চান্দের বুকে সাঈদীর মুখ : আজব না গজব!

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫৫:৪৮ রাত






https://www.youtube.com/watch?v=m5Qd2hFfwUQ

চান্দের বুকে সাঈদীর মুখ : আজব না গজব!

( লেখক : গোলাম মাওলা রনি !!!!!! ????? ..)

ঘটনার সময় আমি ছিলাম সিঙ্গাপুরে। ১ মার্চ, ২০১৩ সালের সন্ধ্যার পর আরও অনেক বাংলাদেশি ভাইয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলাম ম্যারিনার্স বে নামক সমুদ্রসৈকতের বেলাভূমিতে। সেখানকার খোলা আকাশের নিচে স্থাপিত অস্থায়ী রেস্তোরাঁগুলো সন্ধ্যার পর জমজমাট হয়ে ওঠে। চলে মধ্যরাত অবধি। আমার সঙ্গে যারা আড্ডা মারছিলেন তারা প্রায় সবাই পেশায় মাস্টার মেরিনার অথবা সোর ক্যাপ্টেন। বেশির ভাগই লেখাপড়া করা উচ্চশিক্ষিত মানুষ এবং সিঙ্গাপুরের নাগরিক। জন্মসূত্রে বাঙালি এবং অবশ্যই কট্টর আওয়ামী লীগ।

আমার বন্ধুদের মধ্যে একজনের নাম জামান। ডাকনাম কাজল। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। বিয়ে করেছেন ইন্দোনেশীয় এক মহিলাকে। ভীষণ মাতৃভক্ত। কথায় কথায় মায়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আবার মাও কারণে অকারণে তার অবোধ সন্তানটিকে ফোন করে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আমাদের আড্ডার মধ্যেই বন্ধুটির মা ফোন করলেন। কথা বলতে বলতে সে কেবল বলল, তাই নাকি! আচ্ছা আমি দেখছি। বলেই সে আকাশপানে তাকাল। প্রথমে বলল- কই কিছু দেখছি না তো। পরক্ষণেই আবার বলল- হা হা দেখতে পাচ্ছি। বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপর বন্ধুটি তার মাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকলেন। বোঝা যাচ্ছিল ফোনের ওই প্রান্তে বৃদ্ধা মা কাঁদছেন। কথা শেষ হলে বন্ধুটি বেশ বিব্রত মুখে আমাদের দিকে তাকালেন।



আমরা সবাই বিশেষত আমি বেশ অবাকই হলাম হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনাটির কারণে। বেশ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কী হলো? আর বলো না ভাই- গ্রাম থেকে মা টেলিফোন করে বললেন আকাশের চান্দের দিকে তাকিয়ে দেখ, সাঈদী সাহেবকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমি যখন বললাম- কই কিছু দেখছি না তো? ওমনি মা রেগে গিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তুমি নামাজ-কালাম পড়ছ না এবং সম্ভবত মদ-বিয়ার খাচ্ছ! তাই তোমার ইমানি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বৃদ্ধা মাকে কষ্ট না দেওয়ার জন্য তাই বললাম হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি। সাঈদীকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। শুনেই মা কান্না শুরু করলেন! হায় আল্লাহ, এমন একজন কামেল ওলি আল্লাকে ফাঁসি দিল।

ঘটনাপরম্পরা এবং বন্ধুটির সরল কথায় আমরা খুবই মজা পেলাম। আলোচনার প্রসঙ্গ এবার কেবল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে আবর্তিত হলো। একজন সাম্প্রতিককালে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া সাঈদীর একটি ফোনালাপের অডিও ক্লিপ আলোচনায় উঠালেন। বেশ আদি রসাত্দক রঙ্গকথা। ইন্টারনেটের সাঈদীবিরোধী ব্লগাররা বেশ দক্ষতার সঙ্গে সেই ফোনালাপটি সর্বস্তরে প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। আমি নিজেও একাধিকবার শুনেছি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনৈকা যুবতী মহিলার সঙ্গে ফোনালাপ। বেশ রগরগে এবং উত্তেজনাকর। এই অডিও ক্লিপটির ব্যাপক প্রচারণার ফলে ব্লগাররা সাঈদীকে ব্যাঙ্গ করে ডাকেন মেশিনম্যান।

সে রাতের আলোচনায় দেখলাম বন্ধুরা বেশ আগ্রহের সঙ্গে মেশিন প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা বলছে। সাঈদীর কথা বলতে বলতে নিজেদের মেশিনপত্র নিয়েও নানা কটাক্ষ এবং চটুল আলাপ শুরু করল। আমার ক্ষুদ্র জীবনের আরও ক্ষুদ্র অতিজ্ঞতায় তাবৎ পুরুষকেই দেখেছি এই একটি ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী। আলোচনা শুরু হলে আর থামতে চায় না। অন্যের ব্যাপারে কথা বলে যেমন তৃপ্তি পায়, তেমনি নিজের গোপন ব্যাপার প্রকাশ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে। সাঈদীকে ছেড়ে এবার যার যার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমার নিজের কিছু কথা মনে পড়ল। ভাবলাম, লোকজনের বেশির ভাগই আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে জানে। সম্মান করে এবং সমীহ দেখায় আমার কিছু সৎ কর্মের জন্য। সেই আমিরূপী ভালো মানুষটির গোপন মনের অভিব্যক্তি, কামনা, বাসনা বা কিছু কর্ম যদি লোকজনের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ে তবে ছিছি রব পড়ে যাবে। কাজেই আমি প্রসঙ্গটি পাল্টাতে চাইলাম। আমার মনে হলো, নিজেদের অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরও অন্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলা এক ধরনের মারাত্দক অপরাধ। স্বয়ং আল্লাহ অন্যের দোষ গোপন রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি দয়া করে আমার দোষত্রুটিগুলো গোপন রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

যা হোক, কথা বলছিলাম সাইদীকে নিয়ে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সাঈদীর বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির রায় নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে অসংখ্য আলোচনার মধ্যে সঙ্গত কারণেই শাহবাগের ব্লগারদের প্রসঙ্গ এসে যায়। বিরোধী লোকজন ব্লগারদের নিয়ে নানা রকম আপত্তিকর মন্তব্য করেন। অন্যদিকে সরকার ও তাদের সমর্থক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিগুলো ব্লগারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। এ মুহূর্তে সাঈদী কিংবা ব্লগারদের সম্পর্কে খোলামেলা কিছু বলতে যাওয়া আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। ঠিক যেন সেই লাজুক ভদ্র মহিলার মতো। ধরুন, তিনি তার পিতা, শ্বশুর অথবা ভাসুরের সঙ্গে সফরে বের হয়েছেন। পথিমধ্যে তিনি হায়েজ-নেফাস বা ঋতুচক্রের কবলে পড়লেন। বিষয়টি সফরসঙ্গীকে জানানো দরকার। কিন্তু মুরবি্বদের তিনি কীভাবে বলবেন। অথচ না বললেই নয়।

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাঈদী কিংবা জামায়াতের রাজনীতি ও ব্লগারদের প্রসঙ্গ এলে সবাই যেন কীসের ভয়ে অথবা সংকোচে একদম চুপসে যান। অথচ বিষয়গুলো জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর সমাধান বা নিষ্পত্তি দরকার। অন্যথায় আমাদের জাতীয় জীবনে ভয়াবহ অমানিশার কালো ছায়া ভর করবে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে। কাজেই আমি বন্ধুদের বললাম আমার অভিব্যক্তির কথা- আমার মনে হয় সাঈদীকে নিয়ে সারা বাংলাদেশেই বিরাট একটি মিথ রয়েছে। তার পক্ষের লোকেরা যেমন তাকে দেবতুল্য মনে করেন। তেমনি বিপক্ষের লোকেরাও ঘৃণা করেন প্রবলভাবে। উভয় স্থানেই তার অবস্থান এঙ্ট্রিম পর্যায়ে। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। গত ৪০ বছর একাদিক্রমে তিনি দেশে-বিদেশে শত শত নয়, হাজার হাজার মাহফিল করেছেন। তার সুললিত কণ্ঠ, শব্দচয়ন, বর্ণনার ধরন, বিষয়বস্তু উপস্থাপনার জন্য চমৎকার তথ্য-উপাত্ত, সুর, তাল, লয়, ছন্দ এবং প্রাসঙ্গিকতা তাকে পৃথিবীর সেরা ওয়ায়েজিনদের পর্যায়ে তুলে দিয়েছে। এর সঙ্গে তার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্লাটফরম, আর্থিক সুবিধা এবং মহলবিশেষের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন ঈর্ষণীয় সফলতার স্বর্ণশিখরে। ওই স্থানে পৌঁছানোর পর সাধারণ মানুষ কেবল তাকে শ্রদ্ধা করতেই শিখেছে এবং সেভাবেই সাঈদীও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে ঢাকার মতিঝিল সরকারি স্কুল মাঠ, চট্টগ্রামের প্যারেড স্কয়ার ও সিলেট শহরে সাঈদী বার্ষিক মাহফিল করে আসছেন। প্রতিটি মাহফিলে লাখ লাখ লোকের সমাবেশ হতো। বিশাল সেই জনসমুদ্র বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা অবধি তীর্থের কাকের মতো বসে থাকত তার ওয়াজ শোনার জন্য। বিশেষ করে চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানের সমাবেশের মতো এত বৃহৎ তাফসির মাহফিল কোনো দেশে কখনো হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এসব মাহফিল ছাড়াও হাজার হাজার অডিও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট, ডিভিডি, সিডির মাধ্যমে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী মুসলমান পরিবারে আদর্শিক ব্যক্তি হিসেবে সাঈদী বসবাস করছেন দীর্ঘদিন থেকে। সাম্প্রতিককালের বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে তার বিভিন্ন তাফসির মাহফিলের হাজারো ফুটেজ আপলোড করা রয়েছে। সারা বিশ্বের বাংলাভাষী ধর্মপ্রাণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দৈনিক কয়েক লাখ বার সেসব ভিডিও দেখছেন প্রতিনিয়ত।



সাঈদী পর পর দুবার জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। তার নিজের দলেও তার পদবি ও মর্যাদা আকর্ষণীয়। কথায় বলে চেয়ার মানুষকে যোগ্য করে তোলে। তার ক্ষেত্রে বিষয়টি ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। ফলে তার অন্তর্নিহিত দুর্বলতাগুলোকে চাপা রেখে তিনি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। ফলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় বিরাট শ্রেণীর মনে ব্যাপক ঝাঁকি দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে হয়তো বাহবা দিচ্ছেন বা লাফাচ্ছেন কিন্তু অনাদিকালের ইতিহাসে রয়েছে ভিন্নমাত্রার উদাহরণ।

https://www.facebook.com/Jagho.Bangladesh.08/videos/vb.442087365855178/588814244515822/?type=2&theater

এবার আমি সাঈদীর ভুলগুলোর আলোচনায় অংশ নিলাম। আমার মতে তিনি ছিলেন অতি মাত্রায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী। শেষের বছরগুলোতে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পদমর্যাদা, রাষ্ট্রক্ষমতাসহ ভোগ-বিলাসের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। তার সন্তানদের অনেক আচরণে তিনি ছিলেন বিক্ষুব্ধ। তিনি যে বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সফলতা লাভ করেছিলেন তা হলো কোরআন। পবিত্র এই গ্রন্থের চারটি দিক নিয়ে মুফাসসিররা সাধারণত আলোচনা করে থাকেন। আর তা হলো শরিয়ত, মারেফত, তরিকত ও হাকিকত। এ চারটি বিশ্লেষণের ওপর আবার চারটি মাজহাব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। অন্যদিকে এই উপমহাদেশের অলি-আল্লাহরা চারটি ভিন্নধারার তরিকা অবলম্বন করতেন। এর মধ্যে হজরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর অনুসৃত কাদেরিয়া তরিকা, হজরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর চিশতিয়া তরিকা এবং হজরত মুজাদ্দেদ আল ফিসানি (রহ.)-এর মুজাদ্দেদিয়া তরিকা এ দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে অনুসরণ করে থাকে। দেশের তাবৎ সুনি্ন আলেম, পীর-মাশায়েখ এবং তাদের ভক্ত-অনুরক্তদের সবাই এসব তরিকা মতে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। বলা হয়, দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান তরিকাভক্ত। সাঈদী মনে-প্রাণে এসব তরিকার বিরোধী ছিলেন। ফলে তরিকাপন্থি কোটি কোটি মুসলমান অনেকটা না জেনেই সাঈদীর মাহফিলে যান এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার ভক্ত বনে যান।




ইসলামের মূল আকিদাই হলো ইমান বা বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের বাস্তব ভিত্তি এবং গাইডলাইন হলো আল কোরআন। বিশ্বাসীদের কাছে এর মর্যাদা পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এর একটি অক্ষরও নিজের ইচ্ছামতো প্রচার করা যাবে না। কোরআনের প্রতিটি জের, জবর, পেশ কিংবা অক্ষরের নোকতার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ, ভাব-গাম্ভীর্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত। এগুলো বোঝার জন্য আরবি ব্যাকরণের পাণ্ডিত্য খুবই দরকার। অন্যদিকে এর অনেক আয়াতের তাফসির করার জন্য ইলমে মারেফতের জ্ঞান খুবই দরকারি। মারেফতের জ্ঞানসম্পন্ন কোনো পীর বা আলেমের কাছে হাতে-কলমে শিক্ষা ছাড়া কেউ গত ১৪০০ বছরে এই ইলম হাসিল করতে পারেননি। সাঈদীর দুটি দুর্বলতার কারণে তার তাফসির উচ্চারণ এবং কোরআনের ব্যাখ্যা নিয়ে উচ্চমানের আলেম সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ, সমালোচনা ও বিরূপ মনোভাব ছিল। প্রথম দুর্বলতা ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার স্বল্পতা। তিনি মাত্র দাখিল বা এসএসসি পাস ছিলেন। অন্যদিকে দেশ-বিদেশের কোনো কামিল পীরের মুরিদও তিনি ছিলেন না। ফলে শিক্ষা ও দীক্ষাহীন একজন মেধাবী মানুষ কেবল নিজের বোধ ও বুদ্ধির বলে গত ৪০ বছর এসব তাফসির মাহফিল করে গিয়েছেন। এ ছিল লেলিহান আগুন নিয়ে খেলা করার মতো।







১৯৯৭ সালের পর থেকে তিনি যেসব বড় বড় তাফসির করেছেন তার অনেকগুলোর অডিও এবং ভিডিও আমার শোনা ও দেখার সুযোগ হয়েছে। এসব মাহফিলে তার বক্তব্য, অভিব্যক্তি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে দাম্ভিকতা ও অহঙ্কার প্রকাশ পেত। দালিলিক প্রমাণসহ আমি সাঈদীর ভক্তদের কাছে এগুলো পেশ করতে পারব ইনশা আল্লাহ। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ভারতবিদ্বেষী। আওয়ামী লীগ ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সমালোচনা করতেন কোনো রকম সৌজন্য ও সম্মানবোধ ছাড়াই। কোরআনের মাহফিলে এসব প্রসঙ্গের অবতারণা করায় অনুষ্ঠানের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য নষ্ট হতো। আল্লাহ পাকের কালামের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি প্রায়শ নিজের মনগড়া যুক্তি, বিষয় এবং চটকদার উদাহরণ ব্যবহার করতেন। ফলে আমার ভয় হয় হয়তো আল্লাহপাক স্বয়ং কোনো কারণে নারাজ হয়ে থাকতে পারেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো তাফসিরকারক মুফাসসিরিনের জীবনে সাঈদীর মতো এত বড় বিপর্যয়মূলক অসম্মান জোটেনি।

সাঈদীর মামলার রায়ের আগে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাখ্যান হলো শাহবাগে কথিত ইন্টারনেট ব্লগারদের আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনে ব্যাপক গণসমাবেশ এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আওয়ামী লীগের এমপিদের মধ্যে সম্ভবত আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে কিনা শাহবাগ আন্দোলনের কিছু প্রসঙ্গ এবং কতিপয় নেতা সম্পর্কে প্রথম দিন থেকেই ভিন্নমত পোষণ করে বিভিন্ন টেলিভিশন টকশো ও সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে আসছি। আমার সহকর্মীদের অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও আমি সেখানে যাইনি। আজ এত দিন পর আমার আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে একটি চক্র দেশকে আজ আস্তিক ও নাস্তিক এই দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন দলকে নাস্তিকদের সমর্থনকারী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতিও ভালো হবে না।

শাহবাগ আন্দোলনের দুটি বিষয় আমাকে এখনো বিমোহিত করে। একটি হলো বিষয়বস্তু। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার। অন্যটি হলো অহিংস পদ্ধতিতে দাবি আদায়ের সংগ্রাম। কিন্তু আমার আপত্তি ছিল শাহবাগের মতো একটি ব্যস্ত এলাকার চারটি প্রধান সড়ক আটকে অনির্ধারিত সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং এই কাজে প্রশাসনিক সহায়তা। অন্যদিকে একমাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ব্যতিরেকে অন্যকোনো শীর্ষ ব্লগার নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের সহজাত গুণাবলী, সৌজন্য বোধ এবং আভিজাত্যপূর্ণ সুরুচির বহিঃপ্রকাশ দেখিনি। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বালখিল্য, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং গন্তব্যহীন অভিযাত্রা আমাকে আতঙ্কিত করেছে।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী প্রায় ২৫০টির মতো সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে ব্লগাররা নিজেরাই একটি নতুন সংগঠনের মাধ্যমে আত্দপ্রকাশ করে। এতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল এবং এখান থেকেই বিপত্তির শুরু। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে আন্দোলনের নেতারা এ দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, নিজেদের কাজ-কর্ম ও লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা ইন্টানেটের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিশেষত ফেসবুকের মাধ্যমে মনের ভাব বাধাহীনভাবে প্রকাশ করে থাকে। এখানে কোনো শাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই, সুরুচি-কুরুচি কিংবা কমিটমেন্টের বালাই নেই। ফেসবুকের সঙ্গে যারা জড়িত তারা নিশ্চয়ই জানেন, তরুণদের এক বিরাট অংশ কি অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ব্লগিং করে। কীভাবে তারা গালাগাল করে কিংবা কিসব আজবাজে ভিডিও ফ্লিপ আপলোডের মাধ্যমে সবাইকে বিব্রত করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে। কাজেই এসব বাধা না-মানা এবং মনের খুশিতে চলা উদ্দাম তারুণ্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অগ্রসর না হয়ে ফেৎনা-ফ্যাসাদের শিকার হবে। চক্রান্তের মধ্যে পড়বে এবং নিজে ও পরিবারকে বিপদগ্রস্ত করে তুলবে, এই ছিল আমার ভয় ও শঙ্কা।

সিঙ্গাপুরের মেরিনার্স বের সেই রাতের আড্ডাতে আমার বক্তব্য পেশের পর সবাই যেন খুব গম্ভীর হয়ে গেল। আমার সিরিয়াস আলোচনা ও অভিব্যক্তিতে তারা সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করল। এরপর আমি আবার খোশ মেজাজ আনার জন্য নিচের কাহিনীটি বলে বক্তব্য শেষ করেছিলাম। আমার নিজের মধ্যে কিছুটা বহেমিয়ান চরিত্র রয়েছে। তাই কবি হওয়ার বাসনা নিয়ে রাত-বিরাতে বেরিয়ে পড়ি অনেকটা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের হিমুর মতো। হাইকোর্ট মাজার আমার খুবই প্রিয়। সেখানে ব্লগার ও জামায়াতিদের মতো আস্তিক-নাস্তিকের লড়াই হয় না। মুমিন-পাগল-ফকির বাউল এমনকি পথ-বধূরা দিনরাত পাশাপাশি থাকছে। কেউ কাউকে আক্রমণ করছে না বরং যে যার অবস্থানে থেকে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ না করেই সময় কাটাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে সেখানে মজার মজার ঘটনা ঘটে। এমনি এক মজার ঘটনা বলে আজকের লেখার ইতি টানব।

হাইকোর্ট মাজারের সামনে নতুন ফকিরের আগমন ঘটেছে। গেরুয়া পোশাক, মাথাভর্তি চুল, বড় বড় গোঁফ এবং দাড়িতে মুখমণ্ডল একাকার। হাতে ডুগডুগি নিয়ে ফকির ঝিম মেরে বসে আছেন। ৫০-৬০ জন লোক ঝিমধরা ফকিরকে ঘিরে কৌতূহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফকিরের অলৌকিকত্ব নিয়ে কেউ কেউ আলোচনা করছে। ২-৩টি যুবতী মেয়ে ছিল। সম্ভবত ভ্রাম্যমাণ পতিতা হবে। কুটকুট করে হাসছে এবং সহেলিদের খোঁচা দিয়ে মশকরা করছে। এরই মধ্যে একজন বলে উঠল ও মোর আল্লাহ! ব্যাডার মোচ ও দাড়িগুলো কি বড়। ব্যাডা এতবড় মোচ নিয়ে দই খায় কীভাবে? ফকির অনেকক্ষণ পর চোখ তুললেন এবং ডুগডুগিতে হাত রেখে এর তারে ডুগডুগ আওয়াজ তুললেন। লোকজনের আগ্রহ বেড়ে গেল। মনে হয় এবার বড় কিছু একটা হবে। দেখতে দেখতে সমাবেশে ১০০-১৫০ জনের মতো লোক এসে গেল। ২-৩ জন সাধারণ মুসলি্লও যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। আমার মতো তারাও পরম উৎসাহ নিয়ে দাঁড়াল। মুখে রাজ্যের বিরক্তি কিন্তু কিছু বলছে না বরং বাঁকা মুখে গভীর আগ্রহ নিয়ে ফকিরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। ফকির এবার গান ধরল_ মদিনা যাব ক্যামনে! মদিনা যাব ক্যামনে! গান শুনছে আর মুসলি্লরা ফোড়ন কাটছে, তুই যাবি মদিনায়! শরাবী! কাবাবি! তোর এই নাপাক দেহ মদিনায় ঢুকতে পারবে না! আগে সর! তারপর আজরাইল তোরে পথ দেখাবে মদিনায় কীভাবে যাবি! মুসলি্লরা একের পর এক ফোঁড়ন কাটতে থাকল আর ফকির গাইতে থাকল। কোনো শান্তি বিনষ্ট হলো না। এভাবেই চলে আসছে আমাদের আবহমান বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি।




https://www.youtube.com/watch?v=3ZaQgUE-iD8

লেখাটার উৎস :

বাংলাদেশ প্রতিদিন : উপসম্পাদকীয় , ২১ মার্চ ২০১৩

http://www.bd-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=21-03-2013&type=single&pub_no=1037&cat_id=2&menu_id=8&news_type_id=1&index=0

http://www.onlinebanglamedia.com/obm-blog/238-2013-03-20-21-31-10

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=446691748740042&id=389269111148973

https://www.facebook.com/Crime.World.24/posts/470544123010822:0

https://www.facebook.com/abdullahharun.jewel/posts/10203062003684996



উপসংহার :

এই লেখাটা দুর্লভ একটা লেখা যা গোলাম মাওলা রনি বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২১ মার্চ ২০১৩ সালে লিখেন । এই লেখাটা বর্তমানে নেটে খুজে পাওয়া কষ্টকর । কারণ কি হতে পারে তা পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম ।

তবে গোলাম মাওলা রনির জামায়াত-শিবিরের প্রতি তার মমত্ববোধ কখন থেকে ও কীভাবে সৃষ্টি হয় তার কারণ উল্লেখ করবো পরবর্তী লেখাগুলোতে , ইনশাআল্লাহ । আশা করি সাথেই থাকবেন ।

প্রয়োজনে গোলাম মাওলা রনির সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে আমি নিজে মানষিকভাবে প্রস্ত্তত আছি । তবে তিনি আমাকে সময় দিবেন কি না জানি না ।

https://www.facebook.com/allbanglanewspaper/videos/vb.305757502774202/470402909691772/?type=2&theater

আরো জানার জন্য পড়ুন :

১। http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/69418#.ViPk3W5Pis4

সাইদীকে চাঁদে দেখা গেছে !

২।

http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/68731#.VfW4uX1PjxI

সাইদীর সাথে বাহাস ও সাইদীকে চাঁদে দেখার জন্য আমার প্রচেষ্টা

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File