প্রচার বিমুখ বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের বঞ্চিত শিক্ষক সমাজ

লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৩৪:২৯ দুপুর

-- সারোয়ার মিরন

প্রচার বিমুখ মনোভাব এবং নিবেদিত হয়ে লেগে না থাকার চিন্তা চেতনা কখনোই আপনাকে মুক্তির বন্দরে পৌছাতে পারবেনা। আজ-কালকার সময়ে পান থেকে চুন খসলেই ফেসবুকে প্রচার করতে এগিয়ে আসতে হবে। করতে হবে লাইক কমেন্টস্। দিতে হবে হাজার হাজার শেয়ার। সমস্যা নাই যদি আপনী একটা ব্যানার নিয়ে একজন লোক হলেও ছবি তুলে সেটা এমন ভাবে পোস্ট করুন যাতে সবাই বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে বা হচ্ছে। আত্ম প্রচার নীতি হলেও সমস্যা নেই। লজ্জা সংকোচ ঝেড়ে ফেলে আপনাকে খোলস থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে আপনার নিজের প্রয়োজনেই। মোদ্দাকথা হতে হবে ভাইরাল। তবেই নজরে আসবে প্রশাসনসহ দেশের সবার, সকল পক্ষের।

আজ সচিবালয়ে যান, কাল মন্ত্রনালয়ে যান, পরশু আদালতে যান, পরের দিন শিক্ষা ভবনে যান, এর পরের দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান- সবই দিতে হবে অনলাইনে। পত্র পত্রিকা যেহেতু এসব প্রচার করবে না সো নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রচারের কাজে। এক সময় দেখা যাবে আমাদের নিজেদের প্রচারের মাত্রা এতই প্রসার ঘটেছে যে পত্র পত্রিকা নিজ থেকে ফলাও করে নিউজ করার জন্য উঠে পড়ে লাগছে। এ গুলোর প্রমান আপনার হাতের নাগালেই আছে। ফেসবুকে ছবি, ভিড়িও, লেখা ভাইরাল হওয়ার দরুন বহু নামি দামি পত্র পত্রিকা লিড নিউজ করার নজির অসংখ্য আছে। চাইলে ফেসবুকে কিংবা গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন।

আমি হলফ করে বলতে পারি একমাত্র মামলা বা রীট এবং এর চূড়ান্ত রায় কখনোই আপনার এমপিও এনে দিতে পারবেনা। বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক হয়ে যদি আপনী এ মিথ বিশ্বাস করেন যে, মামলা-ই আমাদের এমপিওভুক্তির একমাত্র নিয়ামক। তাহলে আপনী বোকার স্বর্গে বাস করছেন বলে আমি অন্তত মনে করি। আপনাকে স্মরন করে দিতে চাই, ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকরা মামলা জয়ের প্রায় পাঁচ বছর পরে এমপিওভুক্তির জন্য সবেমাত্র বিবেচিত হয়েছেন। এখনো এমপিও বেতন হাতে পাওয়ার সুযোগ হয়নি উনাদের। তাহলে আমি আপনী কোন আশায় শুধুমাত্র মামলার রায়ের জন্য বসে থাকবো!!!

প্রচার যন্ত্রকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। যতদুর সম্ভব আপনার সমস্যা ‍তুলে ধরতে হবে মিডিয়ায়। আপনার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। নিজের স্বপক্ষে সব ধরনের ডকুমেন্ট শো করতে হবে অনলাইনে, মিড়িয়ায়। জোরালে দাবি তুলতে হবে সকল এভিডেন্স নিয়ে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। প্রয়োজনে এখাতে আপনাকে আলাদা বাজেট কিংবা বরাদ্ধ রাখতে হবে।

আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো। মামলার চূড়ান্ত রায় হলেও যে আপনী সহসা-ই এমপিও পাবেন সেটি এক ধরনের অবান্তর চিন্তা হবে। সো আপনাকে সম্ভাব্য সকল ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখেই আগাতে হবে। মামলার রায়ের পর অবশ্যই আপনাকে সরকার তথা শিক্ষা প্রসাশকদের আনুকূল্য পেতে হবে। আর সেজন্যই আপনাকে নিতে হবে তোষামুদে নীতি। যেটি হতে পারে- সভা সেমিনারে উনাদের দাওয়াত দেয়া, অতিথি করা। বিভিন্ন দিবস পালন। শুভেচ্ছা জানানো ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করেই আপনী দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারবেন। নিয়মিত তুলে ধরতে হবে বেসরকারি কলেজ খাতে সরকারের গৃহীত এ যাবতকালের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড। আপনাকে থাকতে হবে শতভাগ সরকার বান্ধব মনষ্ক হয়ে।

ব্যক্তি হোন আর সংগঠন হোন। আপনাকে প্রচার কিংবা জাহির করতে হবে। মিড়িয়াতে ব্যয় করার মতো ফান্ড না থাকলে সোস্যাল যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউবে চ্যানেল খুলে নিয়মিত ভিড়িও আপলোড করতে পারেন। ফেসবুকে প্রতিবেদন দিতে পারেন। লাইভ টেলিকাস্টে যেতে পারেন ফেসবুকের মাধ্যমে। বিজ্ঞাপন নীতি আপনাকে নিতেই হবে। প্রচারেই প্রসার। ধারনা এমন যত বাজাবেন ততই বাজবে, সাউন্ড হবে। প্রয়োজনে সংগঠন ভিত্তিক প্রচার সেলও গঠন করতে পারেন। তৈরি করতে পারেন নিউজ সাইট, ব্লগ একাউন্টও।

কথা হলো, মামলা একটা চলমান আইনী প্রক্রিয়া। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আদালত কিংবা বিচারক একটা বিচারাধীন বিষয়ে বাদি-বিবাদীদের অতীত বর্তমান কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেই একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন আপনী যতদুর কাঁদবেন ঠিক ততটুকুই রাষ্ট্রযন্ত্রের মন নরম হবে। আর এ কান্নার স্বর সরকার প্রসাশনে পৌছাতে হলে অবশ্যই আপনাকে মিড়িয়া নির্ভর হতে হবে। সেটা সোশ্যাল মিড়িয়া হলেও।

লেখক:

একজন রীটভুক্ত অনার্স শিক্ষক, ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

১০.১০.২০১৮ইং

বিষয়: বিবিধ

৬৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File