রাজনৈতিক বিশ্লেষণঃ সিরিয়াতে মার্কিন হামলার উদ্দেশ্য কি ???

লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:১৩:৪১ রাত



September 3, 2013 at 8:02pm

ভুমিকাঃ

গত ২১ আগস্ট আসাদ বাহিনী কত্রিক সিরিয়ার গুতা শহরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহারের অভিযোগ ওঠে যাতে এপর্যন্ত ১৭২৯ জনের মত মারা গেছে বলে জানা গেছে[১]। আসাদ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহারের পর পশ্চিমারা তাদের স্বভাবসুলভ মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফেবিয়াস ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন যে, ''এধরণের আক্রমণ প্রমাণিত হলে পাল্টা আক্রমণের দরকার পড়তে পারে''[২]। ব্রিটেনও এব্যাপারে তাৎক্ষনিক পতিক্রিয়া বেক্ত করে বলেছে এধরণের কাজের জন্য শক্তিশালী জবাব দিতে হবে[৩]। যদিও ব্রিটেন পরবর্তীতে তার অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এছাড়া গত ২৩ আগস্ট মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব চাক হেগেল বলেছেন, ''ক্রুজ মিসাইল দিয়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে সম্ভাব্য আক্রমণে সহায়তার জন্য ইতিমধ্যেই পেন্টাগন তার রণতরীকে সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ''[৪]।

এখানে খেয়াল করার বিষয় হোল মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা এর পূর্বেও বেশ কয়েকবার আসাদ সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের ব্যাপারে হুশিয়ারী দিয়েছিলো এবং একে রেড লাইন ঘোষণা দিয়ে বলেছিল আসাদ সরকার যদি এই রেড লাইন অতিক্রম করে তাহলে সিরিয়াতে পশ্চিমা আক্রমন অনেকটা নিশ্চিত। এপ্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যটা ছিল এরকম ''আমরা আসাদ সরকারকে এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরে অন্যসব পক্ষগুলোকেও এটা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে আমাদের জন্য একটা রেড লাইন আছে আর সেটা হোল আমরা যদি দেখি যে সিরিয়াতে রাসায়নিক অস্ত্রের মুভমেন্ট হচ্ছে অথবা তার ব্যাবহার হচ্ছে''[৫]।

প্রকাশ থাকে যে, আসাদ সরকার এর পূর্বেও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাবহার করেছিলো[৬]। কিন্তু সেই সময় মার্কিনীরা বলেছিল তাদের কাছে যে প্রমাণ আছে সেটা ততটা শক্তিশালী নয় যার ওপর ভিত্তি করে কোন হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে[৭]।

তাই এখন প্রশ্ন হোল মার্কিনীরা কি সিরিয়া আক্রমণ করতে যাচ্ছে? যদি মার্কিনীরা সিরিয়া আক্রমণ করেও ফেলে তাহলে এর থেকে তারা কি ধরণের লক্ষ অর্জন করতে চায়? এছাড়া আসাদ সরকার কেন এমন একটি নাজুক মুহূর্তে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহার করতে গেলো যখন কিনা তার সরকার পতনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে? তাও এমন একটা সময়ে আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাবহার করলো যা বিশ্ব জনমতকে স্বাভাবিকভাবেই আসাদের বিরুদ্ধে নিয়ে যাবে এবং সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপকেই ত্বরান্বিত করবে। তাহলে এতে আসাদের লাভটা কি হোল?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে আমাদের বেশ কিছু ফ্যাক্টর মাথায় রাখতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা এই আর্টিকেলে সে বেপারগুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

সিরিয়ার সাথে মার্কিনীদের গোপন সম্পর্কঃ

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটানো কখনোই মার্কিনীদের লক্ষ্য ছিল না। এর কারণ জানতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ ১৯৭০ সালে এক মার্কিন সমর্থিত ক্যু’র মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসে। এর আগেই সে নিজেকে মার্কিনীদের অনুগত হওয়ার প্রমাণ দিয়েছিলো ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের সময়। ১৯৯৬৭ সালের যুদ্ধে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই হাফিজ আল আসাদের নির্দেশেই সিরিয়ার শক্তিশালী সেনাবাহিনী বিনা যুদ্ধেই গোলান মালভূমি ইসরাইলের হাতে ছেড়ে দেয়। যার মাদ্ধমে হাফিজ আল আসাদ মার্কিনীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়া মূলত ইসরাইলের উত্তর সীমান্ত পাহারা দেয়ার কাজ করছে। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিন আল হাফিজ ২০০১ সালের জুলাই মাসে আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে বাশারের পিতার ভূমিকা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন[৮]। তখন থেকে আজ পর্যন্ত সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার মার্কিনীদের স্বার্থই রক্ষা করে আসছে। একদিক দিয়ে ইসরাইলকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা অর্থাৎ এর উত্তর সীমান্ত নিরাপদ রাখা, সিরিয়ার অভ্যন্তরে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নির্মূলের ক্রমাগত চেষ্টা এবং সেই সাথে দেশে ধর্মহীন দর্শনের প্রচার এবং প্রসারে হাফিজ আল আসাদ এবং তার ছেলে বাশার আল আসাদ যে কীর্তি স্থাপন করেছে তাতে একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে মার্কিনীরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে।

সিরিয়ায় মার্কিনীদের কৌশলগত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি?

যেহেতু আমরা পূর্বেই বলেছি যে আসাদ সরকার দীর্ঘ ৪০ বছর ধরেই মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। এবং মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত মিত্রদের মধ্যে সিরিয়া মার্কিনীদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ইসরাইলের সাথে সিরিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। অন্যদিকে দেশটির একদিকে ইরাক, লেবানন এবং আরেকদিকে জর্ডান। তাই ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে সিরিয়া মার্কিনীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিনীরা এটা কখনোই চাইবে না যে এমন একটি দেশের সরকারের পতন ঘটুক যে সরকার গত চার দশকেরও বেশী সময় ধরে মার্কিনীদের সেবা করে আসছে। তাই বাশারের হটাত পতন মার্কিনীরা কখনোই চায়নি। বরং আমরা যদি গত দু বছর ধরে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহ এবং তথ্য উপাত্তগুলো বিশ্লে ষণ করি তাহলে সিরিয়ায় মার্কিন কৌশল আমাদের কাছে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সিরিয়ায় মার্কিনীরা তিনটি অলটারনেটিভ প্ল্যান নিয়েছে যেগুলোকে আমরা প্ল্যান এ, প্ল্যান বি এবং প্ল্যান সি নামে চিহ্নিত করতে পারি। ইনশাল্লাহ আমরা এই তিনটি প্ল্যানের ওপরই নজর দেয়ার চেষ্টা করবো।

প্রথমত, প্ল্যান এ’র আওতায় আমেরিকা আসাদকে সরাসরি অপসারণ করতে চায় নি। বরং আসাদ সরকারের কাছে একগুচ্ছ সংস্কার কর্মসূচী উপস্থাপন করেছে। এবং চেয়েছে যে আসাদ সরকার ওই রাজনৈতিক সংস্কার অনুযায়ী এগিয়ে যাবে এবং বিরোধীদেরও এর মধ্যে শামিল করে নেবে। তাই প্রথমদিকে মার্কিনীরা আসাদের অপসারণের দাবি তোলেনি। বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর বাশার আল আসাদের দ্বিতীয় ভাষণের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মার্ক টোনের বলেছিলেন, ‘বাশার আল আসাদের ভাষণ থেকে যা বোঝা গেছে তা বিরোধীদের দাবী অনুযায়ী অপ্রতুল’। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাউদ অগলু আনাতোলিয়া প্রেস এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ‘তুরস্ক সিরিয়ার অভ্যন্তরে যেকোনো বৈদেশিক হস্তক্ষেপের বিরোধী এবং তুরস্ক চায় যে সিরিয়া সমস্যার সমাধান অভ্যন্তরীণভাবেই হোক’। তৎকালীন কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন জাসিম আল থানি তার প্যারিস সফরের সময় আল সাফির পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অনেকে সিরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের কথা বলেছেন কিন্তু আমরা চাই সিরিয়া সমস্যার আভ্যন্তরীণ সমাধান হোক যা সিরিয়ার মানুষের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটাবে’। দেখুন এদের কথায় কিন্তু কোথাও বাশার আল আসাদের অপসারণের ইস্যুটি ছিল না। আর এরা সবাই যে বর্তমানকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং হুকুমের তাবেদার এতে বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নেই। তাই এরা যা বলছে তাতে মূলত মার্কিনীদের মর্জিরই প্রতিফলন ঘটছে। এমনকি কিছুদিন পূর্বে বাশারের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতওয়া প্রদানকারী আন্তর্জাতিক স্কলারস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট শায়খ ইউসুফ আল কারদাওি সাহেবের মুখেও কিন্তু তখন ভিন্নসূর ছিল। ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল ইস্যু করা এক সার্কুলারে তিনি সিরিয়া সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আবেদন জানান এবং সরকারকে জনগণের দাবী দাওয়া মেনে নিতে আহবান জানান। এবং ওই সার্কুলারের কোথাও আসাদকে পদত্যাগ করতে বলা হয় নি। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসাদকে ক্ষমতায় রেখেই সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে মার্কিন পরিকল্পনা সফল হয় নি। কারণ আসাদের সাথে বিদ্রোহীরা কোন ধরণের আপোষে উপনীত হতে রাজী হয়নি। শুধু তাই নয় বিদ্রোহীরা আসাদকে অপসারণের ব্যাপারে অটল থেকেছে। মার্কিনীরা যদিও মনে করেছিলো যে আসাদ সরকার বিক্ষোভ সমাবেশগুলোকে নৃশংসভাবে ছত্রভঙ্গ করে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বরং আসাদের নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ সশস্ত্র সংগ্রামে রুপ নিয়েছে যার তীব্রতা সময়ের সাথে আসাদের সাথে সাথে মার্কিনীরাও অনুভব করেছে।

এখন এখান থেকেই আমেরিকার প্ল্যান বি শুরু হচ্ছে। এখানে আমেরিকা চেয়েছি ইয়েমেন স্টাইলে শুধুমাত্র একটা ফেইস পরিবর্তন। আর এটা সে করতে চেয়েছে জাতিসংঘের বিশেষ দূত কফি আনানের মাধ্যমে। কফি আনান চেয়েছিলেন আসাদকে পদত্যাগে রাজি করাতে। আসাদের পর তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আল শাররার নেত্রিত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জোর চেষ্টা চালান কফি আনান। ওই সরকারটি বাশারের রেখে যাওয়া রাজনৈতিক সেট আপ এবং তুরস্কভিত্তিক সিরিয়ার কথিত ন্যাশনাল কাউন্সিল বা কোয়ালিশনের সমন্বয়ে নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ এখানে বাশারকে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছিলো যদিও বাশারের সরকারকে ঠিকই অক্ষত রাখার বেবস্থা করা হয়েছিলো। যেমনটি আমরা দেখি ইয়েমেনের বেলায়। প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ বিদায় নিলেও তার সরকার এবং রাজনৈতিক কাঠামো ঠিকই অক্ষত থেকে যায়। কিন্তু সিরিয়াতে এই প্ল্যান কাজ করছে না কারণ কথিত সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল সিরিয়ার জনগণ এবং বিদ্রোহীদের মদ্ধে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এবং অধিকাংশ বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর ওপর এর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

তাই এখন আমেরিকার কাছে প্ল্যান সি অনুযায়ী কাজ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এই প্ল্যান অনুযায়ী বাশারের সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে আমেরিকা কোন একটা অজুহাতে সিরিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাবে। যাতে করে আসাদের পর এমন কোন গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা না চলে যায় যারা আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না। নিউইয়র্ক টাইমস ওবামা প্রশাসনের বরাত দিয়ে তার এক রিপোর্টে ঠিক এই আশঙ্কাটির কথাই বলছে-

''আমেরিকান প্রশাসন এটা চিহ্নিত করেছে যে তারা যদি এই মুহূর্তে কিছু একটা না করেন, তাহলে এভাবেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে এবং ময়দানের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ওপর তাদের কোন প্রকার প্রভাব থাকবে না। তাদের হয়ত কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব থেকে যাবে কিন্তু সশস্ত্র দলগুলোর ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এবং ওরাই সিরিয়ান ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করবে''[৯]।

সুতরাং এই অবস্থায় আমেরিকার প্রয়োজন একটি অজুহাত। যার ওপর ভিত্তি করে আমেরিকা বিশ্ব জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে এবং সিরিয়ায় নিজের আগ্রাসনকে বৈধতার চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিবে। আর রাসায়নিক অস্ত্র ইস্যুটির উৎপত্তিস্থল মূলত এটাই। আর তাছাড়া আমরা যদি আমেরিকার অতীত রেকর্ড ঘাটাঘাটি করি তাহলে এই ধরণের ভূরি ভূরি উধাহরণ পাওয়া যাবে। বিশ্ব এখনো ইরাক যুদ্ধের কথা ভুলে যায় নি। ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কথা বলেই তো আমেরিকা ইরাক হামলা করেছিলো। কিন্তু পরে এই কথিত গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কাহিনীটা পুরাই ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরও পূর্বে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কুয়েতে ইরাকী বাহিনীর কাল্পনিক অত্যাচারের কথাও পশ্চিমারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেছিলো যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। যেমন মার্কিনীদের প্রচার যন্ত্র বেশ জোরে সোরে প্রচার চালাচ্ছিল যে ইরাকী বাহিনী হাসপাতালে ঢুকে নাকি শিশু সন্তানদের ইনকিউবেটর থেকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথাই ধরুন। সেসময় আমেরিকা এক আজগুবি কাহিনী ফেঁদে বসে যা 'গালফ অফ টনকিন' নামে বিখ্যাত। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মার্কিনীরা ভিয়েতনামকে একটি মার্কিন জাহাজ আক্রমণের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে। আর এর পরের কাহিনীতো সবার জানা।

শেষ কথাঃ

তাই পরিশেষে আমরা এটাই বলবো যে সিরিয়ায় যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহার হওয়ার অজুহাতে কোন ধরণের মার্কিন হামলা হয় তবে তা কোনভাবেই সিরিয়ার জনগণের স্বার্থে হবে না। বরং এর পেছনে মার্কিনীদের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা কুফফারদের নিজেদের স্বার্থ রয়েছে। এবং সেটা যে সিরিয়ার মত ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এবং রাজনৈতিক ইসলামের তথা ইসলামী খিলাফতের উথানকে ঠেকানো এতে কোন সন্দেহ নেই। তা না হলে কসাই বাশার যখন কোন ধরণের রাসায়নিক অস্ত্র ছাড়াই লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করলো তখন পশ্চিমারা কোথায় ছিল? তারা বরং সেসময় নানা ধরণের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সংলাপে বেস্ত ছিল এবং তারাই বাশারকে এই সুযোগে নিজ জনগণের ওপর জঘন্য গণহত্যা চালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছিলো। তাদের কথিত রেড লাইন তত্বটি আমাদের সে কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। এই রেড লাইন তত্ব বা কথিত সীমারেখার মধ্যে থেকেই বাশার আল আসাদ আলাওয়ি, দ্রুজ, বাথিস্ট এবং খ্রিষ্টানদের সহায়তায় লক্ষাধিক মুসলিমকে কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নাকের ডগায় বসেই হত্যা করেছে।

মোবাইল শেয়ার লিঙ্ক http://on.fb.me/1ei7AwY

তথ্যসূত্রঃ

[১]http://www.dailystar.com.lb/News/Middle-East/2013/Aug-22/228268-bodies-still-being-found-after-alleged-syria-chemical-attack-opposition.ashx#axzz2chzutFua

[২]http://www.bbc.co.uk/news/world-middle-east-23791452

[৩]http://www.bbc.co.uk/news/world-middle-east-23837817

[৪]http://www.cbsnews.com/8301-250_162-57599967/hagel-obama-asks-for-syria-military-options/

[৫]http://www.nytimes.com/2012/08/21/world/middleeast/obama-threatens-force-against-syria.html

[৬]http://www.aljazeera.com/news/middleeast/2012/12/201212251642544687.html

[৭]http://www.wired.com/dangerroom/2012/12/did-syria-just-use-nerve-gas

[৮]http://www.aljazeera.net/programs/pages/fa527ac3-2308-4892-945e-7978486e3ac5

[৯]www.nytimes.com/2012/11/29/world/us-is-weighing-stronger-action-in-syrian-conflict.html?pagewanted=1

সংগৃহিত

বিষয়: বিবিধ

১৫৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File