শিমুলের ভালবাসা পেতে ছায়া !

লিখেছেন লিখেছেন গরীবেরবন্ধু জুয়েলখান ২২ মার্চ, ২০১৪, ১০:২০:০৭ রাত

শিমুলের ভালবাসা পেতে এহেন কিছু নাই যে ছায়া তা করতে বাকি রেখেছে কিন্তু কোন কিছুতেই হচ্ছেনা। অথচ, কি নেই ছায়ার মধ্যে? রুপ, গুণ, যৌবন সবই আছে তার। তারপরেও শিমুল কেন তার প্রতি এত অনিহা দেখাচ্ছে? ছায়ার পিছনে এলাকার ছেলেরা লাইন লাগিয়ে ঘুরে, আর শিমুল তাকে পাত্তা দিচ্ছেনা। এইটা সে মেনে নিতেই পারছেনা। যতবার শিমুলের কথা মনে আসে, ততবারই জিদ চেপে বসে মনে। তারপর আবার একথাও মনে হয়েছে তার, শিমুল নপুংসক টাইপের কিছু নয়তো? নইলে একজন যুবক আরেকজন যুবতির এমন আহবানে সারা না দিয়ে থাকতে পারে কি করে? আবার পরক্ষনেই সেসব চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়। না, তা নয়। তবে কি?

শিমুল। চেহারায় একটা নায়কচিত ভাব। সুঠাম স্বাস্থ, দর্শনদারি যুবক। কথা, বার্তা, চাল-চলনে একটা বিশেষ স্বকিয়তা। মেধাবিতো, ভদ্র, বিনয়ি এবং আপোষহীন বটেই। অসম্পুর্নতার মধ্যে একটাই, সেটা হল বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা। বিধাতা সবাইকে সব কিছু দেয়না। কেন দেয়না, সেটা অন্য বিষয়। চরম হত দরিদ্র অবস্থা শিমুলদের। এই যুগেও তাদের পরিবারের লোকেরা অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করে। তারপরেও সেটা বাইরে থেকে কারও বুঝবার জো নেই। দরিদ্র তবে আদর্শবান পরিবার তাদের। বাবার একটাই কথা, কষ্ট করে হলেও মানুষের মত মানুষ হও।

শিমুল চেষ্টা করছে, মানুষের মত মানুষ হতে। নিজে না বুঝলেও এলাকাবাসি শিমুলকে নিয়ে গর্ববোধ করে। নিজেদের ছেলে-মেয়েদের শাসন করতে আদর্শের উদাহরন হিসেবে শিমুলের নামই বলে। শিমুলকে দেখ, গরিব হয়েও মানুষ হতে হয় কিভাবে।

পক্ষান্তরে, ছায়া উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়ে। অভাব কি জিনিস, সেটা বুঝবার ভাগ্য তার হয়নি। চঞ্চলা চপলা হরিনির মত ছুটোছুটি করেই বড় হয়েছে। যখন যেটা চেয়েছে, সেটা পেতে বেগ পেতে হয়নি মোটেও। প্রচন্ড রকম জেদি। পড়াশুনায় ততটা ভাল না হলেও রুপে, গুনে সবার কাছেই আকর্ষনিয়। শিমুলকে ভালবাসে একতরফা। প্রেমপত্র লিখে সাড়া না পেয়ে সামনা সামনি দ্বাড়িয়েও বলেছে ভালবাসি, কিন্তু সাড়া পায়নি। আকারে ইঙ্গিতে বহু ভাবে প্রকাশ করেছে ভালবাসার কথা, তাতেও কোন সারা মিলেনি। অথচ, প্রতিদিনই কত প্রেমপত্র পায় ছায়া। কত কাকুতি মিনতি। সেসবে মন গলেনা ছায়ার। সে শিমুলকেই চায়। যেকোন মূল্যে তার শিমুলকেই চাই। অথচ, শিমুলের ভ্রুক্ষেপ নেই।

শিমুলের ছোট বোন লতার সাথে ভাব ছায়ার। শিমুলদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াতের সুবিধার্থেই সে লতার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। যাতে কারনে অকারনে শিমুলদের বাড়িতে সব সময় যাওয়া যায়। শিমুলের ঘোর, পড়ার টেবিল, বিছানা সব নিজের হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে শিমুলের অগোচরে। শিমুল এসবের কিছুই জানেনা। শিমুল জানে মা কিম্বা ছোট বোন এগুলো করে রাখে। আস্তে আস্তে এসব কথা ফুলে ফেপে প্রচার পায় সারা গ্রামময়। ছায়া এগুলো গায়ে মাখেনা। বরং লোকের মুখে এসব ফুলানো ফাপানো কথা শুনতে খুব ভাল লাগে ছায়ার। সে তাদের কথায় সায় সুচক আচরন করে। আস্তে আস্তে এক সময় শিমুলের কানে যায় এসব কথা। প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে পাত্তা দিতে বাধ্য হয়। বিস্তারিত শুনে সে যেন আকাশ থেকে পরে! যা সত্য নয়, তাই সত্য হিসেবে প্রচার পাওয়ায় সে যার পর নাই আশ্চার্য হয়। সেদিন বাড়ি ফিরেই ছায়াকে দেখে তার ঘর থেকে বের হতে। ছায়ার পথ রোধ করে দ্বাড়িয়ে জবাব চায়, গ্রামের লোকের মুখের কথা সে শুনেছে কিনা জিজ্ঞেস করে। ছায়া অকপটে স্বিকার করে শুনেছে। শিমুল বলে, তার পরেও তুমি আমাদের বাড়িতে এসেছ? তোমার লজ্জা করেনা? ছায়া বলে, না, লজ্জাতো করেই না, বরং খুব ভালই লাগে তার কাছে। শিমুল রেগে যায় ছায়ার কথায়। রাগ সামাল দিতে না পেরে ছায়ার গালে একটা চড় মেরে বসে। ছায়ার লাল গালে শিমুলের পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ ষ্পস্ট করে ফুটে উঠে। চড় মারার পরে তার বোধদয় হয়, কাজটা তার উচিৎ হলনা। এতটুকু না করলেও পারত। ছায়া হতভম্বের ন্যায় দ্বাড়িয়ে থাকে একচুলও না নড়ে। দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। গালের চড়ে যতটুকু না ব্যাথা অনুভুত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ব্যাথা পেয়েছে তার অন্তরে। যাকে এত ভালবাসি, সে এটা করতে পারল? শিমুলও কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পরেছে। নিজেও সরে যেতে পারছেনা ঘটনার আকস্মিকতায়। দুজনে ঠাঁয় দ্বাড়িয়ে থাকে। তারপর খেয়াল করে ছায়া পরে যাচ্ছে। থাবা দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছায়াকে। জ্ঞান হারিয়েছে ছায়া। কোনমতে পাঁজাকোলে করে নিয়ে নিজের বিছানাতেই শুইয়ে দেয়। টেবিলের জগে রাখা খাবার পানি এনেই ছায়ার মুখে ছিটাতে থাকে।

দুর থেকে যারা এগুল অবলোকন করছিল, তারা ইতিমধ্যেই ঘটনা রসিয়ে রসিয়ে বলে। এক এক করে অনেকের কাছেই পৌছে যায় খবর। ছায়াদের বাড়ি থেকেও লোক এসেছে। শিমুল এতক্ষন খেয়াল করেনি যে তার উঠোন লোকে লোকারন্য হয়ে গেছে। জ্ঞান ফেরে ছায়ার। চেঁচামেচি চেল্লাচিল্লিতে তার মনে পরে যায় শিমুলের থাপ্পরের কথা। বিছানা থেকে উঠেই কি মনে করে শিমুলকে জড়িয়ে ধরে উঠোন ভর্তি মানুষের সামনে। বলে, আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা। বাঁচতে চাইওনা। হয়ে আমাকে ভালবাস, নয়ত থাপ্পরের পরিবর্তে সকলের সামনে আমাকে গলাটিপে মেরে ফেল। শিমুল, নিজের ভিতরে দারিদ্রতার দেয়ালে আড়াল করে রাখা ভালবাসার স্বরুপ আর লুকিয়ে রাখতে পারলনা। একটা মেয়ে যে সাহস দেখিয়েছে নিজের ভালবাসা প্রমান করতে, সেখানে সে পুরুষ হয়ে কেন পারবেনা? সেও বলে, আমিও ভালবাসি ছায়া, আমিও তোমাকে ছাড়া বাচবোনা।

রি রি ছি ছি যে যাই করুক। শিমুল ছায়ার সেই ভালবাসার স্বিকৃতি দিয়েছিল সবাই। এলাকায় এখন সেটা একটা দৃষ্টান্ত ভালবাসার।

সংগৃহিত

বিষয়: বিবিধ

১১১৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196414
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:০৮
ফেরারী মন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
196442
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১০
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
196483
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৩১
গরীবেরবন্ধু জুয়েলখান লিখেছেন : আপনারা পড়ার জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File