ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য জামদানি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ০৪:০১:৪৩ বিকাল

বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাবার পরে ঢাকার ডেমরায় জামদানি পল্লীর তাঁতিদের আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়। তবে মেধা ও পারিশ্রমিকের অভাবের কারণে তাঁতিরা আর এ পেশায় আসতে চাইছেন না। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার অচল তাঁতগুলো প্রাচীন গৌরবগাঁথার নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে। কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়িরও একই দশা। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালী নারীদের অতি

পরিচিত।মসলিনের উপর নক্সা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকেই বোঝানো হয়। বর্তমানে তৈরি নানা পোশাকের সমারোহ থাকলেও জামদানি শাড়ির প্রতি বাঙালী নারীর দুর্বলতা এখনও অমলিন। জামদানি দিয়ে নকশি ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নক্সীওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে জামদানি পল্লী স্থাপিত হয়েছে। মিরপুর বেনারশী পল্লীতে তৈরি শাড়ি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, চায়না, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানি করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও রয়েছে জামদানির চাহিদা। বর্তমান বাজারে জামদানির উচ্চমূল্য ও বিপুল চাহিদার কারণে বাংলাদেশের এই শিল্পে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। আর এই গতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল জিআই সনদ। বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেল জামদানি। বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়েকটি পণ্য সুপরিচিত, জামদানি অন্যতম। এটি বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পণ্য মসলিনের পঞ্চম সংস্করণ। জামদানি জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ায় দেশীয় ঐতিহ্যগত সুরক্ষার পথে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে গেল। ঢাকাই মসলিনের স্বর্ণযুগ বলা হয় মুঘল আমলকে। এ সময় দেশে-বিদেশে মসলিন, জামদানির চাহিদা বাড়তে থাকে এবং শিল্পেরও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। আঠারো শতকে ইংরেজ দলিল থেকে জানা যায় মলমল খাস ও সরকার-ই-আলি নামের মসলিন সংগ্রহ করার জন্য দারোগা-ই-মলমল পদবির উচ্চপর্যায়ের রাজ কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। প্রতিটি তাঁতখানায় একটি দফতর ছিল এবং এখানে দক্ষ তাঁতি, নারদিয়া, রিপুকার প্রভৃতি কারিগরদের নিবন্ধন করে রাখা হতো। দারোগার প্রধান কাজ ছিল মসলিন ও জামদানি তৈরির বিভিন্ন পদক্ষেপে লক্ষ্য রাখা। তৎকালীন সময়ে ঢাকা থেকে প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যমানের মলমল-খাস মোঘল দরবারে রফতানি করা হতো। তৎকালীন মোঘল সম্রাট ও তাদের রাজ কর্মচারীরা এ শিল্পের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েন। ফলে ধীরে ধীরে মসলিন ও জামদানি শিল্প কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়। সম্প্রতি সরকারী বিভিন্ন উদ্যেগে জামদানি শিল্প পেয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে আশা করা যায় জামদানি শিল্পের আবার সুদিন ফিরে আসবে। এবং অর্থনীতিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বিষয়: বিবিধ

১১০৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380350
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৯
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File