মায়াভরা মায়ের পরশে কিছুক্ষণ!

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২০ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:৪১:২২ দুপুর



টেলিফোন বেজে উঠতেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে উঠলো একটি আদ্র কান্নারুদ্ধ অতি চেনা কণ্ঠ। বয়োবৃদ্ধা মমতাময়ী জননীর। কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করতেই জননীর কষ্টের সাগর যেন প্রবলবেগে উথলে উঠলো। কারণ জানতে চাইলে বললেন, ব্লাড সুগার অনেক বেড়েছে। সেইসাথে শরীরে জ্বরজ্বর অনুভূত হচ্ছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। চোখের ড্রপে কোন কাজ হচ্ছে না। তিন মেয়েই অনেক দূরে। ইচ্ছে করলেই তাদেরকে দেখতে পারিনা। অনুভব করলাম কোন কারণে হয়ত মায়ের মনটি আজ ভালো নেই। তাই ধীরে ধীরে শান্ত দরদপূর্ণ কণ্ঠে বললাম, আপনি নিশ্চয়ই জানেন একবার হযরত সা’দ (রাঃ) নবীজি (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন কাদেরকে সর্বাপেক্ষা বেশী বিপদ মুসীবত দ্বারা পরীক্ষা করা হয়? উত্তরে নবী করীম (সাঃ) বললেন, “নবীদের”। এরপর আল্লাহ্‌র নিকট যারা তুলনামূলকভাবে অধিক উত্তম তাঁদেরকে”। আরও বললেন, মানুষ তাঁর ঈমান ও দ্বীনদারীর মাত্রানুপাতে বিপদগ্রস্ত হয়। যার ঈমান ও দ্বীন যত বেশী মজবুত ও শক্ত তাঁর বিপদ মুসীবতের পরীক্ষাও অত্যধিক কঠিন বা শক্ত হয়।



নবী করীম (সাঃ) আরও ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দা বান্দির বিপদ মুসীবত লেগেই থাকে। এভাবেই তাঁদের গুনাহখাতা মাফ হয়ে যায় এবং তাঁরা রোগে শোকে যন্ত্রণা ভোগের পর পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করে (তিরমিযী, দারিমী, ইবনে মাজাহ)। কথাগুলো শোনার সাথে সাথেই মা স্বয়ং অনেক হাদীসের উদ্ধৃতি টানলেন। সেইসাথে উনার কণ্ঠে খুশী ও আনন্দের রেখা উদিত হল। আলহামদুলিল্লাহ্‌। পরে একে একে সুসংবাদগুলো জানালেন। আজ বাড়ীতে তালীমের মজলিসে বিপুল জনসমাগম হয়েছে। দেশের বাহির থেকে বক্তা এসেছিলেন। উপস্থিত নারী পুরুষ ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে তাঁদের বয়ান শুনেছেন। ভোরবেলা যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় তিনি নিজেই উপস্থিত ছোট ছোট মেয়েদের আরবী শিক্ষা দিয়েছেন আর তাঁকে সহযোগিতা করেছেন তাঁর আদরের নাতনী। যাকে দিয়ে তিনি অনেক ছোটবেলা থেকেই তালীম পরিচালনা করাতেন। বর্তমানে সে প্রথম গর্ভবতী, তাই কয়েকদিন যাবত মায়ের সান্নিধ্যে আছেন।

এসব শুনে মাকে বললাম এবার ভেবে দেখুন আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা আপনাকে এক জান্নাতি পরিবেশে রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার তিন মেয়ে দূরে আছে ঠিক কিন্তু কোন মেয়েই কিন্তু চিরদিন মায়ের কাছে থাকে না। আপনার অত্যন্ত খুশী হওয়া প্রয়োজন যে, আল্লাহ্‌ পাক আপনার তিন মেয়েকেই ভালো রেখেছেন, সুস্থ সবল রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌। আর বাড়ীর সাথেই মেয়েদের মক্তব, তালীম ঘর যার দেখাশুনাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালনের তৌফিক আল্লাহ্‌ আপনাকে দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৮ -১৯ বছর ধরে আর তা আপনি একান্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। যা অনেকের ভাগ্যেই জুটে না। দ্বীনের কাজে এখনো দীর্ঘ সময় মেহনত করছেন। এর চেয়ে এক জীবনে খুশীর আর কি থাকতে পারে।

এতক্ষণে অনুভব করলাম আমার মায়ের কণ্ঠে এখন অকৃত্রিম উপচে পড়া সন্তুষ্টি আর তৃপ্তির আনন্দ। অনেক দূরে থেকেও যেন তাঁর দ্যুতিময় মধুর স্নেহাস্পর্শ আমাকে আলিঙ্গন করে রইলো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো…।।

মায়ের ভালোবাসার বিশাল সমুদ্রসিন্ধুতে যেন তখন পরিভ্রমণ করছি দিগন্ত থেকে দিগন্তে, আর মিনতিভরা আকুলতা দিয়ে বলছি-

হে আমার প্রতিপালক আপনি আমার মাতাসহ পৃথিবীর সব মাতাকে সেভাবে লালন পালন করুন যেভাবে তাঁরা আমাদেরকে ছোটবেলায় লালন পালন করেছেন। আমাদের ভালোমন্দে, বিপদসঙ্কুলে, আনন্দঘন মুহূর্তে, নীরবতায়, কাতরতায়, প্রার্থনায় গোচরে কিংবা অগোচরে সর্বাবস্থায় মাতার অসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করার তাওফিক আমাদের দান করুণ। আমীন।



বিষয়: বিবিধ

৯৯৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378888
২০ অক্টোবর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫২
স্বপন২ লিখেছেন : দ্বীনের কাজে এখনো দীর্ঘ সময় মেহনত করছেন। এর চেয়ে এক জীবনে খুশীর আর কি থাকতে পারে। I agree with you apa. Excellent writing. It touches the my heart. My heart goes with her(your's mother) though I am not there. May Allah will give her Jannah,
২১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০২:২১
313838
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


আপনার আন্তরিকতাপূর্ণ প্রথম মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি, আমার প্রাণপ্রিয় মায়ের জন্য হৃদয় বিগলিত করা দোয়া ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378891
২১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০১:৩৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : যার ঈমান ও দ্বীন যত বেশী মজবুত ও শক্ত তাঁর বিপদ মুসীবতের পরীক্ষাও অত্যধিক কঠিন বা শক্ত হয়। ...ইয়া আল্লাহ আমাকে কঠিন পরিক্ষা ছাড়াই পাস করিয়ে দিন,ক্ষমা না করে আমাকে ওপারে নিবেন না !!

আপনার মায়ের জন্যে অসংখ্য দোয়া রইলো। তিনি আসলেই জান্নাতি পরিবেশে আছেন,অনেক সময় জ্ঞানীরাও বিচলিত হয় তবে তারা দ্রুত উপলব্ধীতে আসে। আমার জন্যে দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ আমার কাজকে সহজ করে দেন
২১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০২:২৭
313839
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু সুহৃদ ছোট ভাই।


মহান রাব্বুল আলামিন আপনার জীবন জিন্দেগী শান্তিময় করুণ সর্বাবস্থায় আল্লাহ্‌র পথের পথিক হিসাবে মনোনীত রাখুন, আর পুটীর মাকে নিয়ে ঘরময় আলো ঝলমলিয়ে উঠুক এই প্রার্থনা।


আমার প্রাণপ্রিয় মায়ের জন্য দোয়া ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378902
২১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ অক্টোবর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫২
313902
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

379033
২৫ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০১:১৩
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : আমিন
২৫ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০১:৫২
313920
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


ছুম্মা আমীন।


জাজাকাল্লাহু খাইরান ।
379061
২৫ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:২৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : হে আমার প্রতিপালক আপনি আমার মাতাসহ পৃথিবীর সব মাতাকে সেভাবে লালন পালন করুন যেভাবে তাঁরা আমাদেরকে ছোটবেলায় লালন পালন করেছেন। আমাদের ভালোমন্দে, বিপদসঙ্কুলে, আনন্দঘন মুহূর্তে, নীরবতায়, কাতরতায়, প্রার্থনায় গোচরে কিংবা অগোচরে সর্বাবস্থায় মাতার অসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করার তাওফিক আমাদের দান করুণ। ছুম্মা আমিন....
অনেক অনেক দোয়া রইলো। ধন্যবাদ আপনাকে
২৫ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৩
313923
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


মাঝে মাঝে আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।


দীর্ঘদিন থেকে আপনার মূল্যবান লিখা নেই কেন?


প্রেমময়ী ভাবীসহ সবাই ভালো আছেন তো?

379068
২৫ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ওয়াইলাইকুম সালাম,
আমি আগামি মাসে দেশে যাচ্ছি, তাই আপদত লিখালিখি অফ রেখেছি...দেশ থেকে এসে আবার লিখা স্ট্রাট করবো, ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাদের প্রতি আন্তরিকতা মনে হয়ে অনেক বেশি, তাই ব্লগে না এসে পারিনা..।
২৫ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৫২
313926
সন্ধাতারা লিখেছেন : মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য আমাদের একের প্রতি অন্যের পবিত্রতম মায়ামমতা, অনুভূতি সত্যিই অভিভূত করে।


কোন প্রিয় ভাইবোন দীর্ঘদিন থেকে ব্লগে অনুপস্থিত থাকলে সত্যিই তাই অনেক খারাপ লাগে। এ এক অপ্রতিরোধ্য নাড়ীর টান।


তবে জেনে আনন্দিত হলাম যে, দেশ থেকে ফিরে এসে আবার ব্লগে নিয়মিত হবেন। অনিয়মিত হলেও ব্লগীয় সাথীদের ভুলে যাবেন না যেন।


আপনার জন্য প্রাণভরা অফুরান দোয়া। নব জীবন সুন্দর শুভ ও মধুময় হোক।


জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File