ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেইশন, ব্লাসফেমি, শার্লি হেব্দো এবং ইসলামের অবস্থান - ৩য় পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২০ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৫২:০৭ সকাল

(কথাগুলো একটি ইংরেজি বক্তব্যের অনুবাদ। একজন সত্যানুসন্ধানী, ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে এগুলো যে কারো জানা থাকা প্রয়োজন)

তবে তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে (মুসলমানদেরকে আঘাত দেওয়ার জন্য) এটা করে। তারা এমনটি কেন ইচ্ছাকৃতভাবে করতে শুরু করেছে? কারণ নন-সুন্নী সালমান রুশদী এটা করেছিল। যা অনেকেই জানেনা! সে সুন্নী নয়। সালমান রুশদী সুন্নী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়! সে অন্য একটি দলের (হয়ে কাজ করছে)। অন্য আরেক জগতের! এই লোক, এই শয়তানই 'স্যাটানিক ভার্সেস' লিখেছিল। এটার পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এসেছিল কারণ, কারণ কিছু নন-সুন্নী নেতা সালমানকে রক্ষা করার জন্য 'ফতোয়া' দিয়েছিল! যদি ওই কথিত নেতার পক্ষ থেকে 'ফতোয়া' না আসত, ওই কথিত নেতা, যে নিজেকে মুসলিম বিশ্বের ‘নেতা’ বলে পরিচয় দেয়, একটি মুসলিম দেশের বাসিন্দা বলে দাবি করে, আমি তার নামটিও উল্লেখ করতে চাইনা, তো ওই নেতা 'ফতোয়া' দিয়েছিল যে সালমান রুশদিকে হত্যা করে ফেলো। সে এটা করেছিল কারন সে জানত যে ওই 'ফতোয়া'র মাধ্যমে সালমান রুশদি পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে সিকিউরিটি পাবে! এবং সেই 'নেতা'র কাছে সালমান রুশদি খুব প্রশংসনীয় ছিল! কারণ সালমান রুশদি মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা'র বিরুদ্ধে লিখেছিল। অথচ অনেক মানুষ এটা জানেনা।

'স্যাটানিক ভার্সেস'-এর পর যখন মুসলিম সম্প্রদায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে রাস্তায় নেমে এল, অধিকাংশ জায়গাতেই তারা একেবারে 'অনৈসলামিকভাবে' প্রতিক্রিয়া দেখাল। এখন, যারা ইউরোপে ইসলামবিরোধী শক্তি হিসেবে ছিল, প্রথমবারের মত তারা বুঝল; আমরা মুসলমানদের নবীর নামে কুৎসা রটিয়ে তাদেরকে উত্তেজিত করে অনেকটা 'পৈশাচিক' আনন্দ পেতে পারি! আপনি যদি ইতিহাস খুঁজে দেখেন তো আপনি দেখতে পাবেন যে ওই ঘটনার পর থেকেই মিডিয়াতে এটা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এরপর যে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটল তা হল, 'জিলেন্ডস-পোস্টেন' (Jyllands-Posten) নামে একটি ডেনিশ পত্রিকা, যেটা প্রকাশিত হয়েছে ২০০৫'এর সেপ্টেম্বরে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্টুন আঁকল। ফলে বিশ্বজুড়ে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়ে গেল। এর পর এই লোক, চার্লি হেব্দো; সে মূলত সেই ডেনিশ পত্রিকাটির সহযোগী ছিল। সে ওই পত্রিকাটি ছেড়ে দেয় এবং ফ্রান্সে চলে আসে। ফ্রান্সে সে এই 'শার্লি হেব্দো' পত্রিকাটি এবং আরো বেশ কিছু পত্রিকা শুরু করে। আরেকটি ম্যাগাজিন, 'হারাকিরি' (Hara-Kiri) নাম যেটির, একটি ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন; ওই পত্রিকাটির জন্যও সে কাজ করেছে। ওই পত্রিকা থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ সে ফ্রান্সের একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কার্টুন এঁকেছিল! তো, ফ্রান্সের একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কার্টুন আঁকার কারণে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হল! ফ্রান্সের সংস্কৃতিতে তাদের ধর্মীয় নেতাদের চেয়ে তাদের রাজনৈতিক নেতাগণ কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ? তারা শার্লিকে ভাগিয়ে দিল, কারণ এখানে নিশ্চিত ব্লাসফেমি হয়েছে?

এই ঘটনার পর ২০০৬-এ, শার্লি প্রথমবারের মত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্টুন আঁকে। সেই 'জিলেন্ডস-পোস্টেন'-এর পর, সে একই কার্টুন পুনরায় প্রডিউস করে এবং মুদ্রণ করে। তারপর সে ২০০৯-এ এটা আবার ছাপায়। আর তখন তার অফিসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সে এটা ২০১১তে করেছে, সে এটা ২০১২তে করেছে, এবং বর্তমানে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কার্টুন আঁকা ছাড়া আর কিছুই করছিলনা- মাত্র সর্বশেষ দু'টো কার্টুন ছাড়া।

হঠাৎ সে বিশ্বসম্প্রদায়ের একটি নিশ্চিত সূত্র থেকে যা অনুধাবন করল, ফ্রান্স ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটি অনুকুল অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে! তারা (ফ্রান্সের নেতৃবৃন্দ) বলছিল যে, আমরা ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মেনে নিতে যাচ্ছি! ফলে এটা বিশ্বাস করা যায়, ইসরাঈলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফ্রান্সকে বলতে চেয়েছে যে, এ ব্যপারটি ফ্রান্সের পক্ষে ভাল হবেনা। আর এর কিছুদিনের মধ্যেই এই 'ঘটনা'টি ঘটল! ঠিক আছে, এটা 'হয়তো' মুসলমানরাই ঘটিয়েছে। আমি নিশ্চিত জানিনা! মেনে নিলাম মুসলমানরাই এটা ঘটিয়েছে। কিন্তু মুসলমানরাই যদি এটা ঘটিয়ে থাকে তো ইসলাম এ ব্যপারে কী বলে? উত্তর হল; ইসলাম এটাকে সমর্থন করেনা। আইন নিজের হাতে নেওয়া এবং এ ধরণের দুস্কর্মাদের হত্যা করার জন্য আক্রমণ করাটা ইসলাম সমর্থন করেনা। সাধারণ মানুষ এই আক্রমণের জন্য তাদের হাতে আইন তুলে নিতে পারেনা। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে এসকল 'সাংবাদিক'দের বিরুদ্ধে আক্রমণ করাকে আমি তিরস্কার করি। আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ইসলামের অবস্থানটি কী? একজন মুসলিম হিসেবে আমি এসকল 'সাংবাদিক'দের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে তিরস্কার করছি। কিন্তু ওই সকল 'ক্রিমিনাল সাংবাদিক'দের জন্য আমার কোনো সহানুভূতি বা দুঃখ নেই- যারা আমার নবীর নগ্ন ছবি এঁকেছে। আমার কোনো সমবেদনা নেই। দেখুন, আমি আবারো বলছি, ওই অপরাধকে আমি কোনোভাবেই সমর্থন করছিনা। তবে আমার কোনো দুঃখ নেই তাদের মরে যাওয়ার কারণে। কারণ তারা আমার প্রাণের নবীর অশ্লীল ছবি প্রডিউস করার দুঃসাহস দেখিয়েছে! যে নবী পৃথিবীর প্রত্যেকে মুসলমানের কাছে তাদের পিতামাতা, পৃথিবীর আর সবাই, এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়! ((চলবে))

বিষয়: বিবিধ

১০৪৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300898
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:৩৯
হতভাগা লিখেছেন : যে সব সাংবাদিক এসব গ্যান্জাম লাগানো নিউজ বানিয়ে ছাপে , সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে - তাদেরকে মেরে ফেলাও তাদেরকে দয়া দেখানোর মতই ।
300901
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১৮
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : 'তাদেরকে মেরে ফেলাও তাদেরকে দয়া দেখানোর মতই" কিনা আমি নিশ্চিত নই! তবে ওদের (সাংবাদিকদের) বাড়াবাড়িটা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার মত। তাই ওদেরকে উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হত। সেটা একটু বেকায়দায় হয়ে গেছে আর কি!
300903
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:৫১
shaidur rahman siddik লিখেছেন : হায়রে সাংবাদিক
২১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫৪
243523
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : মিথ্যা সাংবাদিকতা বর্তমান পৃথিবীর সৌন্দর্য!!!
300991
২০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০৮
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : শাস্তি ঠিকই আছে, তবে হেক্মতের ব্যাবহার হয়নি।
২১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫৪
243522
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন। এতটা ওপেন এগ্রেসিভ না হওয়াটাই যথার্থ ছিল।
301049
২১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৪:০২
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম। আমি ঠিক জানিনা আপনি কার লিখা অনুবাদ করছেন? আমি দুঃখিত আপনার ৩টি লিখায় পড়ে আমার মনে হল - এ মতামতটি আপনার অনুবাদ এর পাঠকের বিচার বিবেচনার জন্য থাকা উচিত।

আমার জানা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় জনগনের পক্ষে, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমকে জনসন্মুখে উন্মুক্ত করে মুক্ত আলোচনার পরিবেশ নিশ্চিত কল্পে - ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশান ও ফ্রিডম অব স্পীচ এর অবতারনা হয়েছে এবং জনগনের স্বার্থেই এ আইন মূলতঃ কন্সটিটিউশান এ লিপিবদ্ধ হয়েছে। পরবর্তীতে সেকুলারিস্ট রা ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে কিংবা বলে এ আইনের প্রটেকশান চাইলে মানুষ ক্ষুদ্ধ হয় এবং তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্লাসফেমী/মানুষের সেনসিটিভিটিকে প্রটেক্ট করার জন্য 'ল' তৈরী হয়।

সালমান রূশদীর বিষয়টির সাথে খোমেনীর ফতোয়া ও তার মাধ্যমে এ ধারার বিস্তার - এমন ইক্যুয়েশানটি আমার কাছে বড় আনাড়ী মনে হয়েছে - যদি লিখক - সত্যিকার মুসলিম হয়। আর লিখক মুসলিম না হলে আমি বলবো - ভদ্রলোক গত ৪/৫ বছর জুদায়ো খৃষ্টান দের চলমান কার্যক্রমের অন্যতম একটি তথা শিয়া সুন্নী গৃহযুদ্ধ উসকে দেবার নিমিত্তে পারস্পরিক দোষারোপ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়েছেন এবং সে সাথে মূল বিষয় হতে দৃষ্টি সরাতে চেয়েছেন। সে সাথে সপ্ট পয়েজন এর মত করে মুসলমানদের মাথায় এটা ডুকাতে চাইলেন যে - মুসলিমরা অমন অমুসলিমের মত কাজ করেছে - তথা খুন করেছে।

এ সংশ্লিষ্ট পুরো খবর পড়লে, ভিডিও দেখলে - যে কোন বিচার বিশ্লেষন করতে সক্ষম মানুষ জানবে - এটা ৯/১১ এর মত আর একটি ফলস ফ্লাগ অপারেশান - যার সন্মুখ বলী হচ্ছে প্রাকটিসিং মুসলিমরা - আর আলটিমেট গেইনার হচ্ছে জুদায়োখৃষ্টান ইলোমিনাটি রা।

এ্যানীওয়ে - আপনার প্রচেষ্টার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
301067
২১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫৩
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : আপনার সুন্দর সমালোচনা ও উদার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে একটি ব্যপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটি হল, ইতিহাস বর্ণনায় আমরা প্রত্যেকেই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। যেমন আমার লেখার মূল বক্তা তার মত করে একটি ইতিহাস সাজিয়েছেন! (যদিও তার কথাগুলোয় আমার কিছুটা মতবিরোধ আছে) আবার আপনিও আপনার জায়গা থেকে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। ক্ষমা করবেন, আমি আপনাকে ব্লেইম করছিনা। তবে বাস্তবতা হল, পানি এবং ইতিহাসের মাঝে সবচেয়ে দারুণ মিল হল, তারা যখন যে পাত্রে অবস্থান করে তার রঙই ধারণ করে। সর্বোপরি সালমান রুশদির পর থেকে এই মিসডিড থেকে শুরু হয়নি। সম্ভবত এটা মিডিয়াতে ব্যপক আকার ধারণ করেছে সালমানের পর। যাই হোক, আপনার কথাগুলো ভাল লেগেছে। সুন্দর ও তাত্ত্বিক আলোচনা সবসময় গ্রহণীয়। আপনার কথাগুলোও জেনে রাখলাম। ভালো থাকুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File