"ইফতারি নামক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি"

লিখেছেন লিখেছেন অভিমানী বালক ১০ জুন, ২০১৬, ০২:২৪:০৩ দুপুর

রমজান মাস এলেই কুটু মিয়ার চিন্তায় দু চোখে ঘুম আসে না, এমনিতে আয় রোজগার নেই বললেই চলে।

কোন মতে হাঁস মুরগী পালন করে সংসার চলছে। জমি জমা বলতে যা কিছু ছিলো তা বিক্রি করে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন।

শেষ মেষ গত বছর ছোট মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় বাড়ির পাশের জমিটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন।

কিন্তু বিয়ে দিলেই তো দায়িত্ব বোধ শেষ হয়ে যায় না, বরং মেয়েদেরকে বিয়ে দিলে দায়িত্ববোধ আরো বেড়ে যায়।

আমাদের সমাজে রয়েছে এমন কিছু কুসংস্কৃতি যা মেয়ের বাবাকে তিল তিল করে মৃত্যু পথযাত্রীর দিকে ঠেনে নেয়।

কুটু মিয়া ও এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু নয়, চার চারটা মেয়েকে লালন পালন করে বিয়ে দেয়া কি খুব সহজ বিষয়?

তবু ও কুটু মিয়া হাল ছাড়েননি, মেয়েদেরকে লেখাপড়া করিয়ে টিক ঠাক মত বিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু বিয়ের পরবর্তী খরচ গুলো সামাল দিতে কুটু মিয়া নিয়মিত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।

তাহলে মেয়ে জন্ম দেয়া কি পাপ?

হ্যা আমাদের সমাজে মেয়ে জন্ম দেয়া পাপ মনে হয়!!

আমরা একটি নোংরা সংস্কৃতির সমাজে বসবাস করছি,

* যে সমাজে আমরা মুখে বলি যৌতুক একটি অপরাধ, কিন্তু যৌতুকের চেয়ে বেশি অর্থ অপচয় করতে হচ্ছে মেয়ের বাবাকে।

* যে সমাজে আমরা মুখে বলি ইফতারি প্রথা একটি কুসংস্কৃতি, কিন্তু মেয়েকে শশুরবাড়ির নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে মেয়ের বাবা বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।

* যে সমাজে মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজনকে টিক মতো আপ্যায়ন না করালে মেয়েকে হজম করতে হয় বাহারি রকমের খিচুনি।

আমাদের সমাজে রয়েছে শত শত কুটু মিয়া যারা নাকি মেয়ের শশুর বাড়ির আবদার মেটাতে না পেরে নিভৃতে চোখের জল ফেলে আফসোস করে।

রয়েছে শত শত আফরোজা বানুর মত শাশুড়ি যারা নাকি ছেলের শশুর বাড়ি থেকে চাহিদা মত জিলাপি মিষ্টি না পেয়ে ছেলের বউকে শারিরীক নির্যাতন করতে দ্বিধাবোদ করে না।

রয়েছে অনেক কুলাঙ্গার শশুর যে নাকি ছেলের শুশুর বাড়ি থেকে পর্যাপ্ত ইফতারি না পেলে নিন্দা এবং অবহেলায় মেতে উঠে।

ধিক্কার জানাই এমন কুলাঙ্গারদেরকে,

ইচ্ছে করে এই সব কুলাঙ্গারদের ঘরে মিষ্টির দোকান বসিয়ে দিতে।

এই কুলাঙ্গার গুলা একবার ও চিন্তা করেনা আমার মেয়ের সাথে যদি এমন রুঢ় আচরন করা হয় তাহলে আমি কতটুকু সহ্য করতে পারবো?

তাই আসুন যুগ যুগ ধরে চলে আসা শশুরবাড়ির ইফতারি নামক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি৷

কুটু মিয়ার মত নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোকে সমাজে সস্তিতে বেচে থাকতে দেয়া আমাদের দায়িত্ব।

প্রত্যেকে নিজ নিজ পরিবার থেকে এই ইফতারি নামক কুসংস্কারকে পরিহার করলে হয়তো কুটু মিয়ারা বেচে থাকতে পারবে একটু স্বস্তিতে, এবং হয়তো একদিন আমরা দেখতে পারবো ইফতারি নামক প্রথা আমাদের সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371623
১০ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
ইরফান ভাই লিখেছেন : শুনেছি চট্টগ্রামে এসবকে যৌতুক হিসিবেই ধরা হয় না! অনেক কথিত শিক্ষিত মানুষকেও দেখেছি যারা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে।আসলে দারিদ্রতা এবং বেকারত্ব এই প্রথার জন্য দায়ী।
১০ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০৭
308376
অভিমানী বালক লিখেছেন : এগুলো একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে, এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাড়াতে হবে।
371624
১০ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:১২
হতভাগা লিখেছেন : এটা ১৯৮০-৯০ এর দিকে পোস্ট দিলে পাবলিক ভালই খেত ।

বর্তমানে এটা রিভার্স হয়ে গেছে ।
১২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
308536
অভিমানী বালক লিখেছেন : Happy
371625
১০ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

সামাজিকতার নামে অসংখ্য কুসংস্কার আমাদের সমাজের কাঁধে দৈত্যের মত চেপে বসে আছে!

এগুলো তাড়াতে হলে নিজে যেমন দুঃসাহসী হতে হবে তেমনি মেয়েকেও দুঃসাহসী ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে!

মনে রাখা ভালো- পোড়াইট বা কাঁচালোহার মত যোগ্যতা দিয়ে ইস্পাতকঠিন কুসংস্কার দূর করা যায়না!!

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
১২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
308537
অভিমানী বালক লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
371626
১০ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:২৯
পললব লিখেছেন : এটা কোন অঞ্চলের ইফতার সংস্কৃতি? অঞ্চলের সংস্কৃতিকে ইসলামের কু-ইফতারী সংস্কৃতি বলে চালিয়ে কি ঠিক হলো?
১২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
308539
অভিমানী বালক লিখেছেন : এটা সেই ইফতারী নয় যেটা রোজাদরকে ইফতার করালে সওয়াব হয়, এটা সেই ইফতারী যেটা মেয়ের বাবার উপর ইফতারীর নামে জুলুম করা হয়।
371634
১০ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
শেখের পোলা লিখেছেন : বিলুপ্ত সেদিনই হবে যখন সিলেটি অবস্থাপন্ন লোকেরা এটা নেওয়া বন্ধ করবেন। আমাদের অঞ্চলে(খুলনা ও আশ পাশে)এটা নেই। ধন্যবাদ।
১২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
308540
অভিমানী বালক লিখেছেন : এই কুসংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করার জন্য সামাজিক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ।
371644
১০ জুন ২০১৬ রাত ১০:০৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমাদের খুলনা বিভাগের কোথাও ইফতারী এই সাংষ্কৃতি নেই। মনে হয় শুধু চিটিগংএ। তবে সবখানে নয়।
১২ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
308541
অভিমানী বালক লিখেছেন : আমাদের সিলেটে ও আছে।
371774
১২ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:১২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়। রমাদান নিয়ে ব্লগে আয়োজন চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-

Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File