ইসলামি বই পড়া

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৬:১৯ দুপুর



ইসলামি বই পড়া

আল-কুর’আনের প্রথম যে শব্দটি অবতীর্ণ হয়েছিল সেটা হচ্ছে “পড়ো”—একটা আদেশমূলক ক্রিয়াপদ। প্রথমদিকের আয়াতগুলোতে শব্দটি দুবার এসেছে। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল-কুর’আন হচ্ছে মানবজাতির কাছে পাঠানো সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ঐশীগ্রন্থ। আর সেই ঐশী সত্ত্বাকে বোঝার জন্য, জানার জন্য, তাঁর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রথম যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে “পড়ো”। জ্ঞান অর্জনের চাবিকাঠি হচ্ছে বই পড়া। এতে স্রষ্টা আর তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হয়। এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় যে, “কুর’আন” শব্দটাও যে-মূল শব্দ থেকে এসেছে তার অর্থ পড়া, পুনরাবৃত্তি করা বা আবৃত্তি করা। কাজেই সঠিক ইসলামিক বুঝ অনুযায়ী শুধু পড়াটাও হতে পারে এক ধরনের ‘ইবাদাত।

আল-কুর’আনের অনেকগুলো নামের মধ্যে একটি হচ্ছে “আল-কিতাব” বা বই। প্রথম অবতীর্ণকৃত শব্দের সাপেক্ষে যদি এই নামের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের জ্ঞানসংক্রান্ত ভিত্তিই হচ্ছে পড়াশোনা করা। সবধরনের জ্ঞান অর্জন, সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য এ এক ঐশী আদেশ। বই একদিকে যেমন জ্ঞানের উৎস, অন্যদিকে জ্ঞান সংরক্ষণের প্রাথমিক জায়গা। বই পড়ার মাধ্যমে উন্মোচিত হয় জ্ঞানের নতুন দিগন্ত।

আমার মূল কথা হচ্ছে অধিকাংশ মুসলিমদের কাছে বই পড়া আজ এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। বইয়ের সাথে সবধরনের সংযোগ যেন আজ মুমূর্ষ। গোটা মুসলিম বিশ্বে খুব কম পরিমাণ লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে বইয়ের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে। অথচ ইসলামি সভ্যতাজুড়ে দেখা যায় বই এবং বই পড়াকে ইসলাম কত সম্মানিত আর মর্যাদার উচ্চ আসনই না দিয়েছে। এর স্বকীয়তা এখানেই যে বই ও বই প্রকাশনার সঙ্গে সাধারণ জনগণের ছিল সুশৃঙ্খলবদ্ধ সংযোগ। ফ্রান্য রনসেনথাল তাঁর “Knowledge Triumphant: The Concept of Knowledge in Medieval Islam” বইতে লিখেছেন: “জ্ঞানের ধারণা ইসলামে অর্জন করেছিল অনন্য এক সাফল্য।” অতীতের সেই সাফল্য ছিল যথাযথ। আর এই সাফল্য অর্জন হয়েছিল অনবরত বইয়ের মধ্যে বুঁদ হয়ে থেকে এবং বৈচিত্রময় রকমারি সব বই থেকে স্বাদ নেওয়ার মাধ্যমে। যেসব বইয়ের মধ্যে এমন অনেক বইও ছিল যেগুলো ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বিপরীত।

অনেকে হয়তো ইন্টারনেটের আবির্ভাব, নিত্যনতুন যোগাযোগ পণ্য এবং সংক্ষিপ্ত ভাষা ব্যবহারের প্রবণতাকে এজন্য দায়ী করবেন। হ্যাঁ, কথাটা একটা পর্যায় পর্যন্ত সঠিক। কিন্তু মূল সমস্যা আরও গভীরে। আর সেটার শুরু ইন্টারনেট আবির্ভাবেরও আগে। বইয়ের সাথে সংযোগ হারানো, এবং পরিণতিতে বই পড়াই ছেড়ে দেওয়া—এধরনের প্রবণতার শুরু আরও আগে, কম করে হলেও ১৮ শতকের দিকে। আর এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান।

এর পেছনে বহু কারণ আছে। যেমন: অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামরিক ও কলাকৌশলগত জ্ঞানের উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া, অনুদান কমে যাওয়া। তবে আমার মতে অন্যতম কারণ হচ্ছে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে যাওয়া। কেননা ইসলামি সমাজে এগুলোই ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক মেরুদণ্ড। সমাজের প্রতিটি কোণায় কোণায় ‘আলিম, শিক্ষক ও শিক্ষণ পৌঁছে দেওয়ার মূল চালিকাশক্তি ছিল এই প্রতিষ্ঠানগুলো। ওয়াকফের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে দেখা যায় কেন্দ্রীয় সরকার একসময় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছিল এবং ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিণত করেছিল এই কারণে যে, যাতে ইতিমধ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে রাষ্ট্র-আয় চুরি করার লক্ষ্যে এগুলোকে উদ্বৃত্ত হিসেবে তুলে ধরা হলো এবং যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের দুর্নীতির জন্য অর্থের জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলো এসব ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

একটি সমাজের অগ্রগতি ও উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে পড়া। না-পড়লে সমাজ থেমে যাবে। হবে অবনতি। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে পড়ার ব্যাপারটাকে মুসলিমরা সামগ্রিকভাবে পরিহার করা শুরু করেছে। সবধরনের জ্ঞান এখন সীমিত করে ফেলা হয়েছে ডিভিডি, লাইভ স্ট্রিমিং আর ইউটিউব লেকচারের মধ্যে। আমাদের সমাজ যেন ‘লাইক’ আর ‘শেয়ার’-এর মধ্যে বন্দি হয়ে গেছে। এর সাথে বই পড়া এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে জ্ঞান অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। উপরোক্ত জিনিসগুলোর আবেদন অবশ্যই আছে। বিশেষ করে সমাজে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে সেগুলোর ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগানো এবং মনযোগ আকর্ষণের জন্য এগুলোর দরকার আছে। কিন্তু সমাজের জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তির জন্য বই পড়ার সংস্কৃতির কোনো বিকল্প এগুলো হতে পারে না।

আজ তাই এটা শুনতে আর আশ্চর্য লাগবে না যে, পৃথিবীর শীর্ষ ৫৬ বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটাই মুসলিম বিশ্বে অবস্থিত নয়। আল-কুর’আন, বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর বাইরে অন্যান্য শীর্ষ বিক্রিত ও বহুল পঠিত বইয়ের কোনোটাই মুসলিম বিশ্বের নয় বা কোনো মুসলিম লেখক লেখেননি। নিজের বিশেষায়িত ক্ষেত্রের বাইরে সাধারণ পড়াশোনার চল নেই বললেই চলে। বই পড়তে অনীহা মুসলিম বিশ্বে বই পড়া নিয়ে মহাসংকটের দিকেই ইঙ্গিত করে। আমাদের সমাজে যে অজ্ঞতা গেঁড়ে বসছে তারও টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজন এখন উপরোক্ত সমস্যাগুলোর বাঁক ঘুরিয়ে দেওয়া।

বই পড়া নিয়ে অনীহা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন আলোকিত নেতৃত্ব। বহুমাত্রিক এবং বহুবছরব্যাপী পরিকল্পনা। রিডিং ক্লাব বা বই-পড়া কর্মসূচির মাধ্যমে এটা শুরু হতে পারে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বই-পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। আর এগুলোর তত্ত্বাবধানে থাকতে পারে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। এছাড়া বই প্রকাশনা এবং লেখকদের পেছনে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আয়োজন করা যেতে পারে বই পড়া নিয়ে বিভিন্ন ফেস্টিভাল। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত যে ধারা চলে আসছে: ‘চাকুরির জন্য ডিগ্রি অর্জন—এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন বই পড়া ও বোঝার দিকে মনোযোগ দেয় সেই লক্ষ্য অর্জনে পরিবর্তন আনতে হবে।

“পড়ো” এ আদেশটি জীবনভর জ্ঞান অর্জনের জন্য আদেশ। মুসলিম বিশ্বে পুনরায় বই পড়ার সংস্কৃতি চালুর প্রণোদনা।

***আসুন দেখে নিই কিছু তাফসীর গ্রন্থ, হাদীস গ্রন্থের ও ইসলামী আইন শাস্ত্রের নাম----

***কতিপয় তাফসীর গ্রন্থের নাম***

১। জামেউত তাফসীর *লেখকঃ নবাব কুতুব উদ্দীন খান (রঃ)

২ । তাফসীরে আহমদী*লেখকঃমোল্লা জিউন (রঃ)

৩। তাফসীরে ফতহুল মান্নান*লেখকঃমাওলানা আবদুল হক হক্কানী (রঃ)

৪ । তাফসীরে ফাতহুল বয়ান*লেখকঃ নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রঃ)

৫। তাফসীরে ফাতহুল খাইর*লেখকঃশাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রঃ)

৬ । তাফসীরে নেজামী*লেখকঃশেখ নিজামুদ্দীন (রঃ)।

৭। তাফসীরে মোহাম্মদী*লেখকঃ(রঃ)।শেখ হাসান মোহাম্মদ গুজরাট (রঃ)

৮। তাফসীরে আব্দদূরুল মনসুর*লেখকঃআল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রঃ)

৯। তাফসীরে আহকামুল কোরআন লিল জাসসাস*লেখকঃআল্লামা আবু বকর জাসসাস রাজী (রঃ)

১০। তাফসীরে কুরতুবী*লেখকঃআল্লামা আবু আবদুল্লাহ ইবনে আহম্মদ কুরতুবী (রঃ)

১১ । তাফসীরে মাজহারী*লেখকঃআল্লামা কাজী সানাউল্লা পানিপথী (রঃ)।

১২। তাফসীরে আল বাহরুল মুহীত*লেখকঃআল্লামা আবু হাইয়্যান গারনাতী আন্দালুসী (রঃ)।

১৩। তাফসীরে ফি জিলালিল কুরআন*লেখকঃসাইয়েদ কুতুব শহীদ (মিশর)(রঃ)

১৪। তাফসীরে রুহুল মায়ানী*লেখকঃআল্লামা আলুসি (রঃ)

১৫। তাফসীরে রুহুল বয়ান*লেখকঃশায়খ ইসমাইল হাক্কী (রঃ)

১৬।তাফসীরে ফতহুল কাদীর*লেখকঃআল্লামা শওকানী (রঃ)

১৭। আল এস্তেগনা ফি উলুমিল কোরাআন*লেখকঃআল্লামা মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আহমদ আলী (রঃ)

১৮। তাফসীরে বায়জাবী*লেখকঃআল্লামা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে মুহাম্মদ বায়জাবী (রঃ)

১৯। তাফসীরে জালালাইন*লেখকঃআল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রঃ)।

২০। তাফসীরে তাবারী*লেখকঃআল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী (রঃ)।।

২১। তাফসীরে আলিমুত তানজীল*লেখকঃআল্লামা মুহিউদ সুন্নাহ বাগবী (রঃ)

২২। তাফসীরে কাশশাফ*লেখকঃআল্লামা জারুল্লাহ জামাখশরী (রঃ)

২৩। তাফসীরে কবীর*লেখকঃ ইমাম ফখরুদ্দীন (রঃ)।

২৪। তাফসীরে বয়নুল কোরআন*লেখকঃকাজী আবদুশ শহীদ (রঃ)

২৫। তাফসীরে মাদারেকৃত তানজীল*লেখকঃআল্লামা হাফেজ উদ্দিন নাসাফী (রঃ)।

২৬। তাফসীরে খাজিন*লেখকঃআল্লামা আলাউদ্দিন বাগদাদী (রঃ)

২৭। তাফসীরে ইবনে কাসীর*লেখকঃআল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ)

২৮। তাফসীরে মা'রেফুল কোরআন*লেখকঃমুফতি মোহাম্মদ শফী (রঃ)

২৯। তাফসীরে আশরাফী* লেখকঃমাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রঃ)

৩০। তাফসীরে তাফহীমুল কোরআন*লেখকঃআল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রঃ)।

৩১। তাফসীরে হক্কানী*লেখকঃমাওলানা সামসুল হক (রঃ)

৩২। তাফসীরে নূরুল কোরআন*লেখকঃমাওলানা সামসুল হক (রঃ)।

***কতিপয় হাদীস গ্রন্থের নাম***

১ । সহী বুখারী শরীফ

২। সহী মুসলিম শরীফ

৩। সহী আবু দাউদ শরীফ

৪ । সহী তিরমিজী শরীফ

৫ । সহী নাসায়ী শরীফ

৬ । সহী ইবনে মাজাহ শরীফ

৭। মুয়াত্তা ইমাম মালেক

৮। সুনানে দারেমী

৯। মুসনাদে ইমাম আহমদ

১০ । মেশকাত শরীফ

১১ । মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ

১২। মুসান্নাফে আবদুর রাজাক

১৩। মুসনাদে তায়ালুসী

১৪ । মুসনাদে আবদ ইবনে হােমাইদ

১৫ । তাব্বারানী

১৬। ইবনে কানে

১৭। মুসনাদে আবু ইয়ালা

১৮। বায়হাকী

১৯। মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ

২০। সুনানে কুবরা

২১ । কানযোল ওম্মাল

২২। ইবনে খোযায়মা

২৩ ৷ দায়লামী

২৪ । দালায়েলুন নবুয়্যত

২৫। শো আবুল ঈমান

২৬। এ’লাউন সুনান

২৭। ইবনে হিব্বান

২৮। আল মুস্তাদরাক

২৯ ।।আল মুখতারাহ

৩০। আল মুনতাকা

৩১ । সহী আৰু আওয়ানাহ

৩২। ইবনে শাহীন

***কতিপয় ইসলামী আইন শাস্ত্রের নাম***

১। ফিকহে হানাফী

২ । মেরকাত

৩। ফিকহে মালোকী

৪ । ফিকহে শাফেয়ী

৫। ফিকহে আহম্মদ ইবনে হাম্বল

৬ । ফতোয়ায়ে আলমগীরি

৭ । ফতোয়ায়ে শামী

৮। ফতোয়ায়ে কাজী খান

৯ । ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া

১০। ফতোয়ায়ে দারুল উলুম

১১। ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া

১২ । ফতোয়ায়ে রহিমিয়া

১৩ । হেদায়া

১৪। রব্দুল মোহিতার

১৫ । মারাকিউল ফালাহ

১৬ । মাজমাউল। আনহার

১৭।শরহে বোকায়া

১৮।শরহে বেদায়া

১৯।আল ইশবাহ ওয়ান নাজায়ের

২০শরহে তানবীরুল আবছার

২১।কানাযুদ্ধাকায়েক

২২।জামে ছগীর

২৩।জামে কবীর

২৪।বাহরুর রায়েক

২৫। কাবীরী

২৬।মুনিয়া

২৭।মারাকী

২৮।গুণ৷ইয়া

২৯।কুদ্দুরী

৩০।নূরুল ইযাহ

৩১।দোররতল মোখতার

৩২।বেহেশতী জেওর

***বই পড়ার সময় করণীয়***

১। ইসলামিক বইকে সাধারণ গল্প উপন্যাসের বইয়ের মত ধরলে চলবে না। বিছানায় না পড়ে পারতপক্ষে পড়ার টেবিলে চলে যান এবং সঙ্গে অন্যান্য সহায়ক উপকরণ (যেমন, ডিকশনারি, নোটবই, পেন্সিল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি) প্রস্তুত রাখুন যাতে করে পড়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় রিসার্চ করে নিতে পারেন।

২। ধীরে পড়ুন। কোয়ান্টিটির তুলনায় কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে ১ ঘন্টায় কোনমতেই ২০ পৃষ্ঠার বেশী পড়া উচিৎ নয়। মস্তিষ্কে তথ্যের আধিক্য নিয়ে আসার চাইতে একটি কনসেপ্টকে ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ইসলামিক বইসমূহে চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর বা তাদাব্বুর করার কোন বিকল্প নেই।

৩। নিশ্চিত করুন যে বইয়ের প্রতিটি বিষয় বা কনসেপ্টকে আপনি ভালো করে বুঝে নিয়েছেন। অনেক সময় লেখক ও পাঠকের মাঝে একটি কগনিটিভ গ্যাপ থেকে যায় যার ফলে লেখক একটি বিষয়কে যেভাবে বোঝাতে চেয়েছেন পাঠক তা বুঝে নাও উঠতে পারেন। এর পেছনে লেখকের লেখনীর সীমাবদ্ধতা যেমন দায়ী হতে পারে একই সাথে পাঠকের biasness ও কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। ‘আল্লামা মুখতার আল-শানকীতী তার একটি লেকচারে বলেন যে ধরুন ত্বাহারা বা পবিত্রতার আহকামে আপনাকে বলা হলো যে পানি তিন প্রকার – ত্বাহুর, ত্বাহির ও নাজিস। আপনাকে চিন্তা করতে হবে শরী’য়ার পরিভাষায় পানির সংজ্ঞা কী। “পানি কী তা তো আমি জানিই” – এটি বললে চলবে না।

৪। বইয়ের একটি অধ্যায় শেষ হলে পরবর্তী অধ্যায়ে চলে যাবার আগে ডাব্‌ল চেক করুন যে পঠিত অধ্যায় থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের রসদ আপনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন কিনা। এক্ষেত্রে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ আপনি নিতে পারেন। প্রতিটি অধ্যায় শেষ করে একটি সামারি বা সারমর্ম লিখুন এর মুল শিক্ষাকে উল্লেখ করে। এই প্র্যাকটিসটি যদি আপনি চালু করতে পারেন, দেখবেন আপনার নলেজ রিটেনশন কতগুণে বৃদ্ধি পায়!

৫। প্রয়োজনীয় অংশ মার্ক করতে বা দাগিয়ে রাখতে ভুল করবেন না। বইয়ের সৌন্দর্য রক্ষার চাইতে পড়াশোনার কার্যকারিতা বেশী জরুরী। ‘উলামারা বলেন যে সাদা বইকে যতক্ষণ কালো না করা হচ্ছে জ্ঞান ততক্ষণ অধরাই থেকে যাবে। বই কালো করা বলতে এখানে মার্ক করাকেই বোঝনো হয়েছে। সুতরাং মার্কার নিন এবং সমানে দাগাতে থাকুন।

৬। ডিকশনারি, এনসাইক্লোপিডিয়া, ইন্টারনেট এগুলোর সাহায্য নিন প্রয়োজন হলে। ধরুন বইয়ে ইসলাম ও কম্যুনিজমের মধ্যে তাত্ত্বিক সংঘাত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনি মনে করছেন কম্যুনিজম সম্বন্ধে আপনি ভালোই জানেন। তার পরেও উইকিপিডিয়া খুলে আপনি কম্যুনিজমের জন্য বরাদ্দ পেজটি একবার পড়ে নিন। দেখবেন আপনার পূর্ব জ্ঞান ও এখনকার জ্ঞানের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। এখনই কাজটি করে দেখতে পারেন। এই নিন লিঙ্কঃ

http://en.wikipedia.org/wiki/Communism

৭। খোলা মনে বই পড়ুন এবং স্বতন্ত্রভাবে বই পড়ুন। হতে পারে বইয়ের লেখক একজন বড় ‘আলেম। তাই বলে তার সব কথাই ঠিক হতে হবে এমন নয় বা তার ভুল হলে সেটি আপনার পক্ষে ধরা একেবারেই সম্ভব হবে না এতটা হীনমন্যতায় ভোগাও উচিৎ নয়। লেখকের মাঝে বায়াসনেসও থাকতে পারে। কোন কিছু প্রমাণ করতে গিয়ে লেখক যদি নৈর্ব্যক্তিক যুক্তিতে না গিয়ে ফাঁকা ভাবাবেগ বা বিশেষণের ছড়াছড়ি ঘটান তখনই পাঠককে বায়াসনেসের এলার্ম বাজিয়ে দিতে হবে। তবে লেখকের কোন একটি মতের সাথে একমত হতে না পারলেই তার পুরো বক্তব্যকে ফেলে দেয়াও বোকামি। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে লেখকের সাথে একমত না হওয়ার মানেই এই নয় যে পাঠকই সঠিক। হতে পারে পাঠকের ব্যক্তিগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও মেধার স্বল্পতা এখানে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে (এটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী)। মোদ্দা কথা হল যে, আমাদের সাবধানী হতে হবে পাঠক হিসেবে।

***বই শেষ করার পর করণীয়***

১। প্রখ্যাত চিন্তাবিদ যোসেফ মর্টিমার এডলার তার নামকরা বই “How to read a book” – এ এই মন্তব্য পোষণ করেন যে একটি ভালো বই অন্তত তিনবার পড়া উচিত। বহু ইসলামিক বই এমন রয়েছে যা একাধিকবার পাঠের যোগ্য। পাঠক হয়ত ভেবেছেন যে তিনি একবার পড়েই যথেষ্ট বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয়বার পড়লে বুঝতেন যে তার প্রথম পড়াটি কতটা অসম্পুর্ণ ছিল।

২। জ্ঞানকে ধরে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে তা অপরকে শেখানো। নিজে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত আছি বলে জানি যে ছাত্রজীবনে য শিখেছিলাম তা অনেক বেশী পোক্ত হয়েছে শেখাতে গিয়ে। কাকে শেখাবেন? কেন যে শিখতে চাইবে!

সবশেষে সেই কথাটিই বলব যা হয়তো প্রথমেই বলে নেয়া উচিত ছিল। যেকোন কাজের সাফল্যের জন্য একজন মুসলিম আল্লাহ্‌র কাছে হাত ওঠায়। জ্ঞানের ক্ষেত্রে একথাটি আরো বেশী প্রযোজ্য। যেমনটি আল্লাহ্‌ বলেছেন সূরা ত্বাহা-র ১১৪ তম আয়াতেঃ

হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও৷

সূত্রঃ বইঃইসলামী নলেজ ও ব্লগ, নেট।

বিষয়: বিবিধ

১৭৫৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383893
২৯ আগস্ট ২০১৭ রাত ০৮:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। যদিও কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ দুপুর ০৩:৪১
317216
গোলাম মাওলা লিখেছেন : স্বাভাবিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File