আবার এলো মুহাররম, স্মরন করিয়ে দেয় সত্যের বিজয়ের কথা

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৮:৩৪:০৮ সকাল

আসসালামু’আলাইকুম

দ্বীনে ইসলামে কিছু পর্ব বা দিবস আছে। যেগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল করার জন্য। এমনি একটা দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে কড়া নাড়ে প্রতি বছর।

এ মাস আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ স. এর হিজরত ও তার দাওয়াতী জিন্দেগী শুরু ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা।

এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যে দিনে নবী মুসা আ. এর বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরআউন ও তার সাম্রাজ্যের। সে দিনটিই হল আশুরা; মুহাররম মাসের দশ তারিখ।

মহান আল্লাহর সাহায্য ও সত্যের বিজয়---

ফেরআউনের কবল থেকে মুসা আ. ও তার জাতির মুক্তি ছিল আল্লাহ তাআ'লার এক বড় নেয়ামত। আল কুরআন থেকে জানা যায়-

আর (আল্লাহ বলেন): সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আর এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছিল মহা পরীক্ষা। সূরা আল আরাফ:১৪১

যাও, তোমরা দুজন(মুসা আ. ও তাঁর ভাই হারুন আ.) ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে। তার সাথে কোমলভাবে কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে। সূরা ত্বাহা :৪৩-৪৪

দেখো, ফেরাউন যখন সে রসূলের কথা মানলো না তখন আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলাম। তোমরা যদি মানতে অস্বীকার করো তাহলে সেদিন কিভাবে রক্ষা পাবে যেদিনটি শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে? যেদিনের কঠোরতায় আকাশ মণ্ডল বিদীর্ণ হয়ে যেতে থাকবে? আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো পূর্ণ হবেই। এ একটি উপদেশ বাণী। অতএব যে চায় সে তার প্রভুর পথ অবলম্বন করুক। সূরা মুযযাম্মীল:১৬-১৯

শেষ পর্যন্ত ফেরাউন মূসা ও বনী ইস্রাঈলকে দুনিয়ার বুক থেকে উৎখাত করার সংকল্প করলো। কিন্তু আমি তাকে ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে এক সাথে ডুবিয়ে দিলাম।সূরা বনী ইসরাইল:১০৩

আমি মূসার কাছে অহী পাঠালাম যে, এবার রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সাগরের বুকে শুকনা সড়ক বানিয়ে নাও। কেউ তোমাদের পিছু নেয় কিনা সে ব্যাপারে একটুও ভয় করো না এবং (সাগরের মাঝখান দিয়ে পার হতে গিয়ে) শংকিত হয়ো না। পিছন থেকে ফেরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৌঁছলো এবং তৎক্ষণাত সমুদ্র তাদের উপর ছেয়ে গেলো যেমন ছেয়ে যাওয়া সমীচীন ছিল। ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল, কোন সঠিক পথ দেখায়নি। সূরা ত্বাহা:৭৭-৭৯

এ মুক্তির পর তিনি সাওম পালন করে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার প্রয়াস পেয়েছেন। কেননা নেক আমল হল আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের বড় মাধ্যম। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

"হে দাউদ পরিবার! শুকরিয়া হিসেবে তোমরা নেক আমল করতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শুকরিয়া আদায়কারী রয়েছে।"সূরা সাবা: ১৩

আরবী আশারা অর্থ দশ।আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন সাওম পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. সাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ স.বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি সাওম রেখেছেন এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সহিহ আল বুখারি:১৮৬৫

মুহাররমের নফল সাওম কেনো রাখবো—(অনেক হাদীসে এসেছে,এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো)

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রামাদান মাসের সাওমের প্রতি। সহিহ আল বুখারি:১৮৬৭

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। সহিহ মুসলিম:১৯৭৬

(মুহাররাম মাসের ১০ম তারিখকে আশুরা বলা হয়।) আশুরার সাথে তাসুআর(মুহাররমের ৯ তারিখ) সাওম মুস্তাহাব-

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার সাওম রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও সাওম রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬

ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার সাওমের ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের সাওম মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ সাওম রেখেছেন এবং নয় তারিখ সাওম রাখার নিয়ত করেছেন।

এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার সাওম কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের সাওম রাখা। আর উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের সাওম রাখা

শিক্ষাঃ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শক্তিশালী ঈমানে বলীয়ান হয়ে দাওয়াতী প্রচেষ্টার সাথে অন্যতম উল্লেখযোগ্য করনীয় দিক হলো ব্যক্তিগত আমল ও চরিত্রের পবিত্র ও কোমলতা এবং এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর মদদ বা সরাসরি সাহায্য। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১২২৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378221
০৩ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০২:০৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৮
313567
মিশু লিখেছেন : আপু, আসসালামু’আলাইকুম। বারাকাল্লাহী ফিকি।
378257
০৪ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
378258
০৪ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৬:৪০
আকবার১ লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File