ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় , তবে সব ধর্মই থাকবে কিন্তু ইসলাম থাকবে না ...!!!

লিখেছেন লিখেছেন সিংহ শাবক ১৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৪১:৫৭ সন্ধ্যা

আমরা সবাই উদার হতে পছন্দ করি । তাই সকল ধর্মের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল । সকলে নিজ নিজ ধর্মীয় কার্যাবলী বা বিধান পালন করবে এটাইতো স্বাভাবিক নিয়ম । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি সমাজ বা একটি রাষ্ট্রের শান্তি শৃংখলা রক্ষার অন্যতম উপাদান । রাসূল (স) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র করেছিলেন । রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সংবিধান প্রনয়ন করলেন । সেটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান । সেখানেও সাম্প্রদায়িক সম্পৃতির কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে । ইসলামের ইতিহাসেও মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানগন অন্যান্য ধর্মের মানুষের প্রতি ছিলেন উদার । এইজন্য অনেকে রাসূলের (স) মদিনার সনদকে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বলে দাবি করেন (নাউযুবিল্লাহ) । যেহেতু তিনি সকল ধর্মের লোকদেরকে তাদের ধর্মকর্ম করতে বাঁধা দেননি । তারা যুক্তি দেন ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয় । বরং সকল ধর্ম তার নিজ নিজ আসন অলংকৃত করবে । কিন্তু বাস্তবিক অর্থেই কি তাই ?

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে এসওপিতে উল্লিখিত ড্রেস কোড এবং ফরমেশন কমান্ডার'স কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত আনুয়ায়ী "ইউনিফর্মের সাথে হিজাব ব্যবহার করা যাবে না" বলে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন । কেননা হিজাব তাদের ড্রেস কোড ও ইউনিফর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় । অথবা এমনো হতে পারে , যেহেতু বাংলাদেশ এখন সাংবিধানিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তাই এখানে ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি চলবে না । হিজাব একটি ধর্মের সেম্বল বহন করে বলে এটি ব্যবহার না করাই ভালো । একটি ধর্মের সেম্বল ব্যবহার করতে গেলে অন্য ধর্মগুলো অপমান বোধ করতে পারে । ঠিক এমনি একটি আদেশ জারির মাধ্যমে গতকাল মিশরীয় সরকার মাইকে ফজরের আজান নিষিদ্ধ করেছে এবং আইন অমান্যকারীকে বিনা বিচারে ১মাসের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে । মিশর যেহেতু এখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তাই ফজরের সময় মাইকে আজান হলে অন্যান্য ধর্মাবম্বী লোকদের ঘুমের বেঘাত ঘটতে পারে , তাই জনস্বার্থেই মাইকে আজান নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে সে দেশে আল ওয়াক্কাফ মন্ত্রী জানান ।

এর আগে মুসলিম বিশ্বের এক সময়ের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মডেল তুরস্কে উসমানী খিলাফতের পতনের পর কামাল পাশার নেতৃত্বাধীন সরকার সে দেশের মসজিদগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয় , আজান নিষিদ্ধ করে , প্রকাশ্যে নামাজ নিষিদ্ধ করে , দাঁড়ির উপর টেক্স আরোপ করে মোটকথা সকল ইসলামী অনুশাসনকে নিষিদ্ধ করে । হাজার হাজার হাজার আলেম ও ইসলামপন্থীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় । আর এসব করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার সুতা ধরে । অথচ সে সময় তুরস্কে অন্যান্য ধর্মের প্রতি কোন আঘাত করা হয়নি ।

ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ যদি ধর্মহীনতা না হয় । সকল ধর্ম যদি নিজ নিজ স্থানে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত থাকে তবে কেন শুধু এই ইসলাম নির্মূলে এহেন নেক্কারজনক আয়োজন ? তবে কি ইসলাম নির্মূল করাই ধর্মনিরপেক্ষতার মূলমন্ত্র ? যে কারণে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের জন্ম হয়েছে সেটিতো ইসলাম নয় । বরং ষোড়শ শতাব্দীতে খৃষ্টান পাদ্রীরা সাধারণ জনগণকে চার্চের দাস বানিয়ে নিয়েছিল । খৃষ্টধর্মের দোহাই দিয়ে জনগণের সম্পদ শোষণ করে এক একজন পাদ্রী সম্পদের পাহাড় গড়েছিল । সেই সময় জনগণ খৃষ্টান পাদ্রী ও চার্চের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং এহেন নিকৃষ্ট ধর্মীহীন একটি পৃথিবীতে বসবাস করার স্বপ্ন দেখে । ইসলামের ইতিহাসে এমন একটি উদাহরণ কি পাওয়া যাবে যে মুসলিম শাসকেরা ধর্মের দোহাই দিয়ে জনগণকে শোষণ করেছে অথবা অত্যাচারে জর্জরিত করেছে ? বরং ইসলাম সব সময়ই মজলুমের পাশে দাঁড়িয়েছে । শোষণ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে । স্থাপন করেছে ধর্মীয় সম্প্রীতির সুমহান নযির । তবে কেন আজ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে দমন করা হচ্ছে ?

ধরুন , আজ যদি হিন্দুদের ধুতি , পৈতা, উলুধ্বনি কিংবা শঙ্খের বাঁশি নিষিদ্ধ করা হত । খৃষ্টানদের ক্রস কিংবা আলখেল্লা নিষিদ্ধ করা হত তবে ঐ সকল ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারিরা কি বসে থাকতেন ? তারা এগুলোকে মোটেই সহজ ভাবে নিতেন না বরং ধর্মের উপর আগ্রাসন কিংবা সাম্রাজ্যবাদীদের কালো থাবা ইত্যাদি কথা বলে মিডিয়ার হট সিটকে আরো গরম করে ফেলতেন ।

সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আজ খুব ভালোভাবে চিন্তে হবে । ওদের তথাকথিত সুগন্ধি মাখানো উর্দির নিচে রয়েছে বিষ মাখানো ভয়ংকর বেয়োনেট । সেই বেয়োনেট দিয়েই সুকৌশলে আজ মুসলিমদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করছে । কিন্তু মুসলমানরা আজ সজ্ঞাহীন । তাদের রক্ত মাখানো শরীর তবুও সে ব্যথা অনুভব করছে না । কেননা অনেক আগেই তাকে পুঁজিবাদ , জাতীয়তাবাদ আর সমাজতন্ত্রবাদের রোমান্টিক ক্লোরফোম দিয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে । "ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার । ধর্ম প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত ব্যাপার ।" এ কথাগুলোকে আজ ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে হবে । ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কথাই হল সকল ধর্ম থাকবে কিন্তু ইসলাম থাকবে না । ইসলামকে নির্মূল করাই ওদের মূল এজেন্ডা ।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276166
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪০
শেখের পোলা লিখেছেন : সেটিই এদের মূল উদ্দেশ্য৷ ধন্যবাদ৷
276185
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:২১
সাদাচোখে লিখেছেন : মুসলিমরা যদি পৃথিবীটাকে ভালবেসে - ইভিলকে ফেইস করতে ভয় পায়, ফাইট করতে ভয় পায় - তথা আল্লাহর পথে মরে - আল্লাহর দিদার পেতে, আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে অনীহা বোধ করে - তবে শয়তান, দাজ্জাল ইত্যাদি পৃথিবী প্রেমী এন্টি মুসলিম স্বত্তার কি দরকার আছে - ঐ পৃথিবী প্রেমী মুসলিম কিংবা বিকৃত মুসলিম স্বত্তার জন্য হিন্দু বৌদ্ধ, খৃষ্টান এর বাহিরে আলাদা সুযোগ সুবিধা সংবলিত স্পেইস তৈরী করার, স্পেইস রাখার। মদীনা সনদ আলাদা ধর্ম ও আইডেন্টিটির স্বীকৃতি দেয় - কারন ধর্ম অনুসরনকারীরা ধর্ম ধারন করে নূন্যতম মুসলিমরা ধারন করতো।

যে মুসলিমরা আল্লাহর পরিবর্তে জনগনকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করে, যে মুসলিম নিজের নিরাপত্তা - জাতিসংগের নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে তুলে দেয়, যে মুসলিম সুদ, ঘুষ, জেনা, মদ, সমকামিতাকে বৈধ মনে করে কিংবা মেনে নেয় - ঠিক যেমন করে দুনিয়ার আর সব ধর্ম মেনে নিয়েছে। আবার যে মুসলিম উত্তোরাধিকার সম্পত্তির ভাগ অস্বীকার করে, তালাক দেয়া-নেয়াকে কঠিনতর করে, যুবকযুবতীকে বিয়ে করতে বা করাতে বাধা দেয়, নিরাপরাধ মানুষকে ফাসীতে ঝুলতে দেয়, শরীয়াকে নর্দমায় পেলে শামীম ওসমানটাইপ লোকদের করা আইনে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তবে সে মুসলমানের জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ, প্রগতির ধ্বংজ্জাধারী, ইসলাম বিদ্বেষীদের কাছে তাদের সেন্স এ - ঐ সব বাহ্যিক বিষয়ের আদৌ কি কোন গুরুত্ব থাকতে পারে, ভয়ের কোন কারন বলে মনে করাতে পারে, এবং আদৌ থাকার দরকার আছে কি?

আমাদের বুঝতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতা বা স্যেকুলারিজম পরিষ্কারভাবে যা বলতে চাইছে তা হল - স্রষ্টা - সৃষ্টির জীবনাচারে, নিয়ন্ত্রণে, শাসনে কোন ভূমিকা রাখার দরকার নেই - সুতরাং তারা স্রষ্টাকে মাইনাস করবেন। আর মুসলমানরা ও স্রষ্টার এই মাইনাস প্রক্রিয়াকে টেকনিক্যালী মেনে নিয়েছেন। না মানলে - পৃথিবীর কোন দ্বীপায়ী মানুষের অমন কিছু করার সহস শক্তি কিংবা ইচ্ছা কোন কালেই জন্মাতো না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File