জামায়াতের গঠনতন্ত্র নিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক যা বললেন

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৩ মে, ২০১৩, ১২:২৪:৪৩ রাত



নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রুলের ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে জারি করা রুল খারিজ চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করছেন আদালত। আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনের শর্ত পালন করে গঠণতন্ত্রে অনেক সংশোধন এনেছে। গঠণতন্ত্রে কী কী সংশোধন আনা হয়েছে- তা আদালতের নজরে এনে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। জামায়াতের এই উদ্দেশ্য আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবানার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে পঞ্চমদিনের শুনানিতে অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এ সব কথা বলেন।

শুনানিতে আদালত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং সার্বভৌমত্ব স্বীকার করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, এটা হলো আকিদা অর্থাৎ বিশ্বাসগত বিষয়। দল হিসেবে এটির বিশ্বাস করে। আদালত বলেন, তাহলে অমুসলিমদের কি হবে? ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সকল নাগরিক তার নিজস্ব বিশ্বাসে পরিচালিত হন। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী কারো ওপর তার বিশ্বাস আরোপ করেনা। এমনকি হস্তক্ষেপও করেনা।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সাংবিধানিক ছিল। তখন জামায়াতে গঠনতন্ত্রে এ বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। তখন পর্যন্ত এটি সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক ছিলনা। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।

জামায়াতের গঠনতন্ত্রে প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী সদস্য যারা ফরজ-ওয়াজিব পালন করেন, তারা জামায়াতের সদস্য হতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আদালত বলেন, এখানেতো অমুসলিমরা সদস্য হতে পরবেন না? জবাবে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্রে অমুসলিম নর-নারীর সদস্য হওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্রে আলাদা ধারা রয়েছে। তাই বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে সংশ্লিষ্ট ধারার বিধানকেও আমলে নিতে হবে।

এর আগে সকালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, ২০০৮ সালের নভেম্বরে জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশন সাময়িক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নিবন্ধন দিয়েছিল। যখন ওই নিবন্ধন দেয়া হয় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের শর্ত পুরোপুরিভাবে পূরণ করতে পারেনি। শর্তপূরণের ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে যেতে এই নিবন্ধন দেয়। ওই সময় থেকে সাময়িক নিবন্ধন পেয়েও জামায়াতে ইসলামী বসে থাকেনি। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সাথে জামায়াতে ইসলামীর যোগাযোগ চলমান রয়েছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে শর্ত পূরণে জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্রের অনেক ধারা সংশোধন করেছে। এ অবস্থায় রিট আবেদনটি অপরিপক্ক এবং খারিজ হওয়ার যোগ্য। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ পর্যায়ে রিট আবেদন শুনানির অযোগ্য।

এর আগে ২৫ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশীদ শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে আইন অনুসারে সন্তুষ্ট হয়ে নির্বাচন কমিশন সাময়িক নিবন্ধন সনদ দিয়েছিল। সন্তুষ্টি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন যেকোনো দলকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। সংবিধান বা গণপ্রতিনিত্ব আদেশে সাথে সাংঘর্ষিক হলে জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়া হতো না। একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশন শুনানি মুলতবির আবেদন করলে ২ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

গত ১৮ এপ্রিল রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর শুনানি শেষ করেন। ওইদিন আদালত ২৩ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করলেও পরপর দু’দিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতালের কারণে শুনানি হয়নি। এরপর ২৫ এপ্রিল চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে ২ মে শুনানির দিন দার্য করা হয়। ১১ এপ্রিল জামায়াতের নিবন্ধন প্রশ্নে জারি করা ওপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালতে হলফনামা আকারে নির্বাচন কমিশন জবাব দাখিল করে। একইদিনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেও রুল খারিজ চেয়ে আলাদা একটি আবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু খারিজ আবেদনে হলফনামা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত হলফনামার জটিলতার অপসান ঘটে।

জামায়াতে ইসলামের পক্ষে শুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির ও ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম।

২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জারি করা এক রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১) (বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘণ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবদেনটি করেন। এ আবদেনে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরর্বতীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

গত ১০ মার্চ রিট আবেদনটি শুনানির জন্য বর্তমান বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। এর আগে রিট আবেদনটিতে সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File