কারা বেশী ভাগ্যবান : আমেরিকান শিক্ষার্থী নাকি দেশী শিক্ষার্থী !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০১:০৪:৪১ দুপুর



-------------------------------------------------------

ড্যনিয়েলের সাথে কথা হচ্ছিলো,,,আসলে ড্যানিয়েলদের সাথে কথা হচ্ছিলো,,মানে এই নামে দুজনের সাথে অন্তরঙ্গ কথা হয়েছে। ড্যানিয়েল ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষ করল ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে, মার্কেটিংয়ে। আমি দেখেছি এই ডিগ্রী নিতে ও কি খাটুনি করেছে। একদিকে পড়াশুনা ,অন্যদিকে পার্টটাইম জব। এখানে পড়াশুনার জন্যে স্টুডেন্ট লোন পাওয়া যায়, এরকম লোনের বোঝা লক্ষ কোটি শিক্ষার্থীর ঘাড়ে রয়েছে। জানতে চাইলাম তোমার বছরে কত খরচ হয় এই ব্যাচেলর ডিগ্রী নিতে ? সে বলল প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ২০০০ ডলারের মত দিতে হয়, বছরে ৪টা সেমিস্টার বা ক্রেডিট। মানে ৮০০০ ডলার দিয়েছে বছরে। কোনো কোনো ইউনভার্সিটিতে আরও বেশী লাগে। আবার সাবজেক্ট হিসেবে ওঠা নামা করে। তবে কমিউনিটি কলেজগুলোতে খরচ কম। এখানে এক কমিউনিটি কলেজে ব্যাচেলর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছে একজন বন্ধু। সে বলল প্রতি সেমিস্টারে ১৫০০ ডলার এর মত লাগছে।

এটা ঠিক যে এখানে জব পাওয়া সহজ,অবশ্য ভালো জবে প্রবল প্রতিযোগীতা রয়েছে। কিন্তু সাধারন জব খুব সহজে পাওয়া যায়। অনেক কোম্পানী অফিসের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে যে, লোক নিয়োগ চলছে। এমনকি রাস্তায় প্লাকার্ড নিয়েও লোকে দাড়িয়ে থাকে দেখেছি,যে লোক নিয়োগ চলছে...। তবে একজন শিক্ষার্থীর জন্যে এটা অবশ্যই একটা বিশাল চাপ,যখন তাকে জব করতে হয় আবার পড়াশুনাও করতে হয়।

আমেরিকাতে ১২ গ্রেড পর্যন্ত পড়াশুনা ফ্রি। এটাকে স্কুল সার্টিফিকেট বলে,যার মান হল বাংলাদেশের ইন্টারমিডিয়েট।এই সার্টিফিকেট নিয়েই আমেরিকার অধিকাংশ জবে আবেদন করা যায়। আমি বহু সিনিয়র মানুষ দেখেছি,সফল মানুষ দেখেছি যারা স্কুর সার্টিফিকেট অর্জন করেছে মাত্র। অথচ প্রফেশনালী তারা ডক্টরেট ডিগ্রীধারীদের পড়াতে পারে।এখানে শিক্ষা খুবই জীবনমুখী এবং কার্যকরী। স্কুল পার হয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী নিতে গেলে পকেটের টাকা দিয়ে পড়াশুনা করতে হয়। কিছু স্কলারশিপও আছে কিন্তু সেটা অনেক কম।

অনেকে ভাবতে পারে এটা তো সহজ যে, জব করছে আবার পড়াশুনা করছে। আবার পড়াশুনার পর ভালো জব পাচ্ছে। এটা এক রকম ঠিক, কিন্তু এর অন্য পিঠও আছে। এদের পিতা-মাতা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এদেরকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহায়তা করেনা। ১৮ বছর পর্যন্ত খাওয়ায়(যদি আসলে বাপ-মা থেকে থাকে),এরপর নিজের রাস্তা করে নিতে হয়। তারা নানানভাবে সহযোগীতা করে। কিন্তু এদের জীবন যাত্রা,সাংষ্কৃতি ভিন্ন হওয়ার কারনে তারা ১৮ এর পরে বেশীরভাগই আলাদা হয়ে যায়। তখন সমস্ত খরচ তার।

অনেক সমস্যায় পড়ে তারা, যাদের পিতা-মাতা নেই, গাইড করার কেউ নেই। কয়েকজনকে চিনি, তারা দুটো পার্ট টাইম জব করে এবং একইসাথে পড়াশুনা করে। আজাইড়া কথা বলার টাইম তাদের নাই। জীবন যুদ্দে বিধ্বস্ত মানুষও দেখেছি। অনেকের সন্তানাদী আছে কিন্তু একইসাথে অনেক কিছু করতে হয়। তবে ভালো অনেক দিক আছে। এরা অল্প বয়সেই স্বাবলম্বী হয়। রাষ্ট্র , সমাজ,প্রতিষ্ঠান এদেরকে নানানভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে। টিকে থাকার মত ব্যবস্থা রয়েছে এদের, তবে কষ্টে জীবন জর্জরিত হয়ে যায়।

আমাদের দেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই বাপের হোটেলে থাকে আবার নবাবীও করে। যাদের একটু স্বচ্ছলতা আছে তাদের তো পোয়াবারো। বাপ মা তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়। তাদের আবদারের শেষ নেই। পিতার টাকা'ই তার টাকা, ফলে তার চালচলনও তেমন। পোষাকে,খাবার দাবারে তার ডিমান্ড অন্যরকম। পায়ে ধরে পড়াশুনা করাতে হয় অনেকেকে,,আবার সেই পড়াশুনা করানোর জন্যে নানান আবদার মেটাতে হয়। আর রেজাল্ট ভালো হলে তো কথাই নেই,,,নানান সব দাবী মেটানো হয়। বাপ মা এসব তাল করেই আনন্দ পায়। সন্তান স্বাভাবিকভাবেই ভাবে যে- সব কিছুই তার। আরামে সময় কাটায় বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী। অনেকে জীবন যুদ্ধে পরাস্ত এবং দৌড়ের উপরও আছে,কিন্তু অনেকে চরম আরামেও আছে বাপ মায়ের ঘাড়ে বসে। এটাই আমাদের সাংষ্কৃতি। এর কিছু খারাপ দিকও আছে ,আবার ভালো দিকও আছে। আমরা পরিবারের সাথে বিচ্ছিন্ন হইনা সাধারনত। এখানে পিতা-মাতা সন্তানকে যেভাবে লালন পালন করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানও পরবর্তীতে পিতা-মাতার খেদমত করে। অনেকে আত্মীয়স্বজনদেরকেও চালায়। একে অপরের সাথে মিলে মিশে সুখ দু:খ ভাগ করে নেয়। এটা অবশ্যই ভালো এবং বহু পয়সা পাওয়ার চেয়ে এটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে একটা সময়।

আবার খারাপ হল, এরা দেরীতে বুঝতে শেখে, দেরীতে স্বাবলম্বী হয়। অনেকে নিষ্কর্মা হয়। অতিরিক্ত আরামে নষ্ট হয়। শিক্ষার সাথে কর্মের সম্পর্ক দূরবর্তী হওয়ার কারনে এবং শিক্ষায় শুভঙ্করের ফাকি থাকার কারনে যথাযথ চাকুরী পাওয়া কষ্টকর হয়। প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে টিকতে পারেনা।

তবে আমি যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে,, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই আরামে আছে। যদিও এরা ইউরোপ আমেরিকার লোকদেরকে দেখে হিংসার জ্বলে, কিন্তু ভেতরের সব খবর তারা জানেনা। কিছু টাকা প্রাপ্ত হওয়াই জীবনের সবকিছু নয়। পরিপূর্ণতা ভিন্ন জিনিস। দুটো সাংষ্কৃতি পাশাপাশি রাখলে আমি আমাদের সাংষ্কৃতিই গ্রহন করব। এমনকি আমাদের সাংষ্কৃতির লাভগুলো এদের সামনে তুলে ধরলে এরাও এটাই নিতে চাইবে। নিশ্চিন্তে জীবন কাটানোর জন্যে বাপের একটা হোটেল থাকতে পারে,সেটা এরা জানেনা, এদের বাপরাও জানেনা।

বিষয়: বিবিধ

৫৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File