দেশের জন্য তৌহিদী জনতার যা করণীয়

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৩৮:৩৬ বিকাল



পাষণ্ড সরকারের অবিশ্বাস্য জুলুম নির্যাতন হত্যা গুম অপহরণ ধর্ষণ জিম্মি নাশকতা হামলা মামলা আর গণহত্যার মধ্য দিয়ে বর্ণনাতীত লোমহর্ষক ঘটনায় জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের যে নির্লজ্জ খেলা গত ৫ই জানুয়ারি ঘটে গেল সেটা সারাবিশ্বে নজিরবিহীন কলঙ্ক হিসাবে যুগ যুগ ধরে ইতিহাস হয়ে থাকবে। দেশ-ধর্ম-সম্ভ্রম বাঁচানোর লড়াইয়ে যে বীর শহীদরা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছে এবং করেই চলেছে, যারা ভিটেমাটি সন্তান-সন্ততিসহ নিজের জানমাল কোরবানি দিয়ে জালিম সরকারের কাছ থেকে চরম অমানবিক নিন্দা-অপবাদ-কুৎসা কুড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার দায়িত্ব কাদের? আজও যারা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নিরাপরাধ মানুষকে পশু-পাখির মত নির্বিচারে সবার সামনে গুলি করে হত্যা করছে তাদের বিচারের দায়িত্ব কারা নেবে? এহেন পরিস্থিতিতে সমাজ তথা দেশকে জাহেলিয়াতের অভিশাপ মুক্ত রাখার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাক কোরআন মজিদে স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন এভাবেঃ হে নবী! কাফের এবং মোনাফেকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করো এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করো। (সূরা আত- তাওবাহঃ৭৩)

যে মা-বোনেরা ধর্ষিতা হওয়ার অপমানে, লজ্জায়, ক্ষোভে, দুঃখে জলন্ত চুল্লীতে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভস্মীভূত করছে এদেরকে কে নরক যন্ত্রণা মুক্তি দেবে? বুকের মানিক হারানো, স্বামী-স্বজন হারানো বেদনার্ত অসহায়দের আহাজারি আর গগণ বিদীর্ণ করা অসহনীয় করুণ আর্তনাদ কেন কারোও হৃদয়কে স্পর্শ করে না, পৌঁছায় না কেন কারো কর্ণগুহরে? এহেন অবস্থায় আল্লাহ্‌ পাক তাই বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন রেখেছেনঃ তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র পথে সেইসব অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করছো না? যারা দুর্বল হওয়ার কারণে অত্যাচারিত হচ্ছে আর ফরিয়াদ করছে হে আমাদের রব! আমাদেরকে এ অত্যাচারী জালেম শাসকের দেশ হতে অন্যত্র নিয়ে যাও এবং তোমার নিকট থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক হিসাবে একজন দরদী বন্ধু ও সাহায্যকারী পাঠিয়ে দাও। (সূরা আন-নিসাঃ ৭৫)

শেখ হাসিনার সরকার দেশ-ধর্ম-স্বাধীনতাসহ সবকিছুর বিনিময়ে লেন্দুপ দর্জির ভূমিকা বেশ দাম্ভিকতা নির্লজ্জতা ও বিশ্বস্ততার সাথে পালন করতে বদ্ধপরিকর, এই মীরজাফরের হাত থেকে কে বাঁচাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে? কে দেবে নিজের ধর্ম-কর্ম-বিশ্বাস পালন করার নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা? কেন আজ মসজিদের পর মসজিদে তালা ঝুলছে? গ্রামের পর গ্রাম কেন মানবশূন্য? কেন স্কুল কলেজে হিজাব পরিহিত বোনেরা মেয়েরা বেইজ্জতি হচ্ছে? কেন আজ নিজ দেশে এত জিল্লতি-ভোগান্তি? এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় চলুন দেখি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আল্লাহ্‌ পাকের হুকুম কি, তুমি তাদের সাথে লড়াই করে যাও যতক্ষণ না ফেতনা বিপর্যয় নির্মূল হয় এবং আল্লাহ্‌র দ্বীন সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা হয়। (সূরা বাকারাঃ ১৯৩)

আমরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান দেশের ভাগ্যবান নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অধিকাংশ মুসলমানদের চেতন বা অবচেতন ক্ষমাহীন কর্মকাণ্ড ও নিঃস্পৃহতা, দায়িত্ব জ্ঞানহীন পদক্ষেপ এবং আচরণ, সর্বাবস্থায় কৌশল-সতর্কতা অবলম্বন না করার যে মানসিকতা, ক্ষেত্র বিশেষে আমিত্বভাব এসব খেসারতের চিত্রই হল আজকের বিরাজিত অভিশপ্ত সমাজ। আমাদের লাঞ্চিত-বিড়ম্বিত অবস্থা প্রদর্শন করে আমাদের বিদ্যমান মূমূর্ষ ঈমানের দুরাবস্থার হাল!! আর এ দুরারোগ্য ব্যধি যে অল্প সময়ে পরিবার থেকে সমাজে সংক্রামিত হয়েছে তা নয়, বরং জ্ঞানপাপীদের অদূরদর্শিতা, অহমিকাবোধ, ইসলামের অপব্যাখ্যা করে অনৈক্যের ক্ষেত্র তৈরি, বৃহৎ স্বার্থকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে গুরুত্ব না দেয়া, অকারণে সীমাহীন বাকযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া, পারস্পারিক অবিশ্বাস, ইসলামকে পূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে না মেনে বরং একটি ধর্ম হিসাবে গ্রহণসহ বহুবিধ কারণে মুসলমানরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এক্ষেত্রে মুসলমান পরিচয়ে খণ্ডিত ইসলাম চর্চার কোন সুযোগ নেই। তাই মুসলমানদের নুন্যতম ঈমান-আকিদা, বিবেক-বুদ্ধি, মানবতা-চেতনার স্তর আজ কোন পর্যায়ে ভাবতেও অবাক হতে হয়? মহান রাব্বুল আলামিন এসব ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে এভাবেই সাবধান বাণী করেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা শুধু আল্লাহ্‌কেই যথার্থভাবে ভয় করো। যেমনটা ভয় করা উচিত আর তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল-ইমরানঃ ১০২)

অন্য স্থানে আল্লাহ্‌ পাক দুর্বল ও কপট মুসলমানদের প্রতি ক্রোধে ফেটে পড়ে এমনি কঠোর ভাষায় বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল যে, তোমাদের যখন আল্লাহ্‌র পথে অভিযানে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তোমরা যমীনকে আঁকড়িয়ে ধরে গড়িমসি কর? তোমরা কি তবে পরিতুষ্ট হয়েছ পরকালের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে? তা হলে তোমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, পার্থিব জীবনের এসব ভোগের উপকরণ পরকালের তুলনায় খুবই অকিঞ্চিতকর। যদি তোমরা অভিযানে বের না হও তাহলে আল্লাহ্‌ তোমাদের ভয়ানক শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, আর তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। (সূরা আত-তাওবাহঃ ৩৮-৩৯)

আল্লাহ্‌র রাসুল (দঃ) সম্পূর্ণ বৈরী অবস্থায় থেকেও মাত্র ২৩ বছরের নবুওয়াতি জীবনে ইসলামকে গোটা বিশ্বে আর সকল মতবাদের উপর বিজয়ী করতে সক্ষম হলেও আজকের ইসলামী স্কলাররা তা থেকে অনেক ক্ষেত্রে অসফল। ইসলামকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) যে প্রজ্ঞা, সাহস, ধৈর্য, ত্যাগ, দূরদর্শীতা ও কৌশল অবলম্বন করেছেন সেটা থেকে আমরা আজ যোজন যোজন দূরে! এক্ষেত্রে জামায়াত শিবিরের দায়িত্ব অনেক একমাত্র আপোষহীন ইসলামী আন্দোলনমুখী দল হিসাবে। এ দলটির পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমাদের সোনার দেশের সোনার মানুষগুলোর আগামী দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম উদ্দেশ্যই হল জীবনের সকল ক্ষেত্রে ন্যায় শাসন প্রতিষ্ঠা করে সর্বস্তরের মানুষের শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর তাতে বাধা আসলে অবশ্যই অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতনকে সমূলে উৎখাত করে আল্লাহ্‌র দ্বীন বলবত না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। যে কাজটি আল কোরআনের আলোয় শুধুমাত্র জামায়াত-শিবির নিবেদিতভাবে করে যাচ্ছে। আন্দোলনকে চূড়ান্তরূপ দিতে তাদের সাথে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ জরুরী। মহান আল্লাহ্‌র ভাষায় তা এমনিভাবে নির্দেশিত হয়েছে, তোমরা লড়াই চালিয়ে যাও ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না বিপর্যয় উচ্ছেদ হয়ে দ্বীন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌রই জন্য প্রতিষ্ঠা হয়। (সূরা বাকারাঃ ১৯৩)

মূলত এ পর্যায়ে আল্লাহোদ্রোহীদের সাথে মুজাহিদদের মরণপণ লড়াই শুরু হয়ে যায়। দ্বীন কায়েমের এ সংঘাত সংঘর্ষ সংগ্রাম ও আন্দোলনে মুমিনগণ তাদের বুকের তাজা রক্ত ইসলামের পথে ঢেলে দিতে হয়ে উঠে উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত। যেখানে হয় তারা মারে অথবা মরে। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করে, তারা (অসৎ ব্যক্তিদের) নিহত করে অথবা (নিজেরা) নিহত হয়। (সূরা তাওবাহঃ ১১১)

অন্যত্র মহান রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন, যারা ঈমানদার তারা আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রাম করে, আর যারা কাফের তারা তাগুতের পথে সংগ্রাম করে (সূরা আন-নিসাঃ ৭৬)

এক্ষেত্রে মুসলমান পরিচয়ে ঈমান রত্ন নিয়ে বাঁচতে হলে অবশ্যই আল কোরআনের যে আদেশ নির্দেশ উপদেশ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে ভীতিহীন আপোষহীনভাবে অবিচল চিত্তে। এই অবিচলতা প্রমাণে তাই আল্লাহ্‌ পাক পরীক্ষারও ব্যবস্থা রেখেছেন। আর সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার উপায়ও মুমিনগণকে বাতলে দিয়েছেন। বলা হয়েছে মানুষের জীবন এবং সম্পদ দুটোই তাদের কাছে অতি প্রিয় এবং লোভনীয়। অনন্ত জান্নাতের জন্য এই পরম মহার্ঘ বস্তুকে উৎসর্গ করা চাই। তাই দয়ার নবী এক হাদীসে বলেছেন, “জেনে রেখো আল্লাহ্‌র সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান, দাম বেশী না দিলে পাওয়া যায় না। আর মনে রেখো আল্লাহ্‌র সম্পদ হলো জান্নাত”। (তিরমিজি)

বিষয়: বিবিধ

১২৮৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

178467
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে!
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
131614
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনাদের মত মানুষদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও প্রেরণামূলক উপদেশ জাতিকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
178505
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
131621
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভুল মতামতের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অজ্ঞতাবশত আমি এক সন্মানিত ভাইয়ের মূল্যবান মতামতের উপর নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে ভুলক্রমে হারিয়ে ফেলেছি। ভীষণ খারাপ বোধ হচ্ছে এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য। ক্ষমা করবেন।

178587
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০১
শিকারিমন লিখেছেন : অনেক সুন্দর লিখেছেন , সবার প্রচেষ্টায় হয়ত একদিন আমরা সুন্দর সমাজ বিনির্মান করতে পারব।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
133263
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার অতি মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ তবে এজন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা চাই।
178808
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২৬
এনামুল মামুন১৩০৫ লিখেছেন : ধন্যবাদ
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:১৫
192265
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File