কারবালা ও আশুরা প্রসঙ্গঃ এক ভাইয়ের ব্লগের জবাবে

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী ২৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:৫৫:৪১ সন্ধ্যা



ব্লগটির শিরোনাম ছিলো- আশুরার মিথ্যা পটভূমি। তিনি লিখেছেন- “পবিত্র আশুরার সাথে হজরত হোসাইন (রাঃ) শাহদাতের ঘটনার কোন সম্পৃক্ততা নেই,এবং আশুরার দিবস কে স্মরণ করা বা রোজা রাখা বা এই দিবস কে পালন করার যে রীতি বর্তমানে ঘটা করে করা হয় তা নিতান্ত শিয়াদের বানানো এক ধরনের ভণ্ডামি এবং হাদিস ও কোরআনের আলোকে এটা কবিরা গুনাহ।” তারপর বললেন-

“এই দিনে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনা নিতান্ত ঐতিহাসিক কাকতালীয় একটি ঘটনা মাত্র।” এরপর আশুরার সাথে শবে বরাত এবং এপ্রিল ফুল’কে টেনে এনে গালাগালির দিকে ঢলে পড়লেন এবং চক্রান্ত খুঁজে পেলেন-

“গর্দভ নাম সর্বস্ব মুসলমানের বাচ্চা গুলো আশুরা,শবে বরাত এপ্রিল ফুল পালনের নামে যে ভণ্ডামি করে এবং তাকে পবিত্র বলে আখ্যা দেয় তা অজ্ঞতার নামান্তর এবং ঐতিহাসিক চক্রান্তকারীদের সুনিপন চক্রান্তের একটি অংশ।” অতঃপর আসল কথাটাই উল্টো করে বললেন-

“পবিত্র আশুরার দিন কে হজরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে দিবসের আসল ঘটনা গুলোকে আড়াল করা হয়,সেই সাথে প্রমাণিত বিষয় কে বাদ দিয়ে অনইসলামিক ইতিহাস কে দিয়ে ঈমান ও আমল নিয়ে খেলা করা হয়।”

(http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/7640/onia/70757)

(যৎকিঞ্চিৎ জবাবটি ছিলো এই-)

কি বলছেন!! পবিত্র আশুরার সাথে হজরত হোসাইন (রাঃ) শাহদাতের কোন সম্পৃক্ততা নেই? এটা নিতান্তই ঐতিহাসিক কাকতালীয় ঘটনা?

এবং আশুরার দিবস স্মরণ করা, রোজা রাখা, এই দিবসটি পালন করা শিয়াদের বানানো ভণ্ডামি? এবং হাদিস ও কোরআনের আলোকে এটা কবিরা গুনাহ??

আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনি 'কাকতালীয়' ব্যাপারটা বোঝেন ঠিকঠাক? দিবস এবং দিবস পালনের সামাজিক ও চেতনাগত তাৎপর্য বোঝেন? খিলাফাত, ইসলামের রাজনৈতিক বিধান এবং তার রাজতান্ত্রিক বিকৃতির কনসিকোয়েন্স বোঝেন? কারবালার ঘটনার পূর্বাপর ঘটনাবলী সম্পর্কে জানেন ভালোভাবে!?

শিয়াদের একটি ক্ষুদ্রাংশ হয়তো এনিয়ে অর্থহীন বাড়াবাড়ি করে। তাই বলে কারবালার শিক্ষা ও চেতনা, প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য প্রত্যাখ্যাত হবে??...

আপনি কি জানেন- মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ- তাঁর তামাম জীবনের প্রচেষ্টা, তাঁর নিদারুন ত্যাগ-তিতিক্ষার এই খিলাফাত, কেনো পঞ্চাশ বছর যেতে না যেতেই তাঁর প্রিয়তম দৌহিত্রকে, আহলে বাইতকে এভাবে নিরবংশ করতে একটা পক্ষ উদ্যত হয়ে উঠলো?...

শিয়া!

কবীরা গুনাহ!?

ভন্ডামি!! ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছি...

অথচ প্রশ্ন করতে শিখলাম না, দোর্দন্ড প্রভাবশালী মুসলিম সমাজের সবচেয়ে মর্যাদাবান মানুষটিকে এভাবে খন্ডবিখন্ড করা হচ্ছে, আর তিনি বলছেন- হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা?... (কেউ কি আছে আমাকে সাহায্য করার মতো?...)

কি হৃদয়বিদারক আকুতি?...

এ আকুতি নিজেকে বাঁচানোর জন্য ছিলো?... না! উনি তো শহীদ হয়েই যাচ্ছিলেন।

এ আকুতি মুসলিম উম্মাহর জন্য। তাঁর চেয়ে কে বেশী জানতো, মুসলিম উম্মাহর উপর আজ যে জগদ্দল স্বৈরাচার চেপে বসছে তা তার প্রাণশক্তিকে নিঃশেষ না করে ক্ষান্ত হবে না?!

কে বেশী জানতো এভাবে উম্মতে মুহাম্মদী একদিন পথভ্রষ্ট অভিশপ্ত সভ্যতার গোলাম হতে বাধ্য হবে?...

আপনি কে বা কোন পন্থি জানিনা, জানার প্রয়োজনও বোধ করি না, শুধু বলবো,

মনে রাখবেন-

বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর আজকের এই অধঃপতন- তা মুয়াবিয়া প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র এবং তার প্রতি মুসলমানদের সামগ্রিক সংগ্রামহীনতার পরিণতি মাত্র। এই পরিণতি আল্লাহ তা'লা সেদিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন- যতদিন না এই উম্মাহ সামষ্টিক এবং সর্বোতভাবে দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত মুয়াবিয়াতন্ত্র, এজিদতন্ত্রের প্রতিপক্ষে রুখে দাঁড়াচ্ছে।...

আর ততদিন ঈদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে এই আশুরা, কারবালার চেতনা।

সেই কথাই বলেছেন আমাদের জাতীয় কবি-

যত দিন না কায়েম হবে

খোদার ধরায় তাঁরই দিন

কিসের আবার ঈদের খুশি

এ অনুষ্ঠান অর্থহীন।

আর সেখানে এই ইমাম হোসাইন'ই ধ্রুবতারা, পথপ্রদর্শক।

এজন্যই রাসূল বলেছেন- হোসাইন আমার থেকে আমি হোসাইন থেকে। রাসূল হোসাইন থেকে কিভাবে? সে জবাব দিয়ে গেছেন মোহাম্মাদ আলী জওহার-

ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়

হার কারবালা কি বাদ।

(প্রতিবার কারবালার পর

জিন্দা হয় ইসলাম

হয় উর্বর।)

তাই শিয়া শিয়া কেনো করা

ওই আত্মপীড়ন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইসলামের রেফারেন্সে বহুপুর্বে নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। তাঁরও আগে এসব নাকচ করে কারবালার মূল শিক্ষা হাজির করেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি-

'ত্যাগ চাহি, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা'।

সুতরাং, রোজা রাখেন আর না রাখেন, আশুরা নামে ডাকেন বা কারবালা দিবস ডাকেন, তাতে কিছু আসে যায় না, এবং শিয়া-সুন্নি রাজনীতিও বাদ দেন, তারচেয়ে একজন মুসলমান হিসেবে নিজেকে জিজ্ঞেস করি- ইমাম হোসাইনের- ‘হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা?’র জবাবে আমার অবস্থান কোথায়?...

আমি কি আমার চারপাশের জালিম স্বৈরাচারদের প্রতিপক্ষে দাঁড়াতে পারছি? শক্তিতে না পারলে হক কথাটা কি আমার কন্ঠ ফুঁড়ে বেরুচ্ছে?... অন্তত সমস্ত অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে পারছি?? যদি না হয় তাহলে অন্যসব কিছু রেখে আমার ঈমানের দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে। কারণ এরপর আর বিন্দু পরিমান ঈমানও অবশিষ্ট থাকে না। আমরা বলছি না- বলেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ….

বিষয়: বিবিধ

১৮০৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347058
২৪ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
নিমু মাহবুব লিখেছেন : মোক্ষম জবাব দিয়েছেন।
Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৩
288222
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ নিমু ভাই...
347065
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৩০
এসো স্বপ্নবুনি লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ আমি সম্পূর্ণ একমত আপনার অনুভূতির সাথে।

২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৪
288223
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : যাযাকাল্লাহ! আমরাও আপনার স্বপ্ন বোনার সাথী...
347070
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুরাপুরি একমত নই কারন আশুরার গুরুত্ব ঈদের চেয়ে বেশি হতে পারেনা। আশুরার ধর্মিয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলাদা। দুটি স্মরন ও আলাদা।
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৩৫
288226
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : হা.হা.হা... আপনি আমাকে বলছেন কেনো?...
কবি নজরুল ঈদকে বিশেষ অবস্থায় 'অর্থহীন' বলল, তখন তো কেউ কিছু বললেন না। আল্লামা ইকবাল ইসলামের জিন্দা হয়ে ওঠার সাথে কারবালার সম্পর্ক আবিষ্কার করলেন- তখন তো কারও কিছু বলার সাহস হলো না! বিষয়টা আসলে আক্ষরিক অর্থে বলা না।

তারপরও প্রশ্নটা যেহেতু তুলেছেনই তাহলে বলতে হয়-
আসলে ঈদের যে উদ্দেশ্য, ঈদের মাধ্যমে আমরা যে আনন্দময় সমাজের স্বপ্ন দেখি, সে সমাজ কিন্তু দিবা স্বপ্নের ব্যাপার না, হাজারো সংগ্রামের ফল। অর্থাৎ, ঈদকে ঈদ রুপে পাওয়ার আগে সংগ্রামই মূখ্য, independent variable. সেই সংগ্রামের চেতনা হিসেবে আমরা আশুরার গুরুত্বের কথা বলছি, দেখুন, বলা হয়েছে 'ততদিন'...
তারমানে আশুরা 'ততদিন' ঈদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ থাকবে যতদিন আমরা আশুরার চেতনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের ঈদ না নিয়ে আসতে পারছি।

ঈদ মানে তো একটা দিন/তারিখের নাম নয়, যেটি অন্য ৩৬৪দিনের মতো দিন-মাস হিসেব করে আসবে। এভাবে দিন-মাস হিসেব করে আসা ঈদকেই আমাদের জাতীয় কবি অর্থহীন বলেছেন। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-দেশ-জাতি নির্বিশেষে মানুষ যতদিন মানুষের রাজত্ব(দাজ্জালের প্রভূত্ব) হতে মুক্ত না হচ্ছে, ততদিন ঈদের চেয়ে আশুরার গুরুত্ব অনেক বেশী আমাদের কাছে। আপনার কাছে নাও হতে পারে। আবার কোনো ভাইয়ের কাছে এর উল্টোও হতে পারে। এ আপনার আমার উপলব্ধির ব্যাপার। চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার...
347075
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৫৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ সব ভ্রান্ত কথা ও প্রথা থেকে বাচিয়ে সত্য পথের অনুসারী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
২৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৩৭
288227
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : আমীন। অনেক ধন্যবাদ, ভাই আবু জান্নাত...
347110
২৫ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৬:১০
ইবনে হাসেম লিখেছেন : পোস্টটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে ব্যাপারটিকে সুন্দর করে ব্যাখ্যা দানের জন্য। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
২৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:০৯
288299
শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেছেন : শুকরিয়া ভাই! যাযাকাল্লাহু খাইরান।...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File