মাকে নিয়ে মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ সফর-(০৫) রায়হান আজাদ

লিখেছেন লিখেছেন রায়হান আজাদ ১৫ মে, ২০১৫, ১২:১৭:০৪ দুপুর

হাদীসের কথা, ‘বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছেলেমেয়েদের নৈতিক দায়িত্ব’। আমি এ হাদীস আমলের জন্য মক্কাতুল মুকাররমা ত্যাগের পূর্বে এখানে ৩৫ বছর ধরে বসবাসরত আমার আব্বার ভাতৃসম্পর্কীয় বাল্য বন্ধু মুহাম্মদ নুরুচ্ছবীর সাথে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়ি। অচেনা বাসা, নেই কোন ফোন-মোবাইল নম্বর তবু প্রয়াস। ২০১২ সালে একবার চাচার বাসায় গিয়েছিলাম সেই পথ আবছা মনে পড়ে- মিসফালাহ কুবুরির দক্ষিণে পাহাড়ের টিলায় আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে দু‘চালা বাসা। আমি বারবার টিলায় উঠে আবার নিচে নেমে পড়ি। পথিমধ্যকার এক বেকালা (মুদি দোকান)‘র কর্মচারিকে জিজ্ঞেস করলে সেও সঠিক সন্ধান দিতে পারে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিন্তু ইচ্ছা প্রবল। শেষতক চাচা জহিরের সাথে আলাপ করে চাচা নুরুচ্ছবী সম্পর্কে আরো জেনে নিয়ে বেকালার ছেলেটার নির্দেশনা মত টিলায় উঠে আন্দাজে একটি বাসায় কড়া নাড়লে চাচা বেরিয়ে এসে আমাকে দরজা খুলে দেন। আমাকে পেয়ে চাচা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেক স্মৃতিচারণ করেন। আমি দেশ থেকে আনা আমার হাদীয়াগুলো চাচার হাতে তুলে দেই। তিনি জমজমের পানি দিয়ে আমাকে সমাদর করলেন। অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চাচা। একবার সস্ত্রীক দেশে আসার প্রত্যাশা রাখেন তিনি। আমি সেদিন সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চাচা জহিরের বাসায় যাই। সেখানে দুপুরের বিরতিতে সুখ-দু:খের নানান কথা হয়। বিকেলে মায়েদের নিয়ে হারাম শরীফে বিদায়ী তাওয়াফের জন্য যাই। এদিন বায়তুল্লাহ বরাবর যেতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কন্সট্রাকশনের কাজ চলায় কা‘বার বহু গেইট বন্ধ। ২০১২ সালের পর ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। আমরা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এলোমেলো হেঁটে কা‘বার দর্শন পাই তাও ফ্লাই ওভারে গিয়ে। মা-খালাদের ভীষণ কষ্ট হয়। অনেক ঠেলাঠেলির মধ্যে মাগরিব পড়ি এখানেই। মায়েরা ক্লান্ত দেখে এখান থেকে সময় মত বেরিয়ে আসি। কা‘বা চত্বরে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর মায়েদের হোটেল স্যুটে নিয়ে এসে বিশ্রামের ব্যবস্থা করি।

২১এপ্রিল মঙ্গলবার। আজ আমরা মক্কা ছেড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার দিন। আগের দিন আমি মন ভরে তাওয়াফ করতে না পারার শূণ্যতা পূরণার্থে ফজর ধরলাম হারাম শরীফে। ফজর শেষে বিদায়ী তাওয়াফ তো বটে সুযোগ বুঝে সাহস নিয়ে ঢুকে পড়লাম হাতীমে কা‘বায়। ভীড়ে কষ্ট করে দু‘রাকাআত সালাত আদায় করলাম। কা‘বার দেয়াল জড়িয়ে ধরে নিজের,পরিবারের,দেশের ও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রাণখোলে দো‘য়া করলাম। সকালের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে সাড়ে সাতটায় মদিনা মুনাওয়ারাহর উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়ি মক্কা নগরী ত্যাগ করে।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

320252
১৫ মে ২০১৫ রাত ১১:২৭
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

আল্লাহ আপনার প্রেচেস্টা এবং আমল কবুলকরে নিন! আপনাদের উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন!

বারাকাহ লাভের উদ্দেশ্যে বা কবুল হওয়ার নিয়তে কাবা শরীফের দেয়াল জড়িয়ে দোআ করাটা প্রশ্নবিদ্ধ!

জাযাকাল্লাহু খাইর!
১৭ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৭
261651
রায়হান আজাদ লিখেছেন : বোন সাদিয়া! আমার জানা মতে, কা‌‍‌‌'বা জড়ে ধরে দো‌য়াতে কোন দোষ নেই।
320350
১৬ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:১৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম । হুজুর, অনেক সুন্দর জিয়ারাতের কাহিনী। মায়ের খেদমতে আপনার এ ত্যাগ দারুণ। আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ।
১৭ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৫
261650
রায়হান আজাদ লিখেছেন : স্যার মাছুম! আপনি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন বলেইতো পেরেছি.... আমার পরে আপনিও সাওয়াব পাবেন ইনশাল্লাহ।
১৭ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৩
261659
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : স্যার আমারটা তো ছিল নফল, আর আপনারটা ফরয। সুতরাং ছওয়াবের ভাগীদার আপনি অনেক অনেক বেশি। আল হামদুলিল্লাহ।। আল্লাহ আপনাকে মা-খালা-চাচীর খেদমতের উত্তম প্রতিদান দিন। জোরে বলুন আমিন।। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File