…আমি দাঁড়িয়ে আছি- পিঠে বাংলাদেশ!.. আমি বসে পড়লাম- কোলে বাংলাদেশ!...

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ১২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:১২:৪৭ রাত



এবার বিজয় দিবসে একবার আমি দিগ্বিদিক-শূন্য হয়ে পালাতে চেয়েছিলাম, আমার স্বদেশকে কোলে-পিঠে করে। একদা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর লুন্ঠনে বিরান হয়েছিল আমার গোলাপ বাগান। একদা বধ্যভূমি হয়ে উঠেছিলো পশ্চিমা হত্যাযজ্ঞে। আজ আবার ‘অল-ইন্ডিয়া’ কোম্পানীর কবলে!...

পথ খুঁজতে খুঁজতে দেখি এক সাধকপুরুষ- সমগ্র বঙ্গোপসাগর-জুড়েই যেনো ধ্যানরত। খানিকটা বিরক্ত হলাম আমি- এখন কি কোনো ধ্যানের সময়! যেনো বাংলাদেশের কোনো দুঃখ নেই, কোনো কষ্ট নেই! আমি কি এই সাধকের জায়নামাজ মাড়িয়ে যাবো? -আমার স্বদেশ এখানে, আর একমুহূর্তও নিরাপদ নয়! যেকোনো সাধকের জায়নামাজের চেয়ে অজস্র শহীদের রক্তভেজা এই ভূখন্ড আমার কাছে বেশী দামী! আমি এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপে সম্মুখের দিকে তাকালাম- এ যে মাওলানা! মাওলানা ভাসানী!! যেনো আমি পালানোর প্রত্যাশায় আর এক কদম দিতেই তিনি ‘খামোশ’ বলে উঠবেন… আমার সাহস হলো না…

আমি আবার আমার মুমূর্ষু স্বদেশের দিকে তাকালাম। আমি কি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবো? আমি কি সব বুঝিয়ে বলবো মাওলানাকে? কিন্তু তাঁর দিকে আবার তাকাতেই মনে হলো- তিনি সবই জানেন! আমি কিছুই বলতে পারলাম না তাঁকে। তাঁর প্রশান্ত মুখোচ্ছবি দেখে আমিই বরং কিছুক্ষণের মতো সব ভুলে গেলাম…

সংবিৎ ফিরে পেতেই ভাবলাম আমি অন্য কোনো পথ খুঁজি না কেনো? ডানদিকে তাকাতেই দেখলাম- বঙ্গবন্ধু। সালামপূর্বক বিষ্ময়গলিত কন্ঠে শুধাই- বঙ্গবন্ধু! আপনি?... তার প্রত্যয়দীপ্ত সত্ত্বা হতে উৎসারিত হলো- দেখো, বাঙ্গালি পালানোর জাত নয়। একবার যখন আমরা মরতে শিখেছি, কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না…

নিজেকে বড়ই অচেনা মনে হলো। আমি করুণ চোখে বা-পাশে তাকালাম- একি! এ কোন অকুতোভয় সেনাপতি! আমি স্যালূট দেয়ার আগেই শিহরিত হলাম শহীদ জিয়ার শ্লোগানে…

বাংলাদেশ

জিন্দাবাদ…

হে ধরণী, দ্বিধা হও! এখন আমি কি করবো? …আমি দাঁড়িয়ে আছি- পিঠে বাংলাদেশ! আমি বসে পড়লাম- কোলে বাংলাদেশ! তারপর কখন যে বাংলাদেশকে বুকে লুকিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম… হঠাৎ কোথায় যেনো বেজে উঠলো- ‘কোথাও আজ পালাবার পথ খোলা নেই’…

আমি স্বপ্নের ভেতরেই জেগে উঠলাম। খুব সন্তর্পনে জাগালাম বাংলাদেশকে! তারপর অশ্রু মুছতে মুছতে বললাম- এখানেই তুমি সবচেয়ে নিরাপদ, প্রিয়তমা। আল্লাহর শপথ! তোমার কিচ্ছু হবেনা! কিচ্ছু হবেনা তোমার! এই যে দ্যাখো! মাওলানা ভাসানী আছেন এখানে। হিমালয়ও যদি তেড়ে আসে, অতিক্রম করতে পারবেনা তাঁর লালটুপি। ওটা শহীদ তিতুমীরের খুনে বোনা!

এখানে বঙ্গবন্ধু আছেন। সীমানা অতিক্রম করলে হায়েনার হুমকি, আবার ফিরে আসবে সাতই মার্চ! শরীয়ত-দুদু’র গণপ্রতিরোধের স্মৃতি কারো রক্তচক্ষুতে আজো ম্লান হয়নি…

ভয় পেয়ো না। এখানে আছেন সাতই নভেম্বরের নায়ক! সিপাহী-জনতার ইস্পাত কঠিন গণপ্রতিরক্ষার ইতিহাস!...

তাহলে কি আমাকে এগুতে হবে? মাকড়সার জাল এই উদ্যত কাঁটাতারের আধিপত্য অতিক্রমেই আমার মুক্তি? -হ্যাঁ। না, আমি কোথাও পালাবো না। কোথাও না। কিন্তু কোথায় এগুবো আমি? পথ খুঁজতে খুঁজতে আকস্মিক বিচ্ছুরিত হলো একটি সফেদ পাঞ্জাবী! আলোয় আলোয় আমার চারপাশ পনেরটি পূর্ণিমার মতো আলোকিত হয়ে উঠলো।

সুস্পষ্ট লালাভ রাজপথ দেখে আমার সমস্ত সংশয় যেনো কর্পূরের মতো উবে গেলো। মনে হলো একটু আগেই রাহবারের মতো কে যেনো হেটে গেলেন! কে গেলেন?..কে?... পদচিহ্ন দেখতে দেখতে আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না…

আকস্মিক আমি মোল্লা ভাই.. মোল্লা ভাই.. ডাকতে ডাকতে প্রাণপণে দৌঁড়াতে লাগলাম…

বিষয়: সাহিত্য

১২৬১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356794
১২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:২৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

সত্যের বিজয় অনিবার্য,
মিথ্যার বিণাশ অবশ্যম্ভাবী

জাযাকাল্লাহ
১৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:০১
296217
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : সালাম।
সুন্দর বলেছেন-
সত্যের বিজয় অনিবার্য,
মিথ্যার বিণাশ অবশ্যম্ভাবী।
অনেক ধন্যবাদ।
356796
১২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪১
অপি বাইদান লিখেছেন : অবিলম্বে রাজাকার, আলবদর গঠন করে আল্যার নামে ঝাপিয়ে পরুন। যেমনটি হয়েছিল ১৯৭১ এ..............
১৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১২
296218
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : '৭১-এ কে কি করেছিল তা আমরাও অল্প-বিস্তর জানি। তবে সে কথা আজ থা্ক।
তারচেয়ে বরং শুনুন-
আল্লাহর নামে ঝাপিয়ে পড়ে হাপিয়ে ওঠার কিছু নেই। ব্যাপার হলো সময়কে ধারণ করা। ইতিহাসকে ধারণ করতে পারলে সংস্কার/ বিপ্লব/ বিনির্মাণ কোনোটিই সম্ভব নয়...

আসুন সময়কে সহাস্যে ধারণ করি। লাফিয়ে কিংবা ঝাপিয়ে ইতিহাস অতিক্রম করা যায় না,বিনির্মাণ তো দূরের কথা...
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৪৮
297777
অপি বাইদান লিখেছেন : ৭১ এ কে কি করেছে! তা আপনি কি জানেন একটু বলেন তো, শুনি।

আর আল্যার নামে হাপিয়ে উঠার যথেষ্ট কারন আছে। ইসলামের ধ্বজাধারী মুলিমরা এত আল্লাবিল্লা করে পেরেশান, এত কিছু বুঝে, লেকচার দেয়...... অথচ বাস্তবে তাদের অবস্থান তলানিতে। সমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, আবিস্কারে শুন্যের কোথায়। তবলিক জামাতীরা বিগত ৭০ বছর ধরে আখেরী মনাজাত করে কি পেয়েছে? বিশ্ব মুমিন মুসলিমরা হজ্জের মাঠে এত হাউমাউ, দোয়া, মোনাজাত করেও প্রাপ্তি শুন্য/জিরো। এরপরও কি তথাকথিত আল্যা সক্ষমতা বিষয়ে সন্দেহ, হাপিয়ে উঠার যথেষ্ঠ করন আছে বলে কি আপনার মনে হয় না? আথচ কোরাণ শরিফে এই আপনাদের এই আল্যা কতইনা শুকনো সারশুন্য হুমকি, ধমকি, চাপাবাজি করেছেন! হাস্যকর, নয় কি??
356835
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:১৪
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় ভাই, রুপকের আডালে আপনার অসাধারন লিখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে
১৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৩
296219
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : সালাম ভাই।
অনেক ধন্যবাদ অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
যাজাকাল্লাহ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File