আর যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে করুন মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭৪)
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১০:০৬:৩৭ রাত
বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ইসলামিক মূলনীতি:
#মুসাদ্দাদ (রহঃ) ........... আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, (সাধারণত) নারীদের চারটি গুণের অধিকারী দেখে বিবাহ করা হয় ( মানুষ যা করে অর্থাৎ জাহিলিয়াতে যা প্রচলিত ছিল)। ১.তার সৌন্দর্য ২.তার ধন-সম্পদ ৩. তার বংশমর্যাদা ৪.তার ধর্ম। (কিন্তু) তোমরা (মুমিন পুরুষগণ) দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করে বিজয়ী হও,অন্যথায় তোমাদের উভয় হাত অবশ্যই ধুলায় ধূসরিত হবে।(অন্য হাদিস অনুযায়ী তোমরা লাঞ্জিত ও অপমানিত ও ধ্বংস হবে।)। [(সহীহুল বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাউদ ২০৪৭, আহমাদ ৯২৩৭ দারেমী ২১৭০, ইরওয়াহ ১৭৮৩, গায়াতুল মারাম ২২, সহীহ আবু দাউদ ১৮৮৬)
সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: ৬/বিবাহ, হাদিস নং: ২০৪৩, পাবলিশার: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
#আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেনঃ গোটা দুনিয়াই হলো সম্পদ। আর দুনিয়ার মধ্যে পুণ্যবতী স্ত্রীলোকের চেয়ে অধিক উত্তম কোন সম্পদ নেই। [সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ, পরিচ্ছদঃ ৯/৫. সর্বোত্তম মহিলা, হাদিস নং: ১/১৮৫৫, পাবলিশারঃ বাংলা হাদিস)
#সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সোনা-রূপা (মূল্যবান সম্পদ) পুঞ্জীভূত করে রাখার সমালোচনায় কুরআনের আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কিরামগণ বলেন, তাহলে আমরা কোন সম্পদ ধরে রাখবো? উমার (রাঃ) বলেন, আমি তা আল্লাহর রাসূল হতে জেনে তোমাদের জানিয়ে দিব। অতঃপর তিনি তার উটকে দ্রুত হাঁকিয়ে রাসূল ﷺ -এর সাক্ষাত পেয়ে গেলেন। আমিও তার পিছনে পিছনে গেলাম। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কোন সম্পদ সঞ্চয় করবো? রাসূল ﷺ বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন অর্জন করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী জিহবা এবং আখেরাতের কাজে তাকে সহায়তাকারী ঈমানদার স্ত্রী। [সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ, পরিচ্ছদঃ ৯/৫. সর্বোত্তম মহিলা। হাদিস নং: ২/১৮৫৬, পাবলিশার: বাংলা হাদিস।]
#আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ যদি তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি (পাত্র) বিবাহের প্রস্তাব দেয়, যার চরিত্র ও দীনদারী সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে তোমরা তোমাদের মেয়েদের বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো (মুমিন পাত্রদের প্রত্যাখ্যান করে বেদীন পাত্রদের দুনিয়াবী যোগ্যতা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাদের সাথে তোমাদের মেয়েদের বিয়ে দাও) তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ, হাদিস নং: ১/১৯৬৭, পাবলিশার: বাংলা হাদিস।]
বর্ধিত অংশ: সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! যদি তার মাঝে কুফূ (সমতা) -এর দিক থেকে কিছু ক্রটি থাকে? তিনি বললেন, যখন তোমাদের কাছে এমন কারো প্রস্তাব আসে যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। এই কথা তিনি তিনবার বললেন। [ তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৮৫, আল মাদানী প্রকাশনী]
বিবাহের বর ও কনের কুফু (সমতা) নির্ধারণ:
#আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর (তোমাদের বোন ও কণ্যাদের বিবাহ) দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। [ সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ৯/বিবাহ, হাদিস নং: ২/১৯৬৮, পাবলিশার: বাংলা হাদিস]
আল্লাহর বাণী: যিনাকারী পুরুষ কেবল যিনাকারিণী স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে, মুনাফিক, মুশরিক, কাফির- মুমিনের জন্য হারাম যদিও তাদের সৌন্দর্য ও অন্যান্য দিক আকষর্ণীয় হয়।
#ইবরাহীম ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) ............ আমর ইবন শ‘আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, মারসাদ ইবন মারসাদ আল্-গানাবী মক্কাতে অন্তরীণ অবস্থায় ছিলেন। আর সে সময় মক্কাতে আনাক নাম্মী জনৈক যিনাকারীণী নারী ছিল, যে ছিল (জাহিলিয়াতের যুগে) তার বান্ধবী (প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তিনি তাকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন) তিনি বলেন, তখন আমি রাসূল ﷺ নিকট হাজির হয়ে আরয করি, হে আল্লাহ্র রাসুল ! (তার কাছে সমস্ত ঘটনা জানানোর পর প্রশ্ন করি) আমি কি আনাক-কে বিবাহ করব? তিনি (রাবী) বলেন, রাসূল ﷺ চুপ রইলেন এবং কুরআনের এই আয়াত নাযিল হয়ঃ ‘‘ যিনাকারিণী স্ত্রীলোক, তাকে কোন যিনাকার পুরুষ বা মুশরিক ব্যতীত আর কেউই বিবাহ করবে না। ’’ তখন তিনি আমাকে ডেকে আমার সম্মুখে তা তিলাওয়াত করেন। অতঃপর বলেন, তুমি তাকে বিবাহ করবে না। (পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গ্রন্থঃ সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ, হাদিস নং: ২০৪৭,পরিচ্ছদঃ ৯৯. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ যিনাকার পুরূষ কেবল যিনাকারিণী স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে। )
#মুসাদ্দা (রহঃ) .......... আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বর্ণনা করেছেন, যিনাকারী পুরুষ, যিনাকারিণী স্ত্রীলোক ব্যতীত অন্যকে বিবাহ করবে না। (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ, পরিচ্ছদঃ ৯৯. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ যিনাকার পুরূষ কেবল যিনাকারিণী স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে, হাদিস নং:২০৪৮, পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
ইচ্ছার বিরুদ্ধে নারীদের জোড় করে বিয়ে দেয়া হলে, ইসলামী আইনে তা বাতিল।
#আল্ কা‘নাবী ........... খানসাআ বিনত খিদাম আল আনসারীয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা (খিদাম) আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন সময় বিবাহ প্রদান করেন, যখন আমি বিধবা হলাম। কিন্তু আমি ঐ বিবাহ অপছন্দ করলাম। অতঃপর আমি রাসূল ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে আমার পিতার বিরূদ্ধে অভিযোগ পেশ করলাম। রাসূল ﷺ (আমার পিতাকে ডেকে ঘটনার সত্যতা জানার পর) আমার বিবাহ বাতিল বলে ঘোষণা করেন। (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ, হাদিস নং ২০৯৭, পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
বিয়ের ওলী বা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হবেনা।
#মুহাম্মদ ইবন কুদামা ............. আবূ মূসা (রাঃ) রাসূল ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন যে, অভিভাবক ব্যতীত কোন বিবাহই হতে পারে না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের সনদ হল, ইউনুস আবূ বুরদা থেকে এবং ইসরাঈল আবূ ইসহাক থেকে, তিনি আবূ বুরদা থেকে। (পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ৬/ বিবাহ , হাদিস নং: ২০৮১ )
#ইবনু আবী উমার (রহঃ) .... আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল ﷺ বলেছেন, যে কোন মহিলা তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। যদি এরপর ( অভিভাবককে না জানিয়ে বিয়ের পর) স্বামী-তার সাথে যৌন সঙ্গম করে তবে স্ত্রী মোহরানার হকদার হবে। যেহেতু তার স্বামী হালাল মনে করে সঙ্গম করেছে। অভিভাবকেরা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে, (মুসলিম) শাসকই (সেই নারীর) অভিভাবক হবে, যার অভিভাবক নেই। [ ইরওয়া ১৮৪০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১০২, আল মাদানী প্রকাশনী] (পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান তিরমিজী, অধ্যায়ঃ ১১/ বিবাহ, হাদিস নং: ১১০২)]
বৈধ অভিভাবক না থাকলে বা বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবকেরা দ্বন্দ-সংঘাতে লিপ্ত হলে, বৈধ অভিভাবক হবেন মুসলিম শাসক যিনি তাকে বিয়ে দিতে পারেন।
#মুহাম্মদ ইবন ইয়াহ্ইয়া ................ আবু সুফিয়ান কণ্যা রামলা (উম্মে হাবীবা (রাঃ)) হতে বর্ণিত। তিনি ইবন জাহশের (উবায়দুল্লাহর) স্ত্রী ছিলেন। তিনি (হাবশাতে) মৃত্যুবরণ করেন এবং এই সময় হাবশাতে যারা হিজরত করেন, তিনি তাঁদের সাথে ছিলেন। তখন হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশী (অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে) তাকে রাসূল ﷺ এর সাথে বিবাহ দেন। (যখন তার পিতা আবু সুফিয়ান জীবিত ছিলেন) [পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ, হাদিস নং: ২০৮২)
মহিলাদের মাহর (মোহরানা) নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা।
#আবূ সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল ﷺ -এর স্ত্রীদের মাহর কতো ছিলো? তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীদের মাহরের পরিমাণ ছিলো বার উকিয়া ও এক নাশ। তুমি কি জানো, নাশ কী? তাহলো অর্ধ উকিয়া। আর তাহলো পাঁচ শত দিরহামের সমান।
(পাবলিশারঃ বাংলা হাদিস, গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ, হাদিস নং: ১/১৮৮৬)
#উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, মহিলাদের মাহরের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তা যদি পার্থিব জীবনে সম্মান অথবা আল্লাহর কাছে তাক্ওয়ার প্রতীক হতো, তাহলে তোমাদের মধ্যে রাসূল ﷺ এ ব্যাপারে অধিক যোগ্য ও অগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের মাহর বারো উকিয়ার বেশি ধার্য করেননি। কখনও অধিক মাহর স্বামীর উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মনে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, এমনকি সে বলতে থাকে, আমি তোমার জন্য পানির মশক বহনে বাধ্য হয়েছি অথবা তোমার জন্য ঘর্মাক্ত হয়ে পড়েছি। (রাবী বলেন), আমি একজন বেদুইন। অতএব আমি ‘‘আলাকাল কিরবা’’-এর অর্থ কি, তা জানি না। [{তিরমিযী ১১১৪, নাসায়ী ৩৩৪৯, আবূ দাউদ ২১০৬, ২৮৭, দারেমী ২২০০, মিশকাত ৩২০৪, সহীহ আবী দাউদ ১৮৩৪, ইরওয়াহ ১৯২৭। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।} {পাবলিশারঃ বাংলা হাদিস, গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ, হাদিস নং: ২/১৮৮৭]
বিষয়: বিবিধ
২২৬৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মহিলাদের ব্যাপারে কি কিছু বলা থাকে ?
আল্লাহ পুরুষদের বলে দিয়েছে তারা যেন সন্তুষ্ট চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দেয় এবং এ ব্যাপারটাকে শক্ত ওয়াদাও বলা হয়েছে ।
কিন্তু মহিলা তথা স্ত্রীর কাছ থেকে একজন স্বামী কি পাবে - সেটার কথা কিন্তু সূরা নিসা এর ৩৪ নং আয়াতে উল্লেখ করে দিয়েছেন।
বিয়ে শরিয়ত সন্মতভাবে হলেও বিয়ের পর কি কোন স্ত্রী শরিয়ত অনুসারে দাম্পত্য - পারিবারিক-সাংসারিক দায়িত্ব পালন করে ? সে কি তার স্বামীর (যে তার জন্য ব্যয় করে) অনুগত হয়ে চলে ? বর্তমান জামানায় এরকম কোন স্ত্রীই খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তার স্বামীর উপর শরিয়ত পরিপন্হীভাবে বসিং করে না ।
শরিয়তকে ফলো করার ব্যাপারে স্ত্রীদের খুব একটা গা করতে দেখা যায় না যেমনটা তারা চায় তাদের স্বামী তাকে শরিয়ত অনুযায়ী প্রাপ্য দিক।
নবী রাসূল সাহাবা - এদের উদাহরণ আমরা দিতে পছন্দ করি । কিন্তু আসলেই কি আমরা এদের পথ অনুসরণ করি ? অনুসরণ করলে যেখানে আল্লাহই অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন ৪ টি পর্যন্ত বিয়ে করার (সামর্থ্য থাকলে) সেখানে স্ত্রীর অনুমতির মনুষ্য আইন বানানো লাগে ?(এটা তো শিরকের কাছাকাছিই)।
যেখানে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে স্ত্রীকে প্রহারে কথাও বলা আছে সেখানে নারী নির্যাতনের আইন বানানো লাগে? [এখানে আইয়ুব (আঃ) এর ঘটনা স্মর্তব্য]
"আল্লাহ পুরুষদের বলে দিয়েছে তারা যেন সন্তুষ্ট চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দেয় এবং এ ব্যাপারটাকে শক্ত ওয়াদাও বলা হয়েছে।"
আচ্ছা শহরের অতি চালাক মেয়েদের কথা বাদ দিয়ে মেজরিটির দিক তাকান- সত্যই করে বলেন তো, কয়জন পুরুষ মোহরানার অর্থ পরিশোধ করে? আবার যারা দেন তারা কি সত্যি সন্তুষ্ট মনে বা খুশি মনে দিতে পারেন?
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি সব বাড়ি বাড়ি গবেষণা করে এটার ব্যাপারে এই সত্যে এসেছেন যে, মুমিন- বেদীন কোন নারীই তার বরের অনুগত হয়ে চলেনা। আপনি এত নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে? নাকি আবার ভাতের উদাহরণ দিবেন, বা বলবেন, চারপাশে তাকালেই বোঝা যায়?
ইসলামে বিয়ে হল সবচেয়ে উত্তম বন্ধুত্ব। দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু যেমন একে অপরকে ভালবাসে, বিপদে সাহায্য সহযোগীতা করে, হাসি-আনন্দ-সুখ-দউখে ভাগিদার হয় আবার কখনোবা মান অভিমান চলে, তর্ক বিতর্ক হয় আবার সব ঠিকও হয়ে যায়। তাদের বন্ধুত্বের ধরণই এমন। তেমনি স্ত্রীর সাথে তার হাজবেন্ডের সম্পর্কও আলাদা কিছুনা। বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে রাসূল (সাঃ) এর স্ত্রীরা তার কথার উপর জবাব দিতেন কিন্তু রাসূল (সাঃ) এটা এটাকে কখনো বেয়াদবী হিসেবে উল্লেখ করেননি বা কুরানেও এর বিরুদ্ধে কোন আয়াত নাজিল হয়নি। কারণ এটা স্বাভাবিক হাজবেন্ড-ওয়াইফের বৈশিষ্ট তারা এমন করতেই পারে। হাজবেন্ডের অনুগত মানে হাজবেন্ড তার প্রভু নয়। স্বামী শব্দটা এসেছে সংষ্কৃত থেকে যার অর্থ প্রভু। আর হিন্দু ধর্মে হাজবেন্ডকে স্ত্রীর প্রভু, দেবতা, মালিক ইত্যাদি হিসবেই উল্লেখ করা হয় তার সাথে ইসলামের মিশ্রণ করাটা সঠিক না। এককালে বাংলা সিনেমায় একটা হাদিসও বানিয়ে ফেলা হয়েছিল, স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত। ভালই মার্কেট পেয়েছে সেটা অথচ হাদিসটা কোন এক সিনেমার পরিচলাকের বানানো ছিল হয়তো। একজন মুমিন স্ত্রী হল মুমিন পুরুষের দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। সে দাসী না, সংযোগী।
আর্থিক সামর্থ থাকলেই ইসলাম কাউকে ৪ বিয়ের অনুমতি দেয়নি। যদি ইনসাফ কায়েম করতে পারে তখন অনুমতি দিয়েছে। তাছাড়া সব পুরুষের শারিরিক শক্তি সমান না, তাই এখানেও বিধিনিষেধ রয়েছে। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষ ২য় বিয়ে করে প্রথম স্ত্রীর প্রতি রাগ, ক্ষোভ, বিদ্বেশ এর জন্য। যা স্পষ্টত অন্যায়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার দু‘জন স্ত্রী আছে আর সে তার মধ্যে একজনের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধাঙ্গ অবস্থায় আসবে।(পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ ৬/বিবাহ, হাদিস নং- ২১৩০)
আর মারধোরের কথায় যখন আসলেন যখন আপনি আইয়ুব (আঃ) এর উদাহরণ টানতে গেলেন কেন? রাসূল (সাঃ) এর কথা টানা উচিত ছিল। কারণ পূর্ববতী সকল অহী রহিত। আইশা (রাঃ)কে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহর রাসূলের চরিত্র কেমন ছিল? আইশা (রাঃ) জবাব দেন, তোমরা কি কুরআন পড়না? পবিত্র কুরআনের জীবন্ত রূপই ছিলেন তিনি।
পবিত্র কুরানের জীবন্ত রূপ কোনদিন তার কোন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেননি। কুরানে যেই প্রহারের কথা বলা হয়েছে, হাদিসে তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে দাঁতন দিয়ে প্রহার তাও আবার মুখে করা যাবেনা, শরীরে কোন দাগ ফেলা যাবেনা। রাসূল (সাঃ) প্রথমে বলেন, কোন মুসলিম পুরুষ যেন তার স্ত্রীর গায়ে হাত না তোলে। কিন্তু কিছু পুরুষ এসে অভিযোগ করল তাদের স্ত্রী খুবই অবাধ্য তখন রাসূল (সাঃ) তাদের মৃদু প্রহারের অনুমতি দেন কিন্তু তার পরেই কিছু মহিলা এসে রাসূল (সাঃ) এর কাছে স্বামীর প্রহারের ব্যাপারে অভিযোগ করতে লাগল এবং উম্মুল মুমিনীনদের আঁঘাতের চিহ্ন দেখাতে লাগল এতে রাসূল (সাঃ) খুবই ব্যথিত হলেন তখন তিনি খুৎবায় বললেন, মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট কিছু নারী তাদের স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছে। যেসব পুরুষ এভাবে তাদের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে তারা মোটেও উত্তম লোক না। এই ঘটনা সুনানে আবু দাউদের বিবাহ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাই আপনাকে অনুরোধ করব, কুরআন-হাদিস, তাফসীর,সীরাহ, ইজমা ইত্যাদির ব্যাপারে ভালভাবে না জেনে শুধুমাত্র কোন একটি বিষয়ের উপর নিজের মনমত ব্যাখ্যা আনবেননা, সামগ্রিক বিষয়টি জেনে তারপর ব্যাপারটি বললেন। জাঝাক আল্লাহ
ধন্যবাদ।
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকিল্লাহ..
০ আপনি বলেন কতজন মেয়ে স্বামীর কাছ থেকে লাক্সারী বাগানোর আগে বলে যে দেনমোহর শোধ কর , পরে না হয় লাক্সারী দিও ?
নগদ যা পাও হাতে পেতে নাও । আর দেনমোহর না দিলে পরকালে তো ধরবই । দেনমোহরের হিসাব হবে এই ন গদের হিসেবের কথা বলা আছে ? - এটা মেয়েদের থিওরী । দেখা যায় যে বাকী দেনমোহরের মিনিমান ডাবল সে লাক্সারীর জন্য পেয়ে গেছে।
০ বন্ধুত্ব হচ্ছে গিভ এন্ড টেকের ব্যাপার । একজন বন্ধু আজ চাইনিজ খাওয়ালে আরেকজন বন্ধু পরের সপ্তাহে খাওয়ায় । বা একজন আরেকজনকে নোট আদান প্রদান করেন ।
স্বামী স্ত্রীর বেলায় কি তা ঘটে ? এই বছরের স্বামী তার স্ত্রীকে ডায়মন্ড সেট দিল , পরের বছর কি স্ত্রী তাকে বিএমডব্লিউ উপহার দেয় ? বা আজকে স্বামী তার স্ত্রী নিজের খরচে সুইজারল্যান্ড নিয়ে গেল , পরের বছর স্ত্রী কি তাকে তার খরচে মালদ্বীপে নিয়ে যায় ?
স্বামীর সাথে সম্পর্কটাকে যতই বন্ধুত্বের বলুক না কেন মেয়েরা কিন্তু শুধু নিয়েই যায় । স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বন্ধুত্বের কথা বলা মেয়েদের একটা ধান্ধা ছাড়া কিছুই না । বন্ধুত্ব একতরফা হয় না ।
০ সাহাবীদেরকেও বলা ছিল যে রাসূলকে যেন কষ্ট না দেয় , উনারা ছিলেন নবীজীর সহচর।
স্বামীর (নবীজীর)কথার উপর স্ত্রী জবাব দেবে এবং এটা হজম করা মুসলিম দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য !! তাহলে নবীজিও কি ভুল করতেন আমাদের সাধারণ মানুষদের মত দাম্পত্য জীবনে ?
সামর্থ্য থাকলে ৪ টি পর্যন্ত বিয়ে করতে বলেছেন , তবে কাউকে একেবারে ঝুলিয়ে রাখতে বলেন নি । ইনসাফ করার চেষ্টা কোন স্বামীর না থাকে , কিন্তু কোন কোন স্ত্রীর ডায়মন্ডের জুয়েলারী পছন্দ আবার কারও প্লাটিনামের । এটা নির্ভর করে উনাদের মর্জির উপর। ইনসাফ জিনিসটা আপেক্ষিক ।
সবার মধ্যে সাম্যবস্থা বজায় রাখতে যতই চেষ্টা করা হউক না কেন এটা একেবারেই কঠিন - ক্বুরআনে এরকমও বলা আছে ।
০ তার সামর্থ্য থাকলে সে করবে যেমনটা আপনার ইচ্ছে হলে আপনিও সরে যাবেন । তালাকের ব্যবস্থা তো আছেই ।
০ আইয়ুব (আঃ) এর কথা তো আল্লাহই ক্বুরআনে বলেছেন ।
রাসূল (সাঃ) এর অহী আগমনের ফলে কি আমরা অন্য নবীদের সময়ের অহী বাদ দিয়ে দেব ? ইব্রাহীম (আঃ) এর উপর আগমনের সহীফা গুলোও?
নাকি , যেটা ভাল লাগে সেটা নাও আর যেটা পছন্দ হয় না সেটা বাদ দাও।
ক্বুরআনে প্রহারের কথা বলা আছে , সেটা কি যেন দাগ না পড়ে এমন ?
প্রহার যদি এরকম হয় তাহলে অন্যায়কারী বা অবাধ্যরা লাই পেয়ে যায় ।
অন্যায়ের যথোপযুক্ত শাস্তি না হলে সেটা যে বার বার হয় সেটা কি বুঝিয়ে বলতে হবে ?
০ ইসলামিক জ্ঞান আপনার/আপনাদের মত অগাধ আমার নেই । আমি যা বলি তা বাস্তবতার নিরীখে এবং ক্বুরআনের সাথে মিল রেখেই বলার চেষ্টা করি । কারণ আমার চারপাশ নিয়েই আমার জীবন । নবীজীর আমলের উদাহরণ আমরা বলতেই পারি , কিন্তু সেটার চর্চা তো দেখি না একটা বিশেষ শ্রেনীদের মধ্যে ! আগের আমলের কথা বলে আমরা হয়ত আত্মতৃপ্তি পেতে পারি , কিন্তু বাস্তবতাকে কি অস্বীকার করা যায় ?
ভুল হতে পারে । সেটার ক্ষমা করা না করার মালিক আল্লাহ ।
ইসলামকে আপনারা ব্যবহার করেন নিজেদের পছন্দ মত ইসলামের যেটা আমার ফেভারে আছে সেটা নিব আর যেটা নেই সেটাতে মনুষ্য আইন আনবো ।
হাদীসের সমাগ্রিক সংগ্রহটি আসলেই চমতকার। জাযাকিল্লাহ!
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন