মহররম মাস

লিখেছেন লিখেছেন নিশা৩ ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৪৯:৫৮ রাত

আইরিশ এক সহকর্মী আমাকে দেখে বাংলায় বলল," শুভ নববর্ষ।" জানতে চাইলাম, "কেন শুভনববর্ষ ?" মনে ভাবলাম এখন তো বৈশাখ মাস না। সে বলল, "ক্যলেন্ডারে দেখেছি, আরবী বছরের শুরু। কি যেন মাসটির নাম? ম--ম--মর--" বল্লাম, "মহররম। অনেক ধন্যবাদ।"

মহররম মাস বলতে আশুরার রোজা রাখা আর কিছু গুরুত্বপূর্ন ইতিহাসকেই জানি। এবারে ফেসবুকের সুবাদে এ মাস সম্পর্কে ভিন্ন কিছু জানতে পারলাম। যেমন, এ শোকের মাসে বিয়ে-শাদি বা ভ্রমনের মত আনন্দের কোন কাজ করা যাবে না। সেই সাথে জোর জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে রাসুল পাক (সা) এর সাহাবাদের বিভিন্ন অন্যায় সম্পর্কে। সঠিক ইতিহাসের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে যা হবে তাদের প্রতি আরোপিত ভয়াবহ অপবাদ। দেখলাম হাদিসসমূহ স্বীকার করতে ভীষন অনিহা। অথচ মজার ব্যপার হলো, যখন কোন হাদিস দ্বারা লাভবান হচ্ছে বা নিজস্ব মতের পক্ষে যাচ্ছে তখন সেটাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ যেন সূরা বাকারার ঐ অংশটুকু মনে করিয়ে দেয় যেখানে আমাদের রব বলেছেন, "তাহলে কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের উপর ঈমান আনছ এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছ?"

কিছু লেখা পড়ে জানলাম "রাসুল (সা) জ্ঞানের শহর আর আলি (রা) তার দরজা" হাদিসটি খুব গুরুত্বপূর্ন।

হাদিসটি সম্পর্কে জানতে তাকের বইগুলোর দ্বারস্থ হলাম। লেখক লিখেছেন সিহাহ সিত্তার মধ্যে একমাত্র ইমাম তিরমিযি (রা) এই হাদিসটি গ্রহন করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে এটি একটি 'গারীব' ও 'মুনকার' হাদিস। গারীব অর্থ এটির সনদ বা বর্ননা পরস্পরায় কোন এক পর্যায়ে বর্ননাকারি ছিলেন একজন। আর 'মুনকার' হচ্ছে এটি গারীব হওয়ার সাথে সাথে এর রাবী বা বর্ননাকারিও দূর্বল।

এখন এই দূর্বল হাদিসের উপর ভিত্তি করেই কি আমরা দ্বীনের যাবতীয় বিধি-বিধান একমাত্র আলি (রা) এর মাধ্যমেই গ্রহন করব আর অন্যান্য সাহাবাদেরকে ধর্তব্যর মধ্যেই আনবনা? যদি তা করি তাহলে কি আমরা জ্ঞানের এক বিশাল অংশ থেকে বন্চিত হব না যা অন্যান্য সাহাবারা বর্ননা করেছেন?

নবী (সা) বেঁচে থাকা অবস্থায় অনেক সাহাবাকে দ্বীন প্রচারের জন্য ও বিভিন্ন প্রকার দায়িত্ব দিয়ে নানা স্থানে পাঠিয়েছেন। দ্বীনের জ্ঞান ছাড়া যে দায়িত্বগুলো পালন করা অসম্ভব ছিল। এসব সাহাবারা কি রাসুল (স) এর না, বরং আলি (রা) এর ছাত্র ছিলেন?

রাসূলে পাক (সা) এর জীবনিতে দেখা যায় তার কাছে কেউ কিছু জানতে চাইলে সরাসরি তাঁকে প্রশ্ন করত। আলী (রা) কে মাধ্যম করে নয়।

মূলত: নবী (সা) তার বিভিন্ন সাহাবাকে বিভিন্ন বিশেষনে বিষেশায়িত করেছেন। যেমন: যায়েদ ইবনে সাবিত সম্পর্কে বলেছেন মীরাস সম্বন্ধে তিনিই সবচেয়ে পারদর্শী। তিঁনি (সা) বলেছেন, "আমার উম্মতের মধ্য থেকে বিনা পরামর্শে যদি কাউকে আমীর বানানোর প্রয়োজন হতো তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে আমি আমীর বানাতাম। "

আলী (রা) তার বক্তৃতায় বলেছেন, "রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর লোকদের মধ্য সর্বোত্তম হচ্ছেন আবু বকর তারপর উমর। বর্ননাকারী আব্দ খায়ের হামদানিকে জিজ্ঞস করা হয়েছিল, "এ বর্ননা কি আপনি তাঁর (আলী রা) নিজ মুখে শুনেছেন? জবাবে তিনি বলেন: যদি আমি এগুলো তাঁর মূখ থেকে নিজের কানে শুনে না থাকি তবে আমার কান কালা হয়ে যাক।" মুসনাদে আহমাদ। আর এই ধরনের কথাই আলী (রা) এর বিশাল ব্যক্তিত্ব এর সাথে মিলে যায়।

আলী (রা) সহ অন্যান্য সাহাবাগন সকলেই আমাদের নিকট সম্মানিত। একজনকে বেশি সম্মানিত করতে গিয়ে অন্যদের ছোট করার নীতি কখনই কল্যানকর নয়। এরপরও ঐ দূর্বল হাদিসটি সম্পর্কে যদি কেউ জিদ ধরে তবে বলা যায় যে, আলী (রা) শহরের দরজাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম দরজা। এমন নয় যে, শহরের মাত্র একটিই দরজা এবং তা হচ্ছেন আলী (রা)। নবী করীম (সা) এর কথা ও কাজের সাথে এই ব্যখ্যাটি সামন্জস্যশীল।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346883
২২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৮
অপি বাইদান লিখেছেন : নবী মোহাম্মদের রোপন করা ইসলামী বিষবৃক্ষ তার নিজ পরিবারকেও রেহাই দেয় নি।
346887
২২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:২১
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


যথার্থ বলেছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
২৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৫২
288071
নিশা৩ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বই থেকে ধার করে লিখেছি। শুকরিয়া সময় নিয়ে পড়ার জন্য এবং মন্তব্যর জন্য।
346992
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:১৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম আপু!
অনেকদিন পর এলেন! Love Struck

সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থবহ পোস্টটি পড়ে চমৎকার মেসেজটি পেয়ে খুব ভালো লাগলো! সুন্দর ব্যাখ্যার জন্য শুকরিয়া! জাযাকিল্লাহু খাইর! Good Luck Rose Praying
৩০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
288787
নিশা৩ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!অনেক মিস করেছি আপনাদের!
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যর জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File