সবরে প্রাপ্তি

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:১৫:২৯ সকাল



আসসালামু’আলাইকুম

আজ আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে পরিবার গঠন নিয়ে। অবশ্যই আমি সেই পরিবার গঠন বলছি না যেখানে একজন ব্যক্তি পুরু পরিবারকে দুনিয়ার ক্যারীয়ার ও খ্যাতি,অর্থ সম্পদ লাভেই সন্তুষ্ট থেকে মরিয়া হয়ে ছুটে চলেছেন। আমি বলছি সেই পরিবার গঠন যেই পরিবার হবে আখেরাতের জান্নাতের অধিকারী, পরিবারের সবাই এক লক্ষ্য-“ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি” যাকে পূজি করে ছুটে চলেছে,পথিমধ্যে দুনিয়ার সম্পদ,ক্যারীয়ার,খ্যাতিকে সাথে নিয়েই সেইভাবে কাজে লাগিয়ে চলেছে।

প্রথম গ্রুপের পরিবারে শয়তান খুব একটা গতিশীল ভূমিকা রাখার প্রয়োজন বোধ করে না, কিন্তু ২য় গ্রুপের পরিবারের জন্য শয়তান মরিয়া হয়ে পিছু লেগে যায় কিভাবে একটু হলেও যদি পদস্খলন করানো যায়।

তাই অনেকে যারা শুধু দুনিয়ার পিছনে ছুটতে যেয়ে আখেরাতকে ভুলে গিয়েছে তাদের চাকচিক্য দেখে অস্থির বা কষ্ট পাওয়ার কোন কারন নেই, খাঁটি মুমিনেরা বরং তাদের অবস্থার জন্য আফসোস করে এই ভেবে যে, ইস ওরা যদি সঠিক ভাবে ইসলামকে বুঝতো তবে ওদের জন্য যেমন কল্যান হতো তেমনি সমাজও কিছু ইসলামের আলো পেতো। অনেকে ইসলামের শরীয়ার বাইরে থেকে দুনিয়ার উন্নতি করছে দেখে,নিজেদের লোভ লালসাকে সংযত করতে না পেরে দীনের পথ থেকে সরে যায়। যারা দুনিয়ার লোভে যারা অন্যের চাকচিক্য দেখে সরে যান দেখুন, মহান আল্লাহ কি বলেছেন,

মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।

বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।

সূরা আলে ইমরান:১৪-১৫

যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন বড়ই প্রিয় ও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের লোকেরা ঈমানের পথ অবলম্বনকারীদেরকে বিদ্রূপ করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকওয়া অবলম্বনকারীরাই তাদের মোকাবিলায় উন্নত মর্যাদার আসীন হবে। আর দুনিয়ার জীবিকার ক্ষেত্রে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত দান করে থাকেন।

সূরা আল বাকারা:২১২

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন মানবজাতির নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন জবাবে তাঁকে বলা হয়েছিল, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে একমাত্র মু’মিন ও সত্যনিষ্ঠরাই এ পদের অধিকারী হবে। জালেমদেরকে এর অধিকারী করা হবে না।

অতঃপর হযরত ইবরাহীম যখন রিযিকের জন্য দোয়া করতে লাগলেন তখন আগের ফরমানটিকে সামনে রেখে তিনি কেবলমাত্র নিজের মু’মিন সন্তান ও বংশধরদের জন্য দোয়া করলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ জবাবে সঙ্গে সঙ্গেই তার ভুল ধারণা দূর করে দিলেন এবং তাঁকে জানিয়ে দিলেন, সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্ব এক কথা আর রিযিক ও আহার্য দান করা অন্য কথা। সত্যনিষ্ঠ ও সৎকর্মশীল মু’মিনরাই একমাত্র সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী হবে। কিন্তু দুনিয়ার রিযিক ও আহার্য মু’মিন ও কাফের নির্বিশেষে সবাইকে দেয়া হবে। এ থেকে একথা স্বতস্ফূর্তভাবে প্রতিভাত হয় যে, কারোর অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যেন কেউ এ ধারণা না করে বসেন যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট আছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সে-ই নেতৃত্ব –যোগ্যতারও অধিকারী।

মহান আল্লাহ আরো বলেছেন-

তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে। আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়।

সূরা আত তাওবা:৫৫

এ ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্তুতির মায়ার ডোরে আবদ্ধ হয়ে তারা সে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করেছে, সেজন্য মুসলিম সমাজে তারা চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।এতসব লাঞ্ছনা-গাঞ্জনার মধ্যেও তাদের জন্য আরো বড় বিপদ হবে এই যে, তারা নিজেদের মধ্যে যে মুনাফিকী চরিত্র বৈশিষ্ট্য লালন করছে তার বদৌলতে মরার আগ পর্যন্ত তারা সত্যিকার ঈমান লাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং নিজেদের পার্থিব সুখ-সুবিধা ধ্বংস করার পর দুনিয়া থেকে এমন অবস্থায় বিদায় নেবে যে, তাদের আখেরাত হবে এর চাইতেও অনেক বেশী খারাপ। অপরদিকে সবর করে হকের পথে টিকে থাকার যে পুরষ্কারের কথা বলা হয়েছে ফেরদাউস সে জান্নাতের নাম, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কাঙ্খিত বস্তু লাভ করে ধন্য হবে। যার ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর এর পরিকল্পনা করেছেন, তিনি করুনাময় যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে। এটা রহমতের স্থান, সফলতার স্থান, এর রাজত্ব মহান, এর নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :

"যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফল।

"আলে ইমরান:১৮৫

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

"তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।"

সহিহ বুখারী

https://www.youtube.com/watch?v=EhWq0C1TdDg

বিষয়: বিবিধ

১০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File