ইসলাম - বিশ্বজনীন ঐশী ধর্ম

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ১৫ মার্চ, ২০১৭, ০৫:১৯:০৭ সকাল

"হে মানব, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিতি হতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক সৎকর্মশীল। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন" (৪৯:১৩)।


মানব তথা সকল সৃষ্টির স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। তিনি এক, অদ্বিতীয় ও অনন্য, তিনি সার্বভৌম এবং তাঁর সমকক্ষ বা শরীক কেউ নেই। মানব জাতি আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়ার বংশধর । কালের আবর্তনে এ মানব জাতি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে । পৃথিবীর সব মানুষই আল্লাহর বান্দা, তাঁর চোখে সবাই সমান। তাঁর কাছে মানুষের মর্যাদার মানদন্ড হলো ঈমান এবং সৎকর্ম - অন্য কোন পার্থিব বিষয় বা কৃত্রিম বেড়াজাল নয়। ইসলাম শুধুমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও দাসত্বকে স্বীকার করে এবং একমাত্র তাঁরই নিকট মাথা নত করতে শেখায়। এ ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস হলো - আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপনকারী অন্যকোন কিছুকেই ইসলাম উপাস্য বা আনুগত্যের অধিকারী বলে স্বীকার করেনা। ইসলামে আল্লাহর একত্ববাদে দৃঢ় বিশ্বাস সকল মানুষের মধ্যে জন্ম দিয়েছে সাম্য, মুক্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর বন্ধন। অবসান ঘটিয়েছে বর্ণ, গোত্র, বিত্ত ও বংশের ভিত্তিতে সামাজিক বৈষম্য। খোদাভীতি, সততা ও নৈতিকতার মানই আল্লাহর নিকট মর্যাদা প্রাপ্তির মাপকাঠি হওয়ায় সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা শুধু মুখের বুলিই নয় - বরং এ সাম্য প্রতিদিন প্রতিফলিত হচ্ছে ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণে। ধনী-গরীব, সাদা-কালো, প্রভু-ভৃত্য, শাসক-প্রজা সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে নামায আদায় করছে, একই আল্লাহর কাছে পরম আনুগত্যে মাথা নত করছে ও সিজদায় লুটিয়ে পড়ছে।

উপরে উদধৃত পবিত্র কুরআনের আয়াতে আল্লাহর এ কথাই সুস্পষ্ট করে দিলেন যে, মানুষ একই জাতি, তাদের আদি পুরুষ ও নারী আদম ও হাওয়ার বংশোদ্ভুত। আল্লাহর কাছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হল তার সৎকর্মপরায়ণতা, অন্যকিছু নয়। আল্লাহর আইনে সবাই সমান। ইসলাম অচ্ছুৎ-অস্পৃশ্যতা ও সামাজিক বিভেদের সকল কৃত্রিম দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে, প্রতিষ্ঠা করেছে সামাজিক সাম্য ও মানবাধিকার। ধনী-গরীব, বর্ণ-গোত্র, বংশ মর্যাদা, ইত্যাদি কৃত্রিম ভেদাভেদের অবসান ঘটিয়ে মানুষকে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে ইসলাম। ইসলামের নবী (সাঃ) তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন, ”হে মানবমন্ডলী, এই মাস, আজকের এই দিন, এই সম্মানিত নগরী যেমনি পবিত্র, ঠিক তেমনি পবিত্র আমানত হল একজন মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান যতদিন পর্যন্ত না তোমার তোমাদের প্রভুর সামনে হাজির হয়েছ।” তিনি আরও বলেন, ” সকল মানুষ আদমের বংশধর এবং আদম মাটি থেকে তৈরী। অনারবের ওপর আরবের, আরবের ওপর অনারবের, কালোর ওপর সাদার অথবা সাদার ওপর কালোর কোনই শ্রেষ্ঠত্ব নেই শুধুমাত্র সৎকর্মপরায়নতা ছাড়া।” একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি প্রদানের অন্যায্য নীতি সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন,”সাবধান! নিজের অপরাধের দায়িত্ব নিজের ওপরই বর্তাবে, অন্য কারো ওপরে নয়। সন্তান পিতৃ আপরাধে অপরাধী হবেনা, না পিতা সন্তানের অপরাধের বোঝা বহন করবে। একজন মুসলমানের জন্য বৈধ হবে না তার ভাইয়ের মাল, যদি না সে স্বেচ্ছায় তাকে দেয়। সুতরাং অন্যায়ে লিপ্ত হয়োনা।” ইসলামের এসব ঘোষণা মানবাধিকারের এক মহাসনদ হিসেবে চিরদিন বিবেচিত হবে।

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে (৩:১১০) ।


ইসলাম স্বভাবসিদ্ধ মানবতার ধর্ম এবং মধ্যম পন্থার অনুসারী। ধর্মীয় ব্যাপারে বল প্রয়োগ ইসলামে নিষিদ্ধ। চরম পন্থার দ্বারা মানবতাকে কলুষিত করা ইসলামের নীতি নয়। তবে সমাজে অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কারের ব্যাপারে উদাসীন মনোভাব নিয়ে দায়িত্বহীন হয়ে পড়ে থাকা ইসলাম অনুমোদন করে না। এসব ব্যাপারে চোখ বুঁজে থাকলে সমাজের ধ্বংস ঠেকানো যায় না। এ কারণেই ইসলাম "সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ" - এ বিধানের মাধ্যমে মানবতা, মানবাধিকার ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর অনেক বেশী গুরুত্ব আরোপ করেছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট নীতি বর্ণনা করে বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ্ তাদের নিকট তোমাদের চাইতে বেশী শুভাকাঙ্খী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কেই অবগত" (৪:১৩৫)। রাষ্ট্র ক্ষমতা আল্লাহ্ প্রদত্ত এক পবিত্র আমানত। ক্ষমতার দম্ভে যে স্বেচ্চাচারী মনোভাব নিয়ে এর খেয়ানত করে সে ন্যায়পরায়ণ মহান আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়। অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন দ্বারা মানব সমাজে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইসলামের নবী (সাঃ) বলেন, "অন্যায়কে শক্তির দ্বারা প্রতিরোধ কর, শক্তি প্রয়োগে অসমর্থ হলে মুখের দ্বারা এর প্রতিবাদ জানাও, তাতেও অপারগ হলে অন্তত অন্তরে এর বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ কর - তবে এটি ঈমানের সবচেয়ে নীচু স্তর।" জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং ধর্ম-বর্ণ গোত্র-বংশ নির্বিশেষে ন্যায়ানুগ ও সহানুভূতিশীল আচরণ ইসলামের নীতি। যোগ্যতার ভিত্তিতে বৈধ পন্থায় জীবিকা অর্জন ও জীবন ধারণের মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে ইসলাম কোন তারতম্য করেনা। ইসলামে একজন কুৎসিৎ মুখায়বের দাসও যোগ্যতার দ্বারা সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করতে পারে। এ ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন, ”“হে মানুষ! যদি একজন আবিসিনীয় বিকৃতাঙ্গ দাসও তোমাদের নেতা নিযুক্ত হয়, তোমরা তার কথা শুনো এবং তাকে মেনে চলো যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করে।”

ইসলাম জাগতিক সম্পদ কুক্ষিগত করার চাইতে এর ন্যায্য বন্টনের ওপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করে। ভোগবাদী, বিলাসী এবং অপব্যয়ী জীবনের পরিবর্তে সহজ, সরল ও মিতব্যয়ী জীবন যাপনকে প্রাধান্য দেয়। ইসলামে ধনীর ওপর আরোপিত যাকাত এমন একটি অর্থনৈতিক ইবাদত যা ধন-বৈষম্য দূর করে সমাজে গরীব মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম শাসকদেরকে স্বেচ্ছাচারী ও নিজ খেয়াল-খুশী মোতাবেক চলতে নিষেধ করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক নবী ও রাজ্যাধিপতি হযরত দাউদকে (আঃ) দেওয়া এ উপদেশ বাণীটি অনুধাবনযোগ্য: ”হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়” (৩৮:২৬)। নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে প্রতিটি মানুষকেই আল্লাহর নিকট জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ মানুষকে সতর্ক করে বলেন, “তোমরা কি ধারণা করে নিয়েছ যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং হিসাব গ্রহণের জন্য তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন হবে না?” (২৩:১১৫)। ইসলাম মহান আল্লাহ্ ও সাধারণ জনগণের নিকট জবাবদিহিতার মাধ্যমে ন্যায়নীতি ও সুশাসনকে নিশ্চিত করেছে। সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কর্মে নিষেধ - ইসলামের এ নীতি সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিরাট সহায়ক হয়েছে।

ইসলাম মানব জাতির মহাঐক্যের প্রতীক। দেশ, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মুসলমানের মিলনকেন্দ্র মক্কায় হজ্জ্বব্রত পালন মানব জাতির এ ঐক্যকে করেছে সুদৃঢ়। আরাফার মঠে হাজীদের পরিহিত একই ধরনের শ্বেত-শুভ্র ভুষণ বিশ্ব-মানবতাকে করেছে মহিমান্বিত। ’আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ অর্থাৎ হে আল্লাহ্ তোমার ডাকে হাযির হয়েছি - সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ-বাতাস এই বার্তা দিচ্ছে ইসলাম এক বিশ্বজনীন ধর্ম। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন সরাসরি, ধর্ম পালনে ইসলাম পৌরহিত্যের বাধার প্রাচীর তৈরী করেনি। আধ্যাত্মিকতার সাথে জাগতিকতার মিশ্রণে ইসলাম মানব সমাজে যে দৃঢ় ঐক্য, সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন গড়ে তুলেছে তা বিশ্বজনীন আদর্শের এক অনন্য চিত্র।

”আপনাদের এই উম্মত সবতো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন। অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে। অতএব তাদেরকে কিছু কালের জন্যে তাদের অজ্ঞানতায় নিমজ্জত থাকতে দিন” (২৩:৫২-৫৪)।


মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই ইসলামের অভিযাত্রা শুরু। সব নবী ও রাসুলের দ্বীন ছিল এক যদিও যুগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শরীয়ত ছিল ভিন্ন। মহাকালের আবর্তনে যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। যুগের প্রেক্ষাপটে এবং নিজ সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে তাঁরা জারী করেছেন আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান। তাঁদের তিরোধানের পর অনেক বিধান বিকৃত হয়ে পড়ায় সেগুলো বাতিল করে নতুন যুগের প্রয়োজনে আল্লাহর তরফ থেকে নতুন বিধান নিয়ে পরবর্তী নবী-রাসুলগণ এসেছেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রচারিত ধর্ম ইসলাম এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাসীর জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এ পরিপূর্ণতার স্বীকৃতি দিয়ে মহান আল্লাহ্ বলেন, ”আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম” (৫:৩)। ”নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম” (৩:১৯)। মহান আল্লাহ্ মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ”হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রাসুল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমরা সর্বোত্তম কল্যাণ লাভ করতে পার। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রাজ্ঞ” (৪:১৭০)। বিভিন্ন কালে মানুষ ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমণের সময়েও পৃথিবী জুড়ে একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছিল। তিনি যে যুগে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ইতিহাসের পাতায় তা ’আইয়ামে জাহিলিয়াত’ অর্থাৎ অন্ধকার যুগ নামে পরিচিত। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর আনুগত্য ছেড়ে পৌত্তলিকতা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, কুসংস্কার, অশ্লীলতা ও অপকর্মে লিপ্ত ছিল মানব সমাজ। এসব বিভ্রান্তি ও বিভক্তি দূর করে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই তাঁর আগমণ। তাই স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ রাব্বুল আালামীন তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে বলেন, ”বলুন, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল ” (১৭-৮১)। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভূত হয়েছেন আল্লাহর তরফ থেকে ’সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ’ (২২:১০৭)। তাঁকে পাঠানো হয়েছে ’সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারীরূপে’ (৩৪:২৮)। মানবতার কল্যাণের জন্যই তাঁর আগমণ। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর এক পরম অনুগ্রহ, তাঁর আগমণে সৃষ্ট জগত ধন্য হয়েছিল।

পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসুলই ছিলেন মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামের বাহক ও প্রচারক - উপরে উদ্ধৃত পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহে যেমন তা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এই আয়াতটিও এর সাক্ষ্য বহন করে: ”তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করোনা” (৪২:১৩)। মানব জাতির স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পিত হয়ে সব ধর্মীয় বিরোধের অবসান ঘটানো ও তাদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টিই ইসলামের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র মানব জাতির রহমত ও আশীর্বাদরূপে। তাঁর ওপর নাযিলকৃত পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন হলো এমনই এক গ্রন্থ যা বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানায় সত্য-সুন্দর-সরল পথের দিকে: ”হে মানবকুল! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সনদ (কুরআন) পৌঁছে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি (এ কুরআনকে সুপথ প্রদর্শনের) সমুজ্জ্বল আলো (হিসেবে) অবতীর্ণ করেছি” (৪:১৭৪)। মানব জাতিকে সুপথে চলার জন্য এই কুরআন হচ্ছে আল্লাহর উপদেশ বাণী: ”এ তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায় তার জন্যে” (৮১:২৭-২৮)। ইসলাম বিশ্বাস করে পৃথিবীর সকল মানুষের প্রভু একমাত্র আল্লাহ্, তাদের পথ-প্রদর্শক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ), তাদের জীবন-বিধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন, তাদের রুকু ও সিজদার কেন্দ্রবিন্দু ও হজ্জ্বের সম্মিলন স্থল হলো পবিত্র মক্কা নগরীর বাইতুল্লাহ্ শরীফ। এ ছাড়াও মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসুলকে এবং তাঁদের ওপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহের ওপর। তাঁদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এভাবেই আল্লাহ্ পূর্ববর্তী নবী ও রাসুলগণের জন্য স্বাক্ষী বানিয়েছেন নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) ও তাঁর উম্মতকে। এসব বৈশিষ্ঠ্যের কারণে ইসলাম কোন ভৌগলিক সীমারেখা, বর্ণ, গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সার্বজনীন আবেদন এ ধর্মকে এক বিশ্বজনীন রূপ দান করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৭২০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382259
১৫ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০১:৫৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Excellent analysis mashallah. Jajakallahu khair.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File