শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজতকা

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৩ মার্চ, ২০১৭, ০১:৪৯:৫০ রাত

সুন্দর, সুসভ্য ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে সুশিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এ মেরুদন্ড আজ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। স্বাধীনতার এত বছর পার হয়ে গেলেও জাতির লক্ষ্য ও আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি শিক্ষা নীতি প্রণীত হয়নি। চেষ্টা হয়েছে কিন্তু ঐক্যমতের অভাবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। স্বাধীনতার চার দশকের বেশী সময় আমরা পার করেছি, কিন্তু স্বাধীন জাতির জন্য উপযুক্ত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও গড়ে তুলতে পারিনি। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় চলছে এক অসহনীয় অরাজতকা। স্কুলের পাঠ্য বইগুলোতে থাকে বানান ও তথ্যগত ভুলের ছড়াছড়ি। এছাড়া এর বিষয়বস্তুগুলো নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষতার দ্বন্দে চলছে বিভাজন । কেউ বলেন তা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট, আবার কেউ বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ নিয়ে উৎকণ্ঠিত। জাতীয় ও ধর্মীয় চেতনাবোধের সমন্বয়ে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য পাঠ্যক্রম তৈরী হওয়া উচিত যাতে সব বিতর্কের অবসান হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে জাতির ইতিহাস পুনর্লিখিত হচ্ছে। জাতির ইতিহাস রচনায় যেসব অহেতুক বিতর্ক জাতীয় জীবনকে কন্টকিত করছে তারও সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান অতীব প্রয়োজন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা মাধ্যম, ইংরেজী মাধ্যম ও মাদ্রাসা এ তিন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি চালু থাকায় জাতীয়ভাবে তিন ধরনের শিক্ষার্থীর সমাবেশ ঘটছে। সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবে দেশে শিক্ষার মান উন্নত হতে পারছে না। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে অনেক গবেষণা-নীরিক্ষা হয়েছে, নতুন নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। তবুও শিক্ষার মান বাড়েনি। ফলে ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষার মানের চেয়েও বর্তমানের শিক্ষার মান অনেক নীচে নেমে গেছে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এসব সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান জরুরী।

এককালে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা ছিল মহান ও আদর্শমন্ডিত। শিক্ষকরা ছিলেন সমাজের মর্যাদাবান, অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁরা ছিলেন জ্ঞান বিতরণকারী একদল আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান ভান্ডার উম্মোচিত করণ, তাদেরকে জ্ঞানানুশীলনে উজ্জীবিত করণ এবং তাদের নৈতিক চরিত্র গঠনে তাঁরা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তাঁদের সততা, নির্লোভ মানসিকতা এবং সহজ সরল জীবন ধারা সবাইকে অনুপ্রাণিত করত। অর্থোপার্জনের চেয়ে জাতির ভবিষ্যৎ গঠনই ছিল তাদের কাছে আরাধ্য বস্তু। কিন্তু আজ অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষকদের মধ্যে কর্তব্যপরায়ণতা, ত্যাগী মনোভাব, নৈতিকতা ও দক্ষতার অভাব থাকায় এর প্রভাব পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। শিক্ষার্থীরা তাঁদেরকে আদর্শ শিক্ষক বা মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে যেমন মেনে নিতে পারছে না, তেমনি পারছে না লেখাপড়ায় নিজেদের মান উন্নত করতে। বাণিজ্যিক মানসিকতার শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠ দানের চেয়ে কোচিং সেন্টারে বিষয়-ভিত্তিক নোট সরবরাহকেই বেশী গুরুত্ব দেন। পরীক্ষায় ভালো মার্ক দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জিম্মি ও নোট নির্ভর করে তোলায় তাঁরা বেশী আগ্রহী। কারণ এতে তাঁদের আয়-রুজগার অনেক বেশী। রেডিমেড নোট নির্ভরতা ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল মেধার বিকাশকে থমকে দেয় এবং সেই সাথে শিক্ষার মানও নীচে নেমে যায়। সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজ দূষিত হয়ে পড়ায় আমাদের শিক্ষক সমাজও হারিয়ে ফেলছেন তাঁদের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব । কেননা তাঁরা তো এ দূষিত সমাজেরই বাসিন্দা। তাই সর্বক্ষেত্রে বাণিজ্যকীকরণের প্রভাব পড়েছে তাঁদের ওপরও । মূল কথা হলো মূল্যবোধের অবক্ষয় থামানো না গেলে জাতির পরিত্রাণ নেই।

শিক্ষা অধিদপ্তর ও তৎসংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসগুলো দুর্নীতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য সব সেক্টরের মতই শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ব্যাপক দুর্নীতি বিদ্যমান থাকায় কোন জবাবদিহিতা নেই। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ম-নীতির কোন বালাই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ করা হচ্ছে। কঠিন বাস্তবতা এটাই যে, স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী এ প্রভাব বলয়ের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাঁর একক সততা বা সদিচ্ছা কোন কাজে আসছে না, বরং তিনি এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন। ফলে দুষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অতিমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠছে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এসব অসাধু কর্মকান্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর কর্মকান্ডই বলে দিচ্ছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কি ব্যাপক অরাজকতা বিদ্যমান। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, মারামারি, খুন, ভর্তি বাণিজ্য, সীট বাণিজ্য, নকল সরবরাহ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ইত্যাদি এহেন দুষ্কর্ম নেই যাতে ছাত্রলীগ বাহিনী জড়িত নেই। এ পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এক চরম নৈরাজ্যের কবলে পড়ে মৃত প্রায়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং সেসব দেশেই চাকুরী নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। নিজ দেশে ফেরার মত পরিবেশ ও ভরসা পাচ্ছে না তারা । ফলে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি থেকে। এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে দক্ষ জনশক্তি ছাড়া ঠিকে থাকা এক বড় চ্যালেঞ্জ। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এর জন্য জরুরী হলো মানসম্মত শিক্ষা যা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সত্যিকার সৎ মানুষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলবে।

প্রকৃত শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরকে পূর্ণাঙ্গ ও মানবিক মর্যাদাবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলে। এ ধরনের শিক্ষা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, জীব, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি যত্ন ও ভালোবাসা এবং স্ব স্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের অনুরাগ সঞ্চারিত করে। এর দ্বারা তাদের মেধা ও মননের উৎকর্ষ সাধিত হয়। এছাড়া তাদেরকে সৎ, পরিশ্রমী ও উদ্যোগি হতেও শেখায়। জ্ঞান চর্চায় তারা যাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে সে জন্য নানা ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচী প্রয়োজন। তাই শিক্ষার সাথে সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এর অভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটছে না সহজাত আত্মশক্তির বিকাশ। শিক্ষা সহযোগী কার্যক্রমের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় তাদের মধ্যে খেলাধূলা, এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতিবান্ধব পরিবেশ তৈরীর সুযোগ খুবই সীমীত। অবসর সময়ে মোবাইল ফোন, টিভি কার্টুন ও ভিডিও গেমস, ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন কি পর্ণগ্রাফীর মত মারাত্মক ক্ষতিকর বিষয়গুলো তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অভিবাবকরা বাইরের অনিরাপদ পরিবেশে তাদের সন্তানদেকে বের হতে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। ঘরে বন্দী শিশুরা নির্মল আনন্দ ও খেলাধূলার সুযোগ কম পাচ্ছে। ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা বিষন্নতা ও বিষাদগ্রস্ততায় ভুগছে। তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ় মনোবল গড়ে ওঠছে না। মানবিক সংস্পর্শে মানবীয় গুণগুলো তাদের মধ্যে বিকশিত হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। শিশুদের সামাজিকরণ প্রক্রিয়ায় এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। তাই সমাজ-সংসারের সাথে একাত্ম হতে পারছে না তারা। বড় হয়ে এ ধরনের শিশু দেশ ও সমাজের জন্য যথাযথ অবদান রাখার পরিবর্তে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, 'তরুণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আর বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উপলব্ধি করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের ব্যবধান থাকলে সে জ্ঞান হয় অসার ও নিরর্থক। নিজেদের মেধা, শিক্ষা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের বিশ্বমানের মানবসম্পদে পরিণত হতে হবে।’ শিক্ষামন্ত্রীর প্রদত্ত ভাষণ থেকে তাঁর মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বাস্তব পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

জ্ঞানার্জনের চেয়ে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাই আমাদের অভিভাবকদের নিকট মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শিক্ষা আমাদের সন্তানদের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা ও চরিত্রকে কতটা উন্নত করতে পেরেছে সে দিকে আমাদের দৃষ্টি তেমন আছে বলে মনে হয় না। এই শিক্ষা কি তাদের মননশীলতা, নৈতিক আচার-অচরণ, সামাজিক দায়িত্বশীলতা, দেশপ্রেমবোধ, ইত্যাদি গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে পারছে কি না তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমরা চাই যেনতেন প্রকারে আমাদের সন্তানেরা একটা ভালো ডিগ্রী পাক, তা দিয়েই তারা তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুক। কিন্তু জাতির সার্বিক সক্ষমতা অর্জনে এ শিক্ষা যথাযথ অবদান রাখতে তেমন পারদর্শী নয়। এই যেনতেন প্রকারের ডিগ্রী দ্বারা হয়তো সাময়িক লাভ হতে পারে, কিন্তু সত্যিকার সাফল্য এতে আসে না। এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সম্মানজনক উপায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্যে উন্নত মানের নৈতিক শিক্ষার বড়ই প্রয়োজন। আমাদের সন্তানেরা প্রকৃত দেশপ্রেমিক সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে না ওঠে শুধুমাত্র উপার্জনসর্বস্ব হয়ে পড়লে অমাদের জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, বাড়ি, গাড়ি শুধু এসব ভোগ-বিলাসের সামগ্রী কি আমাদের জীবনে সুখ ও শান্তি এনে দিতে পারবে? এ ক্ষেত্রে অভিবাবকদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রতিটি পরিবার শিশুর নৈতিক শিক্ষার সূতিকাগার। পরিবার একটি মৌল প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুদেরকে সুষ্ঠুভাবে লালন পালন, তাদের সুন্দর অভ্যাস গঠন, তাদের আচার-আচরণে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরী এবং সুকুমার বৃত্তির উৎকর্ষ সাধনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক সমাজই শিশুর নৈতিক চরিত্র গঠন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তাকে গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেষ্ট। নৈতিক শিক্ষা পারিবারিক শিক্ষার একটি বড় দিক। এ নৈতিক শিক্ষা শিশুর মধ্যে সৎ গুণাবলীর সঞ্চার করে। এসব সৎ গুণ তার ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর করে তোলে। তখন সে সমাজ, দেশ ও জাতিকে অনেক ভাল কিছু উপহার দিতে সক্ষম হয়, মানবতা তার দ্বারা উপকৃত হয়।

এই আধুনিক যুগ এক বাণিজ্যিক যুগ। এ যুগের মানুষেরা সব কিছুকেই বাণিজ্যিকীকরণ করেছে। শিক্ষা এখন এক বিরাট বাণিজ্যিক পণ্য। কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র-ফাঁস ও নকল-সরবরাহ, ইত্যাদিতে দেশ সয়লাব। এছাড়াও আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে সীট বাণিজ্য। এসব বাণিজ্যের চাপে শিক্ষার্থীরা চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকার পরও ছাত্রছাত্রীদের দৌঁড়াতে হচ্ছে কোচিং সেন্টারে। কারণ স্কুলের পড়ায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এদিকে পরিবারগুলো শিক্ষার খরচের চাপে নেতিয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত খরচ মেটাতে অভিবাবকরা উপার্জনের নানা ধান্ধায় ব্যতিব্যস্ত। ঘর-সংসার এবং সন্তানদের প্রতি সময় দিতে পারছেননা তারা। শিশুরা খেলাধূলা ভুলে সবাই কোচিংয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, সাথে তাদের মায়েরাও। ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছে। পাবলিক পরীক্ষায় তাদের ক্রমবর্ধমান এ-প্লাস পাওয়ার সাফল্যে কৃতিত্ব দাবী করছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এতসবের পরও শিক্ষার মানের উন্নয়ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় তাদের হতবাক করা নেতিবাচক ফলাফল খুবই বেদনাদায়ক। শিক্ষার মানের এ অবনতি অতীব দুঃখজনক। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ঘুষ বাণিজ্য চলছে তা শিক্ষার মানকে করেছেসবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত । এদিকে দেশের শিক্ষার মান পড়ে যাওয়ায় বিদেশমুখী হচ্ছে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী। নব্য ধনিক শ্রেণীর সন্তানেরা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষা ও উন্নত জীবনের আশায় ।

সরকারী লক্ষকোটি টাকার বার্ষিক বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপি’র অনুপাতে বরাদ্দ প্রতি বছরই কমতির দিকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের চেয়েও কম। অপরদিকে কোচিং বাণিজ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে রমরমা। শিক্ষামন্ত্রীর হিসেব অনুযায়ী বত্রিশ হাজার কোটি টাকা। স্কুল পর্যায়ে পিএসসি ও জেএসসি এ দুই পাবলিক পরীক্ষা প্রচলনের পর নাকি এ কোচিং বাণিজ্য পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষার উন্নয়নের কোন মহান উদ্দেশ্যে নয়, বরং কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষার প্রচলন করা হয়েছে বলে জ্ঞানীজনেরা মন্তব্য করছেন। কোচিং ব্যবসার এ ব্যাপকতা শহর-বন্দর ছাড়িয়ে এখন গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই চলছে শিক্ষার মহা বাণিজ্যিকীকরণ। দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের যেন এ এক সর্বগ্রাসী পরিণতি। যে শিক্ষা প্রকৃত মানুষ হওয়ার পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদেরকে এক একটি সার্টিফিকেট সর্বস্ব রোবট বানিয়ে দেয় সে শিক্ষা কোন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা নয়। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা মানবতাকে করছে অবমাননা। এ শিক্ষা তাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়া তোলার পরিবর্তে নীতি-নৈতিকতাহীন জীবনের অতল অন্ধকারে নামিয়ে দিচ্ছে। এ শিক্ষার পৃষ্টপোষকদেরকে একদিন জাতির সামনে অপমানিত ও ধিকৃত হতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382422
২৫ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : জাতিকে মেরুদন্ডহীন করতে এই প্রয়াস
382423
২৫ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : জাতিকে মেরুদন্ডহীন করতে এই প্রয়াস

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File