স্মৃতিকথা -০১ রাজ্য জয়ের আনন্দ বনাম লজ্জা .......................................

লিখেছেন লিখেছেন দুর দিগন্তে ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫১:১০ রাত

১৯৯৯ সাল । আমি সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি । এর আগে বাড়ির বাইরে থাকার অভ্যাস ছিলনা । তাই ২০/২২ দিন হলেই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রাণ উতলা হয়ে যেতো । হল শাখার জনশক্তি হওয়ার পর জানতে পারলাম, গ্রামের বাড়ি যেতে সকল জনশক্তি কে, সংগঠনের অনুমতি লাগে । ইচ্ছা হলেই বাড়ি যাওয়া যায় না । আর খুব সহজে অনুমুতিও মিলে না । শুনে অন্তর হু-হু করে কেঁদে উঠলো ।

মাসের ২৫ তারিখ যথারিতি শাখা অফিস মহানন্দা শিক্ষা নিবাসে হাজির হলাম । মনে অজানা শংকা । ছুটি দিবে তো ? একে তো নতুন সদস্য, তার উপর হল দায়িত্বশীলের পরিক্ষা চলছে । কম্পমান পায়ে ভয়ে ভয়ে সভাপতির রুমে ঢুকলাম । ততকালীন সভাপতি ইমাজ উদ্দীন মন্ডল ও সেক্রেটারী হেলাল উদ্দীন মুখোমুখি বসা । সালাম দিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বলতেই হেলাল ভাই চোখ বড় করে তাকালেন । বললেন কয়দিন হলো বাড়ি থেকে আসা ? বললাম ২৫ দিন । অমনি একটা হালকা ওজনের চড় আমার গাল স্পর্শ করলো । হলে গিয়ে কাজ করো । ৬ মাস বাড়ির নাম নেয়া যাবে না । আমার চোখ তখন ছলছল ।

ইমাজ ভাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথায় একটা স্নেহের হাত রেখে বললেন , দায়িত্বশীল মানুষ, এরকম ছেলেমি করলে চলবে ? আমি সোজা বলে ফেললাম, ফাষ্ট-ইয়ারে পড়ি । চাইলেই তো মাস্টার্সের আচরণ পাওয়া যাবে না ? আমি বাড়ি যেতে চাই, এবং আজই । আর প্রতি মাসের ২৮ তারিখ আমার ছুটি দরকার । মাসে তিনদিন বাড়িতে থাকা চাই । ইমাজ ভাই, হেলাল ভাই হেসে উঠলেন । তাদের হাসি আমার বুকে তীররে মত বিদ্ধ করলো ।

আমি মাথা নিচু করে বসে আছি । কিছুক্ষন কারো মূখে কোনো কথা নেই, নিরব । ইমাজ ভাই বললেন- ব্যাগ গুছানো আছে ? আমি বললাম হ্যা এবং সাথেই নিয়ে এসেছি । আবার দুই জনে হো হো করে হেসে উঠলেন । ইমাজ ভাই বললেন, -যাও তোমার ছুটি । এবং প্রতি মাসে ২৮ তারিখও । বাসায় যাওয়ার জন্য আর কখনো ছুটির চাওয়া লাগবে না । ২৮ তারিখ যাবা ১ তারিখ ক্যাম্পাসে ফিরে আসবা । আমিতো মহাখুশি । একদৌড়ে অফিস থেকে বেরিয়ে সিএনজি যোগে সাহেব বাজার । রওনা দিলাম বাড়ির পথে ।

ক্যাম্পাস জিবনের ৩ বছর পার করেছি ততদিনে । ইমাজ উদ্দীন মন্ডল ভাই তখন কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক । এক সাংগঠনিক সফরে এসেছেন রা,বিতে । হেলাল ভাই, ফিরোজ খান নুন ভাই, মাসুদ ভাই সহ অনেক শাখা দায়িত্বশীল মিলে খোশ গল্প চলছে মহানন্দায় । হটাৎ ইমাজ ভাই আমাকে প্রশ্নো করলেন, প্রতি ২৮ তারিখ বাড়ি যাই কি না ? আমি প্রচন্ড লজ্জা পেলাম । বললাম একবারও ৪/৫ মাসের আগে যাওয়ার সুযোগ হয় নি । উনি বললেন, কেনো ? তোমার তো স্থায়ি ছুটি দেওয়া ছিলো । আমি বললাম তাছিলো, কিন্তু কাজের চাপে আমিই সময় বের করতে পারিনি । শুনে সবায় হাসলেন । আর আমি ? প্রথমদিন ছুটি পেয়ে যে, রাজ্য জয়ের আনন্দ পেয়েছিলাম । সবার অট্টহাসিতে, আজ সেই রাজ্য হারানো লজ্জা পেলাম । আজও যখন ইমাজ ভাই হেলাল ভাইয়ের সামনে যাই । সেই লজ্জা আমায় ঘিরে ধরে । নিজেকে নিজের মাঝেই খুজে পায় একটা আস্ত বলদ হিসেবে ।

১২.১২.১৪

বিষয়: বিবিধ

৯৬৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

293859
১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ছুটি এবং বিশ্রাম ছাড়া কাজ কাজের প্রকৃত সাফল্য কমিয়ে দেয়।
এই অতিরিক্ত কাজের জন্যই আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রোডাক্ট এর মান খারাপ হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File