ল্যাঙ্গয়েজ বলে দিচ্ছে দেশে প্রবল জন বিরোধিতার মুখেও ইন্ডিয়ার সাথে কথিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করবে। একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া সফরে যাচ্ছেন। গত ১৩ মার্চ শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকাধীন ইংরেজী দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট আলোচিত চুক্তির কিছু ড্রাফট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত (এমওইউ) ড্রাফটটি উল্লেখ করা হলো:

Draft MoU on Indo-Bangla Defense cooperation

Focus on expansion of military ties

Govt plans inking of 10 MoUs on defence during PM’s Delhi visit

DEEPAK ACHARJEE

“Bangladesh has prepared a draft of an MoU on defense cooperation with India involving defense industries, space technology, technical assistance and development of sea infrastructure. The draft of the 11-clause MoU, which is likely to be signed during Prime Minister Sheikh Hasina’s upcoming India visit in the first half of next month, has been prepared taking into account the national policies and security of both the countries, according to a copy of the draft obtained by The Independent. If signed, defense cooperation framework will be the first defense deal between the two close-door neighbours, sources in the foreign ministry said.

The framework is among the 10 memoranda of understanding (MoUs) likely to be signed between the governments of Bangladesh and India during the visit, the sources added.

Under another of the 10 MoUs, India is willing to commit up to $50 crore under a line of credit (LoC) for military cooperation with Bangladesh, the sources added.

The authorities have prepared several drafts of the MoUs and all the drafts are currently being scrutinised by the governments of both countries.

According to Clause 1 of the draft defence cooperation framework, relating to the area of cooperation, both the parties would actively work towards enhancing cooperation in the field of defence, respecting the international law, national law, each other’s national laws, conditions, principles and customs, on the basis of their own work and efficiency.

Clause 2 of the draft MoU relating to defence cooperation says, “Both sides will take steps for sending military delegations to each other’ country on the basis of mutual understanding and convenience.” As per the clause, both the parties will arrange training; exchange of military experts, trainers and observers, military courses and information; provide mutual cooperation on maintenance of military equipment; arrange treatment; organize sports events; impart training on disaster and relief cooperation; hold discussions at the staff level of the armies, navies and air forces of both the countries and resolve bilateral military issues through discussions; and hold annual talks between the military organisations of the two countries. At the same time, both parties will exchange visits of ships and airplanes on the basis of mutual understanding, and arrange joint patrols and coordinated exercises at the international sea boundaries.

As per Clause 3 of the MoU, relating to cooperation in the sector of defence industries, “Both the parties will provide cooperation and assistance to the defence industries through joint ventures, cooperation in space technology, technical assistance, exchange of experience, and development of sea infrastructure. Cooperation would be provided with consultations with the authorities concerned, considering the policies and national security of both countries.”

Clause 4 of the MoU provides for cooperation in defence science and technology and research and would be conducted through training, visits by scientists and engineers, and exchange of information relating to science and technology.

As per Clause 6 of the MoU on management in cooperation, annual consultations would be held in Bangladesh and India at the level of the Principal Staff Officer (PSO) of the Armed Forces Division (AFD) and the Defence Secretary, for implementing the proposed MoU.

The seventh clause of the MoU, relating to information security, says, “Both sides will ensure that exchange of information of defence cooperation shall not be used against each other. Both the sides will maintain secrecy during the process of exchange of defence cooperation.”

As per Clause 9 of the proposed MoU, “The MoU could be amended as per the written consent of each other in future, if necessary.”

And Clause 10 of the MoU, relating to settlement of disputes, says, “If there arises any dispute or any controversy in future about the MoU, both sides would resolve it through discussions.”

Apart from the proposed MoU on defence cooperation, nine other draft MoUs are likely to be signed during the PM’s visit to India next month. The draft MoUs are: one for extending a new defence line of credit worth USD 500 million; one between the Directorate-General of Medical Services (DGMS), Bangladesh Armed Forces, and Tata Medical Centre, Kolkata, India; one between the Defence Institute of Advanced Technology (DIAT), India and Military Institute of Science and Technology (MIST) for enhancing cooperation in the field of education and research; one between the Defence Service Staff College (DSSC), India, and Defence Services Command and Staff College (DSCSC) for enhancing cooperation in the field of national security and strategic studies; one between the National Defence College, Bangladesh and the National Defence College, India on enhancing cooperation in the field of national security and strategic studies; one between Dockyard and Engineering Works Limited, Narayanganj, Bangladesh and Bharat Electronics Limited, India; one between Garden Reach Shipbuilders and Engineers Limited, India and Khulna Shipyard Limited, Bangladesh; one between Khulna Shipyard Limited, Bangladesh and Bharat Electronics Limited, India; and one between Chittagong Dry Dock Limited, Bangladesh and Bharat Electronics Limited, India.”

বাংলা তরজমা:

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা (এমওইউ) ড্রাফট।

দৃষ্টি এখন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির দিকে।

শেখ হাসিনার ইন্ডিয়া সফরে প্রতিরক্ষা বিষয়ক এমওইউ স্বাক্ষরের পরিকল্পনা করছে সরকার।

দীপক আচার্য

“বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার সাথে ১১ ধারা বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা চুক্তির ড্রাফট মেমোরেন্ডা অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ চুক্তিতে থাকবে প্রতিরক্ষা শিল্প, মহাকাশ প্রযুক্তি সহযোগিতা ও সামুদ্রিক অবকোঠামো উন্নয়ন। আগামী মাসের প্রথম দিকে শেখ হাসিনার ইন্ডিয়া সফরে এ চুক্তির ড্রাফট (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তি উভয় দেশের জাতীয় নীতি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর একটি ড্রাফট কপি দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর হাতে এসেছে। এ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এটা হবে দুই কাছের প্রতিবেশীর মধ্যে ১ম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্রে বলা হয়েছে ধারা-১০ অনুযায়ী ইন্ডিয়া সামরিক সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার লাইন অব ক্রেডিট লোন (এলওসি) দেবে। উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেমোরেন্ডা অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামোর ধারা ১ অনুযায়ী এ অঞ্চলে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক আইন, জাতীয় আইন, একে অপরের জাতীয় আইন, শর্ত ও নীতির প্রতি সম্মান রেখে প্রত্যেকের দক্ষতার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ড্রাফট (এমওইউ)-এর ধারা ২ বলছে, পরস্পর বুঝাপড়া ও সুবিধাজনক সময়ে উভয় দেশ একে অন্যের দেশে সেনা প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে। এ ধারায় আরো বলা হয়েছে, উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ; সামরিক বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এবং পর্যবেক্ষক, সামরিক কোর্স এবং তথ্য বিনিময়; সামরিক সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ, পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান, চিকিৎসা ব্যবস্থা, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, দুর্যোগ এবং ত্রাণ সহযোগিতার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান; উভয় দেশের সেনাবাহিনী, নৌ এবং বিমান বাহিনীর স্টাফ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সমস্যাগুলির সমাধান; এবং দুই দেশের সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বার্ষিক আলোচনা। একই সময়ে, উভয় পক্ষের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একে অন্যের নৌ-জাহাজ ও যুদ্ধবিমান সফর বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানায় যৌথ টহল এবং সমন্বিত মহড়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ধারা ৩ বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা শিল্প খাতে সহযোগিতা, যৌথ উদ্যোগ, প্রযুক্তি সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন, মহাকাশ উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিমিয় ও সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন। উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করবে।

ধারা ৪ অনুযায়ী উভয় দেশ প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সহযোগিতা, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী সফর বিনিময়ের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করা হবে।

ধারা ৬ অনুযায়ী (এমওইউ) বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও)সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) এবং প্রতিরক্ষা সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ধারা ৭ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় বিনিময় হওয়া নিরাপত্তা তথ্য একে অপরের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না। উভয় দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের বিষয় গোপন রাখবে।

প্রস্তাবিত (এমওইউ) ধারা ৯, অনুযায়ী "(এমওইউ) ভবিষ্যতে একে অপরের প্রয়োজনে লিখিত সম্মতি অনুযায়ী সংশোধন করা যাবে।"

(এমওইউ) ধারা ১০, বিরোধ নিষ্পত্তির সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, "(এমওইউ) সম্পর্কে ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ বা বিতর্ক দেখা দিলে-উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে।"

এছাড়াও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও এর আওতায় আরো নয়টি অন্যান্য (এমওইউ) প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফরে স্বাক্ষরিত হবার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে একটি হলো: প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির আওতায় ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)-তে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করবে। অন্য নয়টি (এমওইউ) হলো: যথাক্রমে: ১. মহাপরিচালক সশস্ত্র বাংলাদেশ বাহিনী মেডিক্যাল সার্ভিসেস এবং টাটা মেডিক্যাল সেন্টার কলকাতা, ইন্ডিয়া-এর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। ২. ডিফেন্স ইন্সটিটিউট অব এডভান্স টেকনোলজী (ডিআইটিএ) ইন্ডিয়া মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজী (এমআইএসটি)-এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৩. ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ (ডিএসএসসি) ইন্ডিয়া এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি)-এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধকৌশল শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৪. ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ইন্ডিয়ার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধকৌশল শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৫. ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, ইন্ডিয়ার মধ্যে নির্মাণ কৌশল ও কারিগরী সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৬. গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ইন্ডিয়া, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড বাংলাদেশ ও ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড-এর মধ্যে কারিগরী সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৭. চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড, বাংলাদেশ এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড-এর মধ্যে কারিগরী সহযোগিতা বৃদ্ধি।”

এটা চুক্তির পুরো ড্রাফট নয়-আংশিক মাত্র। তবুও যেটুকু প্রকাশিত তাতে এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের স্বাধীন স্বত্বা বলতে কিছুই থাকবে।

ইন্ডিয়া মূলতঃ একটি গরীব দেশ:

মিলিটারী ও ডিফেন্স সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কথিত প্রতিরক্ষা চুক্তির যে টুকু এমওইউ বা সমঝোতা স্মারকের ড্রাফট প্রকাশিত হয়েছে-তাতে স্পষ্ট যে, ইন্ডিয়া বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা সেক্টর এবং এ সংক্রান্ত সব শিল্প-কারখানাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এমওইউ’র প্রতিটি ধারায় বুথ পার্টি বা উভয় দেশের কথা বলা হলেও মূলতঃ এ চুক্তির মাধ্যমে ১০০ ভাগই লাভবান হবে ইন্ডিয়া। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি সেক্টর ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুরু করে সব সেক্টরে অবাধেই যাতায়াত করবে ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর স্বাধীন স্বত্বা বা বিশেষত্ব বলতে কিছুই থাকবে না। সেনাবাহিনী হবে ইন্ডিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি প্যারা মিলিটারী ফোর্স। বাহ্যিক ভাবে নিজেকে খুব শক্তিশালী ও উন্নত দেশ বলে জাহির করলেও ইন্ডিয়া মূলতঃ একটি গরীব দেশ। একটি পরিসংখ্যানে চোঁখ বুলালেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) একটি রিপোর্ট-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে:

India tops world hunger list with 194 mn people.

“India is home to the highest number of hungry people in the world, at 194 million, surpassing China, according to United Nations annual hunger report.

At the global level, the corresponding figure dropped to 795 million in 2014-15, from 1 billion in 1990-92, with East Asia led by China accounting for most of the reductions, UN body Food and Agriculture Organisation (FAO) said in its report titled 'The State of Food Insecurity in the World 2015'.

India too saw a reduction between 1990 and 2015, it added.

In 1990-92, those who were starved of food in India numbered 210.1 million, which came down to 194.6 million in 2014-15.

"India has made great strides in reducing the proportion of food insecure persons in the overall population, but according to FAO, it still has over 194 million hungry persons. India's numerous social programmes are expected to continue to fight hunger and poverty," the report stated.”

Source: BBC, 28 May, 2015

বাংলা তরজমা:

“১৯৪ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত জনসংখ্যার কারণে দুনিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষুধার্ত দেশের তালিকায় ইন্ডিয়ার নাম।”

“ইন্ডিয়ায় দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস। এ সংখ্যা ১৯৪ মিলিয়ন। চায়না এ ব্যাপারে চমক দেখিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক একটি রিপোর্টে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ১৯৯০-৯২ সালে থেকে ২০১৪-১৫ সালে দুনিয়াব্যাপী এ সংখ্যা কমে ১ বিলিয়ন থেকে ৭৯৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে। পূর্ব এশিয়ায় দেশ চায়না উল্লেখযোগ্য হারে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমাতে পেরেছে। জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) খাদ্য নিরাপত্তা ঘাটতি সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে। এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়া ক্ষুধার্ত জনসংখ্যা অনেক কমাতে পেরেছে। ১৯৯০-৯২ সালে ইন্ডিয়ায় খাদ্য সঙ্কটে থাকা জনসংখ্যা ছিল ২১০.১ মিলিয়ন, ২০১৪-১৫ সালে এটা ১৯৪.৫ মিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। ইন্ডিয়া তার দেশের সব মানুষের মধ্যে খাদ্য ঘাটতিতে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমানোর চেষ্টা করছে। তবে (এফএও) জানিয়েছে, দেশটিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা এথনো ১৯৪ মিলিয়নে স্থির আছে। এ বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, ইন্ডিয়ায় ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ও গরীবি হাল কমানোর জন্য ব্যাপকভাবে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে”

সূত্র: বিবিসি, ২৮ মে, ২০১৫

২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী ১২১ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইন্ডিয়ায় ২০ কোটির কাছাকাছি মানুষ এখনো গরীবি সীমার নিচে বসবাস করে। তার মানে এসব গরীব ইন্ডিয়ানদের খাদ্য ও পুষ্টির কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন একটি গরীব জন বসতিপূর্ণ দেশ ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক পরাশক্তি হবার খায়েশ দেখে আশ্চর্য হতে হয়। জাতিসংঘের সে হিসাবেই বলে দিচ্ছে কোন দেশকে ঋণ দেয়ার মতো সামর্থ এখনো ইন্ডিয়ার হয়নি।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির আওতায় ইন্ডিয়ান ঋণ-শুভঙ্করের ফাঁকি:

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে লাইন অব ক্রেডিট বা (এলওসি)-তে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আসলে সেটা শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। এ ঋণের টাকা দিয়ে সমরাস্ত্র বা প্রতিরক্ষা সামগ্রী কিনতে হবে ইন্ডিয়া থেকেই। সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরী বা উৎপাদনে ইন্ডিয়ার সক্ষমতা কতটুকু সেটা বিশেষজ্ঞ মহলের ভালোই জানা আছে। অস্ত্র আমদানীতে ইন্ডিয়ার অবস্থান এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ। এর আগে একটি নিবন্ধে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না যে, ইন্ডিয়া আধুনিক ও উন্নত সমরাস্ত্র তৈরী ও উৎপাদনে সক্ষম হলে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সুইডেন ও অন্যান্য উন্নত সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক দেশ থেকে অস্ত্র কিনবে। এর আগে ইন্ডিয়া ১৯৫০ সালে নেপাল ও সিকিমের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এ চুক্তির পর ইন্ডিয়া ১৯৭৪ সালে সিকিমের প্রধানমন্ত্রী কাজী লেন্দুপ দর্জিকে পুতুলের মতো ব্যবহার এবং দেশটিতে পরিকল্পিত অরাজকতা তৈরী করে সিকিম দখল করে নিয়েছে। সিকিম এখন ইন্ডিয়ার একটি অঙ্গরাজ্য। একই চুক্তির মাধ্যমে ইন্ডিয়ার নিম্নমানের ও অকেজো সমরাস্ত্র কিনে নেপালের সেনাবাহিনী বড়রকমের সঙ্কটে পড়েছিল। বহু কষ্টে নেপাল এ সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করছে। দেশটি এখন চায়নার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ৭০ দশকের পর থেকে শ্রীলঙ্কাও ছিল ইন্ডিয়ার অপকৌশল ও চানক্য নীতির ঘেড়াটোপে বন্ধি। ইন্ডিয়ার সে ঘেড়াটোপ থেকে বেরিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন চায়নার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সম্পর্ক উন্নয়নের আওতায় সম্প্রতি চায়নার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নেপাল ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। চায়না প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরেরও পরিকল্পনা ছিল। শোনা যায় ইন্ডিয়ার চাপে সরকার তার বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দেয়নি। এ ব্যাপারে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে বলা হয়েছে: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে চায়নার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ইন্ডিয়া অতিরিক্ত স্পর্শকাতর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে অসন্তুষ্ট বেইজিং। চায়নার সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে বলেছে, ইন্ডিয়া এ ধরণের প্রবণতা অব্যাহত রাখলে চায়নাও পাল্টা আঘাত হানবে। কারণ ইন্ডিয়ার কাজের ফলে চায়নার মূল স্বার্থ লঙ্ঘিত হতে থাকবে এমনটা কেউ আশা করে না। গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে চায়নার স্টেট কাউন্সিলর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চ্যাঙ ওয়ানকুয়ান ২৪ মার্চ দক্ষিণ এশিয়ান দেশ দু’টি সফর শুরু করেছেন। এই সফর নয়া দিল্লিকে অস্থির করতে তুলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ভবিষ্যদ্বাণী করতে না করতেই ইন্ডিয়ান মিডিয়ায় সেটা ফুটে ওঠেছে। পত্রিকাটি উল্লেখ করে, হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সুর ছিল সতর্ক ও তিক্ত। চায়না-নেপাল প্রথম সামরিক মহড়ার পর চ্যাঙের সফরটি নয়া দিল্লিকে ‘নার্ভাস’ করে তুলছে উল্লেখ করে পত্রিকাটিতে বলা হয়, নেপাল সরকার ‘বেইজিংকে না বলার ক্ষমতা রাখছে না।’ কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মত বিনিময়ের সময় চায়না একটি লাঠি রাখে সাথে। অথচ সত্য বিষয় হলো ইন্ডিয়াই দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্ডিয়ান মহাসাগরকে তার নিজের আঙিনা মনে করে কঠোর আচরণ করে। এ অঞ্চলে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রধানত নয়া দিল্লির কারণেই চায়না ও ভুটান এখন পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ভুটান পুরোপুরি ইন্ডিয়ার ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে নির্ভরশীল।

গ্লোবাল টাইমসের মতে, চায়নার প্রতি ইন্ডিয়ার সদা সতর্ক অবস্থান বেইজিংয়ের সাথে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সম্পর্ককেও প্রভাবিত করছে। দেশ দু’টি দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করলেও নয়াদিল্লি তাদের নিরপেক্ষতাকে বেইজিংপন্থী নীতি হিসেবে অভিহিত করছে। এসব দেশের কোনো শীর্ষ নেতা চায়না সফরে গেলে ইন্ডিয়ান মিডিয়া ধোয়া তুলতে থাকে যে, ইন্ডিয়া তাদের হারাচ্ছে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ায় চায়নার বাড়তে থাকা শক্তি নয়াদিল্লির জন্য নতুন হুমকি হবে। অথচ, ইন্ডিয়ার বেশিরভাগ আশপাশের দেশ বেইজিংয়ের প্রতিবেশী। যেকোনো দেশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে চারপাশের দেশগুলোর সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চায়না এবং এর প্রতিবেশীদের মধ্যকার একেবারে প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি চরম স্পর্শকাতরতা প্রদর্শন বন্ধ করা উচিত নয়াদিল্লির। দুর্বল অবকাঠামোর বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রীলঙ্কা ও নেপাল এখন আসলে চায়নার সাথে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে। এসব দেশে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক চায়না কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এটা অনিবার্য যে, বেইজিং কেবল চায়নার নয়, এই অঞ্চলের স্বার্থের জন্য তাদের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও বাড়াবে। চায়নার সরকারি মুখপত্রটি বলেছে, এখন পর্যন্ত চায়নার প্রতি নীতিগত প্রশ্নে ইন্ডিয়ান সরকার বিভ্রান্তিতে রয়েছে। মনে হচ্ছে, চায়নার ওপর চাপ সৃষ্টি কিংবা ভারসাম্য প্রতিস্থাপনের বিষয়টি প্রতিফলনের লক্ষ্যে দালাই লামার সাথে যোগাযোগ বাড়ানোসহ একটা কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। ২২ মার্চ দালাই লামাকে ইন্ডিয়ার বিহারে একটি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সেমিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। চায়না আশা করছে, অভিন্ন উন্নয়নের জন্য চায়না এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর উদ্যোগের বিষয়টি ইন্ডিয়া বুঝার চেষ্টা করবে। অবশ্য, নয়াদিল্লি এ ধরণের চিন্তা-ভাবনার ধারে-কাছেও নেই। তারা বরং চায়নার সাথে ভারসাম্য চাচ্ছে।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

নিম্নমানের ও অকেজো ইন্ডিয়ান সমরাস্ত্র বিক্রি করার ফন্দি:

এটা স্পষ্ট যে, ঋণ দেয়ার নামে ইন্ডিয়া তার পুরনো ও অকেজো অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানী করবে বাংলাদেশে। এর মাধ্যমে একদিকে সেনাবাহিনীর সব গোপন তথ্য জেনে যাবে ইন্ডিয়া এবং দূর্বল-মেরুদন্ডহীন হবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। অন্যদিকে প্রতি বছর ইন্ডিয়ার দেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার দিয়ে। যা আসে বিদেশে হাড় ভাঙ্গা কায়িক শ্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশী শ্রমিক ও রেডিমেড গামের্ন্টস আইটেম রপ্তানীর মাধ্যমে। এর অর্থ হলো এ চুক্তির মাধ্যমে পুরোটাই লাভবান হবে ইন্ডিয়া। ফোকলা হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভ। বাংলাদেশের প্রাপ্তি হবে শূণ্য! দেশের সবমহলে ব্যাপক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে, হঠাৎ ইন্ডিয়ার সাথে কেন প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজন হলো?

তিস্তা চুক্তি না হলে কিছু যায় আসে না: এএইচ মাহমুদ আলী

ইতিমধ্যে বাংলাদেশর মানুষ জেনে গেছে যে, হাসিনার ইন্ডিয়া সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইন্ডিয়ার অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, “বাংলাদেশকে ভালোবাসি। তবে তিস্তাতে নো।” তিস্তা চুক্তি করার মুরোদ এ সরকারের নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্ডিয়া সফরে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি না হলে কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। ৪ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফরে তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে, উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা উচ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক। এর মধ্যে একটা বিষয় (তিস্তা চুক্তি) হলো কি হলো না, এতে কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, দেখতে হবে যে মূল ধারাটা (সম্পর্ক) কোথায় যাচ্ছে। আমার মনে হয়, তার মধ্যে একটা (চুক্তি) হবে কি হবে না-এটা নিয়ে আমরা এখন আর কিছু বলতে চাই না। প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে সমঝোতা স্মারকপত্র (এমওইউ) স্বাক্ষর করবে, কোনো চুক্তি নয়। এ সমঝোতা স্মারকে কি থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে গোপন করার কিছু নেই। সব চুক্তি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আ স ম আবদুর রবের সমালোচনার জবাবে মাহমুদ আলী বলেন, দেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা যেভাবে জাতিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বাস্তবায়ন করেছি। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে আছি। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করছি। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করব। সেখানে এ ধরণের প্রশ্ন সিরিয়াস কোনো বিষয় নয়। উল্লেখ্য, আ স ম আবদুর রব ৪ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো ধরণের চুক্তি বা সমঝোতা না করাই হবে জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা। সঙ্গত কারণেই প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতায় প্রধানমন্ত্রী সম্মত হবে না, এটাই জাতি প্রত্যাশা করে। তিস্তা চুক্তির মাধ্যমে পানি পাওয়া বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। ইন্ডিয়া তিস্তা নদীর পানি আটকে রাখায় উত্তরাঞ্চলীয় অন্তত ১০টি জেলায় পানি সঙ্কটের কারণে কৃষকের চাষাবাদ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি ব্যাহত হওয়া মানেই বাংলাদেশ পিছিয়ে যাওয়া। কারণ বাংলাদেশ এখনো কৃষি প্রধান দেশের আওতা থেকে বের হতে পারেনি। দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা চুক্তি হবে না। ইন্ডিয়ার প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে! দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তিস্তা চুক্তি না হলে কিছুই যায় আসে না। এরা আসলে কোন দেশের শিখন্ডি? বর্তমান সময়ে কতিপয় মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার কথা শুনে মনে হয় তারা এদেশের নয়-ইন্ডিয়ার হয়ে কাজ করছেন।

ইন্ডিয়ান সেনা প্রধানের হঠাৎ বাংলাদেশ সফর:

৩০ মার্চ ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত হঠাৎ বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ২ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরে যান। স্বাভাবিক ভাবে একজন সেনাপ্রধানকে এডিশনাল সেক্রেটারী লেভেলের অফিসার হিসেবেই গণ্য করা হয়। সে হিসাবে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী প্রধানের সফর এক বা সর্বোচ্চ দুইদিনের হওয়া উচিত ছিল। অথচ ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশে চার দিনের বেশ লম্বা সফর করে গেলেন। অর্থাৎ বর্তমান অবৈধ সরকার ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধানকে রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা দিয়েছে। ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধানের এ সফরকে সাধারণ সফর বলা হলেও এটা নিছক সাধারণ সফর নয়। কথিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির ব্যাপারে অবৈধ ও তাবেদার সরকারকে হিঞ্চ দেয়ার জন্যই যে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন সেটা আর গোপন নেই। ঢাকা ছাড়ার আগে ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সফরের জন্য জেনারেল রাওয়াতকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্ডিয়ার বিশেষ করে সেদেশের সেনাবাহিনীর অবদানের কথা তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সন্ত্রাস নির্মূল করা। তিনি পরমাণু শক্তি খাতে দু’দেশের সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধান বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখে আমরা আনন্দিত। দু’দেশের যৌথ সাইকেল অভিযাত্রার কথা উল্লেখ করে জেনারেল রাওয়াত বলেন, উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। জেনারেল রাওয়াত বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বকে আমরা গুরুত্ব দেই এবং সবকিছুই সমানভাবে দেখি। দেশের আকার এখানে কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর মর্যাদা সকল ক্ষেত্রে সমান।’ তিনি বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির প্রশংসা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা উপস্থিত ছিলেন।

ইন্ডিয়ানদের গালভরা বুলি এবং সীমান্ত হত্যায় তাবেদার সরকারের নিরবতা:

বাংলাদেশ সফরে এসে ইন্ডিয়ান সেনাপ্রধান যে কথা বলেছেন-সেরকম কথা ইন্ডিয়ার সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ও সেদেশের সরকারি অফিসাররা সবসময় বলেন। আসলে বর্তমানে ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক চলছে সেটাকে কোনো আহম্মকও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক বলবে না। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার সীমান্ত পরিস্থিতির দিকে সামান্য পরিমাণ নজর দিলেই বুঝা যাবে-আসলে ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের কি পরিমাণ সুসম্পর্ক রয়েছে! সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কিরনগঞ্জের জমিনপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়েছে ইন্ডিয়ান সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘বিএসএফ’। খবর পেয়ে বিবিজির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিএসএফ সদস্যরা ইন্ডিয়ায় পালিয়ে যায়। এসময় বিএসএফের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও ইট-পাটকেলে নারী-শিশুসহ ১২ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এ শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরনগঞ্জের জমিনপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ান নাগরিকদের মধ্যে বিরোধ বাধে। পরে ইন্ডিয়ানদের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশিদের ওপর হামলা চালায় বিএসএফ। গ্রামবাসীরা জানান, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কিরনগঞ্জ জমিনপুর সীমান্ত সংলগ্ন একটি জলাশয়ে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি নাগরিকদের বাধা দেয় বিএসএফ। এর জের ধরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিএসএফকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে বাংলাদেশিরা। এতে চার পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে ইন্ডিয়ার চুরি অনন্তপুর বিএসএফ ফাঁড়ির সদস্যরা প্রস্তুত হয়। ফাঁড়ির ৩০/৩৫ জন সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় ১৭৯নং সীমান্ত পিলারের ৪ ও ৫ নং সাব পিলারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের ১শ গজ অভ্যন্তরে জমিনপুর পশ্চিম পাড়ায় ঢুকে পড়ে। বিএসএফ সদস্যরা বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশিদের ঘর-বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে ওই গ্রামের আবু সায়েদ, মাসুম, মোতালেব, নজরুল, সালমা, সোবহান, শামীম, কুলসুম, ডলিয়ারা, দুরুল ও রুবেলসহ ১২ বাংলাদেশি নাগরিক আহত হন। এ হলো ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের অতি সুসম্পর্কের সামান্য কিছু নমুনা। ইন্ডিয়ান সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিয়মিত ভাবে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করে চলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর বক্তব্য অনুযায়ী ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলা অবান্তর! আসলেই তো ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন মহাকাশে গিয়ে পৌঁছেছে! মহাকাশে পৌঁছে যাওয়া সম্পর্কের কারণে ইন্ডিয়ান সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা দূরে থাক একটা টু শব্দও করা হয় না।

সেনা বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য বিশ্লেষকদের মতামত:

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া সেমিনারে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান প্রস্তাবিত চুক্তিটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ ধরনের সামরিক সহযোগিতার প্রয়োজন কেন হলো বা কেন ইন্ডিয়া এ চুক্তিটির জন্য চাপ দিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। ইন্ডিয়ান মিডিয়া যৌথ উৎপাদন নিয়ে কথা বলছে। এর অর্থ হলো আমাদের কেনাকাটার ওপর কিছু সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। সবসময়ই ছোট দেশগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। এটা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সময় জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’ মনিরুজ্জামান আরো বলেন, ‘নেপালের সাথে ইন্ডিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী তৃতীয় দেশ থেকে অস্ত্র কেনার আগে প্রথম পক্ষের সাথে আলোচনা বাধ্যতামূলক। চায়নার কাছ থেকে নেপালের বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনা আটকে দিয়েছে ইন্ডিয়া।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে এ জাতীয় চুক্তি করার সময় এ ধরণের কোনো বিধিনিষেধ থাকে কিনা তা দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান প্রশ্ন করেন, ‘একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হঠাৎ করে এত প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠলো কেন? আমরা যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধুই হয়ে থাকি, তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, জঙ্গিবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় বন্ধুত্বপূর্ণ পন্থাই অবলম্বন করতে পারি। আমরা সবসময় ইন্ডিয়াকে বেশি দিয়ে এসেছি। আমরা তাদের উত্তরপূর্বের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করেছি। তাদেরকে ইন্ডিয়ার হাতে হস্তান্তর করেছি। এ ধরণের কারিগরি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কারিগরি পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে বলেছেন, প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনো ধরণের চুক্তির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া যদি তার কোনো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে, তবে তার কি বাংলাদেশের সাহায্যের প্রয়োজন আছে? আমি এই চুক্তির কোনো কারণ দেখি না।’

সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকা:

শেখ হাসিনার ইন্ডিয়া সফরে এ প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে বলে উভয় দেশের মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ চুক্তির ব্যাপারে বামদল গুলো নিরব থাকলেও এখন বেশ সরব হয়ে উঠেছে। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামীসহ মুলধারার রাজনৈতিক দলগুলো কথিত প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ৩১ মার্চ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ইন্ডিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় এবং দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী হবে। দলটি বলছে, ইন্ডিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি, অভিন্ন নদী সমস্যার সমাধান, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, টিপাইমুখ বাঁধ, সাম্প্রদায়িক জঙ্গি, অবৈধ মাদক বাণিজ্য, সুন্দরবন রক্ষা, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলসহ নানা বিষয়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ইন্ডিয়ার সাথে চুক্তি সম্পাদনই জরুরি। কিন্তু তিস্তা চুক্তিসহ দেশের স্বার্থের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে আনা হয়েছে। এমন অবস্থাকে অনাকাক্ষিত বলে মনে করে সিপিবি।

বাসদ: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হলো, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, এছাড়া অন্য কোন চুক্তি অপ্রাসঙ্গিক হবে। প্রতিরক্ষা বা সামরিক চুক্তি হলে তা জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির বরখেলাপ হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ইন্ডিয়া সফরে তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, বাণিজ্য ঘাটতি দূর, সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো বিষয়ে জোর আলোচনা করতে হবে। ফারাক্কা ও গজলডোবায় বাধের কারণে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। সেটা আদায়ে এ সফরে দাবি তুলতে হবে। তিস্তার পানি ছাড়া অন্য কোন চুক্তি দেশের মানুষ মানবে না বলেও জানান তিনি। এ ইস্যুতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দেয়ার কথাও জানান তিনি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে প্রতিরক্ষা বা সামরিক চুক্তি আলোচনায় আসায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের স্বার্থ বিরোধী হবে। সব বিষয় জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে।

সুশীল সমাজের ভূমিকা:

৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: সমতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির কোনও যুক্তিই নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ইন্ডিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তির ক্ষেত্রে দেশের জন্য কিছু লক্ষ্য থাকতে হয়, যুক্তি থাকতে হয়। কিন্তু এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তিতে দেশের জন্য কোনও সুবিধা দেখছি না। ফলে এই চুক্তির কোনও যুক্তিই নেই। আমরা কোন যুক্তিতে এমন চুক্তি করবো সেই যুক্তি নেই বললেও তা শোনার সময় নেই প্রধানমন্ত্রীর।’ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘দেশের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রেখেছে, আবার প্রতিরক্ষা চুক্তিও করতে চায় ইন্ডিয়া। কিন্তু আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা হচ্ছে সুন্দরবন। এটাই আমাদের প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরক্ষা দিয়ে রেখেছে। বছরের পর বছর কোটি কোটি মানুষ এর মাধ্যমে রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনা যদি বুঝতেন তাহলে প্রতিরক্ষা চুক্তি না করে বরং সুন্দরবন রক্ষা করে দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দিতেন। তিনি ইন্ডিয়াকে বলতেন, রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিল করা হোক।’ বৈঠক সঞ্চালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। ইন্ডিয়ার চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই চুক্তি হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল বলে আমরা সবসময় কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে চুক্তি করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জনগণকে নাবালক মনে করেন। তিনি মনে করেন, দেশের ব্যাপারে বোঝার যোগ্যতা আমাদের নেই। তিনি দেশের নাগরিকও মনে করেন না আমাদের। এ কারণেই হয়তো এসব নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখেন না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু একটা অনুরোধ থাকবে-আপনি ভারতে যাচ্ছন প্রধানমন্ত্রী হয়ে, প্রধানমন্ত্রী হয়েই ফিরবেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নয়!’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশ চায়না থেকে দেশ সাবমেরিন কিনেছে, অস্ত্রও কেনে। আবার পাকিস্তানের সাথে চায়নার সম্পর্ক ভালো। এদিকে শ্রীলংকা ও নেপালের মধ্যকার সম্পর্ক খুবই ভালো। এর ফলে ইন্ডিয়ার উদ্বেগ তৈরি হওয়ার ব্যাপার তো আছেই। তাছাড়া ইন্ডিয়া তো ভাবেই তারা ‘বড় ভাই’। আধিপত্যবাদী ও দাদাগিরিই যাদের অভ্যাস তারা তো সবখানেই দাদাগিরি করতে চাইবে। এ নীতি থেকে তারা বের হতে পারবে না।’

এবনে গোলাম সামাদ-এর কলাম:

পন্ডিত এবনে গোলাম সামাদ একটি দৈনিক পত্রিকায় এ ব্যাপারে লিখেছেন: চায়না ও নেপালের সাথে ইন্ডিয়ার সম্পর্ক মোটেও মসৃণ নয়। এ দু’দেশের সাথে ইন্ডিয়ার সঙ্ঘাত ঘটা খুবই সম্ভব। ১৯৬২ সালের চীন-ইন্ডিয়া সঙ্ঘাত এখনো হয়ে আছে পুরনো দুষ্ট ক্ষতের মতো। ইন্ডিয়ার সাথে যদি নেপাল অথবা চায়নার সঙ্ঘাত ঘটে তবে নেপাল ও চায়না দখল করতে চাইতে পারে শিলিগুড়ি করিডোর। এটি ১৭ মাইল বা ২৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি চওড়া। যার অবস্থান বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে। চায়না অথবা নেপালের সাথে যদি ইন্ডিয়ার সঙ্ঘাত বাধে, তবে তারা এ করিডোর বা যাতায়াত পথ দখল করে নিতে চাইতে পারে। কেননা এ পথ দখল করে নিলে ইন্ডিয়া পারবে না উত্তর-পূর্ব ভারতে রসদ ও সৈন্য পাঠাতে। তখন ইন্ডিয়াকে রসদ ও সৈন্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমাদের কোনো ইচ্ছা না থাকলেও বাংলাদেশকে হয়ে উঠতে হবে রণক্ষেত্র। চায়নার চুম্বি উপত্যকা থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি নয়। চায়নার সাথে ইন্ডিয়ার সঙ্ঘাত বাধলে চায়না চাইতে পারে শিলিগুড়ি করিডোর দখল করতে। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাওয়া তাই ভৌগোলিক বিচারে বিপজ্জনক। কারণ তাহলে চায়না ও নেপাল বাংলাদেশকে ভাবতে পারে বৈরী রাষ্ট্র। আসামে অহমিয়ারা চাচ্ছে স্বাধীন হতে। ইন্ডিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে তারাও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের বৈরী। আসাম থেকে উলফারা ঢুকতে চাইতে পারে বাংলাদেশে; ইন্ডিয়ার অস্ত্র ও সৈন্য চলাচল বন্ধ করার জন্য।

ক্যান্টনমেন্টে অভ্যন্তরের ইন্ডিয়ান সরকারের অফিস:

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার ও সোলজারদের ইন্ডিয়া সফর সহজতর করার নামে সেনাসদরে একটি ইন্ডিয়ান ভিসা অফিস স্থাপন করা হয়েছে। ভিসা অফিস বলা হলেও এটা আদৌ ভিসা অফিস নয়। যদি ভিসা অফিস হবে তাহলে সেটা ক্যান্টমেন্ট-এর অভ্যন্তরে কেন? সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য পাচার ও খবরদারী করার জন্যই যে এ অফিস স্থাপন করা হয়েছে-সেটা বলাই বাহুল্য। সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে কোন বন্ধু দেশ অপর কোন বন্ধু দেশের সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অফিস স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে বলে এ যাবৎ জানা যায়নি। আমরা পাকিস্তান-চায়না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করতে পারি। পাকিস্তান-চায়না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল একে অপরের খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু দেশ। মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবধরণের সহায়তার সুবাদে অবৈধ দেশ ইসরাইল টিকে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব অত্যাধুনিক মিসাইল ও যুদ্ধবিমান লাইসেন্স নিয়ে ইসরাইল তৈরী করে। একই ভাবে পাকিস্তান ও চায়না মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের সম্পর্ক। পাকিস্তান-চায়না যৌথ উদ্যোগে পাকিস্তানে তৈরী যুদ্ধবিমান জেকেএফ থান্ডার-১৭ এখন শ্রীলঙ্কা, কুয়েত, নাইজেরিয়া ও মিয়ামানমার সহ আন্তর্জাতিক মার্কেটে রপ্তানী করা হচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে এতোই মধুর সম্পর্ক থাকার পরও একে অন্যের ক্যান্টনমেন্টে অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। যতোই বন্ধুত্ব থাক প্রত্যেক দেশের সেনাবাহিনী ও্ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে। সেটা কোন দেশকেই জানানো হয় না। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে সেনাসদরে ইন্ডিয়ান সরকারের ভিসা অফিসের নামে অফিসটি স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা চুক্তি: বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ বা দখলে নেয়ার পাঁয়তারা:

দেশ-বিদেশের সবাই জানে বর্তমান বাংলাদেশে জন প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় নেই। বর্তমান সরকার হলো ইন্ডিয়ার মদদপুষ্ট একটি স্বনির্বাচিত সরকার। এ সরকারের জনসমর্থন যে শূণ্যের কোটায় সেটা সরকার নিজেও জানে-তেমনি জানে ইন্ডিয়াও। এ সরকারের সব দূর্বলতা ইন্ডিয়ার কাছে আয়নার মতো পরিস্কার। বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা ও সমতার ভিত্তিতে যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষর করার ব্যাপারে এ সরকারের মুরোদ কতটুকু সেটাও ইন্ডিয়া ভালো করেই জানে। জনসমর্থন শূণ্যের কোটায় হলেও এ অবৈধ সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, হয়রানি, তান্ডব দাপটের সাথেই অব্যাহত রেখেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা, গুম ও অপহরণ চালানো হচ্ছে সমান গতিতে। একটি জন প্রতিনিধিত্বহীন সরকার কিভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে এ ভাবে তান্ডব চালিয়ে যেতে পারে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সরকারের অপকর্ম এবং ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েম করার পিছনে ইন্ডিয়ার হাত আছে। ইন্ডিয়া নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করলেও বাস্তবে এর ছিটেফোটাও লক্ষ্য করা যায় না। গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবিদার ইন্ডিয়া বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের মদদ ও ইন্ধন দিচ্ছে নিজের স্বার্থেই। ইন্ডিয়া ভালো করেই জানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবৈধ সরকারের গদি উল্টে যাবে। অবৈধ সরকারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশের সবকিছু লুটে নেয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী হয়তো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির নামে ইন্ডিয়া প্রথমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। কারণ সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ নেয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও দখল করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের পা তো আর ভূঁতের পা নয় যে-তারা পিছনের দিকে হাটবে। অবৈধ সরকারের ক্ষমতা দখলে রাখার বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ সবকিছু ইন্ডিয়াকে হাওলা করে দেবে-এমনটা ভাবাও ঠিক হবে না।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়া।

আধুনিক দুনিয়ায় বসবাস করেও যে দেশ মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা এবং চিন্তা-চেতরায় মগ্ন থাকে। গরুকে গো-মাতা বা মানুষের মা বলে স্বীকার করে। গরু জবেহ করার বিরুদ্ধে আইন পাশ করা হয়! গুরুর গোস্ত রাখার অপরাধে ইন্ডিয়ায় নিয়মিতই সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এ নিবন্ধ লেখার খবর পেলাম ৩ এপ্রিল রাতে ইন্ডিয়ার রাজস্থান রাজ্যে একদল স্ব-ঘোষিত গো-রক্ষকদের গণপিটুনিতে হরিয়ানার নূহ জেলার বাসিন্দা পেহলু খান নামে এক মুসলিম হাসপাতালে মারা যায়। রাজস্থান থেকে ট্রাকে করে গরু কিনে ফেরার পথে তিনি ও তার সহযোগীরা আক্রান্ত হন। শনিবার রাতে ওই হামলার ঘটনায় আহত ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এদিকে, মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি মিডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাদরিতে মুহাম্মদ আখলাক হত্যা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত গরু রক্ষার নামে ৬জন মুসলিমকে হত্যা করা হল। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশে আইনের শাসন চলবে না কি গো-রক্ষদের শাসন চলবে? পুলিশ প্রশাসনের সাথে গো-রক্ষকদের যোগসাজশ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় মদদে ইন্ডিয়ায় সংখ্যালঘু মুসলিম নিধন চলে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নামে মুসলিম নিধনযজ্ঞ ইন্ডিয়ার প্রায় নিয়মিত ঘটনা। এমন একটি গোড়া, মধ্যযুগীয় ও চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ভাবধারায় চালিত দেশের সাথে কখনো আধুনিক বাংলাদেশের সুসম্পর্ক হতে পারে না।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সম্পর্ক ও আওয়ামী লীগ:

বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার যে সম্পর্ক চলছে-এটাকে ইন্ডিয়া এবং তাদের তাবেদার আওয়ামী লীগ হয়তো সুসম্পর্ক বলতে পারে। সুসম্পর্কের সংজ্ঞায় এবং দেশপ্রেমিক ও বিবেকবান বাংলাদেশীদের কাছে এটা কোনো মতেই সুসম্পর্ক নয়। এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে-যেগুলো বাস্তবায়ন না হলে ইন্ডিয়ার সাথে কোনোদিন বাংলাদেশের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে না। যেমন:

১। উগ্র হিন্দু ও রাষ্ট্রীয় মদদে ইন্ডিয়ায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করা।

২। গুরু জবেহ করা নিষিদ্ধকরণ বিল বাতিল।

৩। অভিন্ন নদীগুলোতে বাঁধ দেয়া বন্ধ করা এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে মর্যাদাপূর্ণ আলোচনা করা।

৪। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান।

৫। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করা।

৬। ইন্ডিয়ার গরীব জনগণের টাকায় বাংলাদেশে দালাল লালন-পালন বন্ধ করা।

৭। আওয়ামী লীগকে নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দান বন্ধ করা।

৮। বর্তমান জন প্রতিনিধিত্বহীন সরকারকে নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দান বন্ধ করা।

৯। বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চলমান গোয়েন্দা তৎপরতা বন্ধ করা।

উপরোক্ত শর্তগুলো পুরণ না হলে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার স্বাভাবিক সুসম্পর্ক কোনোদিন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আসলে ইন্ডিয়া কি সোজা পথে হাটবে? না তাবেদার আওয়ামী লীগকে অপব্যবহার করে ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখবে? ইন্ডিয়ার এ অন্যায় ও আধিপত্যবাদী সুলভ আচরণ বন্ধ না করলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। যা সামাল দেয়া হয়তো ইন্ডিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না।

বিষয়: রাজনীতি

১৫৩৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382566
০৬ এপ্রিল ২০১৭ রাত ০৯:৫৪
হতভাগা লিখেছেন : এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে আসবে
382569
০৭ এপ্রিল ২০১৭ দুপুর ০৩:১০
সাইয়েদ ইকরাম শাফী লিখেছেন : আপনি ঠিকই বলেছেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File