ওরিয়েন্টালিস্টদের থেকে সাবধান !!

লিখেছেন লিখেছেন বান্দা ২৪ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:৫৭:১৯ রাত

ওরিয়েন্টালিস্টদের (বা পরবর্তীতে মার্কিনী “এরিয়া স্টাডিস” এক্সপার্টদের) কাছ থেকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্লেষণ ও ন্যারেটিভ নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ইসলামিস্ট/প্রো-ইসলামিক বিভিন্ন ব্যক্তি/স্কলারদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। কিছুদিন আগে আমাদের অনেকের শ্রদ্ধেয় এক ভাইয়ের স্ট্যাটাস পড়েছিলাম যেখানে উনি শারিয়াহর মৌলিক দর্শনগত একটি বিষয়ে প্রখ্যাত এক ওরিয়েন্টালিস্টের উক্তি শেয়ার দিয়েছিলেন (বিষয়টা খুবই সূক্ষ্ম হওয়ার কারনে অনেকেই হয়ত ধরতে পারেনি)। সব ওরিয়েন্টালিস্টের লেখা খারাপ না, বরং অনেকেই ইসলামের খেদমত করেছেন। ওয়েবার, মার্ক্স, রেনানরা যেভাবে ইসলামকে আক্রমণ করেছিল, তার বিপরীতে অনেক ওরিয়েন্টালিস্টরাই ইসলামকে ডিফেন্ড করেছে। কিন্তু তারপরও এটার এই অর্থ হতে পারে না যে, ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলোতে তাদের দেয়া বিশ্লেষণ আমরা নেব। বিষয়টা এতো সোজা সাপটা না। আমি নিজেই ওরিয়েন্টালিস্টদের অনেক রেফারেন্স কোট করি তাদের নিজেদের ভেতরকার চিন্তার বৈপরীত্য ও ভন্ডামি তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তাদের চোখ দিয়ে শারিয়াহ, রাষ্ট্র, সমাজ ইত্যাদির মতো ভাইটাল বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করি না।

ইউরোপিয়ান ক্লাসিক্যাল ওরিয়েন্টালিস্মের পরবর্তী ধারা হল আমেরিকান “মিডল ইস্ট স্টাডিস”, যেটাকে “late orientalism” বলা যায়। এ ধারার অন্যতম জাঁদরেল স্কলার ছিল হ্যামিল্টন গিব যিনি ক্লাসিক্যাল ওরিয়েন্টালিস্টদের অনেক দিক থেকেই সমালোচনা করেছিলেন। মুসলিমদের ব্যাপারে তার কিছু লেখা পড়লে বেশ ভাল লাগবে। তিনি মনে করতেন সেকুলার জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের জন্য সমাধান না কিন্তু আবার এও মনে করতেন মুসলিমদের মুল সমস্যা হাজার বছরের পুরনো; যখন থেকে মুসলিমরা গ্রিক-rationalist চিন্তা বর্জন করা শুরু করে তখন থেকে মুসলিমদের পতন শুরু হয়। তিনি ১৯৫৫ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেন এবং বলা যায় ওরিয়েন্টালিস্মের ধারাবাহিকতায় নতুন এক মাত্রা যোগ করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে Center for Middle Eastern Studies নামক একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৪৫ পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “এরিয়া স্টাডিস” এবং “মিডল ইস্ট স্টাডিস” নামক নতুন ওরিয়েন্টালিস্ট ধারা শুরু হয় বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার উত্থান ও আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল এরুপ সেন্টারগুলো। ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্যবাদ থেকে যখন ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো স্বাধীনতা পাচ্ছিল, আমেরিকা সে অঞ্চলগুলোতে তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার ফরেইন পলিসির জন্য ব্যবহার করছিল। তাই এরুপ প্রতিষ্ঠানের প্রখ্যাত ইসলামিক স্টাডিসের স্কলাররা যখন দারুল ইসলাম বা খিলাফতের ধারণা নিয়ে সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা দাড় করায়, আর আমাদের অনেক প্রিয় জ্ঞানী ভাইরা সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে (ক্লাসিক্যাল স্কলারলি আলোচনা কে পাশ কাটিয়ে) খিলাফাহ সম্পর্কে ভুল ধারণার প্রচার করে (ধরে নিচ্ছি অনিচ্ছাকৃত), তখন আসলে অনেক কষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Center for Middle Eastern Studies এর সাবেক ডিরেক্টর Baber Johansen ইমাম ইবন তাইমিয়ার রাষ্ট্র দর্শনের ব্যাপারে বলেছিলেন উনি (ইবন তাইমিয়াহ) খিলাফাহ বা কোন ফিক্সড গভারনেন্স বিশ্বাস করতেন না। যুক্তিটিকে যেভাবে বাবের দাড় করাতে চেয়েছেন তাতে বিশাল ভুল রয়েছে কারন ইসলামী আইন দ্বারা শাসন করার এসেন্সাল অর্থই হল খিলাফত।

তার চেয়েও বড় কথা ইমাম ইবন তাইমিয়াহ (র) ইসলামী শরিয়ার উৎস না। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যখন খিলাফতের ফারদিয়্যাহ আমরা বুঝতে পারি তখন কোন শেখ কি বলছেন সেগুলো সেকন্ডারি আলোচনা।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File