নবী (সা)-এর আবির্ভাবকালে আরবের মাযহাবী অবস্থা

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৬:০৮:৪০ সন্ধ্যা

নবী (সা)-এর আবির্ভাবকালে আরবের মাযহাবী অবস্থা

নবী (সা)-এর আবির্ভাবকালের আরব সারা দুনিয়ার যাবতীয় মাযহাব, সারা দুনিয়ার যাবতীয় আকীদা, সর্বপ্রকারের অর্থহীন রেওয়ায, সর্বপ্রকারের অনর্থক মনগড়া বিশ্বাস, সর্বপ্রকারের বেদীনী, সর্বপ্রকারের দেহ পূজা, সর্বপ্রকারের পাপ, সর্বপ্রকারের অন্যায়, সর্বপ্রকারের মন্দকাজ, সর্বপ্রকারের পাপকর্ম, সর্বপ্রকারের অপরাধ-মোটকথা, সর্বপ্রকারের পথভ্রষ্টতার অগ্রপথিক ও ইমাম বা নেতার আসনে সমাসীন ছিল। সেখানে সর্বপ্রকারের, সর্বজাতির, সর্বধরনের বিস্ময়কর বিস্ময়কর খোদার সমাবেশ ঘটেছিল । তারা তাদের পূর্বপুরুষদিগকে পূজা করত, জিন, ভূত ও শয়তানের পূজা করত, তারা রূহের ইবাদত করত। চন্দ্র, সূর্য, তারকা ও নভোমণ্ডলের গ্রহ-নক্ষত্রকে তারা খোদা মনে করত। বিজলী ও বিদ্যুৎ তাদের পূজ্য ছিল। মৃত্তিকা, অগ্নি ও সশীলকে তারা সিজদা করত, ফেরেশতাগণকে তারা আল্লাহর কন্যা বলে আখ্যায়িত কত। তাদের মধ্যে কতক এমনও ছিল যারা হযরত উযাইর (আ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে মানত। তাদের মধ্যে কতক এমনও ছিল যারা মারয়াম (আ) তনয়কে আল্লাহর পুত্র বলে গণ্য করত।

অবশিষ্ট রইল প্রতিমা পূজা-হয়তো আরব উপদ্বীপে এতসংখ্যক লোকের বসবাসও ছিল না যতসংখ্যক প্রতিমা সেখানে ছিল । স্থায়ী প্রতিমা ছাড়াও তাদের অস্থায়ী খোদার সংখ্যাও অনেক ছিল।

যেমন- যখন তারা সফরে যেত তখন সঙ্গে কর এক টুকরা ছোট পাথর নিয়ে যেত । ঐ পাথরই সফর হতে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের অস্থায়ী খোদা হিসাবে উপাস্য হত। তাদের ঐ সমস্ত অস্থায়ী খোদা কখনও কখনও হস্তান্তরিতও হত। পথ চলতে চলতে পথিমধ্যে কোন সুন্দর পাথর পাওয়া গেলে আগের খোদাকে ছুড়ে ফেলে দিত ও তদস্থলে নতুন খোদাকে পূজা করতে শুরু করত। যদি সফরে যাত্রাকালে তারা নিজেদের খোদাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে ভুলে যেত তাতেও তাদের মাযহাবে কোন অসুবিধা দেখা দিত না, মনযিলে পৌছায়া চারটি পাথর খুঁজে নিত। তিনটি চুলায় ব্যবহার করত, চতুর্থটিকে সিজদা করত। যদি কখনও ঘটনাক্রমে পূজা করবার জন্য পাথর না পাওয়া যেত তখনও নিজ নিজ উপাস্য তৈরীর জন্য তাদের বিশেষ বেগ পেতে হত না। তৎক্ষণাৎ মাটি ও পাথর কণাকে স্তুপীকৃত কর তার উপর ছাগীর দুগ্ধ ঢেলে দিত। বেশ, মা'বুদ হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি উহাকেই সিজদা করতে শুরু করত।

পাথরের প্রতিমাকেই খোদা বানাতে হবে এমনও কোন কথা ছিল না, অনেক সময় মাটি ও কাঠের মূর্তিও তৈরী করত।

বনী হানীফা নামক একটি কবীলা খেজুরের একটি স্তুপ তৈরী করে উহাকেই সিজদা করতে শুরু করত। উহাতে তাদের অতিরিক্ত সুবিধা এই হত যে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে কবীলার সকলে মিলে দ্বিধাহীনচিত্তে খোদাকে ভক্ষণ করে ফেলত। একটি খেজুরও অবশিষ্ট রাখত না( আবুল কাসেম সায়েদ বিন আহমাদ আকদাসীকৃত তারকাতুল উমাম পৃ. ৭১)।

কোন একটি কবীলা আটার প্রতিমা তৈরী করত এবং উহাকে পূজা করতে শুরু করেছিল(সৈয়দ সোলাইমান নদভীকৃত আরযুল কুরআন, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬, ১৮৭)।

যে কাবাকে হযরত ইবরাহীম (আ) একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মাণ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তার অধস্তন সন্তানগণ উহাকে প্রতিমা পূজার তীর্থে পরিণত করেছিল। সেই স্থানে ৩৬০টি প্রতিমা রক্ষিত ছিল। দিবারাত্র ঐগুলিকে পূজা করত। এতদ্ভিন্ন আরবের প্রতিটি গৃহে একাধিক খোদা রাজত্ব করত। পিতার খোদা ছিল পৃথক, পুত্রের খোদা পৃথক, স্ত্রীর পৃথক, বধূর পৃথক এবং ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র ও ভাগিনেয় পৃথক।

এর পরেও প্রতিটি কবীলা ও প্রতিটি বংশের প্রতিমা পৃথক পৃথক ছিল। আবার কয়েকটি কবীলা সম্মিলিতভাবে এক খোদাকে মানত, নযর ও নিয়াযের জন্য যা কিছু হত তা উহার সম্মুখে রক্ষা করে সিজদাবনত হত।

আরবের বিভিন্ন বংশ, বিভিন্ন কবীলা বা গোত্র ও বিভিন্ন এলাকায় যে সমস্ত প্রতিমার পূজা করা হত আল্লামা সৈয়দ সোলাইমান নদভী তার রচিত পুস্তক আরযুল কুরআন, দ্বিতীয় খণ্ড ও সীরাতুন নবী, ৪র্থ খণ্ডে বিভিন্ন পুরাতন আরবী কিতাব হতে অনুসন্ধান করে লিপিবদ্ধ করেছেন। উনার বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলঃ

ক্রমিক নং --- মূর্তির নাম---সংশ্লিষ্ট পূজারী কবীলার নাম

১। লাত- কবীলা সকীফ।

২।উয্যা--কোরাইশ, বনূ শীবান বিন জাবির।

৩।মানাত--কাবায়েল উস খজরয এবং সাধারণ আরব।

৪।ইয়াগূস--বনূ মদহজ ও জারশবাসী ।

৫।ইয়াউয--বনূ হামদান ও খীওয়ানবাসী

৬।নসর--হোমাইর

৭।উদ্দ--বনূ কাল্ব

৮। সাওয়া--বনূ লাহইয়ান

৯।আসাফ - নায়িলা--আরবের কবীলাসমূহ হজের সময়ে এই প্রতিমা দুইটির সম্মুখে কুরবানী দিত।

১০।উকাইসার --ফাযা, লাখম, জুযাম, আমিলা, গাতফান

১১।বাজর--আয়ূতী ও কাযায়া

১২।যুল খুলাসা বনূ উমামা, কাশয়ামম, বাজালা আযউস সুরাহ।

১৩-১৪। রিযা রিটাম--যথাক্রমে বনূ রবীয়া ও বনূ হোমায়েরের বুতখানার নাম যেখানে অনেক প্রতিমা রক্ষিত ছিল।

১৫।সায়াদ--বনী মালাকান বিন কানানা

১৬।সাবহা

১৭। সুয়াইর--গাযযা

১৮।যুশশোরা-- বনূ হারিস

১৯।আলম--আযওয়াস সুরাহ

২০।আম্মু আনাস --বনূ খুলান

২১।কলিস--বনী তাই

২২।যুল কাফফা ইন-- বনূ দৌস

২৩।মানাফ--কোরাইশ

২৪।নুহাম--মুযাইনা

২৫।হুবল--কোরাইশ

২৬।বাল--বনী আদলানের কবীলাসমূহ

২৭।ইয়াবূব--জুদাইলা

২৮।আশহাল --বনূ আবদিল আশহাল

২৯।আওয়াল--বকর ও তাগলব

৩০। বস--গাতফানের বুতখানা, ঐ স্থানে সর্ব বৃহৎ প্রতিমা রক্ষিত ছিল।

৩১।বুয়াইম--কাঠের তৈরি একটি প্রতিমা

৩২।বালাজ

৩৩।হুব্বা

৩৪।জুরাইশ--বনী আবদি কুরাইশ

৩৫।জালসাদ

৩৬।জিহার--বনূ হাওয়াযিন

৩৭।দার--বনী আবদিদদার

৩৮।দাওয়ার

৩৯।যুররিজল--হিজাযের একটি প্রতিমা ছিল

৪০।শারিক--বনী আবদিশ শারিক

৪১। শামস--বনী আবদিল শামস

৪২।সাদা--আদ

৪৩।সমূদা--আদ

৪৪।যিমার--আব্বাস বিন মারদাস সালমা কবীলা

৪৫।খীযান--মানযার আকবর

৪৬।আবআব--কাযায়া

৪৭।আউস--বকর বিন ওয়ায়েল

৪৮।আউফ

৪৯।গাবগাব--এই প্রতিমার জন্য পশু কুরবানী দেওয়া হত।

৫০।ফারয়ায--সা'দুল আশীরা

৫১।কুসরা--জুদাইস ও তসম

৫২।কাসয়া

৫৩।মুহাররিক --বনূ বকর বিন ওয়ায়েল

৫৪।মাদান-- বনূ আবদিল মাদান

৫৫।মারহাব-- হাযর-ই-মউত

৫৬।মালহাব--

৫৭।হিয়া--সাদ

৫৮।যাতুলবিদা

৫৯।ইয়ালীল-- বনু আবদিল ইয়ালীল

এই সমস্ত ছাড়াও গবেষকগণ ইয়ামেন ও হিজাযের জাহিলিয়্যাতকালের পুরাকীর্তির যেসব শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছেন ঐগুলি হতে

(৬০) আলমুকা, (৬১) উশতার, (৬২) নুকরাহ, (৬৩) কীনান ছাড়াও আরও অনেক প্রতিমার নাম ও ঠিকানার সন্ধান পাওয়া গেছে( সৈয়দ সুলাইমান নদভীকৃত সীরাতুন নবী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা, ২৫৫)।

প্রতিমা পূজা ছাড়াও তারা অনর্থক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তাছাড়া হিংস্রতা, বর্বরতা ও অন্যান্য বহুবিদ বদঅভ্যাস ছিল তদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যে রকম দুরবস্থার মধ্যে তারা জীবন যাপন করত উহা অতিশয় দুঃখজনক ও অনুশোচনীয়।

জাহিলিয়্যাতকালের আরবে পরম চরিত্রহীনতা ও নির্লজ্জতা বিরাজিত ছিল। কাসীদার শুরুতে যে সমস্ত প্রেমের কবিতা থাকত উহাতে সম্পদশালী ও আমীর ঘরের কন্যা, মহিলা ও ভগ্নিদের অবস্থা নাম ধরে বর্ণনা করা হত এবং উহাতে বিভিন্ন ধরনের নিন্দাবাদকে তাদের সাথে প্রকাশ্যে সম্পৃক্ত করা হত। দুষ্কর্ম ও ব্যভিচারের জন্য তাদের অনুশোচনা হত না এবং সর্বপ্রকারের অশালীন কবিতা নির্লজ্জভাবে প্রচার করত। এতে তারা গর্ববোধ করত।

সকল মানুষই সুরা পানে আসক্তির শেষ সীমায় পৌঁছেছিল এবং মাতাল অবস্থায় তারা অতিশয় নিন্দনীয় ও অমার্জিত আলাপচারিতা করত।

জুয়া ছিল সর্বজন প্রিয় খেলা, এতে কোন ব্যতিক্রম ছিল না। আবার যদি কোন বিশেষ স্থান জুয়া খেলার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করত তবে বহু দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করেও মানুষ তথায় জুয়া খেলবার জন্য গমন করত। কোন ব্যক্তি যদি ঐ সমস্ত জুয়ার আড্ডায় গমন না করত তবে তাকে অতিশয় হীন ও কৃপণ মনে করা হত, তার সহিত আত্মীয়-সম্পর্ক স্থাপন করাকে গর্হিত ও কলঙ্কজনক মনে করত।

জনৈক জাহেলী আমলের কবি তার স্ত্রীকে অসিয়ত করেছিলেন--- আমার মৃত্যু হলে তুমি এমন কোন ব্যক্তিকে বিবাহ করিও না যে জুয়া না খেলে ও জুয়া খেলার আড্ডায় শরীক না হয়(তাফসীরে কবীর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৩৩১/বিস্তারিত বিবরণ পড়তে স্যার সৈয়দ এর প্রসিদ্ধ পুস্তক “আল খিতবাতুল আহমদিয়া ফিল আরব ওয়াস সীরাতুল হামদিয়া”-পড়তে পারেন) ।

সুদ খাওয়ার ন্যায় দূষণীয় ও নিন্দনীয় অভ্যাসেরও তাদের মধ্যে সার্বজনীনভাবে ব্যাপক প্রচলন ছিল। সুদখোরেরা নির্মমভাবে মানুষের রক্ত শোষণ করত। বাদীদেরকে কিনাত বলা হত। তাহাদেরকে গান ও নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তাদের প্রভুদের পক্ষ হতে তাদের জন্য ব্যভিচারের উন্মুক্ত অনুমতি ছিল, এতে যা উপার্জিত হত উহা তাদের প্রভুরা নির্দ্বিধায় নিজেদের জন্য ব্যয় করত। ডাকাতি, লুটতরাজ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল তাদের নিয়মিত কাজ। তারা বেপরোয়াভাবে মানুষের রক্ত ঝরাত। যুদ্ধে যে সমস্ত নারী ধৃত হত তাদেরকে দাসীতে পরিণত করত। তাদের দ্বারা যে কোন প্রকারের খিদমত নেওয়া হত ।।

টোটকা ও শুভ অশুভ লক্ষণের প্রতি তাদের সীমাহীন বিশ্বাস ছিল। এই ব্যাপারে তারা বড়ই বিস্ময়কর আচরণ করত। কোন কার্য সমাধা হওয়ার জন্য মহিষ কুরবানীর মানত করত। কিন্তু কার্য সমাধা হয়ে গেলে মহিষের পরিবর্তে হরিণ যবেহ করে দিত।

তাদের এমনও বিশ্বাস ছিল যে, তাদের কোন আত্মীয় স্বজনের হত্যার প্রতিশোধ হত্যার মাধ্যমে গ্রহণ করা না হলে হত ব্যক্তির মাথার খুলি হতে একটি পশু বাহির হয়ে আকাশে প্রতিশোধ প্রতিশোধ বলে চিৎকার করতে ফিরিতে থাকে, প্রতিশোধ গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেই চিৎকার অব্যাহত থাকে। ঐ পশুকে ‘হামা’ বা ‘সুদা' বলা হত। (যখন তাহার প্রতিশোধক্রমে তার শত্রুকে বধ করা হত তখন আবার সেই হত ব্যক্তির মাথার খুলি হতে হামা’ বাহির হত এবং আবার তার প্রতিশোধ গ্রহণ না করা পর্যন্ত উহাও তেমনিভাবে চিৎকার করতে থাকত এবং এমনিভাবে উহার ধারা অব্যাহত থাকত।)।

প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর পরে তার উষ্ট্রকে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে মরে না যাওয়া পর্যন্ত তার কবরের পাশে বেধে রাখা হত। ঐ উষ্ট্রকে ‘বালিয়্যা’ বলা হত ।

বিনা সুদে কাহাকেও কেহ কোন ঋণ দিত না। ঋণ গ্রহিতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারিলে তৎক্ষণাৎ উহা দ্বিগুণ বর্ধিত হত।

প্রতিটি মানুষ (সে যতই অপরিচিত অনাত্মীয় হক না কেন) অপরের গৃহে নির্দ্বিধায় প্রবেশ করতে পারত। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করাকে অপমানজনক মনে করত। কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের গৃহে গমন করে খাদ্য গ্রহণ করাকে দূষণীয় মনে করা হত।

পুরুষের যতজন খুশি স্ত্রী রাখবার পূর্ণ অধিকার ছিল, উহাতে কোন প্রকারের বাধ্যবাধকতা ছিল না। তেমনি তাদের এই অধিকারও ছিল যে, স্ত্রীকে হাজারবার তালাক দেওয়ার পরেও আবার তাকে পত্নিত্বে বরণ করতে পারত।

জাহিলিয়্যাত আরবের সব চাইতে নির্দয় প্রচলন ছিল মেয়েদেরকে হত্যা করা। অথবা তাদেরকে জীবিত দাফন করা ।

পিতার মৃত্যুর পরে পুত্র তাহার বিমাতাদেরকে পত্নিত্বে বরণ করে নিত । মহিলাদের মধ্যে নিজ গৃহ হতে বহির্গত হওয়া ও ভীড়ের মধ্যে বিনা পরদা ও

আবরণে যাতায়াতের সার্বজনীন প্রচলন ছিল । মহিলারা তাদের দেহের যে কোন অঙ্গকে উন্মুক্ত রাখা ও সাধারণ্যে প্রদর্শন করার মধ্যে কোন প্রকারের লজ্জা শরম অনুভব করত না ।

রূহ সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস ছিল যে, উহা এমন একটি ক্ষুদ্র পশু যাহা মানুষ জন্ম নেওয়ার সময় তার দেহে ঢুকে পড়ে ও তথায় সে নিজেকে পরিবর্ধিত করতে থাকে। আবার যখন মানুষের মরবার সময় হয় তখন উহা সেই স্থান হতে বাহির হয়ে আসে ও তৎক্ষণাৎ ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে। মৃত ব্যক্তির কবর তৈরি হলে উহা কবরের আশেপাশে চিৎকার করে ফিরতে থাকে। এমতাবস্থায় উহা একটি পেচকের সমআকার ধারণ করে।

তারা শত শত, হাজার হাজার কল্পিত ও মনগড়া রূহ বানিয়ে রেখেছিল । তাদের ধারণা ছিল যে, ঐগুলি মানুষের উপকার বা অপকার করতে সক্ষম এবং তা করে থাকে। এই সমস্ত জিন, ভূত, দেও, জঙ্গলে, বিরানে ও গুহা-গহ্বরে বাস করে এবং যখন খুশি মানুষের আকার ধারণ করে।

এই অর্ধ জংলী ও স্বাধীনচেতা আরববাসীদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে অবহিতের পরে একজন বিবেকবান মানুষ সহজেই ফায়সালা করতে পারবেন যে, ইসলাম পূর্বকালে আরবদের অবস্থা কি ছিল এবং ইসলামের পরে তাদের অবস্থা কি হয়েছে এবং সার্বজনীনভাবে তাদের চরিত্রে কি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File