ডঃ পিয়াস করিমঃ ধুমকেতুর আলো ========================

লিখেছেন লিখেছেন ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১১:০৯ রাত

অনেক দিন পর আজ সকালে টিভির রিমোর্ট টিপলাম আর ব্রেকিং নিউজ হটাৎ করেই চোখে ঝাপসা লেগে গেল এটা কি সত্য?

পিয়াস করিম নেই। পুরা দিনটাই এক কষ্টের আচ্ছন্নতা বোধ করছি।

সম্ভবত ২০১২ সালের দিকে পিয়াস করিম স্যারকে প্রথম দেখি টিভিতে হয়তোবা তার আগ থেকেই আসেন। প্রথম দিকে তাকে অনেক শাই মনে হত কিন্ত যুক্তি দিতেন তীক্ষ্ণ। ক্রমান্বয়ে তিনি হয়ে উঠেন যুক্তি এবং উদারতার মাস্টার রুপে।

আজীবন মার্ক্সবাদী সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন থাকার কারনে এবং একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ধারন করার ফলে হয়ে উঠেন উদারনৈতিক গনতন্ত্রী। গণতন্ত্র মানে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন এবং সামাজিক বন্ধনের বৃহত্তম রুপ তা তিনি ধারন করতেন প্রাকটিস করতেন এবং তার পক্ষে অবস্থান নিতেন। সেই জন্য তাকে বিএনপি-জামায়াতের লোক ভেবে নিত অনেকেই। আসলে তিনি যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেটা নীতির অবস্থান। শাহবাগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের সমস্থ বুদ্ধিজীবির চেহারার ভয়াবহ স্বৈরাচারী কদর্য রুপ ফুটে উঠে, ঠিক এই সময়েই মাহমুদুর রহমান, ফরহাদ মাজহার, ডঃ পিয়াস করিম, ডঃ দিলারা চৌধুরী, ডঃ আমেনা মহসীন উদারনৈতিক গনতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচন্ড ফ্যাসিবাদের সম্মুখীন হন। যার ফলে টকশোতে তিনি নিষিদ্ধ হয়ে যান। নিষিদ্ধতা থেকে বেড়িয়ে এসে প্রথম চ্যানেল আইতে যখন তিনি কথা বলেন মনে হচ্ছিল একজন ভীত, আহত, অভিমানী শিশু কথা বলছেন। বুকের ভিতর কষ্ট অনুভব করি এই মানুষটার প্রতি।

আমাদের সমাজে যারা সবচেয়ে স্বৈরাচারী সে সবচেয়ে গনতন্ত্রের কথা বলে, যে সবচেয়ে বড় দূর্নীতিবাজ সে সুশাসনের কথা বলে যে ভারতের দালাল সে আরেকজনকে অন্য কিছুর দালাল বলে চাপিয়ে রাখার যে হিপোক্রেটিক কালচার আছে ডঃ পিয়াস করিম সেটা থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। তিনি যা বলতেন তা ধারন করতেন এবং ব্যক্তিজীবনে তার চর্চ্চা করতেন। এই বিরল মানুষের অভাব কি ঘুচবে?

২০১৩ সালে কুরবানী ঈদ পরবর্তী ১৮ দলের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের বুদ্ধিজীবি সমাবেশে আমি গিয়েছিলাম। অসাধারন এই বাগ্মী পুরা সম্মেলন মতিয়ে রেখেছিলেন। ম্যাডামের বাইরে তিনি যে সবচেয়ে পপুলার তা তিনি প্রমান করেছিলেন। কিন্তু আমি অবাক হলাম তিনি কেন গেলেন এই সমাবেশে তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মানে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রাম আর সেই সংগ্রামে তিনি আছেন বলেই বিএনপির সাথে আছেন।

এই আদর্শবান বুদ্ধিজীবি যদি বেঁচে থাকতেন এবং বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসত তাহলে সম্ভবত বিএনপিও তার কথার সবচেয়ে বড় টার্গেট হতেন। কারন সুশাসন, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নের নীতির ক্ষেত্রে তিনি আপোষ করতেন না, যা তিনি অনেকবারই বলেছেন।

একটা হিপোক্রেটিক সমাজে প্রফেসর ডঃ পিয়াস করিম ছিলেন এক ব্যতিক্রম এবং বিড়ল মানুষ। যিনি ধুমকেতুর মত এসে আলোকচ্ছটা ছড়িয়েছিলেন যা কুৎসিত অন্ধকারের গায়ে শুধু স্পর্শই দিয়েছে কিন্তু আলোকিত করতে পারে নি। আরো পিয়াস করিম কি আসবে আমাদের সমাজে তার আলোকচ্ছটাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে?

অসংখ্য ডঃ পিয়াস করিমের অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশ...!!!!!

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

274049
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ

আল্লাহতায়ালা তাঁকে ক্ষমা করুন ও জান্নাতনসীব করুন
এবং
তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে পারলৌকিক কল্যানের পথে পরিচালিত করুন
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২২
218010
ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট লিখেছেন : আমিন
274174
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০০
জোনাকি লিখেছেন : ইন্নালিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। Sad
১৭ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
219157
ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট লিখেছেন : ইন্নালিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
274250
১৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : যিনি ধুমকেতুর মত এসে আলোকচ্ছটা ছড়িয়েছিলেন যা কুৎসিত অন্ধকারের গায়ে শুধু স্পর্শই দিয়েছে কিন্তু আলোকিত করতে পারে নি।
একমত হয়ে বলছি - তিনি স্পর্শই করেননি বরং কিছু মানুষের জন্য অবশ্যই কিছু রেখে গেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
১৭ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
219158
ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File