ধর্ম যার - ধর্মীয় উৎসবও তার

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:৩৬:১৬ সন্ধ্যা

এই বৈচিত্রময় পৃথিবীতে বহু ধর্ম প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ বসবাস করছে। একই দেশে বা একই সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের লোক পাশাপাশি বসবাস করে। মৌলিক বিশ্বাসের দিক থেকে এসব ধর্মের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও রীতি-নীতির দিক থেকেও তাদের মধ্যে রয়েছে বৈপরীত্ব, ভিন্নতা ও বৈসাদৃশ্য। এতদসত্ত্বেও এসব স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করেই বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলছে সহাবস্থান ও পারস্পরিক মেলামেশা। মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় নিরপেক্ষ আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের এ মেলবন্ধন। আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্ময়কর অগ্রগতি হওয়ায় বিভিন্ন দেশের ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির সাথে পারস্পরিক সংযোগ ও সহাবস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তির লেনদেন। তারপরও বলতে হয় কোন ধর্মই সর্বজনীন নয়। এর কারণ তাদের মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যে ব্যাপক বৈপরীত্ব। ধর্মীয় উপাসনার ক্ষেত্রে এ বৈপরীত্ব খুবই প্রকট। উদাহরণস্বরূপ পাশাপাশি হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের কথাই ধরা যাক। হিন্দু ধর্মে বহু দেবদেবীর উপাসনা করা হয় অর্থাৎ অনেক উপাস্যের উপাসনাই হিন্দু ধর্মের রীতি। অপরদিকে ইসলাম ধর্মে উপাসনা করা হয় এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর, যাঁর কোন শরীক নেই। হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন উপাস্যের মূর্তি তৈরী করে তাদের উপাসনা করা হয়, প্রণতি ও ভক্তি জানানো হয়, এসব মূর্তির উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য উৎসর্গ করা হয়, এবং উপাসকরা তাদের কাছে নিজ নিজ কামনা-বাসনা নিবেদন করে। অপরদিকে ইসলাম ধর্মে একমাত্র উপাস্য আল্লাহ্ যিনি নিরাকার ও অনন্য, তাঁর কোন মূর্তি নেই, তিনি ছাড়া অন্য কারোর উদ্দেশ্যে কোন কিছুই উৎসর্গ করা নিষিদ্ধ, আর মানুষের যা কিছু কামনা-বাসনা শুধুমাত্র তাঁর সমীপেই নিবেদন করতে হয়। বিশ্বাসগত দিক থেকে এসব মৌলিক বিষয়ে পার্থক্য এত বেশী বিপরীতমুখী হওয়ায় মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। কারণ এর দ্বারা তারা শিরকের মত মহাপাপে লিপ্ত হবে। অপরদিকে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কুরবানীর ঈদে হিন্দুদের যোগদান সম্ভব নয়, কারণ এই ঈদে মুসলমানেরা গরু কুরবানী দেয়, যাকে হিন্দুরা দেবতা হিসেবে পূজা করে। সুতরাং স্বধর্মের স্বকীয়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, ধর্মীয় উৎসবে সর্বজনীনতা খোঁজা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়।

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ে মক্কার পৌত্তলিক কোরেশ নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকট উভয় ধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রস্তাব দেয়। তাদের বক্তব্য ছিল, তুমি আমাদের ধর্মের কিছু মানো, আমরাও তোমার প্রচারিত ধর্মের কিছু মানবো। তাদের এ প্রস্তাবে আল্লাহর নিকট থেকে ওহীর মাধ্যমে স্পষ্ট ফয়সালা আসে। সুরা কাফিরুনে আল্লাহ্ তাঁর নবীকে (সাঃ) বলেন, ”আপনি বলুন, হে কাফিরবৃন্দ, আমি উপাসনা করিনা তোমরা যার উপাসনা কর, তোমরাও তাঁর উপাসনাকারী নও যার উপাসনা আমি করি। আমিও তাদের উপাসক হব না যাদের উপাসনা তোমরা কর, আর তোমরাও তাঁর উপসনাকারী হবে না যাঁর উপাসক আমি। তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমার জন্য আমার ধর্ম।” পবিত্র কুরআনের এ স্পষ্ট বাণীই প্রমাণ করে উভয় ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কোন সম্ভাবনা নেই এবং একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে সামিল হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের কোন উদ্যোগ ইসলামী ঈমান ও আকিদার পরিপন্থী বিধায় তা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং ধর্ম যার উৎসবও তারই হবে। এতেই শান্তি বজায় থাকবে। শুধুমাত্র জাতীয় উৎসব যেমন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ইত্যাদি আমাদের জন্য সর্বজনীন উৎসব হতে পারে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই এখানে জাতীয়ভাবে যেসব উৎসব পালন করা হয় সেগুলোই আমাদের জন্য সর্বজনীন উৎসব।

ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়বাড়ি বা জোরজবরদস্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীন। বিশ্বাস ও আদর্শগত পার্থক্যের কারণে কারো ওপরে জুলুম করার নীতি ইসলাম অনুমোদন করে না। ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ন্যায্য আচরণ ইসলামের নবীর (সাঃ) তরীকা। ইসলামের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে কিছু কায়েমী স্বার্থবাদী মহল অন্য ধর্ম বা স্বধর্মের ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের অপকর্মে যারা নিয়োজিত তাদের থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অভাবে ফেতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয় যা একটি সমাজের শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য খুবই ভয়াবহ। সকল সম্প্রদায়ের সাথে সুবিচার, সুশাসন ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যমূলক মানবিক সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। এগুলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে। সততা ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনই ইসলামের নীতি। উসকানিমূলক আচরণের মুখেও এ নীতি থেকে বিচ্যুত না হওয়ার নির্দেশ রয়েছে। শান্তির স্বার্থে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে যেকোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করাই ইসলামের শিক্ষা। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকেই মুসলমানদের সাথে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্ক নির্ধারিত হওয়া উচিত। ধর্মীয় বিধানসমূহ কোন ব্যক্তির ইচ্ছা বা আকাঙ্খার অনুবর্তী নয়।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378824
১৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৮:৩৭
মুন্সী কুতুবুদ্দীন লিখেছেন : যে বলে ধর্ম যার উৎসব সবার
তার গালে জুতা মার
378825
১৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৮:৩৯
মুন্সী কুতুবুদ্দীন লিখেছেন : যে বলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার
তার গালে জুতা মার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File