দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাই সত্যে পরিণত হল : যে আশংকা আমরা করেছিলাম।(১)

লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:১৬:০৫ রাত

জামায়াতে ইসলামির সাবেক আমির, বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের প্রেরণার প্রতীক, শহিদ অধ্যাপক গোলাম আযম প্রণীত, জীবনে যা দেখলাম(আত্ম জীবনী মূলক গ্রন্থ) গ্রন্থের নবম খন্ডে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামি ব্যক্তিবর্গের সমর্থন এবং অংশগ্রহন প্রশ্নে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হল-

স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি :

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পর প্রথম ১১ বছর পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ ই কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করেন। এরপর ১২ বছর পশ্চিম পাকিস্তানি দুই সেনাপতির সৈর শাসন চলে। পূর্ব পাকিস্তানিরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়।

এ পরিস্থিতিতে ১৯৭০ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানিদের হাতে ন্যস্ত করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের প্রায় সকল আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে। ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলে পরিণত হয়।

সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আনুযায়ী শেখ মুজিবই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা এবং পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা মি ভূট্টো বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব গ্রহন করার কথা। কিন্তু মি. ভুট্টো অত্যন্ত অন্যায় দাবী উত্থাপন করে শেখ মুজিবের সাথে ক্ষমতায় অংশগ্রহণে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। ইয়াহিয়া খান ও ভূট্টো ষড়যন্ত্র করে পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবানে গড়িমসি করে। শেষ পর্যন্ত ৩ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় অধিবেশন ডাকা হয়। ভূট্টো ঢাকা আসতে অস্বীকার করায় ইয়াহিয়া খান অধিবেশন মুলতবি করেন।

শেখ মুজিবের বিদ্রোহ

শেখ মুজিব প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা বেসরকারিভাবে হাতে নেন। সচিব গণ তাঁরই নির্দেশ মেনে চলেন। শেখ মুজিব ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা তখনই ঘোষণা করতে পারতেন। ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন তখন অচল। স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ঠেকানোর মত কোন সামরিক শক্তি তখন এখানে ছিলনা। কিন্তু শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন বিধায় তা করেননি। সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকায় হরতাল ও মিছিল চলে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

স্বাধীনতার শ্লোগান

নির্বাচনী ফলাফলকে গুরুত্ব না দিয়ে ইয়াহিয়া-ভূট্টো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করলেন তাতে স্বাধীনতার দাবী করা স্বাভাবিকই ছিল। যদি শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার হাসিল করার উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম হত তাহলে সকল রাজনৈতিক মহলই তাতে শরীক হওয়া কর্তব্য মনে করতো। কিন্তু স্বাধীনতার দাবীতে আন্দোলনের শ্লোগানে গণতন্ত্রের কোন দাবী ছিলনা। স্বাধীনতা উদ্দেশ্য হিসেবে এদেশে ভারতের ধর্মণিরপেক্ষতাবাদ ও রাশিয়ার সমাজতন্ত্র কায়েমের স্লোগানই প্রাধান্য পেল। তদুপরি নারায়ে তাকবির ও জিন্দাবাদের বদলে জয় বাংলা উচ্চারিত হলো।

যারা উপরোক্ত দুটো মতবাদকে সুস্পষ্টরূপে ইসলাম বিরোধী বলে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে শরীক হওয়ার পথে বিরাট বাঁধার সৃষ্টি হলো। ঈমানের বিরোধী ভূমিকা পালন করা কি তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল?

অতঃপর ১৫-২১মার্চ ১৯৭১, ইয়াহিয়া-মুজিব সংলাপ। ২২-২৪ মার্চ ইয়াহিয়া, মুজিব ও ভূট্টো ত্রি পাক্ষিক সংলাপ। সংলাপ সমঝোতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশায়ই মুজিব সংলাপে বসেন। ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ঢাকায় সেনাবাহিনীর হিংস্র তান্ডব শুরু হলে বুঝা গেল সংলাপ ব্যার্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। শেখ মুজিব তাদেরকে কি নির্দেশনা দিলেন জানা গেলনা। তিনি যদি ভারত সরকারের সাহায্যে মুক্তিযুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে তিনিও ভারতে চলে যেতেন। তিনি তা না করে স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। কোন সেনাপতি যুদ্ধ ঘোষণা করে শত্রুর হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিতে পারেনা।

ভারত সরকারের সাহায্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু :

১৯৪৭ সালের পর থেকে পাকিস্তানের প্রতি ভারতে একতরফা বৈরী আচরণে যারা ভারতকে বন্ধু মনে করতে অক্ষম এমন সকল রাজনৈতিক দল নিশ্চিত ছিল যে, আমাদেরকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুর্বল করা এবং বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করে এদেশে তাদের প্যর্ণ আধিপত্য কায়েম করার উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দিবে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ইসলামাবাদ থেকে স্বাধীন হয়ে দিল্লির তল্পিবাহক পরিণত আশংকা অত্যন্ত প্রবল। এ জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে শরীক হওয়া তাদের পক্ষে কি সম্ভব ছিল।

আমাদের আশংকা সত্যে পরিণত হলো :

যে আশংকার কারণে দেশের ভারতবিরোধী ও ইসলামি মহল স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহন করতে পারলো না, সে আশংকা বাস্তবে সত্য হয়ে দেখা দিল।

প্রথম শংকা ছিল- ধর্মণিরপেক্ষতার নামে ইসলামবিরোধী শক্তির ক্ষমতায়ন। ১৯৭২-১৯৭ এবং ১৯৯৬-২০০১সেলের আওয়ামী শাসন যে ভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযান চালালো তা সবারই জানা।

দ্বিতীয় শংকা ছিল- ভারতের আধিপত্যের চাপে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া। (চলবে)

বিষয়: রাজনীতি

১৪৬৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

287723
২৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন একদিন আসবে যেদিন সকলেই এ ভবিষ্যত বাণীকেই শ্রদ্ধা জানাতে বা্ধ্য হবে৷ সেদিন পর্যন্ত অত্যাচার সইতেই হবে৷ ধন্যবাদ৷
২৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩০
231480
যা বলতে চাই লিখেছেন : বইটিতে উল্লেখিত বক্তব্যে অত্যন্ত স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম পন্থিগণ কখনো পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের ইসলাম বিদ্বেষী নীতির কারণে তাদের সাথে যুগপত্ আন্দোলনও করতে পারেন নি। আর আওয়ামী নেতৃত্ব তো জনগণকে অস্রের মুখে ঠেলে দিয়ে ভারতেই পালিয়ে গিয়েছেন। এমতাবস্থায় বর্তমান ও অতীত যে কোন সময়ের মতই ইসলামি ঐতিহ্য তারা বজায় রেখেছেন এভাবে যে, এক দিকে শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী করেছেন,জুলুম-অত্যাচার বন্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আপর দিকে ভারতের খারাপ উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগনকে সতর্ক করেছেন। সীমিত সামর্থে এর চেয়ে বেশী তারা কীই বা করতে পারতেন।

সবাই ভুলে গেলেও ভারত ভুলে নাই, বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারে গোড়া থেকেই এ ইসলাম পন্থীরাই হল একমাত্র বাঁধা। তাই আজকে ভারতের এজেন্ডা মোতাবেক ভারতের পুতুল সরকার ইসলামপন্থীদের নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে।
287868
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আর আশঙ্কা করে লাভ কি? যা হবার তো তা হয়ে গেছে। এই দেশকে উন্নতির দিকে নেওয়া সম্ভব নয়। লেখা ভালো লিখেছেন।
২৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৯
232221
যা বলতে চাই লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।Happy
287891
২৫ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৯
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
২৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২০
232222
যা বলতে চাই লিখেছেন : প্রিয় আপুকেও অনেক ধন্যবাদ।Happy
288183
২৬ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪২
কথার কথা লিখেছেন : ভাইরে খুবই ভালো লিখেছেন। আপনার ভালো কথাগুলো আরো বেশী বেশী করে লিখেন। সমাজ জাতি আর রাষ্ট্রের জন্য আপনাদের মতো গবেষকদের লেখনির এখন বেশী প্রয়োজন।
২৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২২
232223
যা বলতে চাই লিখেছেন : দোয়া করবেন। যাতে আপনাদের আশা পূর্ণ করতে পারি।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File