আমার লজ্জা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৪৮:৫১ রাত

রাতে দাওয়াত থেকে মাথা পর্যন্ত টেনে ফিরে সিরাতের ৩৩ নাম্বার পার্ট দেখে খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। বিষয়টা বলছি শোনেন। মদীনাতে রসূল(সাঃ) প্রথমে কুবা মসজিদ তৈরী করেন এরপর মসজীদে নববী। মসজিদে নববীর উপরে প্রথমে কোনো ছাউনি ছিলোনা। পরে দলে দলে মদীনা ও এর বাইরে থেকে মানুষ আসতে থাকে দ্বীন শিক্ষার জন্যে। এদের কেউ কেউ রসূল(সাঃ)এর ওফাত পর্যন্ত ছিলো তবে সাধারণত দ্বীন শিক্ষা করে কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর ফিরে যেত। এদেরকে আসহাবে সুফ্ফাহ বলা হয়। এরা এদের জীবনকে আল্লাহর জন্যে উৎস্বর্গকরেছিলেন। সে লক্ষ্যেই জ্ঞান চর্চা করতেন। মসজিদে নববী হয়ে ওঠে একটি ইউনিভার্সিটি।

হযরত আবু হুরায়রাহ,বিলাল,সোহায়েব আর রুমীসহ অনেকেই ছিলেন আসহাবে সুফ্ফার অংশ। এদের কেউ কেউ বিয়ে পর্যন্ত করেননি দ্বীনের খেদমতে। আবু হুরায়রাহ ছিলেন ইয়েমেনের লোক। তিনি গরীব ছিলেন না কিন্তু মদীনায় এসে গরীব ছিলেন। একসময় তার মা তার অবস্থান জানতে পেরে মদীনাতে একটি বাড়ি ক্রয় করে বসবাস করেন। কিন্তু আবু হুরায়রাহ মসজিদে থাকাই শ্রেয় মনে করে সেখানে থাকতে লাগলেন। আসহাবে সুফফাহদের জন্যে মসজিদের পেছনের দিকের ছাদ দেওয়া হয় খেজুর পাতা দিয়ে,বাকী অংশ উম্মুক্ত থাকে। কখনও বৃষ্টি হলে মেঝে কর্দমাক্ত হত। রসূল(সাঃ)সেই কাদার উপর নামাজ আদায় করেছেন, তার মুখমন্ডল কর্দমাক্ত হয়েছে।

আসহাবে সুফফাহর লোকেরা পেট ভরে খেতে পারত না। রসূল(সাঃ) যখন যা কিছু পেতেন অথবা অন্য সাহাবীরা তাদেরকে খেতে দিতেন। তাদের অবস্থা এমনই ছিলো যে সতর ঢাকার জন্যেও পর্যাপ্ত কাপুড় ছিলোনা। এমনকি মসজিদে নববীতে রসূল(সাঃ)পেছনের কাতারের মহিলাদের বলেছিলেন সুফফাহর লোকেরা সেজদাহ থেকে পুরোপুরি উঠলে তবে তোমরা সেজদায় যাবে। ....তার মানে হল কাপুড়ের অপর্যাপ্ততার কারনে তাদের পেছনটা অনেকদূর উম্মুক্ত হয়ে পড়ত কখনও।

আবু হুরায়রাহ(রাঃ) বর্ণতা করেন, আমরা কেবল দ্বীন চর্চা করতাম স্বয়ং রসূল(সাঃ)এর থেকে। আমি কখনও কখনও লোকেদেরকে নানান বিষয়ে প্রশ্ন করতে করতে হাসিমুখে তার সাথে হাটতাম। আল্লাহর কসম, যে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম ,সে বিষয়ে আমি তার চাইতে অনেক বেশীই জানতাম, কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিলো এই যে,হাটতে হাটতে যেন তার বাড়ি কাছাকাছি চলে আসি, আর সে আমাকে ভদ্রতার খাতিরে ভেতরে যেতে বলে এবং কিছু খেতে দেয়। ..এতটাই ক্ষুধার্ত থাকতেন তিনি। আবু হুরায়রাহ বলেন, কখনও কখনও আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে মসজিদের সামনে পড়ে থাকতাম। নামাজ আদায় করতে আসা লোকেরা ভাবত আমার মৃগী রোগ হয়েছে,ফলে তারা আমাকে জুতা শুকাতো। ...কিন্তু লজ্জায় আমি ক্ষুধার কথা বলতে পারতাম না। ....

একবার রসূল(সাঃ) আবু হুরায়রাহকে ছোট এক গ্লাস দুধ দিলেন। কিন্তু উনি পান করতে যাওয়ার সময় বললেন, যাও সুফফাহর লোকেদের সবাইকে ডেকে আনো। উনি তাই করলেন। প্রায় ৩৫/৪০ জন লোক আসলো। আবু হুরায়রাহ(রাঃ) কে তখন তিনি(সাঃ) নির্দেশ দিলেন, যাও সবাইকে পান করাতে থাকো। তখন আবু হুরায়রাহ খুব হতাশ হয়ে পড়লেন যে, এই নগন্য দুধ তো একজনেরই হবেনা...। কিন্তু তিনি পান করাতে থাকলেন। একে একে সকলেই পান করলো এবং সকলেই তৃপ্ত হল। এরপর রসূল(সাঃ) আবু হুরায়রাকে বললেন পান করো। সে পান করলো। এরপর আবর বললেন,আরও পান করো, সে পান করলো,,,এরপর বললেন আবু হুরায়রাহ আরও পান করো...এভাবে চলতেই থাকলো। শেষে বললেন,আরও পান করো,,,আবু হুরায়রাহ বললেন, আমার পেটে আর কোনো জায়গা নেই,,তখন রসূল(সাঃ) নিজে পান করলেন। আল্লাহ তাদের প্রত্যেককে জান্নাতুল ফিরদাউসে অতিরিক্ত সম্মানীত করুন !

যখন আবু হুরায়রাহর কথা ভাবছিলাম, নিজেকে ধিক্কার দিলাম। খুবই লজ্জিত হলাম। আবার খুশী হলাম যে আল্লাহ তাওফিক দিয়েছেন। আবু হওরায়রাহর(রাঃ) হাতে থাকা ওই দুধের গ্লাসের মত আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে রিজিক,হায়াত,সন্তানাদী,সুস্থ্যতা ও সকল কল্যানমূলক কাজে বরকত দান করুন !

বিষয়: বিবিধ

৫৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File