নামাজে মনোযোগী হবার জন্যে বেশ কিছু বিষয় শেয়ার করছি:

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৯:৩১:৪৪ রাত



======================================

১. আল্লাহ তায়ালা সালাত ছাড়া অন্য কোনো ফরজ ইবাদতের বিধান প্রেরন করতে রসূল(সাঃ)কে উর্ধ্বাকাশে আমন্ত্রন জানাননি। সালাত বা নামাজ এমন একটি ইবাদত যা আল্লাহ তার রসূলকে(সাঃ) অত্যন্ত ভালোবেসে ও সম্মানের সাথে উপহার দিয়েছেন। রসূল(সাঃ)বলেন-মুমিন ও কাফিরের পার্থক্যকারী হল নামাজ। আরও বলেন অমুসলিমরা তোমাদের কোনো বিষয় দেখে যদি ঈর্ষান্বিত হয়,তবে সেটা সালাত।....ফলে এটার গুরুত্ব নিজের মনে উপলব্ধী করতে হবে।

২. ইসলামে অন্য যতগুলো ইবাদত রয়েছে,তার থেকে কর্তব্যগত দিক দিয়ে নামাজ একটি ভিন্ন ধরনের ইবাদত। কেবলমাত্র পাগল বা মানসিক প্রতিবন্দী ও অচেতন মানুষের জন্যে নামাজ পরিত্যাগের ওজর রয়েছে। অর্থাৎ যে লোকটি অজ্ঞান হয়ে পড়েছে সে লোকটিকে উক্ত সময়ে নামাজের দায় থেকে মুক্ত করা হয়েছে,জ্ঞান ফিরলে তাকে উক্ত সময়ের আদায় না করা সালাতসমূহ আদায় করতে হবে। এছাড়া মানসিক প্রতিবন্দীকে এ দায় থেকে মুক্ত করা হয়েছে।

অন্য কোনো মানুষ নামাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে না। কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে আই.সি.ইউতে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে,তাকেও ইশারায়/মনে মনে নামাজ আদায় করতে হবে। কেউ দাড়িয়ে থাকতে না পারলে বসে,তাও না পারলে শুয়ে হলেও নামাজ আদায় করতে হবে। কাওকে শত্রু ধাওয়া করেছে অথবা তাকে শত্রু দেখতে পেলেই হত্যা করবে এমন সময়েও নামাজ থেকে অব্যাহতি পাবে না,তবে এরকম ভয়ের সময় নামাজ মাত্র ১ রাকাত।

যদি পানি না থাকে অথবা পানি স্পর্শ নিষিদ্ধ হয়,তবে সে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে,মাটি না থাকলে যে কোনো পাক বস্তুতে হাত রেখে তায়াম্মুম করবে। কারো পরনের কাপুড় অপবিত্র থাকা অবস্থায় যদি নামাজের সময় হয় এবং যদি পোষাক পরিবর্তনের সুযোগ না থাকে,তবে অপবিত্র পোষাকেই নামাজ আদায় করতে হবে। কারো যদি কাপুড়ই না থাকে তবুও কাপুড় ছাড়াই নামাজ করতে হবে। অর্থাৎ নামাজের ক্ষেত্রে কোনো ওজর বা আপত্তি গ্রহনযোগ্য হবেনা। এটা এমনই এক বিশ্ময়কর ইবাদত ! এসব বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চিন্তা কারো মাথায় গেলে নামাজের ব্যাপারে একাগ্রতা তৈরী হবে ।

৩. আখিরাতে সর্বপ্রথম নামাজের বিষয়ে হিসাব হবে। এটা সহজ হলে অন্যগুলোও সহজ হবে।এ চিন্তাটি আমাদেরকে নামাজকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে।

৪. নামাজ হল আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথন। বান্দা এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে এটাই আল্লাহর আদেশ।ফলে একজন মুসলিম নামাজে দাড়িয়ে ভাববে সে কি কি অন্যায় করেছে এবং তাকে অবশ্যই ক্ষমা পেতে হবে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। এসব চিন্তা মাথায় নিলে বান্দা নামাজে মনোযোগী ও অত্যন্ত বিনয়ী হবে।

৫. নামাজ মানে হল আল্লাহর সামনে দাড়ানো। আমরা সমাজের বা রাষ্ট্রের কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সামনে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দাড়াই এবং তার প্রতি মনোযোগী হই।যখন আমাদের উপলব্ধীতে গোটা মহাবিশ্ব এবং এর ভেতর বাইরের সকল বিষয়ের স্রষ্টা আল্লাহর সামনে দাড়ানোর অনুভূতি তৈরী হবে,তখন অবশ্যই দুনিয়ার সবচাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তির সামনে যেভাবে দাড়াতাম তার চাইতেও অনেক বেশী বিনয়াবনত হয়ে দাড়ানোর মানুষিকতা তৈরী হবে।

৬. আর যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালীর সাথে সাক্ষাতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজের সেরা পোষাকটি পরিধান করে থাকি,তাহলে সকল কিছুর স্রষ্টার সামনে দাড়াতে অবশ্যই আমার ভালো পোষাকটি পরিধান করাই উচিৎ। এ চিন্তা মাথায় গেথে গেলে আমাদের উপলব্ধীতে এটা আসবে যে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে দেখছেন এবং তিনি এটাও দেখছেন যে আমি আল্লাহকে কাজের মাধ্যমে প্রধান্য দিচ্ছি,আল্লাহর মর্যাদাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোষাক,সুগন্ধী এবং নামাজের স্থানটিও যদি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে নামাজে অধিক মনোনিবেশ ঘটে।

৭. আমি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দাড়িয়েছি,তিনি দেখছেন আমি কিভাবে দাড়ালাম,কতটা বিনয়াবনত হলাম এবং মনে মনে কি ভাবছি সবই তিনি স্পষ্ট দেখছেন,তাই এই উপলব্ধীটি মনকে কেবল নামাজের দিকেই ধাবিত করবে। শয়তান প্ররোচিত করতে সাহস পাবেনা,কারন আল্লাহ ঘোষনা করেছেন -যারা আল্লাহর অনুগত হবে,শয়তান তাদের ক্ষতি করতে সক্ষম হবেনা। এসময় নামাজের তিলাওয়াত,রুকু,সেজদাহ সবই সঠিকভাবে পরিপালিত হবে,কারন অত্যন্ত চমৎকারভাবে নামাজটি আদায় করার কারনে আল্লাহ মনের ভেতর প্রশান্তি প্রদান করবেন ও দুনিয়ায় নানান কল্যান দান করবেন এবং আখিরাতে এমন পুরষ্কার প্রদান করবেন যার বর্ণনাও কোনো কান পুরোটা শোনেনি,কোন মনও কল্পনা করেনি কখনও। আর তা পাবার বাসনায় আমি অত্যন্ত বিনয়াবনত মস্তকে নামাজ আদায়ে প্রবৃত্ত হব।

৮. হালাল উপার্জন ভক্ষন নামাজ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত,ফলে নামাজের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান প্রত্যাশায় আমি হালালের দিকে ধাবিত হব। আর হালাল ভক্ষন ও উপার্জনের বিষয়টি ব্যক্তিকে মানুষিকভাবে প্রশান্ত করে,ফলে সে নামাজে একাগ্রচিত্তে দাড়তে পারে। অস্থিরতা কাটানোর শ্রেষ্ঠ আমল হল হালাল উপার্জন করা ও হালাল হারামের সীমারেখা মেনে চলা।

৯.আচরনে সুন্দর হয়ে,নানানভাবে অন্যের উপকার করে,দান সাদাকাহসহ যাবতীয় ইবাদত বা সাধ্যের ভেতর যাবতীয় ভালো কাজ করে পরবর্তী নামাজের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে যাতে সেজদাবনত হয়ে আল্লাহকে নিজের এই ভালো কাজটির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারি(যদিও আল্লাহ তার বান্দার সকল বিষয় সকল সময়ে প্রত্যক্ষ করছেন) এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ আমার সকল ইবাদতসমূহ কবুল করেন ও চাওয়াগুলো মঞ্জুর করেন । কারো যদি কিছু চাওয়ার থাকে,তাহলে সে যেন নামাজে সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে,কারন এই অবস্থাটি হল বান্দার শ্রেষ্ঠ বিনয়। বান্দা এর থেকে বেশী বিনয় অন্য কোনোভাবে প্রকাশ করতে পারেনা। সে নাকে খৎ দিয়ে নিজেকে একেবারে সপে দেয় এ অবস্থায়,আর সকল অহঙ্কারের একচ্ছত্র অধিপতি বান্দার এই চরম নতজানু অবস্থাটি পছন্দ করেন এবং তাকে মহা প্রাচুর্জ্য দান করেন যা কেবল প্রকৃত আবেদ খানিকটা অনুধাবন করতে পারে।

১০. সালাতের সময় যদি কেউ একা থাকে,যদি কোনো কারনে তার কাছে আযান না পৌছে,তাহলে সে যেন একাকী উচ্চ অথবা অনুচ্চস্বরে নিজেই আযান দেয় এবং এরপর নামাজে দাড়ায়। এই আচরনটি নামাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। এটি নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে শেখায়।

১১.সকল কাজ-কর্মকে নামাজের সময়ের কাছে তুচ্ছজ্ঞান করে নামাজের দিকে ধাবিত হওয়া। বান্দার এই অবস্থাটি আল্লাহ প্রত্যক্ষ করে খুশী হন আর তাকে নামাজে অধিক মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করেন এবং তার মনকে সমৃদ্ধীতে ভরে দেন।

আরও কিছু বিষয় আছে,তবে আপাতত এটুকুই মনে পড়ছে। আমাদের উচিৎ সহিহ হাদীসগ্রন্থ থেকে নামাজের গুরুত্বসমূহ ও বিধিবিধানগুলো ভালোভাবে অধ্যায়ন করা এবং আলেমগনের থেকে জেনে নেওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে নামাজে অধিক মনোযোগী করুন এবং শয়তানের মোকাবিলায় শক্তিশালী করুন !

বিষয়: বিবিধ

৬২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386356
২২ জানুয়ারি ২০১৯ রাত ১০:৫৪
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : আমিন।

আল্লাহ আপনাকে উওম পুরস্কার দান করুণ

কাজের লাগার মতো একটি লেখা উপহার দিয়েছেন,
386363
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ রাত ০৩:১০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহর দেয়া সকল বিধান জমিনে ফরজ করেছেন আর নামাজে ফরজ করেছেন আর সে আজিমে। লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ جزاك الله خيرا وشكرا لك

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File