রোহিঙ্গা ইস্যু অথবা আমাদের রাষ্ট্রনৈতিক সংকট খসড়া-০১

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:০৫:১১ রাত



জাতিসংঘের নিকুচি করুন।

UNHCR কি বললো, কি করলো তাও এতো পাত্তা দেয়ার কিছু নাই।

প্রশ্ন হলো- আমরা কি করলাম?

স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের গোজামিল'টা কোথায় হচ্ছে?...

আমরা যেটাকে 'আমাদের দেশ' বলি,

সেটা কি আমাদের বস্তুগত নৈতিক মানবিক ও আধ্যাত্মিক স্বার্থ দেখভাল করতে পারছে?

সেটা কি আমাদের আবেগ-অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার যথার্থ প্রতিনিধি?

উত্তর যদি 'না' হয়,

তাহলে বিষয়টা তখন মোটেই রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপার থাকে না।

সেটা আমাদের রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়!

হ্যাঁ, সেটা নিতান্তই মানবিক ব্যাপার না থেকে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিগঠন এবং রাষ্ট্র ও নাগরিক সম্পর্কের গুরুতর প্রশ্ন নিয়েই হাজির হয়।

বাংলাদেশ নিশ্চয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী দালাল সুশীল কিংবা ইসলামবিদ্বেষী সেকুলারের দেশ শুধু নয়। লাখ লাখ অবৈধ ইন্ডিয়ানের আধিপত্য নিশ্চিত করে, দু'চার হাজার রোহিঙ্গা প্রশ্নে তারা যখন ওভার পপুলেশনের দোহাই দেয়; অথবা মিয়ানমারের নাৎসী গোষ্ঠীর দেয়া সন্ত্রাসী/জঙ্গী অপবাদ সানন্দে মেনে নিয়ে নিজেরাও যখন রোহিঙ্গাদের কার্যত মেরে ফেলার যুক্তি খোঁজে, গণমানুষের সংবেদনার জায়গাটা যখন করুণ উপেক্ষার শিকার হয়,

তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়...

তবে কী ইসলাম ও মুসলমান প্রশ্নে মায়ানমার যা, বাংলাদেশও তা'ই?...

০২.

আটাশে অক্টোবরের কথা ভাবুন।

পাঁচই মে'র কথা স্মরণ করুন।

কল্পনা করুন আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদন্ড রায়ের দিনটি অথবা

এরকম আরো অনেক ব্যাপার!...

দেখবেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি মায়ানমারের শাসকগোষ্ঠী এবং

তাদের একান্ত লাঠিয়ালদের ঘৃণা-বিদ্বেষ-পৈশাচিকতা কিংবা হিংস্রতার সাথে

এদেশীয় সুশীল সেকুলার 'পোগোতিশীল' এবং তাদের আকাঙ্ক্ষিত সরকারের খুব বেশী তফাৎ নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশী বেশীই বলতে পারেন!

তাহলে আমরা যে এই সরকারকে সীমান্ত খোলার আহ্বান জানাচ্ছি?

আহ্বান জানানোর মানে এই নয় যে, তারা কর্ণপাত করবে ভেবেই আমরা আহ্বান জানাচ্ছি! বরং সেটা এজন্য যে, আমরাই যেনো সচেতন হয়ে উঠি। আমরা যেনো এটুকু বুঝি, এ 'আমাদের রাষ্ট্র' না যে, আমাদের কথা শুনবে। রাষ্ট্র আমাদের কথা শুনছে না, সে ব্যাপারে বারবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য হলেও আমরা আহ্বান করবো।

আচ্ছা,

রাষ্ট্র যদি আমাদের না হয়, তাহলে কাদের?

আমাদের ভ্রাতৃত্বের হাহাকার যদি রাষ্ট্রের কাছে উপহাসের বিষয় হয়-

আমাদের মানবিক যন্ত্রণা যদি রাষ্ট্র শীত রাত্রীর নাফে ভাসিয়ে রাখে-

আমাদের সংগত আবেগ-অনুভূতিও যদি রাষ্ট্রের সমূহ রাগের কারণ হয়-

তাহলে রাষ্ট্র কার হাহাকার শোনে?

কার যন্ত্রণায় সাড়া দেয়?

আকুল-ব্যাকুল হয়ে যায় কার অনুভূতিতে??...

০৩.

শুরু থেকেই অসুস্থ অজুহাত না তুলে,

তাদের অসহায়ত্ব এবং আমাদের সামর্থ বিবেচনায় যতটুকু সম্ভব,

বাংলাদেশ যদি সানন্দে এবং সুব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতো,

তাহলে মানবাধিকারের দিক থেকে আমরা বিশ্ব-পরিমন্ডলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হতাম না। সেটা বরং আমাদের নৈতিক প্রভাবকে আরো শক্তিশালী করতো।

জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য শেষ পর্যন্ত মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিক শক্তির কোনো বিকল্প নেই।

(জাতি শব্দটা এখানে পরিচিতির অর্থে বলা, জাতীয়তাবাদী বিকারের অনর্থে নয়।)

দ্বিতীয়ত,

মুসলিম ভ্রাতৃত্বের জায়গায় আমাদের উন্নত ভাবমূর্তিতে দৃশ্যমান হতো। মুসলিম দুনিয়া এবং দুনিয়ার মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতি ও প্রার্থনা আমাদের অভিষিক্ত করতো। তাতে আমাদের জন্য নানাবিধ কল্যাণ বৈ, কোনো অকল্যাণ হতো না। রোহিঙ্গাদের জন্য অন্যান্য দেশের সাহায্য-সহযোগীতারও একটা সুনির্দিষ্ট বন্দোবস্ত হতো।

তৃতীয়ত,

একদিকে যেমন মজলুমের বন্ধুত্ব অর্জন হতো, বর্তমান বিশ্বে অসাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে অমানবিক ও বিকারগ্রস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির উপর খুব স্বাভাবিকভাবেই পড়তো আমাদের নৈতিক প্রভাব। সেটাও আমাদের সময়ে অসময়ে কাজে লাগতো। তাছাড়া সময় সুযোগে মিয়ানমারেই তাদের সবার মর্যাদাপূর্ণ নাগরিকত্ব নিশ্চত করার কাজও করা যেতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও প্রকাশ্য পন্থায়!

চতুর্থত,

এই শরণার্থীদের সাথে আমরা যদি যথাযথ মানবিক আচরণ করতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে যেখানেই তারা থাকুক, এবংকি তাদের নিজের দেশে হলেও; আমাদের প্রতিরক্ষায় বিশেষ সহযোগী হিসেবেই তাদের আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে সেটা কতোটা মূল্যবান হয়ে উঠবে, সেটা আমরা আগাম অনুমান নাও করতে পারি। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-

'সেই সবচেয়ে নিরাপদ যে তার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণে অভ্যস্ত'।

শেষত,

ইন্ডিয়াও আমাদের প্রতিবেশী। একাত্তরের দোহাই দিয়ে আনিসুজ্জামান-শাহরিয়ার কবির কিংবা প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গং যতই বন্ধুত্বের রবীন্দ্র-সংগীত পরিবেশন করুন, ঐতিহাসিক এবং নিত্য-নৈমিত্তিক বাস্তবতায় তাদের আধিপত্যই প্রকাশিত! এবং যথেষ্ট অশ্লীল ও নগ্নভাবেই।

সুতরাং, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পথচলায় এই আধিপত্যকে মোকাবিলা ভিন্ন কোনো রাস্তা নাই।

অন্তত ভদ্রোচিত চ্যালেঞ্জিং পজিশন বাংলাদেশকে হাসিল করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ বিশেষ করে মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এবং সেই সাথে চায়না ও ইরান, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের জনগণের সাথে নানাবিধ সম্পর্ক রচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সেদিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, তাদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করা আমাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ রাষ্ট্রনৈতিকভাবেও!

এরকম আরো ব্যাপার হয়তো আছে।

কিন্তু ট্রাজেডী হলো- আমাদের শাসক-শ্রেণি, যারা ক্ষমতা জবর-দখল করে বাদশাহী কায়দায় দিবস-রজনী যাপন করছেন, তাদের এসব কিছুই এবং কোনোটারই দরকার নেই! কারণ কোনো দেশ যদি ছলে-বলে-কৌশলে বাদশাহী বা রাজতান্ত্রিক স্বৈরাচারে চালিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটা এখনও রাষ্ট্র হিসেবেই পরিগঠিত হয়নি।

আর রাষ্ট্র না হলে তার এতোসব কী দরকার?

বিশেষ করে রাজত্ব যদি অন্য কারও আশীর্বাদের ফসল হয়!!...

বিষয়: বিবিধ

১০৬৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380139
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০২:৩০
স্বপন২ লিখেছেন :

সহমত।
380140
২৬ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:২০
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশ আছে মহা ফাঁপড়ে কারণ , মায়ানমার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক শক্তিশালী আর আয়তনে ৩/৪ গুন বড় দেশ । তাকে ব্যাকাপ দেয় চায়না । তার আশে পাশের সবদেশ বৌদ্ধদের দেশ এবং স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান বিদ্বেষী ।

আরেক প্রতিবেশী ভারত সুপার পাওয়ার হতে চলেছে । আয়তনে ও শক্তিতে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে ১০ গুন বড় । হিন্দুদের দেশ বিধায় তারাও মুসলমান বিদ্বেষী ।

আশেপাশে এই দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর প্রভাব বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় , সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে ব্যাপক।

বৈশ্বিক রাজনীতির বেড়াজালে পড়ে বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হলেও এখানে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলা খুবই কঠিন হয়ে গেছে । এতে আল-কায়েদা/আইএস ট্যাগ সহজেই গলায় ঝুলে যাবে । সরকার তো এরকম করবে না , এমন কি জনগনের কেউ এরকম করলে নাই হয়ে যাবে।

আল-কায়েদা-আইএস এর এই অলীক কাহিনী বিশ্ববাসিকে গিলিয়ে সুযোগমত আরাধ্য দেশের সম্পদ লুটবার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরা ইসরায়েল সমর্থিত আমরিকা ও তার মিত্রদের ব্যাটলফিল্ড এ বাংলাদেশ পরিনত হোক এটা সরকার সহ এ দেশের সাধারণ মানুষও চায় না ।

তাই মুসলিম সংকগ্যাগরিষ্ট দেশ হয়েও সংখ্যালঘুদেরকে উপরে তুলে এনে মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রেখে এবং প্রতিবেশী মুসলমানদের প্রতি নেগেটিভ এটিচ্যুড দেখিয়ে পশ্চিমাদের চোখে উদারমনা সেজে হামলা থেকে বাঁচতে চাইছে ।

এটা আমরা সাধারণ জনগন ভালই বুঝি ।

তবুও ব্যর্থ মুসলমান ভাই হিসেবে এবং খুবই দূর্বল ঈমান সম্পন্ন মুসলমান হয়ে আমরা তো অবস্থা সম্পন্ন , বিবেকবান , সম্পদশালী , গার্ডথস্‌ আছে এমন মুসলমান ভাইদেরকে আহবান জানাতে পারি রোহিঙ্গাদেরকে এসে নিয়ে যেতে ।

নাফ নদী পাড়ি দিয়ে যখন ওরা আসে আমাদের কাছে আশ্রয় নিতে আমরা কি পারি না তাদেরকে তাড়িয়ে না দিয়ে ঐ সব দেশগুলোর স্ট্যান্ডবাই জাহাজে উঠিয়ে দিতে!
380147
২৬ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
বাংলাদেশ টাইমস্ লিখেছেন : কোসটো হোয়..আসোলে আমরা মুসলিম ভাইদের জোননো কিছুই করটে পারছিনা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File