গৌরবগাঁথা স্মৃতিগুলো ভাবনার দিগন্তে কড়া নাড়ে!!!!!

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৬ জুন, ২০১৪, ০৫:৩৫:৫১ বিকাল



হারানো বা ফেলে আসা সময়গুলোর ভাঁজে ভাঁজে বিস্ময়ে ভরা এমনসব হৃদয় জাগানিয়া অভূতপূর্ব কাহিনী লুকিয়ে আছে যা পাঠ করলে চিন্তা চেতনা বিশ্বাস আর বোধের দিগন্তে ঝড় তোলে। বিবেকের অতলান্তে জমা হতে থাকে রাশি রাশি গৌরবগাঁথা স্মৃতিমালার যা হৃদয়কে পরিপুষ্ট করে, করে তোলে মহতী। অন্তর দৃষ্টিকে উন্মেলিত করে, ব্রতী হতে শেখায়, ভাবনার আকাশে বিমোহিত চিত্ত স্মৃতিগুলোকে নতুন করে নাড়িয়ে দেয় যার আবেশে অবশ হয়ে যায় দেহ মন। নিঃসৃত হতে থাকে এমন অজস্র শান্তি সুখের পরশ যা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও বোবা করে রাখে। যা সত্যিই কল্পনাতীত। এখনে তারই একটি সত্যিকার চিত্র তুলে ধরা হলঃ

এক গভীর রাত্রিতে নিদ্রামগ্ন সম্রাট শাহজাহান স্বপ্নে একটি মসজিদ অবলোকন করলেন। ঘুম ভেঙ্গে গেলে তাঁকে এক গভীর তন্ময়তায় ঘিরে বসলো। আকুল ও অস্থির চিত্তে পরের দিন তিনি স্থপতিদের ডেকে তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদের নকশা অঙ্কন করতে বললেন। উপস্থিত সকলেই চরম প্রতিযোগিতামূলক কাজে বাদশাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে সেই কল্পিত মসজিদের চিত্র তুলির আঁচড়ে বহুরূপে বহুভাবে আঁকলেন। কিন্তু কোন ছবিই সম্রাটের মনঃপুত হল না। কারণ সেগুলো স্বপ্নের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না। বাধ্য হয়ে পরিশেষে সেসময়কার অসাধারণ একজন খ্যাতনামা জনপ্রিয় দরবেশ বা সাধকের স্মরনাপন্ন হলেন। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সেই দরবেশ সম্রাটকে বললেন, ‘আমার অপেক্ষাও বড় দরবেশ যিনি আপনার রান্না করেন’।

বাদশা বিস্ময়াভিভূত হয়ে সংক্ষিপ্ত জামা পড়া বাবুর্চীকে ডেকে একইভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করলেন। মসজিদের ছবির ব্যাখ্যা শুনেই তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে বড় বুজুর্গ যিনি আপনার পায়খানা পরিষ্কার করেন’। বাদশাহ গভীর আগ্রহে এবার মেথরকে ডেকে বললেন, ‘আপনার মত মহান মানুষ নিজেকে গোপন রাখার এ কৃচ্ছ সাধনার উপর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আর ক্ষমা চাইছি আপনাকে এর আগে চিনতে না পারার জন্য’। এবার মেথর ফকির সম্রাটের স্বপ্নের আদ্যপান্ত শুনে বলেন, “এটা মোফাত্তেশরা ইঞ্জিনিয়ার আঁকতে পারবে কেন? এটা যে বেহেস্তের মসজিদ”। মেথর ফকির একজন অঙ্কন শিল্পীকে ডেকে এনে এবার নিজে মসজিদের একটি ছবি এঁকে বাদশাহকে দেখালেন। ছবি দেখার সাথে সাথে সম্রাট চমকে উঠলেন কারণ এ ছবির সাথে তাঁর স্বপ্নে দেখা ছবির অবিকল মিল এবং হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ। পরিশেষে ফকির বললেন, ‘ভ্রাতঃ স্মরণ থাকে, যে ব্যক্তির নামায ক্বাযা হয় নাই কেবল তিনিই এ মসজিদের প্রথম প্রস্তরখানি প্রোথিত করবেন’। (দ্রঃ রাজমুকুট, পৃষ্ঠা ১৩, ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে মুদ্রিত)। উল্লেখ্য যে, এ দিনের পর থেকে সেই ফকিরকে আর কখনও লোকালয়ে দেখা যায়নি।

এরপর সম্রাট দিল্লির জুমআ মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনায় বহু আলেম সূফী আমির ওমরাহদের বললেন, ‘আমি এমন লোক দ্বারা মসজিদের প্রথম ইট বসাতে চাই যার বার বছর কোনদিন তাহাজ্জুদের নামায ক্বাযা হয়নি’। সুদীর্ঘ বার বছর গভীর রাতে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এ নামায আদায় করা অনেক দুরূহ জেনে কেহই তাঁর ডাকে এগিয়ে এলেন না। বাধ্য হয়ে বাদশাহ নিজেই প্রথম ইট বসালেন এবং কেঁদে ফেললেন, ‘হে আল্লাহ্‌ আমি জানতাম না যে তুমি আমাকে এমনিভাবে প্রকাশ করে লজ্জিত করবে। হে আল্লাহ্‌, তোমার শোকর (কৃতজ্ঞতা) যে আমার বার বছর তাহাজ্জুদ নামায বাদ যায়নি’। মসজিদটি তিনি একটি সুউচ্চ স্থানে স্থাপন করলেন। কেন উঁচু জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করেছেন এমন অনেক লোকের প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট বললেন, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার ছোট বড় প্রজারা যখন উচ্চ স্থানে স্থাপিত মসজিদে আল্লাহ্‌কে সিজদা করবেন আমি তখন আমার প্রজাবৃন্দের পায়ের নীচে, অনেক নীচে কবরে তাঁদের দোয়ার ভিক্ষুক হয়ে প্রতীক্ষায় থাকবো’। তাঁর অবিস্মরণীয় মহামূল্যবান অনন্ত ও অপরিমেয় এই প্রতীক্ষা এবং প্রত্যাশা দিল্লীর শোভিত বুক ধন্য করে আজও সে গৌরবোজ্জ্বল মসজিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ মহৎ প্রাণ মানুষের ব্যথিত হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে চিরস্মরণীয় অমরসম্রাট শাহজাহান অনন্য মধুর স্মৃতির ঝড় তোলে, ভাবনার দিগন্তে কড়া নাড়ে অবিরত।

সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস

বিষয়: বিবিধ

১৩৩১ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

235477
১৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩০
টাংসু ফকীর লিখেছেন : জী জনাব অনেক সুন্দর করে আমাদের ঈমানী চেতনাকে তুলে ধরেছেন, অনেক ধন্যবাদ
১৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
182031
সন্ধাতারা লিখেছেন : আমার ব্লগে আপনার প্রথম উপস্থিতিকে অভিনন্দন। অনেক ভালো লাগলো আপনার সুন্দর মন্তব্যে। আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেইনা বলেই আজ জাতি হিসাবে ধিকৃত, অবহেলিত এবং অসন্মানিত। এটা বড়ই পরিতাপের বিষয়।
১৭ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:১২
182178
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অতি সত্য কথা জনাব,
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০১:৩৪
182595
সন্ধাতারা লিখেছেন : Many many thanks bhaiya. A. Lot of doua for you.
235546
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : বেশ ভালো লাগলো আপু।
রহমানের অনেক বান্দা আছেন যারা খুুউব লুকিয়ে থাকেন।
যাদের রাত কাটে সেজদাহ আর কিয়ামের মাধ্যমে।
যাদের সাথে বুক মিলালে মনে হয় যে আমার অন্তর তাকাওয়ায় পূর্ণ হয়ে যায়।
যাদের কথা হৃদয়কে বিদীর্ণ করে।
তাদেরকে দেখলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃস্টি হয়।
এরকম দু একজনের সাক্ষাৎ আমি পেয়েছি।
একজনতো এমন সে বড় আলেম কিন্তু কেউ তাকে দেখলে মনে করবে এ ব্যাটা কলা বিক্রি করে। কিংবা মনে করবে ফকির।
কিন্তু তার সংস্পর্শে অল্প সময় থাকলে মনে হবে যে আল্লাহর বান্দাই আমি দেখছি।
কিন্তু সে এতটা গোপন থাকে যে কেউ তাকে চিন্তে পারেনা খুব সহজে।
লিখাটি ভালো লাগলো।
১৬ জুন ২০১৪ রাত ০৯:০০
182080
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী অনুভূতিপূর্ণ মন্তব্য করেছো। এই উপলব্ধিবোধের মাহাত্ব্য গুরুত্ব ও ভালোলাগাটুকু শুধু তারাই অনুভব করতে পারে যার অন্তরে আল্লাহ্‌ ভীতি আছে। সত্যিই বলেছ খাঁটি মুমিন কখনই নিজেকে প্রকাশ করতে চায় না বা তাঁদের বাহিরের রূপ দেখে চেনাও যায় না।

আমি একদা মাহে রমযানে মসজিদে দশ দিনের ইতেকাফ রত অবস্থায় একজনের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। দেখা মাত্রই মনে হয়েছিল সে যেন বেহেস্তের বাগান থেকে আবির্ভূত হয়েছে। আমার সেই মুহূর্তে কিরূপ অনুভূতি হয়েছিলো ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না!
পড়ে হৃদয়স্পর্শী মন্তব্যের জন্য তোমার জন্য মাহে রমযানের প্রাক্কালে অনিঃশেষ দোয়া রইলো।
235601
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১০:৩৪
আওণ রাহ'বার লিখেছেন :
এই আয়াত বার বার মনে পড়ছে।
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:১২
182121
সন্ধাতারা লিখেছেন : Alhamdulillah my little brother. Best wishes for you all time. May Allah give you happy and prosperous life.
235608
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:১৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : Is harry alright aion?
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:২২
182135
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : Hariken is present in
http://lighthouse24.org/blog
lighthouse blog....
I didn't see him today @ bd blog.....
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:২৭
182137
সন্ধাতারা লিখেছেন : Thank you to let me know. Take care of you.
১৬ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৪
182150
সন্ধাতারা লিখেছেন : Just right now I have visited lighthouse and found your writing. Masha Allah
235771
১৭ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
আফরা লিখেছেন : গৌরব আর অনুপ্রেরনা মুলক একটা পোষ্ট পড়ে সত্যি অনেক ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৭ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
182284
সন্ধাতারা লিখেছেন : জেনে খুশী হলাম যে পড়ে ভালো লেগেছে। তোমার মন্তব্যটি অনেক সুন্দর। আল্লাহ্‌ তোমার সুন্দর অনুভূতির জন্য উত্তম পুরুস্কার দান করুণ। ভালো থাকো আফ্রামণি।
১৭ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৫
182300
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন :
আফরা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া Day Dreaming Day Dreaming
অনেক সুন্দর হয়েছে সন্ধা ভাইয়া Big Grin It Wasn't Me! Big Grin সারা জীবন সন্ধা আপুই ডেকে আসলাম.... কেনু কেনু? Crying Crying Crying
১৭ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
182337
সন্ধাতারা লিখেছেন : কোন ক্ষতি নেই! হ্যারি
১৭ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
182349
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : @সন্ধাতারা - ক্ষতি আছে..... আমি এরকম কনফিউশ্যনে থাকতে পারবো না...... ফিক্সড করে দেন ..... “কি নামে ডাকিবো তোমায়......”Love Struck Love Struck Love Struck
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০১:১১
182582
সন্ধাতারা লিখেছেন : As you like or wish harry.
235842
১৭ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৩
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : গত কালই পড়েছিলুম..... খুব সুন্দর লেগেছে..... Thumbs Up Bee Thumbs Up অনেক নতুন ইনফো জানলাম......... তাই অনেক ধন্যপাতা আপনার জন্য.... Good Luck Good Luck Good Luck আচ্ছা...... ওটা কি “সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস” থেকে সরাসরি কপি পেস্ট? I Don't Want To See I Don't Want To See
১৭ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৪
182343
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগা অনুভূতির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, সেইসাথে মন্তব্যের জন্য অনিঃশেষ দোয়া।Good Luck Good Luck Good Luck

কাহিনী সেখান থেকে নেয়া তবে সরাসরি কপি পেস্ট নয়।
236025
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০১:০৫
নোমান সাইফুল্লাহ লিখেছেন : সেই গৌরব আবার ফিরে আসুক, এই কামনা করছি। লেখকে/লেখিকাকে ধন্যবাদ.... Rose
১৮ জুন ২০১৪ রাত ০১:১৪
182584
সন্ধাতারা লিখেছেন : Inshallah bhaiya. We need to learn and practise following our glorious history. Thanks for nice comment noman bhaiya.
285079
১৭ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৪৮
নাছির আলী লিখেছেন : সেই গৌরবময় রাজা প্রজা আমাদের সমাজে আবার আসুক। অনেক ভালো লাগলো ।আপনার সু সাস্থ্য কামনায়...। যাযাকাল্লাহ
১৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১৩
229077
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam vaiya. I am really grateful that one by one you have read my writing and giving lots of inspiration. Jajakallahu khair.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File