বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স - একটি ভ্রমন কাহিনী (দুবাই টু সিলেট - ২য় খন্ড)

লিখেছেন লিখেছেন আমিনুল হক ০৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০:৩০ দুপুর



বাস গিয়ে থামল বিমানের পাশে। সবাই নেমে সিড়ি দিয়ে বিমানে উঠতে লাগল, আর আমি বিমানের ঠিক গেইটের আগে গিয়ে একটা সেলফী তুললাম। নিচ থেকে সিকিউরিটি আমাকে সেলফী তুলতে মানা করল, বিমানের ভিতরে চলে গেলাম। বিমানের মধ্যে প্রবেশের আগে বিমান হোস্টেসরা আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। আমি গিয়ে বসলাম আমার সিট J2 তে, আর সবাই যার যার সিটে বসে পড়ল। বিমানের সব প্যাসেঞ্জার আসতে আসতে প্রায় রাত ২.৪০মিনিট হয়ে গেল। কো পাইলট ঘোষনা দিলেন, বিমান কিছুক্ষনের মধ্যে দুবাই এয়ারপোর্ট ছেড়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। আমরা ফ্লাইটে যাচ্ছিলাম সেই ফ্লাইট নং ছিল BG-052, যা ছিল বাংলাদেশ বিমানের পুরাতন মডেলের মধ্যে একটি, ২০১১সালে আমি একই ফ্লাইটে দুবাই এসেছিলাম। বিমান আকাশে উড়ল রাত ২.৫০মিনিটে। আমরা আল্লাহর নাম নিয়ে চললাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। সিলেট পৌছতে আমাদের ৫ঘন্টা সময় লাগবে। ধীরে ধীরে দুবাই শহর ছোট হয়ে যেতে লাগল, এক সময় দুবাই শহর ছোট একটি লাইটের মত হয়ে গেল। বিমান ৫৫০০ ফিট উপর দিয়ে উড়তে লাগল সিলেটের উদ্দেশ্যে।



আমাদের কিছুক্ষনের মধ্যেই জুস দেওয়া হল। কিছুক্ষন পরে আমাদের খাবার দেওয়া হল। খাবার ছিল একটি প্লাষ্টিকের বক্সে। খাবারের মধ্যে ছিল ভাত, মাংস ভুনা, সবজি, আর সাথে ছিল চা/কপির জন্য প্লাষ্টিকের কাপ, চিনি, আর চামচ। খাওয়া শেষ হলে চা/কপি নিয়ে আসল বিমান হোস্টেসরা। চা/কপি খাওয়া শেষ হলে বিমানের লাইট বন্ধ করে দেওয়া হল। তখন আমাদের যাত্রার প্রায় ১ঘন্টা হয়ে গিয়েছিল। অনেকে ঘুমানোর চেষ্টা করল, অনেকে মোবাইলে গান শুনল, আর আমি আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লাম, একদিকে আমার প্রিয় গানগুলো শুনতে ছিলাম অন্যদিকে লিখতে বসে পড়লাম আমার যাত্রার তিক্ত কাহিনী। কিন্তু লিখিতে ভাল লাগল না কারন কিছুক্ষন পড়েই আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। আমি গান শুনতে লাগলাম। হটাৎ আমার খেয়াল গেল আমার পাশের আগের সিটে বসা দুইজন মেয়ে ও দুইজন মহিলার উপর। আমি উনাদের সাথে কথা বললাম, উনাদের দুবাইতে আসার কাহিনী শুনলাম। দেখতে সময় প্রায় যাত্রার সময় ৩ ঘন্টা হয়ে গেল, তখন আমরা ভারতের উপর দিয়ে যাচ্ছি।

আমি বাথরুমে যাওয়ার জন্য পিছনের দিকে যেতেই পড়লাম মারাত্বক সমস্যায়, লাইনে দাড়িয়ে আছেন আরও অনেক। আর অবাক হলাম যখন যানলাম বিমানের একটা বাথরুম নষ্ট। চারটা বাথরুমের মধ্যে একটা অচল, অথচ বিমানে যাত্রির সংখ্যা ৩০০জনের উপরে। বাথরুমের পাশেই বসা ছিলে একজন মধ্য বয়সী এয়ার হোস্টেস মহিলা (৪০-৪৫)। উনার কাছে জানতে চাইলাম বাথরুম খারাপ কেন? এই কথা শুনে উনি চটে গেলেন। বলতে শুরু করলেন, তোমরা বাথরুম বিমানে উঠার আগে কেন করলে না, এখানে এসেই সবার বাথরুম ধরে, এখানে বসাই যাচ্ছেনা তোমাদের জন্য, আরও কত কি। অবশেষে উনার সাথে তর্কে না যেয়ে উনাকে সাপোর্ট করে উনার বাড়ি জানতে চাইলাম। উনি ছিলেন ঢাকা থেকে আর বিমানে কাজ করেন প্রায় ১০বছর ধরে। আমি বিমানের মধ্যেই হাটাহাটি করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে সময় প্রায় ৪ঘন্টার উপর হয়ে গেল। জানালার কাভার উপর করতেই দেখলাম এক মনোরম সুন্দর পরিবেশ। আকাশের মধ্যে সাদা সাদা মেঘ যা আমরা হায বলি, আমরা নিচে থেকে আকাশ বলে থাকি। ইচ্ছা করছিল নিচে নেমে গিয়ে হাটতে থাকি, আর নিজেকে আকাশের মধ্যে উজার করে হারিয়ে যাই অজানা খুশিতে।



ধীরে ধীরে সুর্যদয় হতে লাগল, সুর্যদয় নিজের চোখে দ্বিতীয় বারের মত দেখলাম, সুর্যোদয় দেখতে আমার অনেক ভাল লাগে। দেখতে দেখতে আমরা সিলেটের কাছেই এসে গেলাম। কো-পাইলট ঘোষনা দিলেন আমরা ৩মিনিটের মধ্যেই এম জি ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করব। ঘোষনা দেওয়ার ১৫মিনিটের মধ্যেও আমরা অবতরন করতে পারিনি কারন আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অনেক চেষ্টা করার পর বিমান এসে অবতরন করল সিলেটে। আমার একটা পুরনো অভ্যাস আছে, সবার আগে বিমান থেকে আমি বাহিরে যেতে পছন্দ করি। আর এবারও তার ব্যাতিক্রম হলনা। বিমান থেকে বাহিরে যাওয়ার সময় বিমান হোস্টেসরা আমাদের বিদায় জানালেন। সবার আগে চলে গেলাম ইমিগ্রেশন করতে। ইমিগ্রেশন পুলিশের কিন্তু একটা বদ অভ্যাস আছে। আমাকে বলল ভাই কিছু চা-পানির জন্য দিয়ে যান। আমি উনাকে বললাম ভাই আপনি কিছু দেন, চা নাস্তা করতে হবে, খুব খিদা পাইছে বলে মজা করে উনাকে ১০০টাকা দিয়ে গেলাম। উপর থেকেই আমার পরিবারের সবাইকে দেখতে পেলাম। বেল্ট থেকে আমার লাগেজ নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। আমার পরিবারের সাথে আমার বন্ধু,ভাতিজা, বড়মামাও এসেছিলেন। পড়ে আল্লাহর দরবারে অনেক অনেক শুকরিয়া জানিয়ে আমার জন্মস্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম বন্ধু সোহাগের গাড়ি করে। আর এভাবেই শেষ হল আমার ভ্রমন কাহিনী।

বিষয়: সাহিত্য

২০৭৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373823
০৩ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটুক। আল্লাহ রহম করুক
373838
০৩ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইমিগ্রেশন আর কাষ্টমস এর লোকেরা এটা কখনও চিন্তাও করে না যে তারা কার টাকায় বেতন পায়!!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File