ইসলামে নারী নেতৃত্ব কি হারাম?

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:১১:৪০ রাত



প্রশ্নঃ নারীদেরকে ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে?

উত্তরঃ ইসলামি শরিয়াহ নারীদেরকে ‘রাষ্ট্রপতি’, ‘প্রধানমন্ত্রী’ ‘বিচারক’/ কাজী/ মুফতি/ judge/ ruler হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্পূর্ণ ‘হারাম’ বা অবৈধ করেছে। যে ব্যক্তি কোন নারীকে ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেবে সে গুনাহগার, সে একজন পাপী।

প্রশ্ন আসতে পারে, নারীরা কেনো ‘শাসক’ অথবা ‘বিচারক’ হতে পারবেনা?

এ ব্যপারে শরিয়াহর দিক থেকে দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষেপে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি।

১. মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

“পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল। এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করে।”

[সুরা আন-নিসাঃ ৩৪]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“যে জাতি নিজেদের শাসকক্ষমতা কোন মহিলার উপর অর্পণ করে, সে জাতি কখনোই কল্যান লাভ করতে পারেনা।”

[সহীহ আল-বুখারীঃ ৬৬১৮ কিতাবুল ফিতান, আত-তিরমিযীঃ ২২৬২]

২. আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা নারীদেরকে পুরুষদের মাঝে দেশ চালানো কিংবা বিচার-ফয়সালা করার জন্য সৃষ্টি করেন নি, তাদেরকে এর চাইতে বড় দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য নারীদেরকে গৃহে অবস্থানের আদেশ দেওয়া হয়েছে, এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

“আর তোমরা গৃহে অবস্থান করবে, জাহেলিয়াতের (মূর্খতা যুগের) মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। তোমরা নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে।”

[সুরা আল-আহজাবঃ ৩৩]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“নারীদের পুরোটাই হচ্ছে আওরাহ বা সতর (শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক), যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে চোখ তুলে দেখে। নারী ঘরের মধ্যে অবস্থানকালেই আল্লাহর বেশি নৈকট্য প্রাপ্ত থাকে।”

[তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান, হাদীসটি সহীহ]

কোন ব্যক্তিকে যে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে যদি সেই কাজ না করে, অথবা সেটাতে অবহেলা করে অন্য কাজে লেগে পড়ে, সেটা সে যতই ভালোভাবেই পরিচালনা করুক না কেনো, কোনমতেই সেটা গ্রহণ্যোগ্যতা পাবেনা। এছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যা নারীদের ‘শাসক’ এবং ‘বিচারক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাঁধা।

৩. নারীদের ঋতুর কারণে প্রতি মাসে ৫-৬ দিন তাদের মন-মেজাজ রুক্ষ থাকে । এসময় শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক অস্থিরতার কারণে তাদের চিন্তাশক্তি ব্যহত হয়। নারীদের ঋতুর কারণে তাদের নামায, রোযার মতো ফরয কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে, স্বামীর প্রতি বড় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সেটাকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘দেশ ও জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া’ অথবা ‘বিচার করার’ মতো কঠিন কাজ, যেই আল্লাহওয়ালা ওলামারা পর্যন্ত ভয় করে চলেন, সেখানে তাদেরকে কি করে সেই গুরুদায়িত্ব কাজ করতে বাধ্য করা বা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে? অবশ্য বর্তমানে যারা ‘ক্ষমতাকে’ টাকা বানানোর উপায় হিসেবে নিয়েছে, তাদের কথা ভিন্ন। তবে একজন মুসলিম সবসময় ক্বুরান ও সুন্নাহর আলোকেই চিন্তা করে এবং এর মাঝেই সে নিজের সফলতা নিহিত বলে বিশ্বাস করে।

৪. আল্লাহর ইবাদতের পরে একজন নারীর জীবনে সবচাইতে বড় দায়িত্ব হচ্ছে তার পরিবারের দেখাশোনা করা, সন্তান জন্ম দেওয়া, তাদের লালন-পালন করা ইত্যাদি। কেউ যদি জীবনে অন্তত ৪-৬টা সন্তানের জন্ম দেয়, তাদের লালন-পালন করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ দিলে সেই দায়িত্ব সে কখন পালন করবে? তাকে সন্তান জন্ম দেওয়া বন্ধ করতে হবে, আর বুয়া রেখে বাচ্চা পালতে হবে। এ হচ্ছে আধুনিক জীবনে মুসলমান সমাজের উপর চেপে বসা বিজাতীয় অভিশাপ।

৫. নারীদের রয়েছে বুদ্ধির দিক থেকে ত্রুটি (যেকারণে একজন পুরুষ স্বাক্ষীর জায়গায় নারী থাকলে দুইজন স্বাক্ষীর প্রয়োজন হয়)।

আবূ সাঈ’দ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযাহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রসূল (সাঃ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা (উপস্থিত মহিলারা) জিজ্ঞেসা করলেন, এমন কি কারণে, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্বেও একজন সদা-সতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁরা বললেন, আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, একজন মহিলার স্বাক্ষ্য কি একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, হ্যা। তখন তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়য় (ঋতু) অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তাঁর বললেন, হ্যা। তিনি বললেনঃ ,এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি।

[সহিহ বুখারীঃ ২৯৮]

৬. নারীদের অন্তরে মায়া-মমতা ও ভালোবাসা বেশি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে করে পুরুষেরা তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। যাদের মাঝে ভালোবাসা বেশি এর বিপরীত জেলাসির প্রবণতাটাও তাদের মাঝে বেশি থাকবে। যারা সহজে আবেগতাড়িত হয়, মানবিক দুর্বলতা তাদের মাঝে বেশি প্রকাশ পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

৭. আলেমদের ফতোয়াঃ

ইমাম ইবনে হাজম রহঃ নারীদের শাসক হওয়া হারাম, এই ব্যপারে ‘ইজমা’ রয়েছে অর্থাৎ, সমস্ত ওলামারা একমত বলে উল্লেখ করেছেন, “তারা (আলেমরা) এই কথায় একমত হয়েছেন যে, নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

[মাআ’রাফিতুল ইজমা, পৃঃ ১২৬]

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন,

“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [নাকালু মারাফিয়া ইজমা]

ইমাম কুরতুবী রহঃ এই ব্যপারে ইজমা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন যে,

“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [আহকামুল কুরআনে]

আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) তার হুজ্জাতুল বালিগাহ তে বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়। নেতৃত্ব হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।”

ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ বলেন,

“নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া ফরয।”

হানাফী আলেম, মোল্লা আলী কারী (রহঃ) ফায়যুল বারীতে লিখেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।”

বিষয়: বিবিধ

৪৪১৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364956
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৬:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : আমাদের ৯০% মুুসলমানের শাসন যন্ত্রে সামনে পিছনে ডানে বামে সর্বত্রই নারী বিরাজমান৷ আর তা চলতেই থাকবে আশা করা যায়৷
এখন প্রশ্ন মৃত্যুর পর আমাদের যায়গা কোথায়? ধন্যবাদ৷
364962
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:৪২
মহিউদ্দিন মাহী লিখেছেন : ভালো লাগলো।
যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
364969
০৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : নারীদের বুদ্ধিতে ত্রুটি আছে এটা কি কোন হাদিস? রেফারেন্স দিতে পারবেন? আর রাষ্ঠ্পতি ও প্রধানমন্ত্রী নামে ইসলামে কি কোন পদবী আছে?
365028
০৯ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৭:৪৩
জীবরাইলের ডানা লিখেছেন : প্রিয় পাঠক সকলকে ধন্যবাদ
ইসলামে রাষ্টপ্রধানের ব্যাপারে বলা আছে রাসূল ( সঃ) তো রাষ্টপ্রধান ছিলেন এর চেয়ে আর কি কোন হাদিসের প্রয়োজন আছে #ভাইঘুম ভাঙ্গাতে চাই
365372
১১ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৯
হতভাগা লিখেছেন : শরিয়ত মোতাবেক - নারী (স্ত্রী) দের দ্বায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর অবর্তমানে তার সংসারের হেফাজত করা আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে ।

একজন কর্মজীবী নারীর পক্ষে কিভাবে সেটা মেইনটেইন করা সম্ভব ?

চাকুরিদাতা কোন প্রতিষ্ঠান কি তাদের অফিসের টাইমে তাদের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এলাউ করবে ?

শরিয়ত মোতাবেক - একজন নারীর চাকুরি করা কি একজন পুরুষের চাকুরি করার চেয়ে জরুরী ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File